এক ডিভোর্সি নারীর কষ্টের গল্প
ব্রেকাপ মেয়ে নয়, ডিবোর্সি
মেয়েকে বিয়ে করুন!
আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড দীর্ঘদিন পর
দেশে আসল বিয়ে করবে বলে। এসেই
আমাকে জানাল, বাসা থেকে তার
জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে,
তার ইচ্ছা সামনের দুই মাসের মধ্যে
বিয়ে করা। আমাকে বলল, যদি আমার
পরিচিত কোন মেয়ে থাকে তাকে
যেন জানাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস
করলাম, তুমি কেমন মেয়ে চাস? সে
জানাল, মেয়ে অবশ্যই শিক্ষিত, সুন্দরী,
ধার্মিক ও সাংসারিক হতে হবে।
আমি বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে।
তোকে আমি পরে জানাচ্ছি"।
দুই দিন পর তাকে জানালাম, দোস্ত
তোর জন্য একটা মেয়ের খোঁজ
পেয়েছি। মেয়ে একাউন্টিং এ
অনার্স মাস্টার্স, বেশ সুন্দরী বলা যায়,
হাইটও ভাল ৫ ফিট ৪। আমার পরিচিত
মেয়ে, ওর নাম সায়মা। মেয়েটি
যেহেতু একটি ধার্মিক পরিবারের,
সেহেতু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে
পারি সে যথেষ্ট ধার্মিক।
সাংসারিকও বটে। আমার বর্ণনা শুনে
সে সায়মাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে
উঠল। তাকে এমন উৎসাহী দেখাল যেন
সে আজ বিকেলের মধ্যেই মেয়ে
দেখার কাজ সেরে ফেলতে চাচ্ছে।
আমি সায়মার সম্পর্কে আরো ক্লিয়ার
করার জন্য বললাম, "দোস্ত, তবে
মেয়েটার একটা অ্যাক্সিডেন্ট আছে।"
সে থমকে গিয়ে বলল, "কি
অ্যাক্সিডেন্ট?" আমি বললাম,
"মেয়েটা শর্ট ডিভোর্সি। তার সাথে
যে ছেলেটার বিয়ে হয়েছিল, বিয়ের
এক মাসের মধ্যে তারা নিশ্চিত হয় সে
এডিক্টেড। অনেক চেষ্টা করেও যখন
তাকে ফিরানো যাচ্ছিল না, ৬
মাসের মাথায় সায়মার পরিবার
সায়মার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে
বাধ্য হয় ডিভোর্স করাতে।"
এবার সে ফুটো বেলুনের মত টুপ করে
চুপসে গেল। আমাকে খুব বাজে ভাষায়
ধমক দিয়ে বলল-
: তুই আর মেয়ে পেলিনা? আমার জন্য
শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সি মেয়ে দেখলি?
: তাতে সমস্যা কি? সায়মা শিক্ষিত,
সুন্দরী, ধার্মিক, সাংসারিকও। তোর সব
রিকুয়ারমেন্ট ফুলফিল করেছে।
: তার সব চেয়ে বড় সমস্যা সে
ডিভোর্সি।
: ডিভোর্স সমস্যা হতে যাবে কেনো?
ডিভোর্স তো তার নিজের কারণে
হয়নি। তার কপাল খারাপ হয়েছিল
বলেই তো হয়েছে। তার আগের স্বামী
যদি ভাল হত তাহলে তো তাকে এই
পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হত না।
: দোস্ত, এইসব বলে লাভ নাই। একে তো
আমি মেনে নিতে পারব না, তার উপর
আমার পরিবার আত্মীয়স্বজন তারাও
কোন দিন মেনে নিবে না। এটা
আমার ফার্স্ট বিয়ে। তুইও কি মেনে
নিতে পারবি এমন একটা মেয়েকে বউ
হিসেবে?
প্রশ্নটা আমার জন্য কঠিন হয়ে গেল।
কোন জবাব দিতে পারলাম না। এরপর
আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম। এর
মাঝে সে আমার সাথে যোগাযোগ
করেনি। আমিও করিনি।
প্রায় সাপ্তাহ দুয়েক পর সে আমাকে
জানাল,
: দোস্ত, সামনের সাপ্তাহে আমার
আকদ। চলে আছিস।
খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
: কার সাথে বিয়ে হচ্ছে, তোর?
: তোদের এলাকার মেয়ে তানিয়ার
সাথে।
তানিয়ার নাম শুনে আমি চমকে
উঠলাম। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
: তুই কি তানিয়ার সম্পর্কে ভাল করে
খোঁজ খবর নিয়েছিলি?
: হুম, সব জেনেই তো বিয়েটা ফাইনাল
করলাম।
: দোস্ত তানিয়ার সাথে আমাদের
ফ্রেন্ড মনিরের ৬ বছরের রিলেশন ছিল।
: ব্যাপার না, বিয়ের আগে এমন
রিলেশন সবার থাকে।
: দোস্ত, তুই কি বুঝতে পারছ এই যুগে ৬
বছরের রিলেশন মানে কি? এটা মোর
দেন হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ...
