পরকিয়া কতটা ভয়ংকর | পরকিয়া প্রেম

পরকিয়া গল্প

পরকিয়া গল্প

 " আমার প্রথম সন্তান জন্মের দু'দিন আগে আমার স্বামী আমাকে প্রচন্ড মা*রে। আধা ঘণ্টা একটানা পি*টি*য়ে যখন পাঠান গড়ন সম শক্তিমান মানুষ টা ক্লান্ত হয় ঠিক  তখন দরজা খুলে বাহিরে চলে যায়। আমিও বে*হুঁশ হয়ে যাই। হুঁ*শ ফিরে প্রচন্ড প্র*সব বেদ*নায়। "


শিপ্রা ম্যাডামের কথা শুনে আমি একদম থ মে*রে যাই। কি যে বলা যায় তা ও খুঁজে পেলাম না। একই পিটিআই থেকে আমরা ট্রেনিং নিতে এসেছি তাই একই স্কুলে পড়াই। টিফিন পিরিয়ডে বসে কাঁদছিলাম। শাহেদ মানে আমার স্বামীর সাথে কথা কাটা কাটি হয়েছে কিছু সময় আগে। মনে মনে আসলেই আমি ত্যাক্ত। এবার আর মানা যাবে না। সংসার আর করবো না সিদ্ধান্ত নিলাম মনে মনে। শিপ্রা ম্যাডাম আমার বয়সের চেয়ে বেশ সিনিয়র হবেন। কি সুন্দর হাসি লেপ্টে থাকে তার মুখে। কি মিষ্টি ব্যবহার করে, সিনিয়র জুনিয়র সবার সাথে।  তিনি কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কেন কাঁদছি বা কি হয়েছে পাশে এসে বসে নিজের টিফিনবাক্স খুলে রুটি ভাজি মুখে দেওয়ার আগে এটুকু বলেই বিসমিল্লাহ বলে প্রথম টুকরো মুখে দিলেন। আমাকে চরম বিস্মিত হতভম্ব করে আরামে দুই তিনবারে দুই রুটির একটা খেয়ে পানি মুখে নিলন। আমার অভূত কৌতুহল দেখে রুটির বক্স সামনে আমার দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন,


--" আজকে আমরা একসাথে টিফিন টা না হয় ভাগ করে খাই। খেয়ে দেখো একেবারে খারাপ  রান্না করি না"


আমি হতভম্ব হয়ে একবার রুটি ভাজির দিকে আরেক বার ম্যাডামের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,


--" এসব কি বলছেন ম্যাডাম? স্যার কে দেখলে..."


ম্যাডাম আমাকে থামিয়ে দিলেন। 

--" শাহেদের সাথে রাগ করে খাবার আজকে আনোনি। গলার কালসিটে দাগগুলো তো ফেলে আসোনি। এখন এটা খাও একটু যখন বলেছি বাকিটাও বলবো "


আমি কথা বাড়ালাম না। একটু ওড়না টা টেনে নিলাম। আসলেই খুব খুদা লেগেছে। গতরাতে ও খাইনি সকালে ও না খেয়ে চলে এসেছি। এখন সারে বারোটা বাজে। ম্যাডাম আবারও চোখের ইশারায় বোঝালেন খেতে। কাল বিলম্ব না করে আমি ও রুটির একটা টুকরো ছিঁড়ে মুখে দিলাম। 

