খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প | ডিভোর্স নিয়ে কিছু কথা

 ডিভোর্সের গল্প

ডিভোর্সের গল্প

গল্পঃ_ডিভোর্স_

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল শাহজালাল। 


আমি আঁচল। আজ আমাদের ডিভোর্সের দিন। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি, টিকে থাকার লড়াই করতে করতে, আমি অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কারন যে মানুষের জন্য এতোদিন ধরে লড়াই করেছি, সে মানুষটা আমার নয়। সে মানুষটা আসলে মানুষই নয়। মানুষরুপী একজন অমানুষ। সে ভালোবাসা বুঝে না,, বুঝে নিজের স্বার্থ। আজ থেকে ছয় মাস আগের কথা.........


আমিঃ বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, কি 

করবো বলো?


হিমেলঃ আমি তো এখনো চাকরি করি না। এখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। একটু প্রতিষ্ঠিত হতে দাও, 

আর মাত্র কয়েকটা দিন। 


আমিঃ এভাবে আর কতদিন! আমি আর কোনো ভাবেই বাসায় কাউকে ম্যানেজ করতে পারছি না৷


হিমেলঃ আচ্ছা দেখি কি করা যায়। 


আমিঃ আমি আর কোনো ভাবেই কাউকে কিছু বুঝাতে পারছি না। এবার তোমাকে কিছু একটা করতে হবে। নয়তো বাবা আমাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে। 


হিমেলঃ তাহলে কি করবে বলে ঠিক করেছো?


আমিঃ এটা কি আমায় বলে দিতে হবে?


হিমেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে, দেখি কি করা যায়। 


আমিঃ আজকে তোমার কথা আমি বাবাকে বলবো। কেউ আমার কোনো কথা শুনছে না। 


হিমেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলে দাও। কিন্তু তোমার বাবা যদি রাজি না হয়?


আমিঃ দেখা যাক কি হয়। যদি রাজি না হয় তাহলে আমরা পালিয়ে যাবো। তাও তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। 


হিমেলঃ তোমার সাহস আছে পালিয়ে যাওয়ার? 


আমিঃ সাহস করে যখন প্রেম করতে পেরেছি তখন পালিয়ে যেতে পারবো না কেনো? আর এখন এসব প্রশ্ন করছো কেনো? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমাকে আমি জোর করছি? তুমি এমনিতেই আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছো। ভালো মতো কথা বলো না। মাঝে মধ্যে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দাও, আবার সব সময় ব্যাস্ত থাকো। শোনো আজকে বাবাকে বলবো! যা হয়, হবে। 


হিমেলঃ আচ্ছা ঠিক আছে। 


এরপর আমি বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে আমি বাবাকে বললাম...........


আমিঃ বাবা আমি তোমার পছন্দকৃত ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না। আমার পক্ষে তোমার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। 


বাবাঃ সমস্যা কোথায়?? ছেলে দেখতে ভালো আবার ভালো একটা চাকরি করে। ছেলের পরিবারের সবাই অনেক ভালো। 

 

আমিঃ তবুও আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তুমি না করে দাও।


বাবাঃ যেখানে আমি কথা দিয়েছি, সেখানে তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। আমার কথার কোনো নড়চড়

হবে না। আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না। 


আমিঃ আমি একজনকে ভালোবাসি! আর তাকেই বিয়ে করতে চাই। 


বাবাঃ কিহহ এতো বড় সাহস! তুমি আমার সামনে এসব কথা বলার সাহস পাও কোথায় থেকে? 


বাবা অনেক উত্তজিত হয়ে পড়লেন।। মা এসে বাবাকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমার বাবা আগে কখনো এতো বড় আঘাত পান নি। তাই তিনি কোনো ভাবেই আমার অবাধ্যতা মেনে নিতে পারছেন না। মা বাবাকে অনেক বুঝালেন। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেলো। আমি নিজের ঘরে এসে চুপচাপ বসে আছি। এরপর বাবা মা আমার রুমে আসলেন। এবার বাবার কথা বার্তার একটু পরিবর্তন লক্ষ করলাম.......