সে আমাকে থামিয়ে বলল- বললাম
তো, সমস্যা নেই, বিয়ের আগে এরকম
সম্পর্ক থাকতেই পারে। সংসার করতে
চাইলে এ যুগে এসব মেনে নেওয়া
ছাড়া উপায় নেই।
: ওকে, ফাইন। তাহলে তুই তানিয়াকে
বিয়ে করতে পারলে কেনো
সায়মাকে নয়?
: কারণ সায়মা ডিভোর্সি।
: তানিয়া কিন্তু ব্রেকাপ!!
: ডিভোর্সি আর ব্রেকাপ কিন্তু এক নয়।
: অবশ্যই এক। তবে ডিভোর্স পবিত্র,
স্বীকৃত, আর ব্রেকাপ অপবিত্র, অবৈধ।
সে বিদ্রুপ হেসে বলল,
: ডিভোর্স পবিত্র হয় কি করে?
: দেখ ডিভোর্স হতে হলে প্রথমে বিয়ে
হতে হয়।
* বিয়ে হচ্ছে বৈধ, যা শরিয়তসম্মত।
* বিয়ে হচ্ছে এমন একটা বৈধ প্রক্রিয়া
যেখানে দুজন নরনারীকে একসাথে
থাকার স্বীকৃতি দেয়।
* বিয়ে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুজন
নরনারী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে
পারে, সেটাও বৈধ।
* এরপর যদি তাদের দুজনের মধ্যে
বনিবনা না হয়, তাহলে তারা শরিয়ত ও
প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ডিভোর্স
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলাদা হয়ে
যেতে পারে।
আবার অন্যদিকে ব্রেকাপ হতে হলে
অবশ্যই দুইজন নরনারী মধ্যে বিয়ে
বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক থাকতে হবে।
* বিবাহবহির্ভূত প্রেম একটি
শরিয়তবিরোধী অবৈধ কাজ।
* এর ফলে দুইজন নরনারী অবৈধভাবে
মিলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
* বর্তমানে বেশীরভাগ প্রেমে দৈহিক
সম্পর্ক হয়ে থাকে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ,
জেনা বা ব্যভিচার।
* দুইদিন পর এই নরনারী মধ্যে যখন মতের
অমিল হয় তখন তাদের মধ্যে ব্রেকাপ হয়।
যেহেতু বিয়েবহির্ভূত প্রেম অবৈধ,
সেহেতু এই প্রেম ব্রেকাপও অবৈধ।
এবার তুই বল, তুই তানিয়াকে মেনে
নিতে পারলে কেন সায়মাকে মেনে
নিতে পারলি না? প্রেমের
ব্রেকাপকে স্বীকৃতি দিতে পারলে
কেন বিয়ের ডিভোর্সকে স্বীকৃতি
দিতে পারলি না।
সে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
দোস্ত, সায়মার বিয়ে হয়েছে এটা
যেমন সবাই জানে, ডিভোর্স হয়েছে
সেটাও সবাই জানে। কিন্তু তানিয়া
মনিরের সাথে প্রেম করেছে এটা
যেমন অনেকে জানে না, তাদের মধ্যে
কেমন সম্পর্ক ছিল, তারা কোথায় কি
কি করেছে, এবং তাদের ব্রেকাপের
ব্যাপারটাও অনেকে জানে না। এটাই
হয় তো পার্থক্য।
: বাহ, তার মানে যে অবৈধ কাজটা
গোপনে করা হয় সেটা খারাপ হলেও
ঠিক, আর যে বৈধ কাজটা প্রকাশ্যে
করা হয় সেটা ভাল হলেও বেঠিক।
: দোস্ত এক্ষেত্রে আমার কিছুই করার
নেই। আমরা সমাজ দ্বারা শাসিত।
পরিবার নিয়েই থাকতে হয়।
আসলেই তার কিছুই করার ছিল না, তাই
তো শেষ পর্যন্ত সে তানিয়াকেই
বিয়ে করল। তবে কিছু দিন আগে শুনলাম,
তানিয়া নাকি আবার তার পুরানো
প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ শুরু
করেছে। ডিভোর্সি সায়মার এমন ঝুকি
থাকে না। যাই হোক, আমাদের
মেন্টালিটি এমন হয়ে গেছে যে
আমরা বিয়ের ক্ষেত্রে ডিভোর্সি
মেয়ে মেনে নিতে না পারলেও
একটা ব্রেক-আপ মেয়ে ঠিকই মেনে
নিচ্ছি। থাকুক না তার যত ইতিহাস।
যেহেতু এটা ব্রেকাপ হওয়া মেয়েটার
প্রথম বিয়ে, তাই সেই ভাল সর্বোৎকৃষ্ট।।
ডিভোর্সি আর ব্রেকাপ এক নয়।
ডিভোর্স পবিত্র, স্বীকৃত আর ব্রেকাপ
অপবিত্র, অবৈধ।
অথচ অনেকেই বিয়ের ক্ষেত্রে
একাধিক ব্রেকাপেও কোনো
সমস্যা দেখে না কিন্তু ডিভোর্সি
হলে ..!!!
কোনো অন্যায় না করেও সায়মারা
সমাজে মাথা নিচু করে চললেও
তানিয়ার মত সৌখিন বিপথগামীরা
পশুত্বের চেয়েও নিচে নামাকে
নিজেদের অহংকার তথা ডিমান্ড মনে
করে!!।
এই সম্পর্কে আপনাদের মতামত আশা
করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।