খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

 কষ্টের গল্প

কষ্টের গল্প

দোস্ত তোর বউকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।ওকে আমি বিয়ে করতে চাই তুই ওকে ছেড়ে দে।আমি তোর বউকে তোর চেয়ে ভালো রাখবো,তুই তো তোর বউকে সময় দিতে পারিস না আমি তোর বউকে বিয়ে করে সবসময় সময় দিবো।"


সিহাব তার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড রিয়াজের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো।সে ভাবতে পারছে না রিয়াজ তাকে এমন কথা কোনোদিন বলবে।সিহাব কোনো উত্তর না দিয়ে চলে আসতে লাগলো।রিয়াজ পিছন থেকে বলতে লাগলো

->আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড।আর তুই আমার কোনো আবদার ফেলতে পারিসনি।আর আমি জানি এটাও ফেলতে পারবি না।

সিহাব চোখ বন্ধ করে ফেললো।সিহাব চিন্তিত মুখে বাসায় ঢুকলো।তখন ওর স্ত্রী তাসফিয়া এসে বলল

->কি হয়েছে মন খারাপ কেন?

->কিছু হয়নি।আচ্ছা রিয়াজের সাথে তো তুমি প্রতিদিন কথা বলো ওকে তোমার কেমন মনে হয়?

->সত্যি বলতে ওর কথা বার্তা দেখে মনে হয় যে সে আমায় পছন্দ করে তাই আমি আর কথা বলিনা।তাই সারাদিন সে মেসেজ দেয়।আমি উত্তর দিইনা।কেন কিছু হয়েছে?

->না এমনি।

সিহাব নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো।আজ থেকে ছয় মাস আগে তাসফিয়ার সাথে সিহাবের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে তাই কাউকে বলার সময় পায়নি।সিহাব আর রিয়াজের বন্ধুত্ব প্রায় সাত বছর ধরে।সিহাব মধ্যেবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও রিয়াজ বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান।সিহাব ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার পর নিজের বাবার ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে তাই আর পড়ালেখা করেনি।কিন্তু রিয়াজ এখনো পড়াশোনা করে।

রিয়াজ সিহাবের বিয়ের কথা শোনার পর সিহাবকে বলে

->বাহ বন্ধু বাহ তুই আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড তুই বিয়ে করলি অথচ আমায় জানালি না।এই বন্ধু ভাবিস আমায়।

সিহাব তখন রিয়াজের কাধে হাত রেখে বলে

->আরে দোস্ত রাগ করিস না।আসলে হুট করে বিয়েটা হয়ে গেছে তো তাই কাউকে বলার সময় পাইনি রে।

->আচ্ছা ঠিক আছে কোনো ব্যাপারনা।তাহলে চল আমায় ভাবির সাথে দেখা করা একটু ভাবির হাতের রান্না খাবো।

->আচ্ছা ঠিক আছে চল।

সিহাব রিয়াজকে নিয়ে বাসায় আসে।বাসায় আসার পর তাসফিয়াকে সে রিয়াজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।রিয়াজ তাসফিয়াকে দেখেই ওর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে সেটা তাসফিয়ার একদম ভালো লাগে না তাই সে বলে

->ভাইয়া আপনি বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

->আহা ভাবি এত তাড়া নেই।একটু বসুন আপনার সাথে একটু গল্প করি।

->না ভাই আমার গল্প করার সময় নেই।

তাসফিয়া রান্না ঘরে চলে যায় তখন রিয়াজ বলে

->ভাবির আচরনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

->শোন ওই একটু এরকমই।পরপুরুষ দেখলে তাদের সামনে আসেনা।

->আমায় কি পরপুরুষ মনে হয় আমি তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তোর ভাইয়ের মতো।সে হিসেবে আমার সাথে কথা বললে ক্ষতি কি?

->আচ্ছা ঠিক আছে কথা বলবে।

সিহাবের মা রিয়াজকে বাসায় আসতে দেখে সিহাবকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বেশ ধমকের সুরে বলে

->তুই ওকে এই বাড়িতে কেন নিয়ে এসেছিস?

