সেরা ভালোবাসার গল্প | স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প

 খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প

খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প

- লিপি, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।


এমনিতেই লিপির চোখ ছলছল করছিলো। তার উপর তামিমের মুখে হঠাৎ করে একথা শুনে লিপি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। কি করে না লিপি তামিমের মুখের একটু হাসির জন্য। কিন্তু এখন শুনতে হচ্ছে তামিমের জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল লিপি। তাও কি বীভৎস চিৎকার। বারবার কানে একই কথা বেজে চলেছে। 


তামিম স্টাডি রুমে দরজা আঁটকে বসে আছে। লিপি শোবার ঘরে নিথর হয়ে পড়ে আছে বিছানার উপর। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রাত ঠিক এগারোটা এগারো বাজে। আজ আর কিছু রান্না হবে না। তরকারি রান্না করার সময়ই মূলত তামিমের সাথে খুব ছোট একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সন্ধ্যা থেকে থেমে থেমে এই রাত এগারোটা গড়ালো। ভাত আর বসাতে ইচ্ছে করছে না। কারণ, আজ রাতে আর খাওয়া হবে না কারও।


ভাবতে ভাবতেই বেলকনিতে এসে দাঁড়াতেই কোজাগরী চাঁদ দেখা যাচ্ছিলো। লক্ষ্মী পূজার এই তিথিতে চাঁদ এতো সুন্দর দেখায় কেনো লিপি ভেবে পায় না। একসময় লিপি চাঁদ দেখতে দেখতে আবিষ্কার করে, চাঁদ ক্রমশ পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। এমন সরে গেলে,আর আধা ঘণ্টা পর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখা যাবে না। মন খারাপ করে লিপি আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে থাকে। হালকা উত্তরের হাওয়া আসছে জানালা দিয়ে। এদিকে পুরো রুম অন্ধকার। মন খারাপ করে কখন যে লিপি ঘুমিয়ে গেছে, জানে না।


হঠাৎ রুমের ভেতর খচখচ আওয়াজ শুনে লিপির ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রাত এখন সাড়ে তিনটা। আবার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। না, এটা কোনো খচখচ আওয়াজ না। তামিমের নাক টানার শব্দ। ঠাণ্ডা লাগালো কখন?


ভাবতে ভাবতেই রুমের আলো জ্বালিয়ে দেখতে পেলো তামিম ফ্লোরে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে কাঁদছে। পুরুষ মানুষ না-কি কাঁদে না। অথচ তামিম সামান্য মন খারাপ হলেই ফুপিয়ে কেঁদে ফেলে। ছেলেটা যে কেনো এতো ইমোশনাল! বুঝি না।


এদিকে আলো জ্বালাতে দেখে তামিম আরও বেশি কেঁদে যাচ্ছে। ছোট শিশু যখন কারও মনোযোগ পেতে আরও বেশি কেঁদে ফেলে, তামিমও তাই করছে। লিপির কি এখন কষ্ট পাবার কথা? কিন্তু কেনো যেনো ওর হাসি পাচ্ছে। তবু সেই হাসি গিলে ফেলতে হলো। কারণ, এখন হেসে ফেললে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু হতে বেশি সময় লাগবে না।


- কি ব্যাপার, এমন করে কাঁদে কেউ?


- আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।


- ক্ষিদের জ্বালায় কাঁদছো?


- না, একদম না। ড্রাইকেক পুরো প্যাকেট সাবাড় করে দিয়েছি।


- ও, এজন্যই মুখের চারপাশে এমন বিস্কুটের গুড়ো লেগে আছে।


- (মুখ মুছতে, মুছতে) লিপি, আমি আবার বলছি... তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।

 

- আচ্ছা। কিন্তু কেনো?


- আমি আমার আলমারিতে কিছুই খুঁজে পাই না। আমার ঘড়ি, টাই, কাপড়, মোজা... এমনকি জাঙ্গিয়াও আমি জানি না তুমি কোথায় রাখো। আমি খুঁজতে গেলে পাই না। অথচ তুমি এক সেকেন্ডেই বের করে আনো।


- এটা কি খুব বড়ো কোনো সমস্যা?