ম্যাডাম বলা শুরু করলেন,


--" ছয় বছরের প্রণয় শেষে আমরা বিয়ে করি। ইয়াসির  ডি*ফে*ন্স মি*নি*স্ট্রিতে জব করে আমারও নতুন চাকরি। প্রথম বছর টা ভালোই গেলো। শুধু একা থাকতাম এটা বাদে। ইয়াসিরের ছুটি কম।  তবে ও যখন আসতো যত দুরত্বের যাতনা আমার থাকতো, সব মুছে উশুল করে দিয়ে তারপর ইয়াসির ফিরে যেতো। আমার বিয়ের সব গহনা,দেনমোহরের টাকা, আমি নিজের দায়িত্বে একটা বড়ো লোন ও ইয়াসিরের সঞ্চয় মিলিয়ে চল্লিশ লক্ষ টাকা খরচ করে একটা বাড়ি করি। যা ইয়াসিরের নামে।এরপরই দের বছরের মাথায় টুকটাক পরিবর্তন লক্ষ করি ওর মাঝে ৷ আগে বাড়িতে আসলে সারাক্ষণ লেপ্টে থাকার চেষ্টা করতো। স্কুলে নিয়ে আসতো স্কুল ছুটির পরে বের হয়েই ওকে পেতাম ৷ এমনও সময় যেতো ক্লাসে আছি হেড স্যার ডেকে পাঠাতেন৷ এসে দেখতাম ইয়াসির বসে আছে। স্যারকে বলে ছুটি নিয়ে নিয়েছে।  স্যারের মেয়ে আমার বান্ধবী ছিল তাই স্যার ও আমাকে আলাদা আদর করতেন। ইয়াসির ও সবসময় থাকে না টুকটাক ছাড় স্কুল থেকে হেড স্যার ও দিতো ইয়াসির আসলে। যদিও স্কুলের অন্য ম্যাডাম স্যার রা একটু জেলাস ও হতো। সেই জেলাসি টা কেন জানি আমার ভালো ও লাগতো। সুদর্শন সুপ্রতিষ্ঠিত স্বামী, প্যারাহীন শ্বশুর বাড়ি, নিজের আত্মনির্ভরশীল জীবন নিয়ে কানায় কানায় আলহামদুলিল্লাহ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।  দেড় বছরের পরে বাড়িতে আসলে এসব ব্যাপার কমতে শুরু করলো। আমি প্রাপ্ত বয়স্ক ম্যাচিউর একটা মেয়ে আমি নরমাল ই নিয়েছি কারন এই রোমান্টিসিজম দের/দুই বছর পরে একটু পরিবর্তন ঘটেই সাধারনত। ততদিনে আমরা বেবির জন্য ট্রাই করছি। প্রেগ্ন্যাসির প্রথম টার্মেই আমার সামনে ইয়াসিরের পরো*কিয়ার প্রথম মোড়ক উন্মোচন হলো। তাও নিজের চাচাতো বোনের মেয়ের সাথে। "


মারাত্মক একটা বিষম খাই শুনেই! চাচাতো বোনের মেয়ে মানে তো ভাগ্নী! গা টা কেমন গুলিয়ে উঠলো আমার। ম্যাডাম তারাতাড়ি পানি দিলেন আমাকে। 

--" সরি মুনতাহা! আসলে খেয়াল রাখা উচিত ছিলো তুমি খাচ্ছো!"


নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, 

--" আমি ঠিক আছি ম্যাডম, প্লিজ আপনি বলুন।"


-- " বহু কষ্টে ওই মেয়ের বাবার সাথে মিলে মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করলাম। মেয়েটার বিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচার মতন শ্বাস ছেড়ে সোজা হতে হতে প্রেগ্ন্যাসির ছয়মাস। বান্ধবীর সাথে সেক্স চ্যাটিং, কল গার্লদের নম্বর এগুলো কেমন ডালভাত হয়ে গেলো ততদিনে।  অসুস্থ শরীর, বাবা হুট করেই মা*রা যাওয়ায় বাবার বাড়ি আর্থিক সাপোর্ট মিলেয়ে দম আটকে আসার শেষ মুহূর্তে মনে হয় সবচেয়ে বড়ো ধাক্কাটা পেলাম। এর আগে যে মেয়ের সাথে জরিয়েছে মেয়েটা আনমেরিড ছিলো। ওদের মধ্যে শারীরিক কিছু হয়নি এটা আমি নিশ্চিত হয়েছি মেয়ের ফোন ঘেঁটে। মেয়েটা ও বলেছে ওরা কখনো ফিজিক্যাল হয়নি। আরও  ইয়াসিরের অসংখ্য মেসেজেস ছিলো যাতে স্পষ্ট যে ও বারবারই ফিজিক্যাল হতে চেয়েছে আর মেয়েটা ভয়ে পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এরপর নিজের আপন মামী...