->আসলে মা বিয়েতে তো কাউকে বলেনি তাই রিয়াজ আমার বিয়ের কথা শুনে আমার বউকে দেখতে চেয়েছিলো।যতই হোক বন্ধু বলে কথা না তো আর করতে পারি না।

->তুই আবারো ভুল করতে যাচ্ছিস।কি দরকার তোর বউয়ের সাথে পরিচয় করার।একবার কি করেছে তোর সাথে সেটা কি ভুলে গেছিস?

->মা সে এটা করে ভুল করেছে আর আমার কাছে মাফ চেয়েছে।আর আমার বিশ্বাস সে আর কিছু করবে না।

->তোর এই সহজে মানুষকে বিশ্বাস করার ব্যাপারটা তোর বিপদ ডেকে নিয়ে আসে।যা পারিস কর।

সিহাব ওর মায়ের রুম থেকে বের আসতেই তাসফিয়ার মুখোমুখি হলো।তাসফিয়া বলল

->কি হয়েছে মা কি যেন বলছিলো?

->তেমন কিছু না চলো।

সিহাব কিছু না বলায় তাসফিয়া আর কথা বাড়ালো না।তাসফিয়া রান্না করতে চলে গেলো।

তাসফিয়া খাবার রান্না করে নিয়ে আসে।রিয়াজ খাবার খাচ্ছিলো আর তাসফিয়ার রান্নার প্রশংসা করছিলো।সেদিন রিয়াজ বাসায় যাওয়ার পর শুধু তাসফিয়ার কথা ভাবতে থাকে।তার চেহারা বার বার রিয়াজের চোখে ভাসতে থাকে।এক মুহুর্তে ভুলে যায় যে তাসফিয়া একজন বিবাহিত মেয়ে তাও সে তার বেস্টফ্রেন্ডের স্ত্রী।

রিয়াজ ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করছিলো এমন সময় তাসফিয়া তারিন নামের এক মেয়ের আইডি চোখে পড়ে।রিয়াজ আইডি ঢুকে মিচুয়াল ফ্রেন্ডলিস্টে সিহাবকে দেখে বুঝে যায় এটাই তাসফিয়ার আইডি।রিয়াজ তাসফিয়ার আইডিতে রিকুয়েষ্ট পাঠায় কিন্তু তাসফিয়া কোনো রেসপন্স করেনা।তখন রিয়াজ ইনবক্সে নিজের পরিচয় দেয়।তাসফিয়া তখন সিহাবকে বলে

->তোমার ফ্রেন্ড আমার আইডি মেসেজ দিয়েছে কি করবো?

->কথা বলিও তবে নিজে থেকে মেসেজ দিবেনা।

->সেটা তো কখনোই করবো না।আমার তো তুমি ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা।

সিহাব হেসে উঠে তাসফিয়াকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু দেয়।তাসফিয়া তখন বলে

->আমি ফেসবুক চালায় শুধু মাত্র গল্প পড়ে সময় পার করি।এছাড়া আমি আর কারো সাথে কথা বলিনা।তুমি আমার আইডির পাসওয়ার্ড রাখতে পারো সমস্যা নেই।

->আমি আমার বউটাকে বিশ্বাস করি।আমার বউ আমায় ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতেই পারেনা।

->হি হি ঠিক বলেছো।যখন আমাদের বাবু হবে তখন আর এসব চালাবো না।তখন বাবুকে নিয়ে সময় পার করবো।

->খু্ব শীঘ্রই তোমার সে আশা পূরন হবে ইনশাআল্লাহ।

তাসফিয়ার মুখে লজ্জার ভাব দেখা যায়।এভাবে চলছে দুইজনের মিষ্টি ভালোবাসার দিনগুলো।তাসফিয়া প্রতিদিন সিহাবের বাসায় আসার অপেক্ষা করতে থাকে।এই অপেক্ষা করার বিষয়টা তাসফিয়ার খুব ভালো লাগে।দিন শেষে যখন সিহাব বাসায় ফিরে আসে তখন তাসফিয়ার মনে হয় এই মুহুর্তে ওর দীর্ঘসময়ের অপেক্ষার অবসান হলো।সিহাব বাসায় এসেই তাসফিয়াকে একবার জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দেয়।সিহাব বলে,তার এই কাজটা নাকি তার সারাদিনের ক্লান্তি দুর করে দেয়।তাসফিয়া নিজেও তো এমনটায় চায়।এরপর বাকি সময় টুকু দুইজন হাসি ঠাট্টা দুষ্টুমি আর গল্প করে কাটিয়ে দেয়।


