রোমান্টিক গল্পের লিংক | রোমান্টিক গল্প ২০২৪

 ভালোবাসার রোমান্টিক স্ট্যাটাস

ভালোবাসার রোমান্টিক স্ট্যাটাস

মা_বউয়ের_চরম_ভালোবাসা

আমরা মা ছেলের ছোট পরিবার। বাপের পরনারী আসক্তির কারণে আমি যখন টুতে পড়ি তখন রাগ করে আম্মা আমাকে সাথে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। বাংলা সিনামার শাবানার মতো সেলাই মেশিন চালায়ে উনি আমাকে বড় করেছেন। তবে আমি নায়ক জসীমের মতো ঠেলা টেনে কোটিপতি হতে পারি নি। মোটামুটি মানের এক এন.জি.ওতে মোটামুটি মানের বেতনে চাকরী করি।


এন.জি.ওর কাজে আজ বড় ম্যাডামসহ একটা গ্রামে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে আমি হঠাৎ নতুন বউ নিয়ে বাসায় ফিরেছি।

একটা মোটরসাইকেলের জন্য মেয়েটার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আমি হঠাৎ দায়িত্ব নিয়ে নেই। এমন একটা চাঁদের মত দেখতে মেয়েকে হোন্ডার জন্য যে বেটা বিয়ে করে না সে একটা গর্ধব! কিন্তু আমি তো আর গর্ধব না। 

নারাবাদী মা আমার, প্রথমে অবাক হলেও যৌতুকের কথা শুনে দোলাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আমিও খুশি হয়ে যাই শাশুড়ী বউয়ের মিল দেখে। ভাবলাম স্বামী স্ত্রী আর মমতাময়ী মাসহ সুখের সংসার হবে। আহা!


দোলা গুনী মেয়ে। এসেই শাশুড়ীর সাথে কাজ ধরে নিয়েছে। কিন্তু কেন জানি বউয়ের সাথে আমার চোখাচোখি হলেই আম্মা চোখ গরম করছেন। বউয়ের কাছে গেলে তাকে ডেকে অন্য কাজ দিচ্ছেন। এর কারণ ধরতে পারি না। তবে আমি এসব চিন্তা করা বাদ দিয়ে নিজের প্রথম বাসর নিয়া ভাবতে লাগি। রুমে বসে মুচকি মুচকি হাসি আর নিজেই লজ্জা পাই।

দোলা রুমে ঢুকলে আমি মিষ্টি হাসি দেই কিন্তু সে কাষ্ঠ হাসি দিয়ো বলে আম্মার তো শরীর খারাপ করতেছে। উনার নাকি প্রেসার বাড়ছে। আজ রাত আমারে উনার কাছে থাকতে বলছে।

হায় আমার বাসর রাত! আজ রাতেই বুঝি মায়ের শরীর খারাপ করলো! আমার দুঃখী মনকে লুকিয়ে চিন্তিত মুখ করে বলি আম্মার শরীর খারাপ?

দোলা বলে আসলে আমি তো আজ নতুন আসলাম। কিন্তু আপনার তো মা। মায়ের এমন শরীর খারাপে আপনেই তার কাছে থাকতে চাইতেছেন তাই না? আমি আপনার চিন্তা বুঝতেছি। আপনি বরং আম্মার সাথে আজ রাত থাকেন গিয়ে আমি কিছু মনে করমু না। মাও খুশি হবেন। 

দোলার যুক্তি ঠিক না বেঠিক জানি না তবে বাসরের দুঃখ নিয়ে আমি মায়ের রুমে চলে গেলাম। আম্মা কেন জানি আমাকে দেখে খুশি হলেন না। পাশ ফিরে শুয়ে গেলেন। দশ মিনিটে তার নাক ডাকা শুরু হয়ে গেলো।

আমার রুমে নতুন বউ আর আম্মা আমাকে পাশে বসায়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। আমার উসখুস মন শুধু উড়ে উড়ে বউয়ের কাছে যেতে চাইছে কিন্তু অসুস্থ মাকে রেখে কেমনে যাই। হাজার হোক মাতৃভক্ত ছেলে আমি!

