খুব রোমান্টিক গল্প | স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

রোমান্টিক গল্প

রোমান্টিক গল্প

 ---"চৈতি আজকেও আপনার কাছে ঘুমিয়ে পরেছে আম্মা?"


---হ্যাঁ রে বাবা।আমার বিকালে জর উঠেছিলো।সারা বিকাল কপালে পানি দিয়ে দিয়েছে।জর নেমে গেলে আমি ঘুমিয়ে পরি।উঠে দেখি আজও আমার পাশেই শুয়ে আছে।কিছুক্ষন আগেই ঘুমিয়েছে হয়তো।...মেয়েটা খুব ক্লান্ত রে।পুরো সংসারটা নিজ হাতে সামলায়।


উনাদের কথায় আর মাথায় কারো আলতো স্পর্শে আধো আধোভাবে পিটপিট করে তাকাই আমি।মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।চোখ খোলার ইচ্ছা থাকলেও অতিরিক্ত ঘুমে খোলার বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছিনা।আবারো চোখ বুজে ফেললাম।সেভাবেই বুঝলাম আহসান আমাকে কোলে তুলে নিচ্ছেন।আরাম আবেশে উনার বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম আমি।


---"আচঁলটা উঠিয়ে কোলের উপর দিন তো আম্মা।শাড়ি সামলাতে পারেনা তবুও পরবে।বাচ্চা মেয়ে,কথাই শুনতে চায় না।"


মায়ের মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।বুঝতে পারলাম মা আমার কোলের উপর অগোছালো আচঁলটা উঠিয়ে দিয়েছেন।


---"আপনি রাতের খাবার খেয়েছেন আম্মা?"


---"খেয়েছি বাবা।তুই ওকে কিছু খাইয়ে দিস।ও খায়নি।"


উনাদের কথোপকোথন আবছাভাবে কানে এলো তবে কিছু বুঝলাম না।শুধু বুঝলাম উনি আমাদের ঘরে এসে বিছানায় খুব ধীরে যত্ন করে শুইয়ে দিলেন আমাকে।এরপর গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলেন।যেনো একটু টোঁকাতেই আমার ঘুম ভেঙে যাবে।


গত চারদিন যাবত আমার শাশুড়ি মা অসুস্থ।জর,মাথাব্যাথা,বমি হয়।উনার সেবায় কোন ক্রুটি রাখতে চাইনা আমি।যথাসাধ্য চেষ্টা করি। গত দুইদিনও  মাথা টি পে দিতে দিতে উনার পাশে ওখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।আর আজ জলপট্টি দিতে গিয়ে।সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন যে চোখ লেগে যায় বুঝতেই পারি না।

____________

হয়তো প্রায় ঘন্টাখানেক পর উনার ডাক শুনলাম,


---"চৈতি?চৈতি উঠোতো একটু।"


উনি খাননি বিষয়টা আমার মাথায় আছে তাই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললাম,


---"টেবিলে সব সাজানো আছে।একটু কষ্ট করে খেয়ে নিন না প্লিজ।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।একটু থেমে আবার বললাম,খাওয়া হলে বইলেন আমি গুছিয়ে রাখবোনে সব।"


উনি কিছু না বলে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে উঠিয়ে আমার পিছনে বসে উনার বুকে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলেন।আমি চোখমুখ কুঁচকে মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম।উনি মুচকি হেসে মুখের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললেন,


--- "অল্প করে খেয়ে নাও।তারপর ঘুমিও।...এখন হা করোতো জলদি।


সামনে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার কোলের উপর ভাতের প্লেটটা রেখে,ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে রেখেছেন।বিনাবাক্যে ছোট্ট করে মুখ খুললাম আমি।উনি মুখে তুলে দিতেই আমি উনার বুকে মাথা এলিয়ে খেতে খেতে বললাম,


---"আপনি খেয়েছেন?"


উনি ছোট্ট করে জবাব দিলেন,


---"খেয়েছি"।


পুরোটা শেষ করিয়ে আমাকে পানি খাইয়ে দিলেন।আলতো হাতে ঠোঁটটা মুছিয়ে দিতেই আমি তড়িঘড়ি করে উঠতে উঠতে বললাম,


---"আপনার ধুতে হবেনা ওইসব।আমি যাচ্ছি।"


উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন।গালে হাত রেখে বললেন,


---"তোমাকে বলেছি যেতে?আমিই ধুয়ে দিবো।তুমি ঘুমাও তো।"


আমি করুণ কন্ঠে বললাম,


---"ওখানে অনেক থালাবাসন।দুপুরের গুলাও ধুইনি।আপনি পারবেননা।"


---"পারবো।তুমি আমার জন্য এত কিছু করতে পারো আর আমি এতটুকু করতে পারবোনা?"


---"আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে"।


---"তোমাকে ঘুমাতে বলেছি,আমার কথা শুনবা না?"


আমি মুখ ফুলিয়ে কাঁথার ভিতর মাথা ঢুকিয়ে শুয়ে পরলাম।উনার "আমার কথা শুনবা না?" এই চারটি শব্দই যথেষ্ট  আমাকে দিয়ে যেকোন কাজ করানোর জন্য।কোনো কথা না শুনলেই উনি এটা বলবেন আর আমি বাধ্য মেয়ের মতো হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াব।মানে,"অবশ্যই শুনবো"।

উনি এরকমি "নাছোড়বান্দা"!!যেটা বলবে সেটাই করবে!!