শিপ্রা ম্যাডাম থেমে গেলো। আমি কেমন অসাড় হয়ে গিয়েছি। কতটা নোংরা মানুষ আছে পৃথিবীতে!! আমাদের সাথে ধারে ঘোরে। দম ঘন হয়ে গিয়েছে ম্যাডামের যতই হোক নিজের জীবনের কালো অধ্যায় এত সহজেও বর্ননা করা যায় না। একটু সময় নিয়ে ম্যাডাম আবারও বলা শুরু করলেন, 

--" ওর মামা দেশে থাকতেন না। সেই মামীর সাথে একদম ব*স্ত্র হী*ন যুগলবন্দী ছবি দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না সেই ছবি ওর মামার কাছে পাঠিয়ে দেই। এটাই আমার অন্যায় ছিলো।। হু*শ ফিরে যখন ব্যাথ্যায় আমি নীল তখন শ্বশুর বাড়ি থেকে শাশুড়ী ননদ আসে। কি করে খবর পায় জানি না সাথে করে ধাত্রী নিয়ে আসলো। বাচ্চা ও আমাকে অনেক বার পরখ করায় আমি যখন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলাম তখন ধাত্রী জানালো হাসপাতালে নিয়ে যান। বাসায় হবে না। কিন্তু তারা ধাত্রীকে জোর করেন। হাসপাতালে নিলে আমার গায়ের কালশিটে দাগে পু*লিশ আসে যদি? মোবাইল ফোন টা তো আ*ছড়ে আগেই ভে ঙে দিয়েছে। মায়ের কাছে ও কল দিতে পারছিলাম না। একটা সময় পরে অলৌকিক ভাবে আমার ব্যাথা কমে গেলো। একটা দিন আমাকে ঘর বন্দী করে যখন পানি ভে*ঙে গেলো আমার শাশুড়ী তখন শিউরে ওঠেন। যেখানে সাদা পানি আসবে সেখানে কালো ময়লা দুর্গন্ধ যুক্ত পানিতে মেঝে ভিজে গেলো। ধাত্রী তার অবিজ্ঞতা দিয়ে বললেন "বিপদ মনে হয় হইয়া গেছে। এইগুলা তো বাচ্চার পায়খানা মেলানো পানি। আমারেও ছাড়েন বউটারে বাঁচান হাসপাতালে যান" টনক নরলো মনে হয়। এবার। একটু ভ*য় পেলো কিনা বুঝতে পারিনি। তবে আমার শাশুড়ির আতংকিত স্বর টা এখনো কানে বাজে।  শাশুড়ি মা ইয়াসির কে বললো, --" টাকা দিয়ে ডক্টর নার্সের কাছে গায়ের দা*গ লুকানো যাবে ইয়াসির। কিন্তু যদি  ম*রে যায়? তখন তো তোর চাকরি শেষ। হা*জত ফ্রী "

হাসপাতালে নেওয়া হলো আমাকে। আমার সন্তান ততক্ষণে নর্দমাময় পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছে। "


শিপ্রা ম্যাডাম টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে চুপ হয়ে গেলেন। বুকটা মুচড়ে ধরলো। সন্তান হারানোর কষ্ট একটা মা ছাড়া কেউ জানে না। বোঝে না।  আসপাশ থেকে দু চারজন স্যার ম্যাডাম বারবারই তাকালেন। এতখন ধরে একসাথে আলাপ করা টা হয়তোবা তাদের চোখে লেগেছে।চোখ মুছে শিপ্রা ম্যাডাম  উঠে বসলেন। বললেন চলো আজকে আমরা হাফ অফ নিয়ে চলে যাই বাহিরে বসবো। আমি কোনো অমত করলাম না। ম্যাডামের সাথে বেড়িয়ে আসলাম। হেড স্যারের কাছে অনুমতির জন্য আমার কিছু করতে হলো না শিপ্রা ম্যাডাম ই ব্যাবস্থা করলেন।  কেন জানি মনে হচ্ছে ওনার এই ঘটনাটা আমার জানা প্রয়োজন খুব প্রয়োজন। আমরা একটা পার্কের ভেতরে বসলাম। দুপুরের রোদে একটা গাছের ছায়ায়। এই সময় পার্কে লোকসমাগম নেই। মনের খচখচ করা প্রশ্নটা করে ফেললাম। 


-- "  ম্যাডাম আপনার বাবার বাড়িতে কেউ ছিলো না?  এসব কি ওনারা জানতো না?"