  ঘড়িতে দুইটা বেজে চল্লিশ। আম্মা সমান তালে নাক ডাকছে। আমার চোখে একফোঁটা ঘুম নাই। অবশেষে আম্মার পা ছুঁয়ে মাফ চেয়ে বলি আম্মা আমি আপনার আদর্শবান ছেলে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। খালি আজ রাত আমাকে মাফ করে দেন। আম্মা গর.....র... গর......র নাক ডাকছে।

আমি পা টিপে টিপে আমার রুমে উঁকি দিয়ে দেখি বউ জেগে আছে আমার অপেক্ষায়। আমাকে দেখে একটা দুষ্ট হাসি দিলো। আমি সময় ক্ষেপণ না করে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে লাইট ওফ করে দেই। 


সকালে ঠোঁটেমুখে ভালোবাসার মধু মেখে ঘুম ভাঙ্গে কিন্তু চেয়ে দেখি আম্মা মাথার উপর দাঁড়ায়ে ফোঁস ফোঁস করছেন। 

বেহায়া, বদজ্জাত, চরিত্রহীন বলে আমার মাথায় পিঠে ধুমধাম পিটাতে লাগেন। বিয়ের পরদিন চরিত্রহীন অপবাদ নিয়ে মায়ের হাতে পিটা খাওয়া আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি!

আমি কোনোমতে তাল সামলে বলি আম্মা চরিত্রহীন বলতেছেন কেন?

চুপ থাক বেহায়া! একটা রাতের জন্য ধৈর্য্য ধরতে পারলি না। মনে এতো রং! এই বুঝি আমি তোরে  শিক্ষা দিয়েছি! 

শিক্ষা?? আম্মা আপনি কি বলেন? 

আরে গাধা, বউ যে বিলাই মেরে দিলো তুই কি বুঝলি না! খালি তোরে না আমারেও বিলাই কোন টেকনিকে মারতে হয় দেখায়ে দিলো। আমার কাছে তোরে থাকার বুদ্ধি তোর বউ দিয়েছিল, না??

হু,  কেন?

ওরে বেহায়া! মা ছেলে নতুন বউয়ের কাছে বেকুব বনে গেলাম রে গাধা!

আমি বুঝলামই না আমি কি বেকুব হলাম। তবে দোলাকে দেখলাম বেশ মুচকী মুচকী বিজয়ের হাসি দিতে।


সকালে নাস্তায় দেখলাম দোলা অনেক পদের রান্না করেছে। মচমচা পরোটা, পাঁচ ফোড়ন দিয়ে সবজি , মুরগীর মাংস ভুনা, ডিমের হালুয়া । রান্না এতো মজার যে মায়ের সামনে বলে বসলাম আম্মা কতদিন এমন মজা করে খাই না। এখন থেকে দোলাই রান্না করবে। আপনি আরাম করেন আজ থেকে।

আম্মা কেন জানি কিছু বলল না ।


 বাসার কাছেই আমার এন জি ওর অফিস। তাই দুপুরে আমি বাসাতে এসে খাই। এসে দেখি এলাহী কান্ড। মাছ ভুনা, আলু দিয়ে মুরগীর মাংস, দুই ধরনের ভর্তা, সবজী, বেগুন ভাজি, মুরোঘন্ট। সব রান্না দোলা নয় আম্মা করেছেন।

আম্মা বললেন আসলেই কত দিন তুই ভালো মন্দ খাস না। আর আমিও দুই পদের বেশি রান্না করি না বলে আমার রান্নার মজা তুই ভুলেই যাচ্ছিস। খা বাবা মজা করে খা বলে উনি দোলার দিকে বাঁকা হাসি দিলেন। 