বাবাঃ ছেলেটা কি করে?


আমিঃ এখনো কিছু করে না। তবে চেষ্টা চালিয়ে 

যাচ্ছে একটা চাকরি জোগাড় করার জন্য। 


বাবাঃ তার মানে ছেলেটা বেকার। ছেলেটা যদি কিছু করতো তাহলে আমি ভেবে দেখতাম। কিন্তু 

ছেলেটা একদম বেকার। তাই এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না। কোনো বেকার ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দিতে পারি না।


কথাটা বলে বাবা-মা দুজনে চলে গেলেন। আমি সাথে সাথে হিমেলকে কল দিলাম........ 


আমিঃ আজকে বাবাকে সবকিছু বলে দিয়েছি। তিনি কোনো ভাবেই তোমার সাথে আমার সম্পর্ক মেনে নিবেন না। এখন কি করবে বলো? 


হিমেলঃ বিয়ে করবে আমাকে? কালকেই আমরা

বিয়ে করবো।


আমিঃ কালকেই? কিন্তু.... 


হিমেলঃ কোনো কিন্তু নয়। কালকে আমরা দুজন বিয়ে করে তোমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। তাহলে তিনি আর না করতে পারবে না। 


আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। 


আমি অনেক ভয় পাচ্ছিলাম।। জীবনে প্রথম এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত বাবা-মাকে ছাড়া নিতে চলেছি। অনেক সাহস সঞ্চয় করে অবশেষে আমরা বিয়ে করলাম। আমি ওকে বিশ্বাস করে বিয়ে করেছিলাম। এরপর আমরা আমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার বাবা কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারলেন না। বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু আমি হিমেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে সেদিন বাসা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম। আমরা এক সাথে থাকতে শুরু করলাম। প্রথম দুইটা মাস আমাদের খুব ভালোই কাটলো। কিন্তু এর পরেই আমি ওর প্রকৃত চেহারা খুঁজে পেলাম। ওকে অনেক আগে থেকেই অনেক জনের সাথে কথা বলতে দেখেছি। কিন্তু কখনো ওকে সন্দেহ করিনি। কারন ওকে আমি মন প্রান দিয়ে ভালোবাসতাম। কিন্তু সেই বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেলো। 


আমিঃ স্বপ্না কে? 


হিমেলঃ না মানে....


আমিঃ থাক বানিয়ে বানিয়ে আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না আমি সবকিছু জেনে গেছি। 


আমি জানতাম, কাউকে ভালোবাসলে সন্দেহ করা ঠিক নয়। এতে করে সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম। আমি ভুল করেছিলাম অন্ধের মতো ভালোবেসে। কিন্তু আমি ওর উপরে রাগ করে থাকতে পারতাম না। নিজেই অনেক কষ্ট পেতাম। কারন আমি যে ওকে অনেক ভালোবাসি। হিমেল এবারের মতো ক্ষমা চাইলো। তাই সবকিছু ঠিকঠাক করে নিলাম।। এভাবেই আমাদের দিন চলতে থাকলো।

একদিন হিমেল হাসিমুখে বাসায় এসে বললো........... 


হিমেলঃ তোমার জন্য একটা সুসংবাদ আছে। 


আমিঃ কি সুসংবাদ, জলদি বলো?


হিমেলঃ আমার চাকরি হয়ে গেছে। এখন আমি আর বেকার নই। 


ওর কথাটা শুনে আমি সেদিন অনেক খুশি হয়েছিলাম। অন্তত এবার আমাদের সুদিন ফিরবে। মনে মনে ভাবলাম অন্তত এবার বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবেন। মনে হয়েছিলো, আমি সঠিক মানুষকে ভালোবেসে ছিলাম। আমাদের কষ্টের দিন শেষ হতে চলেছে। হিমেল চাকরিতে জয়িন করলো৷ দুই মাস সবকিছু ঠিকই ছিলো। কিন্তু এরপরে ওর ভিতরে পরিবর্তন লক্ষ করলাম। অনেক রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকতো। সারাক্ষণ ব্যাস্ত থাকতো। আমাকে সময় দিতো না। আমার বার্থডে পর্যন্ত ওর খেয়াল ছিলো না। ও বাসায় আসতেই আমি বললাম......... 


