মজার গল্প
যেসব রসগোল্লার গায়ের রং চাপা তাদেরকেই কি পানতুয়া বলে ডাকা হয়?
মেয়েরা নাইটি পারে বিয়েবাড়ি যায় না কেন?
জগাদার পাকস্থলীর ভেতর যখন রঙিন জল থৈ থৈ করে তখন মাথার মধ্যে এমনই সব প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে।
একদিন শীতের রাতে জগাদা বোতল সমেত গলা পর্যন্ত পান করে 'জামাল কদু' নাচের স্টাইলে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির কাছে বন্ধ দরজার সামনে কোনোওমতে কম্পমান পাদুটো স্থির করে স্বরচিত গানে নিজস্ব সুর বসিয়ে গাইতে লাগল,
"বধূ গো খোলো তব দ্বার
আউর কিতনে করঙ্গে ইন্তেজার।"
হাতে মদের বোতল নিয়ে জগাদা সরল দোলগতিতে মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে পাদুটো সামনে পেছনে ডানে বামে হাডুডু খেলার ভঙ্গিতে এগিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।
দরজার ওপার থেকে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে জগাদা এবার কলিং বেলে বারকয়েক চাপ দেয়। যদিও কলিং বেলের সুইচ ছুঁতে বার দশেক চেষ্টা করতে হয়েছে।
অন্যান্যদিন হলে জগাদা দরজার সামনে আসার আগেই জগাদার বউ গরম খুন্তি নিয়ে বরকে বরণ করার জন্য রেডি হয়ে থাকত। আজ তার ব্যতিক্রম দেখে জগাদা টেনশনে পড়ে গেল।
কলিং বেল টেপার মিনিট খানেক পর দরজা খুলে জগদাকে উত্তম-মধ্যম ক্যালাতে শুরু করল। জগাদা ভেবে পেল না ওর বউ এমন পলোয়ানের মত শক্তি পেল কোথায়। দুমদাম খাওয়ার পর চোখ তুলে জগাদা দেখে, ওটা বউ নয়, পাশের বাড়ির কাল্টু।
জগাদার রক্ত গরম হয়ে উঠল। তাহলে ওর বউ শেষে কিনা কাল্টুর সাথে....ছিঃ ভাবতেই গোটা গায়ে ঘৃণার একটা ঠান্ডা পরশ বয়ে গেল।
মাতাল জগার অন্তরাত্মা জেগে উঠল। মোষের মতো গোঁ গোঁ করতে করতে জগাদা কাল্টুর দিকে ধেয়ে গেল। কিন্তু কাল্টুর জিম করা হাতের একটা ঘুষি খেয়ে জগাদা তিন হাত দূরে ছিটকে পড়ল।
এটা কোন সিনেমার সিন হলে এইসব কেসে বউয়ের সাথে ফস্টি-নস্টি করতে গিয়ে ধরা পড়লে সেই ব্যক্তিকে রাম-ক্যালানি দেওয়া হত। এক্ষত্রে পুরো উল্টো ঘটছে। নিজের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে জগাদা পাশের বাড়ি থেকে ভাড়া করা গুন্ডার হাতে ক্যালানি খাচ্ছে।
জগাদা এবার হিতাহিত শূন্য হয়ে হাতের বোতলকে ভেঙে কাল্টুর পেটে ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করল।
বোতলকে বার কয়েক রাস্তায় ঠুকে ঠুকেও জগাদা ভাঙতে না পেরে গোটা বোতলের পেছন দিক সামনে নিয়ে কেল্টুর পেট বরাবর লক্ষ্য করে চিতা বাঘের মতো হালুম হালুম চিৎকার করতে করতে ছুটে গেল।
কাল্টুর কাছে আসতেই কাল্টু বোতলটাকে কেড়ে নিয়ে জগদার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে পাশের বাড়ির দরজার সামনে ফেলে দিয়ে ভ্যাক ভ্যাক করে পেটে কয়েকটা লাথি মেরে চলে যায়।
জগাদা বহু কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে থানা-পুশিশ, FIR, মামলা-মোকদ্দমা, হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট, মানহানি, ফৌজদারি ইত্যাদি ভাবতে গিয়ে দেখে, দরজা খুলে সামনে বউ দাঁড়িয়ে।
মাথাটা বার কয়েক বনবন করে ঘুরে ওঠে জগাদার।
কেসটা কী হল?
বউ এর হাতে রুটি বেলা বেলনা।
মদ খেয়ে পরের বাড়িতে হানা দিয়ে পরের বউকে নিজের বউ বউ বলে ডাকতে লজ্জা লাগে না তোমার? জগাদার বউ গরিলার মতো গর্জন করে উঠল।
এতক্ষনে পুরো ব্যাপারটা বিসলেরি জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেল জগাদার কাছে। এইজন্য বলে বউয়ের মতো বড় শিক্ষক আর কেউ নেই।
কাল্টুর হাতে ক্যালান খাওয়া জগাদা পাঁচ ইঞ্চি জিভ করে বলে, নেশাটা একটু বেশি চড়ে গেছিল আজ। তবে আমি ওটা নিজের বাড়ি ভেবে নিজের বউকে, মানে তোমাকেই ডাকছিলাম ডার্লিং।
কাল্টুর বউকে তুমি মনে মনে পছন্দ করো, তাই ওটাকেই নিজের বাড়ি ভাবছো। অন্যের বউকে নিজের বউ ভাবা আজ ভাঙ্গছি তোমার।
বিশ্বাস করো আমি অন্যের বাড়িকে নিজের বাড়ি ভেবেছি। অন্যের বউকে নিজের বউ ভাবিনি।
জগাদার কথাই পাত্তা না দিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে জগাদার বউ সেকেন্ড রাউন্ড শুরু করেছে।
ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে, এই শেষ আর কোনোদিন মদ ছোঁব না।
দুম করে পিছনে একটা পড়ল।
মদের নাম উচ্চারণ করবনা।
এবার পিঠে পড়ল একটা।
মদের স্বপ্নও দেখবো না।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আটা সানা কমপ্লিট করে জগাদার বউ জগাদাকে মাটিতে ফেলে বেলনা দিয়ে রুটি বেলা শুরু করল....
Santu Saha