আমি মজার মজার রান্না দেখে খুশি হয়ে গেলাম। ঘরে বুঝি ঈদ নেমেছে আমার।

রাতে খেতে বসে দেখি আবার আরেক কান্ড। এবার গরম গরম রুটি, সাথে সবজি, কচি মুরগীর মাংসের  তরকারি আর টকদই। এবার সব দোলা করেছে। বলল রাতে ভারি খাবার খাওয়া ভালো না। তাই এ আয়োজন। আমার মতো সুখি মানুষ কজনে আছে।  মা আর বউ আমাকে এতো ভালোবাসে!


কিছু দিনেই বউ শাশুড়ির চরম ভালোবাসার প্রতিযোগীতা আমি হারে হারে টের পেলাম। আমার সারা মাসের বাজার এরা বউ শাশুড়ি মিলে বারো দিনে শেষ করলো। বাকি দিন কিভাবে চলবো তার হিসাব করা যেন আমার দায়িত্ব। কোনো একজন তা বুঝতে রাজি না। তাদের একটাই কথা সব নাকি আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ। 


কুক্ষণে আমার জন্মদিনও চলে আসলো। আম্মা দুপুরে পোলাও, রোস্ট, গরুর মাংস, চিংড়ি, পায়েস করলেন আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।

দোলা জানার পর রাতে করলো তেহারী, ডিম ভুনা, চপ, খাসির মাথা।

আমারই দোষ। ওরা যেন মন ছোট না করে তাই আমি বিভিন্ন খরচের টাকা তাদের দুজনকে ভাগ করে দেই। কিন্তু তারা সেই টাকা আমার জন্মদিনে একবারে খরচ করে ফেলেছে।

দুই বেলা এমন ভারি খাওয়া খেয়ে আমার বদহজম হলো। বউ শাশুড়ি নিজেদের রুমে আরাম করে ঘুমালো। আর আমি হতোভাগা সারারাত বাথরুমে বসে কাটালাম।


ঈদে দুজনকে আলাদা পাঁচ হাজার করে দিয়ে বললাম আমার সাথে কাল চলো দুজন, কেনাকাটা নিজের পছন্দমত করো। মা বললেন এতো টাকা আমাদের জন্য? নিজের জন্য কত রাখলি?

আমি বললাম দোলাদের বাড়ি থেকে তো পাঞ্জাবি, শার্ট, ঘড়ি, জুতা সবই পেয়েছি। ওগুলো তো পরাই হয় নি। ওগুলোই পড়বো। 

দোলা বলল আপনার তাহলে আমাদের সাথে আর কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না মার্কেটে। আমি আর আম্মা একসাথে কিনে নিবো আমাদের কাপড়।

আম্মা কেন জানি সাথে সাথে হ্যাঁ হ্যাঁ বললেন।

পরদিন রাতে ফিরে দেখি দোলা তার পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আমার জন্য একটা দামী পাঞ্জাবি, পাজামা আর এক জোড়া সেন্ডল নিয়ে এসেছে। বলে আমার জামাই ঈদে কিছু নিবে না বলে আমার কি কোনো দায়িত্ব নেই! আপনি কি মনে করেন আমি আপনারে ভালোবাসি না ?

কিছুক্ষণে আম্মা ঢুকে বলে আমার ছেলেরে রেখে আমি নতুন কাপড় পরতেই পারি না। বউ কি খালি একা তোরে ভালোবাসে। আমিও তোরে ভালোবাসি। তিনিও তার পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আমার জন্য দুটো শার্ট ও দুটো প্যান্ট কিনে এনেছেন।

আমার দুচোখ বেয়ে পানি পড়ে। তা দেখে দুজনের মুখে আনন্দের হাসি।

কিন্তু আমি কাঁদি রাগে, দুঃখে, চাঁপা কষ্টে। সীমিত আয়ের মানুষ আমি। আমার ঈদ বোনাসের পুরোটা আমি আমার বউ আর মাকে দিয়েছিলাম যেন কেউ কম বেশি পেয়েছে না ভাবে। আমার কষ্টের টাকা এভাবে আমার গায়ে চড়বে ভেবে আমার কান্না বন্ধই হয় না।

দুদিন পর দেখি বউয়ের মুখ ভার। কারণ জানতে চাইলে বলে আপনারে আমি সাধ করে কাপড় দিলাম আপনার কি সাধ করে না আমারে একটা নতুন শাড়িতে দেখার?