আমিঃ আজকেও বাসায় দেরি করে ফিরলে?


হিমেলঃ আমি তো প্রতিদিন বাসায় দেরি করে ফিরি, এটা তো তুমি জানোই। আর অফিসে এখন কাজের অনেক চাপ। 


আমিঃ হ্যা বুঝতে পেরেছি। 


আসলে আজ আমার বার্থডে ছিলো। হিমেল এটা ভুলে গেছে। তাই জোর করে ওকে আর এটা মনে করিয়ে দিলাম না৷ আমাদের মাঝে এভাবেই দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকলো। মনে হচ্ছিলো এই হিমেলকে আমি চিনি না। 

মাঝে মাঝে ভাবতাম, এই হিমেলকেই কি আমি ভালোবেসে ছিলাম? এরপর একদিন শুনলাম হিমেল তার অফিসের কলিগের সাথে প্রেম করছে.......


আমিঃ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।


হিমেলঃ বলো।


আমিঃ তোমার অফিসের কলিগ ফোন করেছিলো, তোমার সাথে কি যেনো জরুরী কথা আছে।


আমার কথা শুনে ও একটু বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলো। তারপর বললো.......


হিমেলঃ তা তুমি কি বলেছো? তোমার সম্পর্কে কি 

কিছু জানতে চেয়েছে? 


আমিঃ না আমি কিছুই বলিনি। আর আমার সম্পর্কে তেমন কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। 


তারপর দেখলাম হিমেল ফোন-টা হাতে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। হয়তো মেয়েটার সাথে কথা বলতে গিয়েছে। এর কয়েকদিন পর আবারো সেই মেয়েটা কল দিলো। পরিচয় জিজ্ঞেস করলে মেয়েটা তার পরিচয় দিলো। কিন্তু শেষে যে কথাটা বললো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটাকে হিমেল বিয়ে করেছে।আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না।

তবে আমি আগেই হিমলকে কিছুই বলিনি। আমি ওর অফিসে গেলাম। অবশেষে সবকিছু জানাতে পারলাম।

এরপরের দিন.......


আমিঃ তুমি বিয়ে করেছো?


হিমেলঃ মানে,, এমন মিথ্যা কথা তোমাকে কে বললো?


আমিঃ তোমার অফিসের সবাই বলেছে। তুমি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলে? তোমাকে বিশ্বাস করে আমি আমার বাবা-মাকে ছেড়ে তোমার হাত ধরে বের হয়ে এসেছিলাম। দুঃখের দিনে সব সময় তোমার হাত ধরে পাশে ছিলাম। তার এই প্রতিদান দিলে। আজ তুমি আমাকেই পর করে দিলে। 


এরপর হিমেল আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু হিমেল আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছে। সত্যিই ও আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। সত্যি কারের ভালোবাসলে, ও আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারতো না। তাই আমাদের ডিভোর্স হতে চলেছে। কিন্তু ওর ভিতরে বিন্দু মাত্র অনুশোচনা ছিলো না। 


বন্ধুরা,,কখনো কাউকে অন্ধের মতো ভালোবাসবেন না। এবং নিজের বাবা মায়ের মনে কখনো কষ্ট দিবেন না। তাহলে হয়তো জীবনে আমার মতো সুখী হতে পারবেন না। ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিন। জীবনটা আপনার, সুতরাং আবেগের তাড়নায় বিবেককে বিসর্জন দিবেন না। কষ্টি পাথরে যাচাই করে আমরা সোনা কিনে থাকি। 

আর জীবন সঙ্গী বেছে নিতে আমরা আবেগ ব্যাবহার করে ভুল করি। সঠিক মানুষকে বেছে নিন সম্পর্কে জড়ানোর আগেই। তাহলে জীবনটা অনেক রঙিন হবে।


***********সমাপ্ত***************


ডিভোর্সী নারীদের গল্প পড়ুন।