 

তবে হ্যাঁ,এই এরকম "উনি" টাকে ছাড়া আমি নিজেকে ভুলেও কল্পনা করতে পারিনা।আমার দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিপুঁণভাবে মিশে গেছেন উনি।আমাদের অস্তিত্ব যেন মিলেমিশে একাকার।


আমাদের বিয়েটা হয় হুট করেই।সবেমাত্র মাধ্যমিক দিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম।হঠাৎ একদিন মা বললেন"তোকে দেখতে আসবে,রেডি হয়ে থাকিস"।

সেদিন দেখতে এসেই আংটি পরিয়ে দিলেন আমার শাশুড়ি মা।বাবাকে আমি ভয় পেতাম জমের মতোন।বিয়েতে না করার মতো সাহস আমার ছিলোনা।

মূলত আমাকে আহসানের জন্য আগেই পছন্দ করেছিলেন আমার শশুর আব্বা।আর আহসানকেও আমার বাবা খুব পছন্দ করতেন।টাকাপয়সা দেখে মানুষকে বিচার করা কোনোকালেই বাবার সভাবে ছিলোনা তাই আহসানের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।শুনেছি শাশুড়ি মা অমত করেছিলো,"কারণ আমার বাবা হলেন প্রভাবশালী ব্যক্তি।উনাদের থেকে আমার পরিবারের বংশ মর্যাদা বেশি।শাশুড়ি মার ধারণা ছিলো বড় ঘরের মেয়েরা উগ্র,বেপরোয়া সভাবের হয়।উনাদের সাথে আমি মানিয়ে নিতে পারবোনা।"

এখন হয়তো উনার সে ধারনা সম্পূর্ণ  পাল্টে গেছে।বিয়ের পর হতে আজ পর্যন্ত উনার সাথে কখনো উচ্চবাক্য পর্যন্ত করিনি আমি।মূলত করার প্রয়োজন পরেনি।


_______________

বিছানায় শুয়েঁ এপাশ ওপাশ করছি।এখন আর ঘুম আসছেনা।উনি আসছেন না কেন!ভাবনায় ছেদ পরে দরজা খোলার আওয়াজে।উনি ভেতরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলেন।পরণের গেনজি টার সামনের বেশ কিছু অংশ ভেজা।উনি সেটা খুলে চেয়ারে মেলে দিতে দিতে বললেন, ,


-"ঘুম আসছে না?"


আমি দুদিকে মাথা নাড়ালাম।অর্থ্যাৎ"নাহ্ আসছেনা"।উনি বাতি নিভিয়ে আমার গা ঘেঁষে আধশোয়া হয়ে শুয়ে পরলেন।শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে বরফ ঠান্ডা হাতের ছোয়াঁ পেতেই আমি উনার হাতের উপর চেপে ধরে আৎকে উঠে বললাম,


-"উহ্।আপনার হাত খুব ঠান্ডা।সরান প্লিজ।"


উনি আমার কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরেলেন।উনার আরেকটা হাত খেলা করছে আমার চুলের ভাঁজে।


আমি ভেতরে ভেতরে হেসে ফেললাম।প্রিয় মানুষের ছোয়াঁ বুঝি এতটাই শান্তিপূর্ণ,আসক্তিময়?

আচ্ছা,আসলেই উনি আমার প্রিয় মানুষ?'প্রিয় মানুষ" বলতে আসলে কি বোঝায়?এর গভীরতা কতটুকু?

উনার সাথে তো আমার গভীরথেকে গভীরতম সম্পর্ক।কতটা গভীর সেটা পরিমাপ করার ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই আমার নেই।আমি শুধু এতটুকুই জানি"আমার উনাকে প্রয়োজন।"ভীষণভাবেই প্রয়োজন"।

হঠাৎ জানিনা কেনো,আমার খুব করে কান্না পেলো।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করলো।আমি কান্না আটকে রাখার তিল পরিমাণ চেষ্টাও করলাম না।আচমকা ঘুরে হুট করে উনাকে জাপটে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিলাম।উনি হয়তো একটু বেসামাল হয়ে পরলেন।পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।আমার কান্নার বেগ বেড়ে গেল।বেশ কিছু সময় গড়িয়ে গেলেও আমার কান্না থামলো না।

উনি চুলের মাঝে চুমু খেয়ে বললেন, 


-অনেক তো কাঁদলে পাগলি।এখন থামো প্লিজ....কিছুটা সময় নিয়ে আবার বললেন,"আমার কথা শুনবা না?"


আমি কান্না থামিয়ে সিক্ত নয়নে চোখ তুলে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললাম,


-"শুনবো,আমি আপনার সব কথা শুনবো।তবু আপনি কখনো আমাকে একা করে দিয়েন না"।


উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন।চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে মৃদু হেসে বললেন,


-"কি সব যে বলো?পাগলি বলেছি বলে কি আসলেই পাগলের মতো কথা বলবে?"


আমি উনার চোখে চোখ রাখলাম।এই দৃষ্টিতেই তো আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি।


উনি আমার দুগালে হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে প্রায় ঠোঁট মিলিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন,


-"চোখ ভিজে যাক আদরজলে,

"শ্রাবণ থেকে ভাদ্র"......

"শীত পেরোনো রুক্ষ ঠোঁট",

"চুমোয় হোক আদ্র".........


______সমাপ্ত______


অনুগল্প-প্রেমপ্রহরী

লেখিকা-মালিহা_খান


এমন আরও রোমান্টিক গল্প পড়ুন।