এবার শিপ্রা মাড্যাম খোলা আকাশের গায়ে তাকিয়ে হাসলেন। কি বিষাদ অসহায় সেই হাসি!!

--" আমার মৃ*ত সন্তানকে আমি দেখিনি।  তবে ইয়াসিরের কান্না দেখেছি। আমি না পুরো এলাকা দেখেছে। পেটের ভিতর মা*রা যাওয়ায় ডেলিভারির সময়েই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। সেই জ্ঞান আমার দুই দিন পরে ফিরে। আমার জরায়ু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্হ হয়। বাড়িতে দুই দিন চেষ্টা ও বাচ্চাটা পেটেই পায়*খানা করে দিয়েছিলো তাই। জ্ঞান ফিরে আমি একটা কাঠের পুতুল হয়ে গিয়েছিলাম মুনতাহা। সন্তান হারানোর মতো ব্যাথা মনে হয় পৃথিবীতে আর একটাও নেই। সেই ব্যাথা মনে হয় আমি ইয়াসিরের প্রতারণায় ও পাইনি।  তিন চার মাস পরে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রথম বললাম ইয়াসির কে ডিভোর্স দিবো। কোনো ভাবে ই ওর সাথে না। ইয়াসরি মনে হয় সেই তিনচার মাস নিজেকে পাল্টে নিয়েছিলো। প্রথম আমার হাতে পায়ে ধরলো। তারপর আমার মায়ের হাতে পায়ে। আমি তখন অনড় অবস্থায় তাঁকে জানিয়ে দিলাম আমার সিদ্ধান্তঃ। ইয়াসির শেষে হু*ম*কি দিলো ভালো কথায় কাজ না হলে তোমাকে জোর করতে বাধ্য হবো। তবুও তোমাকে ছাড়বো না। এতে করে আমার পরিবার আরও পেয়ে বসলো। মামা,খালা, মা, বোন সবাই বোঝাতে লাগলো পেশার দিতে লাগলো যাতে আমি সংসার করি ডিভোর্সের সিদ্ধান্তঃ পাল্টাই। ইয়াসির পাল্টে গেছে। বাচ্চার শোকে বাবা নিজেকে শুধরে নিয়েছে। 

 আমার একটা বোন আছে বিধবা। তিনটা ছোটো ছোটো বাচ্চা রেখে দুলাভাই মা*রা যায়। ওদের ভরনপোষণ আমি ই দিতাম। বেতনের বড়ো একটা অংশ ওদের দিতাম। এটাই ছিলো দুর্বল পয়েন্ট। ইয়াসির আমার চাকরি টা নষ্ট করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে যখন তখন মা ও মিনমিন করে বলতে লাগলো "জামাই পাল্টে গেছে। একটা সুযোগ দেয়। সংসার ভাঙা যায় কিন্তু ধরে রাখতে পারে কয়জন? মানুষ পাল্টায় না? জামাই ও পাল্টাইছে। গরীবের মেয়ে হইলে এত বাছলে চলে না। সহ্য করতে হয়। যে সয় সে রয়। তোর চাকরি না থাকলে এই এতিম বাচ্চাদের কি হবে চিন্তা করছো?"

