রহস্যময় গল্প
আমার বিড়ালটা প্রেগন্যান্ট বিষয়টা জানার পর আমি রীতিমতো চমকে যাই। কারণ আমার বিড়ালটা অন্য বিড়ালের সাথে মেলামেশা তো দূরে থাক সে আমার রুম থেকেও বের হতে চায় না।
.
ছাদে মন খারাপ করে বসে আছি। নতুন বাসায় উঠেছি কয়েকমাস হলো। এ কয়েকমাসে সে আমার রুম থেকে বাহির হতে না চাইলেও খেয়াল করেছিলাম আমার বিড়ালটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার রুমে যেতেই চাইছে না। আমি তাকে জোর করে নিয়ে আসলেও আমার কোল থেকে নামতেই চাইতো না। বড় বড় চোখ করে আমার রুমের এদিক সেদিক তাকাতো, বিশেষ করে রাতের বেলা।
আর গভীর রাত হলেই অদ্ভুত ভাবে ডাকাডাকি করতো এর আগে এরকম কখনো হয় নি তাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।
বাসায় তো এসব নিয়ে কেউ পাত্তায় দেয় না। কারণ একজন মেয়ে হিসেবে ঘরের বাদ বাকি কাজ গুলো করা আমার দায়িত্বের মাঝে পড়লেও আমি সারাক্ষণ আমার বিড়ালকে নিয়েই থাকি।
হঠাৎ পেছন থেকে কে যেনো আমার কাঁধে হাত রাখলে আমি চমকে উঠি। পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দেখতে বেশ সুন্দর আর আমার বয়সী হবে তবে গলায় সাদা ওড়না পেঁচানো দেখে আমার বেশ অদ্ভুত মনে হলো। এই গরমে এভাবে কেউ ওড়না জড়ায় নাকি!
যাক আমি মিষ্টি স্বরে বললাম
- কি কিছু বলবে আপু?
- না তোমাকে দেখে মনে হলো খুব মন খারাপ তাই ভাবলাম একটু আলাপ করি তোমার সাথে।
আমি তখনও বেশ অন্যমনস্ক ছিলাম কিন্তু একটা মেয়ে আলাপ করতে চাইলো ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও কথা শুরু করলাম
- তা বেশ তো। কয় তলায় থাকেন?
- আমি নতুন এসেছি তিন তলাতে থাকি।
হঠাৎ খেয়াল করলাম রেলিং এর উপর বসা একটি কালো কুচকুচে বিড়াল আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমিও তার দিকে তাকিয়ে রইলাম হঠাৎ অপরিচিত মেয়েটির কথায় আবারও ঘোর কাটলো
- আচ্ছা আপু তোমার মন খারাপ কেন?
- আপু সত্যি বলতে আমি না খুব বিড়াল ভালোবাসি, আমার একটা পোষা বিড়ালও আছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার আচরণ কেমন যেন অদ্ভুত মনে হচ্ছে। আর তার চেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে সে প্রেগন্যান্ট অথচ আমি তাকে অন্য কোনো বিড়ালের সাথে কখনো মেলামেশা করতে দেয় নি। তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো না এদিকে আব্বু আমার বিয়ের জন্য খুব জোরালো ভাবে পাত্র দেখছেন। আর যে ছেলেটাকে পছন্দ করেছে সে নাকি বিড়াল একদমই পছন্দ করে না। তার নাকি এলার্জির সমস্যা।
মেয়েটি আমার কথা শুনে, দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেলে বললো
- দোয়া করি তোমার অবস্থা যেন আমার মতো না হয়।
আমি এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললাম
- মানে?