রিয়াজ প্রতিদিন তাসফিয়ার সাথে মেসেজে কথা বলে।তাসফিয়া বেশ ভদ্র হবে ওর মেসেজের রিপ্লাই দেয়।রিয়াজ তাসফিয়াকে বলে

->ভাবি আপনার সাথে না সিহাবকে মানায়নি?

->কেন?

->আরে ভাবি বুঝো না।সিহাব দেখতে শ্যামলা আর তুমি হলে ধবধবে ফর্সা।তোমার সাথে কি ওর মানায়।তোমাকে বরং কোনো এক রাজপুত্রের সাথে মানায়।

->হাহাহা তাই নাকি?আল্লাহ ওর জন্যেই আমাকে সৃষ্টি করেছে তাই তো আমি ওর হয়েছি।

->কিন্তু তারপরেও তোমার উচিত ছিলো ওকে বিয়ে না করা।আমি যদি তোমায় পেতাম তাহলে সবসময় রাজরানী করে রাখতাম।

->তুমি একটা বিয়ে করো।তারপর তাকে তুমি রাজরানি করে রেখো কেমন?আমায় এসব না বললেও চলবে।আমি এভাবে অনেক ভালো আছি।


রিয়াজ বিভিন্ন ভাবে তাসফিয়াকে ইমপ্রেস করতে চায় কিন্তু তাসফিয়া আগের মতোই থাকে।ওর কোনো কথা গায়ে মাখে না।রিয়াজ তাসফিয়াকে বলে

->আচ্ছা ভাবি সিহাব তো সারাদিন বাইরে গাধার মতো খাটে।তোমাকে তো সময় দেয়না সারাদিন এতে তোমার কষ্ট হয় না।

->কষ্ট হবে কেন?সিহাব যে গাধার মতো খাটে সেটা তো আমার আর ভবিষ্যতে আমাদের জীবনে যে আসবে তার সুখের জন্য।

->হুমম বুঝলাম।কিন্তু সারাদিন তো তুমি একা থাকো তাই হয়তো একাকিত্ব তোমায় ঘিরে ধরে তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলে তোমার একাকিত্ব দুর করবো।

->আমি কি বলেছি যে আমায় একাকিত্ব ঘিরে ধরে আমি তো এমনিতে অনেক ভালো আছি।যার মনে তার স্বামীর ভালোবাসা থাকে তাকে কখনো একাকিত্ব ঘিরে ধরেনা।তাই এসব বলবেন না।

->ঠিক আছে বলবো না।তবে আমি চাইছিলাম আমরা দুইজন এমন বন্ধুত্ব করবো যার সাথে সব শেয়ার করা যায়।

->ভার্সিটিতে পড়ো তোমার তো অনেক মেয়ে বন্ধু থাকার কথা।তাদের একজনকে এমন বন্ধু বানিয়ে নিলেই পারো।

->সবাই তো আর তোমার মতো না।আমি চাইছিলাম সিহাব তো আমার ছেলে বেস্টফ্রেন্ড আর তার স্ত্রী হিসেবে তুমি না হয় আমার মেয়ে বেস্টফ্রেন্ড হলে।

->সরি ভাই।আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড আমার স্বামী তাই দ্বিতীয় কাউকে আমি চাই না।আর আমায় মেসেজ দিবে না ভাই তুমি।এবার মেসেজ দিলে ব্লক করে দিবো।

তখন রিয়াজ বলে

->সিহাব একটা মেয়েকে পছন্দ করতো জানো সেটা?