আমি ও মাত্র এইচএসসি পাশ। স্নাতক ডিগ্রী নেই আমার। দুর্বল শিক্ষায় কার কাছে গিয়ে বলবো চাকরি দেন? সে রকম আত্মীয় স্বজন ও নেই। ইয়াসির একদিন আসলো বললো,--" ফিরে চলো। আমার সাথে না থাকলে তোমার চাকরি টা থাকবে না  তখন এত বুঝতাম না। বাহিরের দুনিয়া সম্পর্কে এত অবগত ছিলাম না। ইয়াসিরের অনেক উপর মহলে যাতায়াত ছিলো । এটা ওর চাকরির জন্য ই। আমার চাকরিটা চুটকি মে*রে নষ্ট করে দিতে পারে সেই ক্ষমতা ওর ছিলো এটা আমি জানতাম। আত্মীয় স্বজন ও হাই প্রোফাইল। নিজেও কিছু ক্ষমতা রাখে!! সব কিছু মিলে মেরুদণ্ড বাঁকা করে আবারও ফিরে গেলাম। কিভাবে যেন একটা বছর পরে আবার ও আমি কনসিভ করলাম। এবার আর ওকে ঘাটালাম না। আমার একটা সন্তান হারিয়েছি আর হারাতে চাই না। শুধু তাহাজ্জুদে চোখের পানি ফেলতাম। আল্লাহ একটা রাস্তা মনে উঠিয়ে দিলেন। তিনি এবার ফেরালেন না। বাচ্চা হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই ইয়াসির বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিলো। ফোন ও দিতো না। ওর মা আর বোনেরা মিলে ইয়াসিরের জন্য মেয়ে দেখতে লাগলো বিয়ে করাবে। আমি চুপ করে রইলাম। নিরিবিলি বাচ্চা জন্মদিলাম। আমার একটা ছেলে জান্নাতে গিয়ে আরেক ভাইকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার কোল আলো করে।  

ইয়াসির ওর ক্ষ*মতা ব্যবহার করে আমার চাকরিটা নষ্ট করার হুম*কি দিতো। আমি অসহায় হয়ে বাধ্য হতাম চুপ করে থাকতে। আমার তখন মনে হলো বাপের ও বাপ হয়। ভেতর থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করলাম। ভেঙে পরলে আর হবে না। ভাঙা গাছের গুঁড়ি টা ও মানুষ চুলায় পো*ড়ে। সবকিছুর ই একটা শেষ আছে। ওদের ও শেষ হওয়ার সময় এসে গিয়েছিলো।   আমি আস্তে আস্তে প্রমাণাদিগুলো নিয়ে ওর হেড অফিসে চলে গেলাম।  আমার সমস্ত প্রমাণের প্রেক্ষিতে ইয়াসিরের চাকরি চলে গেলো। ওর অফিসের বস ই দায়িত্ব নিয়ে বাড়িটা লেখিয়ে দিলেন আমার ছেলের নামে। ছেলে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়ির মালিক আমি। নারী নির্যাতনের মামলায় তিনবছর হা*জ*ত বাস ও আমার সন্তান হ*ত্যার দায়ে পাঁচ বছরের কারাদন্ড হলো।  লেজ ছাড়া শেয়ালের মতন হয়ে গেলো ইয়াসির। এরপরে আমি ডিভো*র্স দিয়ে দিলাম। এত কিছুর আগে ডি*ভোর্স দেইনি। নিজের অবস্থান শক্ত করে ই তবে। তবুও মনে মনে একটা ভয় থাকতো যদি ওদের কেউ রাস্তায় হেনস্তা করে?  থানায় একটা জিডি করে রাখলাম এবং শাশুড়ী র কাছে ফোন দিয়ে বলে রাখলাম জিডি করেছি সবার নামে। একচুল ক্ষতি করে দেখুন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঠেস দিয়ে কান্নার দিন শেষ। "

আমি চমকে উঠলাম। হুরমুর করে জিগ্যেস করলাম,

--" ডি*ভোর্স!! তাহলে স্যার.."

--" ডি*ভোর্সের তিনবছর পরে সাইফুলের সাথে আমার বিয়ে হয়। ওর ও একটা মেয়ে আছে। জন্মের সময় বাচ্চাটার মা মা-রা যায়। "

আমি বিস্ময়ে অবরুদ্ধ হয়ে গেলাম! 

--" আয়েশা আপনার মেয়ে নয়!! অবিশ্বাস্য!  এটা কোনো দিকে বোঝা যায় না "

ম্যাডাম এবার মুচকি হাসলেন। বললেন,

--" বোঝা যায় শুধু জানলে । আয়েশার আট বছর বয়সে সে নিজেই জানে না ওকে গর্ভেধারন করা নারীটি আমি না। তোমরা কি করে জানবে। বাদা দাও স্কুল ছুটির সময় হয়ে আসছে। চলে ওঠা যাক। আয়েশা বের হয়ে আমাকে খুঁজবে। "


.