- আজ থেকে বছর খানেক আগে আমারও একটা বিড়াল ছিলো। আমি সারাটাক্ষণ তার সাথে সময় কাটাতাম।
আমার একটা বয়ফ্রেন্ডও ছিলো কিন্তু সে সব সময় আমার উপর রেগে থাকতো। কারণ আমি বিড়ালকে বেশি সময় দিতাম।
একদিন আমাদের বাসায় কেউ ছিলো না বিষয়টা সে কেমন করে জানি জেনে গিয়েছিলো। আমাকে জিজ্ঞেসা করাতে তাকে মিথ্যে বলি কারণ আমার বিড়াল তখন প্রেগন্যান্ট ছিলো। এই মূহুর্তে তাকে এভাবে একা রেখে যাওয়া সম্ভব না।
খানিক বাদে সে হঠাৎ বেশ রাগান্বিত ও মাতাল অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির হয়। আমি দরজা খুলতেই সে সোজা আমার রুমে ঢুকে পড়ে। আমি কেউ যেনো দেখে না ফেলে সে জন্য যখন দরজা বন্ধ করছিলাম তখন হঠাৎ আমার মনে হলো তার হাতে ছু/রি/র মতো কিছু একটি ছিলো। আমি তাড়াহুড়ো করে দৌঁড়ে আমার রুমে চলে যাই। ততক্ষণে সে আমার বিড়ালটির মাথা কে/টে শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে।
আমার কালো বিড়ালটি মা/থা ছাড়া র/ক্তা/ক্ত অবস্থায় সেখানে ছটফট করতে থাকে। এমন একটি ভয়ানক দৃশ্য দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
আমার শ্বাস কষ্টের সমস্যা ছিলো কিন্তু সে ভেবেছে আমি মারা গিয়েছি। তাই সে আমার গলায় থাকা এই সাদা ওড়নাটি পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝু/লি/য়ে দেয়।
তার একটি হিডেন ট্যালেন্ট ছিলো সে লেখা নকল করতে পারে। আর সে তার হিডেন ট্যালেন্টটাকে তখন কাজে লাগিয়ে একটি চিঠি লিখলো। যে চিঠিতে লিখা ছিলো, আমার বিড়ালটিকে একটি অদ্ভুত ধরণের প্রাণি হ/ত্যা করে ফেলে। তোমরা সবাই জানো এই বিড়ালটিকে আমি কতটা ভালোবাসি তাকে ছাড়া আমি কি করে থাকি বলো? তাই আমিও ও পারে পাড়ি জমালাম।
চিঠিটি আমার টেবিলের উপর রেখে সে আমার বিড়ালটিকে এলোপাথাড়ি আ/ঘা/ত করতে থাকে যাতে দেখলে মনে হয় কোনো হিংস্র জন্তুর আক্রমণে সে মারা গিয়েছে।
মেয়েটির কথা শেষ হতেই আমার গায়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে যায়। আমি কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম
- কিন্তু তুমি যে বলেছিলে তুমি তিন তলাতে থাকো।
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো
- আপু একটু খেয়াল করো আমি ক'তলাতে থাকতাম বলেছি?
- কেন তিন তলা....
আমার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। কারণ এই মেয়ে তিন তলাতে কীভাবে থাকবে তিন তলাতে তো এখন আমরা ভাড়া থাকি!
মেয়েটি হঠাৎ কালো বিড়ালটির দিকে তাকাতেই বিড়ালটি এক লাফে তার কোলে চলে আসে কিন্তু বিড়ালটির মাথা সেই রেলিং এর উপরেই থেকে যায়।
এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে আমি নিজেকে আর এক মূহুর্তের জন্যেও সামলাতে পারলাম না। আমি সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। জ্ঞান ফিরতেই দেখি সবাই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আর আমার বিড়ালটিও একেবারে সুস্থ ভাবে আমার পায়ের কাছে বসে আছে।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি আর কারা যেন পাশের রুমে বলাবলি করছে যে ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা সে নাকি একটি কালো বিড়ালের কামড়ে অদ্ভুত ভাবে মা/রা গিয়েছে।
তার আরও কিছুদিন পর জানতে পারলাম ছেলেটি একটি খুনের সাথে জড়িত ছিলো। ছেলেটি একটি বিড়ালকে খুব জঘন্য ভাবে হ/ত্যা করে এবং সে তার প্রেমিকাকেও খু/ন করে ফাঁ/সি/তে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো......
_গল্প:কালো_বিড়াল