->হুম জানি বিয়ের আগে সব বলেছে আমায়।সে শুধু পছন্দ করতো এর বেশি কিছু না।প্রেম তো আর করেনি।এমন হতেই পারে।আর মেসেজ দিবেননা।

এরপর থেকে তাসফিয়া রিয়াজের সাথে আর কোনো কথা বলে না।


সিহাব রুমে শুয়ে থেকে রিয়াজের কথা গুলো ভাবছে যে,সে যাকে বেস্টফ্রেন্ড ভেবে আসছে সে কি করে পারে তার বন্ধুর স্ত্রীর দিকে চোখ দিতে।মানুষ কতটা নিচ মানষিকতার হলে এই কাজ করতে পারে?প্রথমবার ছাড় দিয়েছে বলে এইবারও ছাড় দিবে এটা কখনো হতে দেয়া যাবে না।এমন সময় তাসফিয়া সিহাবের পাশে এসে শুয়ে পড়লো।তাসফিয়া সিহাবের মাথা হাত বুলিয়ে বলল

->আমি জানি যে কিছু একটা হয়েছে তোমার?বলো কি হয়েছে তোমার? 

->রিয়াজ,,,,,,

সিহাব বলতে যাবে তার আগেই রিয়াজ বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো

->সিহাব আমি তোকে যেটা বলেছি তুই সেটা কর প্লিজ।আমি সত্যি তোর বউকে খুব খুব ভালোবাসি।আমি ওকে তোর চেয়ে খুব বেশি ভালো রাখবো।

কথাটা শুনে তাসফিয়া সিহাব দুইজনেই বেশ রেগে বাইরে গেলো।বাইরে আসতে দেখলো রিয়াজ একটা ব্লেড হাতে দাঁড়িয়ে আছে।তাসফিয়াকে দেখে হেসে উঠে বলল

->জান তুমি যদি আমার না হও তাহলে আজ আমি এই মুহুর্তে নিজেকে শেষ করে দিবো।

->ওই মিয়া আপনার এসব পাগলামির মানে কি?

->পাগলামি নই।আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি।তুমি রাজি না হলে আমি এখনি কিন্তু হাতে,,

আর তখনই সিহাব গিয়ে রিয়াজেন কলার চেপে ধরে ওকে একটা ঘুষি মারলো।সেটা দেখে আশেপাশের আরো অনেক ছেলে এগিয়ে এলো সিহাবের হয়ে।সিহাব বলল

->এসব করার মানে কি?তোর বন্ধুদের লিস্টে যারা আছে তাদের প্রত্যেকের সাথে এরুপ বাজে কাজ করে কি মজা পাস তুই।বন্ধু বলে ছেড়ে দিচ্ছি এরপর কিছু করলে আর ছেড়ে দিবো না।

তখন এক ছেলে বলল

->ভাই খালি হুকুম দাও এই বেটারে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিই।

->না এসবের প্রয়োজন নেই।যেতে দাও ওকে।

রিয়াজ যেতে যেতে ব্লেড দিয়ে হাঁত কাটতে কাঁটতে তাসফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল

->তাসফিয়া আমি তোমায় সত্যি খুব ভালোবাসি।আর তোমাকে আমার করে নিবোই।তাসফিয়া।

তাসফিয়া এটা শুনে ভিতরে চলে গেলো।সিহাব ভিতরে আসতেই তাসফিয়া রেগে গিয়ে বলল

->এই হারামজাদাকে বাসায় নিয়ে আসায় ভুল হয়েছে।আর কি যেন বললে যে,সে ওর বন্ধুদের সাথে করে বলতে?ব্যাপারটা বুঝলাম না।

->রিয়াজ ওর বন্ধুর জিএফদের সাথেও এরকমটা করে যে,সে নাকি ওর বন্ধুদের জিএফকে ভালোবাসে এটা সেটা করে ইমপ্রেস করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।একজন আরেকজনের নামে মিথ্যা দোষ এমন ভাবে বের করে যে কেউ বুঝতে পারেনা।

->শয়তান একটা।

রিয়াজ বেশ কয়েকদিন আর কোনো ডিস্টার্ব করেনি।সিহাব কাজে যাওয়ার পর তাসফিয়া ফেসবুক চালাচ্ছিল।এমন সময় একটা মেসেজ এলো।তাসফিয়া মেসেজ অপেন করে দেখলো রিয়াজ লিখেছে

->তোমায় একটা কথা বলার ছিলো?