 

- অবশ্যই এটা বড়ো সমস্যা। আমি তোমার উপর নির্ভরশীল হতে চাই না। আমি চাই তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে, বাকি আমরটা আমি গুছিয়ে নিবো।


- আমি কি তোমার পাশে নেই?


- না, তুমি আমার পাশে নেই। বরং, তুমি আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছো। আমি কোনো কিছু তোমাকে ছাড়া কল্পনা করতে পারি না। অথচ আমরা আলাদা হতে চলেছি।


এবার লিপি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,


- আমাদের কপালে একসাথে থাকা লেখা নেই।


একসাথে বাঁচার ভীষণ রকম আকুতি নিয়ে তামিম এবার হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। ওর কান্নার তীব্রতা পাথর গলিয়ে ফেলতে পারে।


- এভাবে কেঁদো না, প্লিজ।


- লিপি, আজ যদি আমার সমস্যা থাকতো তবে কি তুমি আমায় ছেড়ে যেতে পারতে? আমার যদি বাবা হবার ক্ষমতা না থাকতো, তুমি পারতে আমাকে ছেড়ে যেতে? 


- না, পারতাম না।


- তাহলে তোমার একটা সমস্যা জেনে আমি কেনো তোমাকে নিয়ে বাঁচতে পারবো না? আমার বেলায় কেনো আমি জাস্টিস পাবো না? বাচ্চা লাগবে না আমার। আর যদি তোমার লাগে তাহলে আমরা বাচ্চা দত্তক নিবো। কিছু বিড়াল আনবো ঘরে... তোমার একদমই একা লাগবে না।


এবার লিপিও কেঁদে ফেললো। কিন্তু তামিমের সামনে কাঁদতে ভালো লাগছে না। মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে নিলো।


- তুমি হাতমুখ ধুয়ে নাও। আমি ভাত বসিয়ে দিচ্ছি চুলায়। খেয়ে একটু ঘুমাও। সকালে অফিস আছে।


তামিম এবার লিপিকে জাপটে ধরে বললো,


- তোমার জন্য আমি আমার অসংখ্য রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিতে পারবো। চোখেমুখে হয়তো ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাবে কিন্তু আমার তোমার প্রতি বিরক্তি আসবে না।


- সন্ধ্যা থেকে বেশ কয়েকবার বলেছো, আমি তোমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।


- হ্যাঁ, বলেছি। আমি সবসময়ই চেয়েছি তুমি আমার স্ট্রেন্থ হবে। কিন্তু না, তুমি হয়েছো আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা। কারণ, আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।


- কয়েকবছর পরে যদি মনে হয় বাচ্চাকাচ্চা ছাড়া তোমার জীবন অসম্পূর্ণ? 


- সারাজীবন বাবা ডাক না শুনে থাকতে পারবো, কিন্তু তোমাকে একদিন না দেখে থাকতে পারবো না। 


- (চোখ মুছতে মুছতে) মিথ্যুক একটা। গত সপ্তাহেই তুমি অফিসের কাজে দুইদিন বাইরে ছিলে।


- সরি৷ কিন্তু, কাজ শেষ করেই তো তোমার বুকে ফিরে এসেছি। আমি যেখানে যাই, আমার গন্তব্য শুধু তুমি।


তামিম এবার আলতো করে লিপির কপালে চুমু খেলো। লিপি চোখ বন্ধ করে আছে। এই ভালোবাসার ঘোর না কাটুক। সকাল হলেই তো শ্বশুরবাড়ি থেকে কল আসা শুরু হবে, ছাড়াছাড়ির কদ্দূর কাজ এগুলো। 


-অসমাপ্ত_গল্প

-লেখনিতে_জেসমিন_রুবী


এমন আরও বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন।