কষ্টের ভালোবাসার গল্প | চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

 ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

আমার কাছে আমার স্ত্রীর চুল ভালো লাগতো।বেশ লম্বা চুল ছিল ওর।কথা বলার ছলে আমি মাঝে মাঝে ওর চুল ছুঁয়ে দেখতাম। মাঝে মাঝে সে খুব খেপে গিয়ে বলতো এসব আমার খুব অসহ্য লাগে।

আমি ওর চোখেমুখে বিরক্তি দেখতাম।সেই বিরক্তি আসলে সত্যিকারের বিরক্তি না।মেয়েরা মিথ্যেমিথ্যি রাগ দেখাতে পছন্দ করে।তারা চায় কেউ তাদের মিথ্যে রাগকে সত্যি সত্যি ভালোবাসুক, ভালোবেসে সেই রাগ ভাঙ্গিয়ে দিক।আমি ওর রাগ ভাঙ্গাতাম না।কারণ রাগলে ওর ডান গালটা কেমন যেন লাল হয়ে যেতো। আমি ছোট বাচ্চাদের মত সেই গাল ধরে টান দিতাম।এবার আর মিথ্যেমিথ্যি কিছু হতো না,সত্যিকারের মার খেতাম,একদম এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি।

কিলঘুষিতে আমার সমস্যা ছিল না ,কিন্তু তার হাতে থাকতো মারণাস্ত্র।ইয়া বড় নখ নিয়ে আমার চামড়া ফুটো করে দিতো মাঝে মাঝে।আমার সাথে ওর কখনো সত্যিকারের ঝগড়া হতো না। পাঁচ বছরের প্রেমের পরিণতিতে যেদিন বিয়ে হলো, তার ঠিক দুদিন পরেই আমি ওর সাথে ঝগড়া করেছিলাম।

অফিস থেকে ফেরার পর ও আমাকে ডেকে বললোঃ

"দেখো দেখো, এই নতুন হেয়ার কাটটা কেমন"?


আমি ওর হেয়ার কাট দেখলাম না। আমি দেখলাম, ওর লম্বা চুলগুলোর প্রায় অর্ধেক কেটে ফেলেছে। তখন আমার কেন জানি প্রচন্ড কষ্ট লাগলো। আমি ওকে বারবার বলতাম, এই জীবনে ও যেন কখনো চুল না কাটে।

আমার সেই রাগ ভাঙ্গাতে ওর দুই দিন লেগে গিয়েছিল।শেষে ওর সাথে আমার রীতিমত একটা চুক্তি হলো, এই জীবনে ও আর কখনো চুল কাটবে না।ওর মাথার চুল একদিন মেঝে পর্যন্ত পৌঁছাবে, আমি সেই চুল ধরে ওর পেছন পেছন হাঁটবো সারাক্ষণ।

সব ভালোই চলছিল।আমি প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় একটা করে বেলী ফুলের মালা নিয়ে আসতাম।আস্তে করে ওর খোপায় পরিয়ে দিতাম।ও কপাল কুচকে বলতোঃ

"উফফ প্রতিদিন এগুলা কেন আনো"

মনে মনে কিন্তু ঠিকই খুশি হতো। আমি সেই খুশি দেখতাম ওর চোখে।ওর চোখ দুটো মাঝে মাঝে আনন্দে টলমল করতো।

গত বছর জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে আমি ওকে নিয়ে বাসার কাছেই একটা হসপিটালে যাই ব্লাড ডোনেট করার জন্য। কোন একটা কারণে ডাক্তার ওর রক্ত নিলো না।আমাকে বললো, আমি যেন ওর একটা ব্লাড টেস্ট টেস্ট করাই।আমি ওর ব্লাড টেস্ট করালাম।এক জায়গায় না,তিন তিনটা জায়গাতে টেস্ট করালাম।ওর মিথ্যেমিথ্যি করা রাগের মত এই রিপোর্টগুলোও মনে হয় মিথ্যে ছিল।কারণ আমি বিশ্বাস করতাম না ও ভয়াবহ এক ক্যান্সার সাথে নিয়ে বেঁচে আছে।আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

কেমোথেরাপি চললো মাসের পর মাস।দুইবার ওকে বিদেশে নিয়ে গেলাম।কিচ্ছু হলো না।দূর আকাশের ওপর থেকে আমার করা প্রার্থনাগুলোর কোন উত্তর এলো না!

এই মুহূর্তে আমার স্ত্রী আমার সামনে ও বসে আছে।বললো 

"কি ব্যাপার, আজকে বেলি ফুলের মালা আনলে না"?কেন ?? খোঁপা নেই বলে ?? এমনি এমনি দেয়া যায় না?

আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।ওর চোখে পানি নেই, কিন্তু ওর কন্ঠে কান্না ছিল।সেই কান্নার অস্তিত্ব আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।

আমাকে বলতে লাগলো "আমি কিন্তু আমাদের সেই চুক্তিতে হেরে গিয়েছি।বলেছিলাম, কখনো চুল কাটবো না।দেখো, আজ মাথায় কোন চুল নেই।আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।একটু ডাক্তারকে ডাকো তো"।আমি দৌড়ে গেলাম।সে যাত্রায় অক্সিজেন দিতেই ও ঠিক হয়ে গেলো!

আমি সবসময় মিরাকেল এ বিশ্বাস করতাম।আমি ভাবতাম, একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখবো কিছু একটা বদলে গেছে।একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে সত্যি সত্যি টের পেলাম, আমার স্ত্রীর সাথে আমার শেষ কথা বলা হয়ে গেছে আজ সকালেই।আর কখনো ও আমার সাথে কথা বলবে না।

এখন রোজ দুপুরে শাহবাগের মোড়ের ঐ ফুলওয়ালা পিচ্চি মেয়েটার কাছ থেকে আমি বেলি ফুলের মালা কিনি।তারপর মেয়েটার মাথার চুলে হাত রেখে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বেলী ফুলের মালাটা মুঠোয় ধরে বাচ্চাদের মত চিৎকার করে কাঁদি।রাস্তার মানুষগুলো খুব সম্ভবত আমাকে পাগল ভাবে।তাতে আমার অবশ্য কিছু যায় আসে না।

সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, পৃথিবীর সব ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলোকে এক নিমিষেই সুস্থ করে দাও।


ছোট_গল্প

অনুগল্প


এমন আরও গল্প পড়ুন।