তাসফিয়া জবাব দিলো

->কি কথা?

->সিহাব যে একজনকে পছন্দ করতো সেটা একদম মিথ্যা।সে যাকে পছন্দ করতো তার সাথে রিলেশন ছিলো।এমনকি দুইজনের মধ্যে ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত হয়েছে।আর যার সাথে এসব করেছে সে প্রেগন্যান্ট হয়েছিলো।

->ওর নামে একদম বাজে কথা বলবে না।

->সত্যি কথা বাজে মনে হয়।ওর রুমডেট আমার বাসায় হয়েছিলো।ওই তো একটা চরিত্রহীন।আমি এমনিতে যেমনই হই এসব কাজ কখনো করিনি।যদি তোমায় পাই তাহলে আর কখনো কারো দিকে তাকাবো না।

->চুপ করো।আর সিহাব যে এসব করেছে তার প্রমাণ কি?

->প্রমান আমি নিজে।

->তুমি যে আমাদের মধ্যে অশান্তি বাজানোর জন্য এসব বলছো না তার গ্যারান্টি?

->আমি অশান্তি কেন করবো?আমি তো তোমায় ওর সাথে দেখার পর থেকে ভাবতে পারছি না ওর মতো খারাপ ছেলে তোমার মতো ভালো মেয়ে পায় কিভাবে?আসলে খারাপরাই ভালো পায়।আমি তোমায় ভালোবাসি আর তোমার ভালোর জন্য সব বললাম।এখন বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার।বাই।

তাসফিয়া এসব শুনে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না।মনে মনে ভাবছে সিহাবের মতো ছেলে এসব কি করে করতে পারে?সবার সামনে ভদ্র সেজে থাকে আর তলে তলে এসব করে বেড়ায়।সত্যি আজকাল মানুষকে চেনা খুব কঠিণ।সিহাব বাসায় এসে দেখলো তাসফিয়া শুয়ে আছে।সিহাব তাসফিয়াকে ডাকলো কিন্তু সে কোনো কথা বলছে না।সিহাব তাসফিয়াকে নিজের দিকে ঘুরালো তখন দেখলো তাসফিয়া কাঁদছে।সিহাব বেশ অবাক হয়ে গেলো ওকে কাঁদতে দেখে।সিহাব তাসফিয়াকে কান্নার কারন জিজ্ঞেস করতেই বলল

->তুমি বিয়ের আগে আমায় বলেছিলে তুমি শুধু একজনকে পছন্দ করতে অথচ তোমাদের মধ্যে ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত হয়েছে।

তাসফিয়ার মুখে এই কথা শুনে সিহাবের পায়ের নিচে থেকে যেন মাটি সরে গেলো।সিহাব বলল

->এসব তোমায় কে বলেছে?

->পাপ কখনো চাপা থাকে না।সেটা আজ না হোক কাল প্রকাশ পাবেই।তোমারটাও পেয়েছে।

->মিথ্যা কথা আজ পর্যন্ত আমি তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে স্পর্শ করিনি।

->থাক আর কিছু বলতে হবে না।

->আমি জানি এসব তোমায় রিয়াজ বলেছে।কিন্তু সত্যি এটা নয়।

->সত্যিটা তাহলে কি?