স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। আয়েশা’র হাত ধরে শিপ্রা ম্যাডাম হাঁটছে গ্রামের ইটের রাস্তার পাশ দিয়ে। আমি দু কদম পেছনে। এখন বাসায় তো যেতেই হবে! মায়ের কাছে গেলে মানসিক অশান্তি আরও বারে। কেন মানিয়ে নিতে পারি না, কেন একটা বাচ্চা নেই না বাচ্চা নিলেই নাকি শাহেদ পাল্টে যাবে। পুরুষ মানুষ একটু অন্য রকম থাকে বয়সের সময় এরপর নাকি ঠিক হয় সংসার পুরান হলে। কই শিপ্রা ম্যাডামের প্রাক্তন তো ভালো হয় নাই। কে জানে এখনো যদি তার সাথে ই থাকতো তাহলে কেননা শিপ্রা ম্যাডামের ই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেতো না!!


--" মুনতাহা!"

শিপ্রা ম্যাডামের স্বামী এসেছেন। বাইকের পেছনে তার ছেলে। স্কুল ড্রেস পরা। তার মানে ছেলের স্কুল ছুটি হলে বাবা ছেলেকে নিয়ে আসছে। মেয়ে কে মা নিয়ে আসলো। দেখে বোঝা যাচ্ছে না এই লোকটা ছেলেটার জন্মদাতা নয়। আমি ম্যাডামের পাশে দাঁড়ালাম। আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

-- " বড়ো বোনের মতন করে একটা উপদেশ দিচ্ছি। কু*কুরে*র লেজ কোনো দিন সোজা হয় না বুঝলে!! যদি তুমি চুঙ্গায় দুইশো বছর ও রাখো ছেড়ে দিলে আবারও সেই বাঁকা। আমি কোনো দিন মা হতে পারবো না আর। আমি চাই না আমার মতন করে কেউ ভুক্তভোগী হোক। বুঝেছো কি বলেছি?"


আমি মাথা নারালাম। যে সিদ্ধান্তঃ নিয়ে এতো দোলাচালে ছিলাম তা এখন স্থীর হলো। বললাম,


-- " যদি কোনো জায়গায় ঠেকে যাই?"

--" তুমি যদি কোনো জায়গায় ঠেকে যাও কেউ কে না পেলেও আমি আর তোমার স্যারকে পাবে। স্টেপ নাও যত দ্রুত পারো। ওই বিষা*ক্ত ফেনায় কোনো প্রান নয়"


.


 রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছি। শাহেদের সাথে পারিবারিক ভাবে পরিচয়। এ্যারেনঞ্জ কাম লাভ ম্যারেজ। দের বছর ধরে একে অন্যকে চিনেছি জেনেছি। তারপরে সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ের। অথচ এখন আর  আমাকে ভালো লাগে না। আমার মেদ জমলো পেটের চামড়ায়, চুলের গোছা পাতলা লাউয়ের ডগা, ডাবল চিন ফুলে উঠেছে, মলিন চামড়া প্রাণহীন মনে হয় কত সমস্যা...সমাধান হিসেবে এখন বাসায় আমার সামনেই নতুন নতুন মুখ আসে শাহেদের সাথে। যাঁরা কি-না রাতের রানী নামেও পরিচিত।  প্রতিবাদ করলে শাহেদ গায়ে হাত তোলে ছয়মাসের মতন। এক কথার পিঠে অন্য কথা বললেই ট্যাগ লাগে ঝগরুটের।  দিনদিন এগুলো বাড়বেই কারন একটা ই গরীরের মেয়ের মোহে পরে বিয়ে করে ফেলা!! মোহ কেটে গেছে। লম্বা দম নিয়ে কলেজের বান্ধবী মল্লিকা কে কল দিলাম,

---" মল্লিকা কালকে তো শুক্রবার তুই কি চেম্বারে থাকবি? "

--" শুক্রবার তো অফ, কিন্তু সমস্যা কার তাই বল আগে?"