 যা বুঝার আমি বুঝে গেলাম। যাওয়ার পথে আম্মা ডেকে বললেন একটা নতুন শাড়ি না পড়লে মানুষ বলবে বউ পেয়ে ছেলে মাকে ভুলে গেছে। কিন্তু আমি তো জানি তুই আমাকে কখনোও নতুন কাপড় ছাড়া ঈদ করতে দিবি না। তাই না?

আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমার জমানো টাকা থেকে দুজনের জন্য একই রকম দুটা দুই কালারের শাড়ি নিয়ে আসি। মনে মনে বলি তাদের দুইজনের সাথে আমার আলোচনায় বসতে হবে। এভাবে এতো চরম ভালোবাসা দেখায়ে আমাকে দুজনে রাস্তার ফকির বানায়ে ছাড়বে।


ঈদের দিন আমরা তিনজন একটা ঈদমেলায় ঘুরতে গেলাম। তিনজন মিলে বেশ ঘুরলাম। পুতুলনাচ দেখার সময় আম্মা ভীড় দেখে বললেন আমি দূরে ওদিকটায় দাড়াচ্ছি। তোরা দেখ। দোলা বলল আম্মা আমিও আসতেছি একটু পর। হঠাৎ হুরোহুড়ি শুরু হলো আগুন আগুন বলে। আমি কিছু না বুঝে দোলার হাত ধরে দৌড় দিলাম। দোলা কেন জানি আসতে চাইলো না। আমি কিছু চিন্তা না করে ওরে কাঁধে তুলে দৌড় দিলাম। এতো ভারি হয়েছে দোলা আম্মা পর্যন্ত পৌছাতে আমার দম ফুরিয়ে গেল। আম্মার কাছে গিয়ে দেখি দোলা আম্মার পাশে আগেই দাঁড়ানো। কাঁধের মানুষটাকে নিচে নামানোর সাথে সাথে কষে একটা চড় খেলাম। আম্মা আর দোলা মুখ কালো করে একে ওপরের হাত ধরে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল।


অপরাধী আমি বউ আর মায়ের সামনে বসে আছি। দোলা কেঁদেই চলেছে। আপনারে আমি কিসের কমতি রাখছি! কি করি নাই আপনারে খুশি রাখতে! আর আজ কিনা আপনি পরনারীরে কাঁন্ধে নিয়া ঘুরেন।

আম্মা দোলাকে জড়ায়ে ধরে বলেন কেঁদো না বউ। সব হলো রক্তের দোষ। আমার শিক্ষা পারে নাই আটকাতে। আমি ফেল করেছি বউ! সে তার বাপের মতোই হয়েছে। তুমি নিজেরে অসহায় ভেবো না বউ। আমি আছি তোমার পাশে। তুমি আমি অনেক করেছি এ ছেলের জন্য। আর না! এর সকল আহ্লাদ শেষ আজ থেকে। বদমাইশ! চরিত্র হীন একটা! 


মা বউ গালি দিচ্ছে। চরম অপমানজনক গালি।

 

আমি কাঁদতে থাকি। কিন্তু সুখের কান্না। আল্লাহ আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছে। আমার প্রতি মা আর বউয়ের চরম ভালোবাসাটা কমেছে ভেবে খুব হালকা লাগছে।

 শেষ গল্পের- ডায়েরি


রোম্যান্টিক গল্প পড়ুন।