->আমি যে মেয়েটাকে পছন্দ করতাম ওর নাম ছিলো মারিয়া।মেয়েটার কথা আমি রিয়াজকে বলি,সেটা তো আমার বেস্টফ্রেন্ড কোনো কথা তার কাছে গোপন রাখতাম না।তখন সে মেয়েটাকে দেখতে চায়।কিন্তু মেয়েটাকে যেদিন রিয়াজ দেখে তখন থেকে সে মারিয়ার পিছনে পড়ে।আমি এটা জিজ্ঞেস করলে বলে,সে নাকি মারিয়া কে খু্ব ভালোবাসে আর তাকে ছাড়া নাকি সে বাঁচবে না।মারিয়ার জন্য সে হাত কাটে।কান্না করে যেটা দেখে ভাবি সে সত্যি মারিয়াকে ভালোবাসে।তাই আমি ওদের দুইজনের মাঝখান থেকে সরে আসি।আর ওদের রিলেশন শুরু হয় তারপর সেটা ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত চলে যায়।এরপর রিয়াজ নিজে ব্রেকাপ করে দেয়।মেয়েটার মা ছিলো শুধু বাবা নেই।এসব জানার পর মারিয়ার মা রিয়াজকে অনেক অনুরোধ করে বিয়ে করার জন্য কিন্তু সে করেনা।পরে মেয়েটার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়।

এসব শুনে তাসফিয়া আর কোনো কথা বলে না।আজ বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো তাসফিয়া ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করেনা।এমনকি সিহাবের সাথেও কথা বলেনা।রাতের বেলা দুইজন শুয়ে আছে দুই মুখো হয়ে।তখন তাসফিয়া বলল

->আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারবো না।সত্যি বলতে আমি নিজে রিয়াজকে ভালোবেসে ফেলেছি।আর আমি ওর সাথে ভালো থাকবো।সত্যি আমি তোমার সাথে সুখী নয়।

এই কথা শুনে সিহাব চমকে উঠে তাসফিয়াকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে বলে

->সোনা তুমি এসব কি বলছো আমি তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো?তোমাকে ছাড়া আমি একটু ভালো থাকতে পারবো না।

এই বলে সে তাসফিয়াকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে কিন্তু তাসফিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

->এসব পাগলামো আমার ভালো লাগে না।তুমি যদি আমায় ভালোবেসে থাকো তাহলে সত্যি আমার ভালো চাইবে।আমি রিয়াজের সাথে ভালো থাকবো।আর সে কাল সকালে আমায় নিতে আসবে।আমি ওর সাথে চলে যাবো।

সিহাব আর কিছু বলেনা।ওর বুক ভারী হয়ে আসে।তাসফিয়াকে বলে

->ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই করবে।

সিহাব ভাবে সে আজ কত বড় ভুল করেছে রিয়াজকে নিজের স্ত্রীর সাথে পরিচয় করে দিয়ে।প্রথমবার যখন রিয়াজ এসব করেছে তখনি উচিত ছিলো ওর সাথে সম্পর্ক না রাখা।সিহাবের মা ওকে ঠিক কথায় বলেছিলো যে সে যেন ওর সাথে সম্পর্ক না রাখে কিন্তু সিহাব সেটা না শুনে ওর সাথে বন্ধুত্ব রেখেছে।মানুষকে সহজে বিশ্বাস করার ফল আজ বুঝতে পারছে।

পরেরদিন সকালে উঠে দেখলো তাসফিয়া গোসল সেরে আয়নার সামনে বসে সাজগোছ করছে।আজ ও হলুদ রংয়ের জামা পড়েছে।যেটা সিহাব তাসফিয়ার জন্মদিনে গিফট করেছিলো।আজ প্রথম পড়েছে এটা।সিহাব উঠে পড়লো।এমন সময় তাসফিয়া এসে বলল

->কেমন লাগছে আমায় বলো তো?

সিহাব মুচকি হেসে বলল

->অনেক সুন্দর।

তাসফিয়া বলল

->আজ তো তাহলে রিয়াজ সত্যি ক্রাশ খাবে।কখন যে আসবে ও।

হঠাৎ বাইকের আওয়াজ হলো।তখন রিয়াজ বাইরে থেকে জোরে করে বলল

->ডার্লিং আমি চলে এসেছি।

তাসফিয়া তখন হেসে উঠে বলল

->ভালো থেকো কেমন?আর সুন্দর দেখে একটা বিয়ে করে নিও।

তাসফিয়া বাইরে চলে গেলো।কি যেন ভেবে সিহাব বাইরে আসলো তখন রিয়াজ হেসে হেসে বললো

->বলেছিলাম না তাসফিয়াকে আমার করে ছাড়বো দেখলি তো।

সিহাব সেখানে না থেকে চলে আসছিলো আর তখন সে বেশ কয়েকটা ঠাস ঠাস করে আওয়াজ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকিয়ে যা দেখলো তা দেখে অবাক হয়ে গেলো।দেখলো তাসফিয়া ওর পায়ের সেন্ডেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।আর রিয়াজ ওর দুই গাল ধরে আছে।সিহাব একদম অবাক।এটা কি হলো বুঝতে পারছে না।তাসফিয়া জোরে করে বলল