বললাম, 

--" আমার!!  সমস্যা আমার। তবে পরামর্শ দিলেই ই হবে "

মল্লিকা একটু চেঁচিয়ে ই উঠলো,

--" তোর? তুই কালকে সকালেই বাসায় আয়। তোর জন্য চেম্বার কিসের?  বাসায় কথা বলবি সারাদিন থাকবি। "

বললাম, 

--" আচ্ছা ঠিক আছে। আমার শুধু একটু পরামর্শই লাগবে দোস্ত বড়ো কোনো অসুখ নয়  "

মল্লিকা তখন ধীরে করে জিগ্যেস করলো,

 ---"ছোটো করে বলতো কি পরামর্শ নিবি?"

মুচকি হেসে বললাম,

--" যৌ*ন ডক্টরের কাছে মানুষ তো যৌন সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য ই যায় তাই না? কাল দেখা হচ্ছে "

.


খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। শাহেদ না ভালো বাসুক আমি তো বেসেছি!! তিনবছরের সংসারে দেড় বছর কত কিছু সহ্য করেছি! মদ্যপ অবস্থায় বেধড়ক মা*র খেয়ে সকালের ভেজা চুলে লাজুক হেসে কথা বলেছি! যদি বেহুশ অবস্থায় গায়ে হাত তুলে তাহলে যাতে আর ঝামেলা না হয়!! একতরফা ভাবে সেক্রিফাইস করে করে সারাজীবন তো নেওয়া যাবে না। ওকে যদি শুধু ডিভোর্স ও দিয়ে দেই ও অন্য কারও জীবন নষ্ট করবে। কিন্তু খু*ন তো করা যাবে না তাই...  ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটা ইনজেকশন.... আর কড়া ঘুমের বড়ি। 

মল্লিকা অবশ্য দিতে চায়নি কিন্তু আমার সব কিছু শুনে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে না ও করতে পারেনি। যদি শারীরিক ভাবে সক্ষম ই না থাকে তাহলে তো আর.... 

থাক এসব। আগামী সাতদিন ধরে রাতে একটা করে ইনজেকশন। আর ইনজেকশনের আগে ঘুমের ঔষধ খায়িয়ে নিবো। না হলে টের পেলে আমি ছয় টু*ক*রো হয়ে যাবো!


.


তিনমাসের নোটিশে আজকে আবারও শাহেদের সাথে কোর্টে দেখা আমার। কেমন রুগ্ন শুষ্ক চেহারায়। মায়া লাগলো কি?  জানি না। উপর দিয়ে একটু তাচ্ছিল্যের শব্দে হাসলাম। শাহেদ ফিরে তাকালো। আস্তে করে বললো,

---" মুনতাহা আজকেই আমাদের সম্পর্কের শেষ। আরেকটা বার কি চিন্তা করা যায় না...?  "

আমার ভ্রুক্ষেপহীন মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে শাহেদ বললো,

--" আমি ভালো হয়ে যাবো মুনতাহা! ফিরে চলো "

এবার একটু শব্দ করে ই হাসলাম। শাহেদ এবার অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। আমি শাহেদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, 

---"  নখ, ঠোঁট ভাঙা চিল যদি বলে ভালো হয়েছি তাই শিকার করি না একটা কি সত্যি শাহেদ? "

শাহেদ আমার দিকে অনেক খন তাকিয়ে রইলো। আস্তে করে বললো 

--" মানে কি? "


আমি আর উত্তর দিলাম না। সব কিছুর উত্তর দিতে নেই। কিছু প্রশ্ন রেখে দিতে হয়। প্রশ্নটা শাহেদের নিরুত্তাপ বিষাদময় রাতগুলো কাটানোর জন্য ই রেখে দিলাম । ও রাত জেগে কি করবে? এখন তো আর নারীসঙ্গ উপভোগের জন্য সে উপযুক্ত নেই...। বসে বসে উত্তর খুঁজুক। 

কোর্ট থেকে বেরিয়ে তারাহুরো করে শপিং এ এলাম। আমার সাথে শিপ্রা ম্যাডাম ও আয়েশা আছে। আসার সময় শাহেদ কে বাই ও বলে এসেছি।  আগামী মাসে আমার ফ্লাইট। এখন আমার অনেক কাজ...

  

-নীরব প্রতিশোধ 

অনুগল্প 


পরকিয়া কতটা ভয়ংকর পড়ুন।