->তুই কি ভেবেছিস আমি তোর কথা শুনে সব বিশ্বাস করে নিবো কোনো কিছু যাচাই না করেই।তুই সিহাবের নাম যা বলেছিস সব তো তুই করেছিস ওই মেয়ের সাথে।আমি সব জেনেছি ওই মেয়ের থেকে।তখন থেকে আমার ইচ্ছা করছিলো তোকে জুতা মারার তাই তোর সাথে আমার এসব মিথ্যা নাটক করতে হয়েছিলো।কষ্ট দিতে হয়েছে আমার স্বামীকে শুধু তোর মতো অমানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।


এই বলে তাসফিয়া আরেকটা মারতে যাবে আর তখনই রিয়াজ তাসফিয়ার হাত ধরে যেটা দেখে সিহাব এসে তাসফিয়ার হাত রিয়াজের থেকে ছেড়ে নিয়ে রিয়াজের হাত মুচরে ধরে।আর এটা দেখে এলাকার আরো কয়েকটা ছেলে এগিয়ে আসে আর তারা সবাই মিলে রিয়াজকে ধরে আচ্ছা মতো ধোলায় দিয়ে রিয়াজের গলায় জুতার মালা পরিয়ে চুল কেটে দিয়ে সারা এলাকা ঘুরায়।আর সেটার ভিডিও করে নেটে ছেড়ে দেয়।এরপর রিয়াজকে সবাই ছেড়ে দেয়।

সিহাব বিছানায় বসে আছে।তাসফিয়া বিছানার ওপর উঠে পিছন থেকে সিহাবের গলা জড়িয়ে ধরে সিহাবের কানের লতিতে হালকা কামড় দিতে সিহাব কেঁপে উঠলো।তাসফিয়া ফিসফিসিয়ে ওর কানে কানে বলল

->ওই সোনা রাগ করেছো আমার ওপর?

->না তো রাগ করবো কেন?আমি তো সুন্দরী দেখে একটা বিয়ে করবো।

তাসফিয়া রেগে গিয়ে সিহাবের গলা হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল

->আরেকবার বিয়ের কথা বললে এভাবে মেরে ফেলবো।

->তোমার মতো সুন্দরী বউয়ের হাতে মরতেও রাজী।

তাসফিয়া লজ্জা পেয়ে সিহাবের ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়ে বলল

->I love you Sona.

->I love you to cute petni.

পেত্নী কথা শুনে তাসফিয়া হেসে ফেললো।সিহাবের মুখে পেত্নী ডাক শুনে তাসফিয়া অনেকটায় খুশি হয়।


আমাদের অনেকের মধ্যে রিয়াজের মতো বন্ধুদের অভাব নেই।যদি কেউ এরকম থেকে থাকে তবে আজই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন আর না করুন কখনো এদের কে নিজের স্ত্রীর অথবা প্রিয়জনের সাথে পরিচয় করে দিবেন না।এমনকি আপনার ভালো বন্ধুকেও না।এদের মতো বন্ধুরা আপনাদের স্বামী স্ত্রী সহ সকল সম্পর্ক ভাঙ্গতে সবসময় প্রস্তুত থাকে।অনেক মেয়ে আছে যাদেরকে এই ধরনের ছেলেরা খুব সহজে তাদের ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হয়।সবার উচিত এই রকম ছেলেদের কোনোভাবে সুযোগ না দেওয়া।


গল্প-লোভী নারী

(সমাপ্ত)


এমন আরও গল্প পড়ুন।