রোমান্টিক হাসির স্ট্যাটাস | খুব রোমান্টিক গল্প

 রোমান্টিক ফানি স্ট্যাটাস

রোমান্টিক ফানি স্ট্যাটাস

সন্ধ্যায় রান্নাঘরে গিয়ে আম্মুকে বললাম,

-আম্মু আজকে আমি রান্না করি, 

আম্মু ভাবতেছে হঠাৎ এই গুনুধর মেয়ের কি হলো, 

-ওহ আজকে তুই রান্না করবি?  ঠিক আছে কর,

-কি রান্না করবো আম্মু, 

-এই যে ডিম সিদ্ধ করা আছে আপাতত এই ডিম দিয়ে আলু রান্না করলেই হবে, এমনিতেই দুপুরের তরকারি অনেকটা রয়ে গেছে, 

-ঠিক আছে তুমি চলে যাও, 

আমার কথামতো আম্মু চলে গেলো, আমিও মোবাইল দেখে রান্না করতে লাগলাম, 

রান্না প্রায় কমপ্লিট  সবাই খেতে বসেছে,  ডিমের হাড়ি আম্মু পুরো এপার ওপার করে ফেলছে কিন্তু কোথাও ডিম নাই, 

-আরেব্বা ডিম কই, 

-ডিম তো আমি দিই নাই আম্মু, 

-বাহ ডিম ছাড়াই ডিমের তরকারি রান্না করলে, 

আব্বু বলে উঠলো ব্যাপার না আস্তে আস্তে শিখে যাবে,  

সবাই মিলে দুপুরের তরকারি দিয়েই খেয়ে উঠে চলে গেলো, 

রান্না বান্না করে মানুষকে খাওয়াতে আমার খুব ভালো লাগে, আর আম্মু একা হাতে সব সামলায় ব্যাপারটাও কেমন দেখায়।

সকাল বেলা আবার আমি রান্না ঘরে যাই,,, আম্মু রান্না করতে দিচ্ছিলোই না, জোর করে রান্না করতে লেগে পড়লাম, 

আজ বাসায় গোস্ত রান্না হবে, চুলোয় কড়াই বসিয়ে তেল পেয়াজ দিয়ে গোস্ত রান্নার রেসিপি দেখতে লাগলাম, বাহ রে ১৫ মিনিটের রেসিপি শেষ-ই যেনো হচ্ছে না, তাও আমি দেখতেছি হঠাৎ নাকে পোড়া পোড়া গন্ধ আসলো কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি হায় হায় সব পেয়াজ কালা, 

আম্মু দেখলে আজ আমার খবর আছে, 

যাইহোক ওগুলো ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে বসিয়ে দিলাম,  গল্প পড়ে পড়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম,  কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম কে জানে,  ঘুম ভাঙলো আম্মুর চেঁচামেচিতে, নিচে গিয়ে দেখি পুরো ঘর ধোঁয়াটে, আম্মু আমাকে ইচ্ছা মতো বকা দিলো, তার পর দুপুরের জন্য আবার মাছ বের করে অর্ধেক রান্না করতেছিলো আর বাকি অর্ধেক আমার কাছে দিয়ে বললো ফ্রিজে রেখে দিতে,  আমি মাছের পলিথিন হাতে নিয়ে হেটে হেটে ভাবতেছি, গোস্ত চুলায় বসিয়ে কিভাবে আমি ঘুমিয়ে গেলাম, আজ আমার জন্য-ই এতো গুলো গোস্তো নষ্ট হলো ভাবতে ভাবতে মাছের পলিথিন আম্মুর আলমারিতে রেখে নিজের রুমে গিয়ে গল্প পড়তে লাগলাম মন'টাকে একটু ফ্রেশ রাখা দরকার,

বিকেলে খেয়ে সোফায় বসে টিভি দেখছি, কিন্তু আমার মন থেকে ওই একটা ব্যাপার যাচ্ছে-ই না,  রান্না করা আমার পছন্দ কিন্তু আম্মু রান্না করতেই দেয় না,  কেনো কি জানি।


সন্ধ্যায় আব্বু বাসায় এসে আমার পাশে সোফায় বসে পড়লেন, ক্লান্ত শরীরে আম্মুকে বললেন এক কাপ চা করে দিতে,  আমি বললাম আমি করে দেই, আম্মু বললো না আমি জেদ ধরে বসি আছি শেষে আব্বু বললো আরেব্বা-ই করে দিক না,  চা-ই তো? করতে পারবে, 

আমিও বললাম হ্যাঁ আমি পারবো, 

আব্বুর জন্য চা নিয়ে আসলাম, আব্বু বেশ খুশি মনে চা'য়ে চুমুক দিলো, তারপর থম মেরে বসে রইলো কোনো নড়াচড়া করতেছে না। 

আম্মু চিল্লিয়ে উঠলো ওরে আরেব্বা রে কি চা বানিয়ে আনলি রে তোর বাপ মনে হয় হার্ট অ্যাটাক  করে ফেলছে, 

দুই মিনিট পর ভুররর করে আব্বু সব চা ফেলে দিলো,  তারপর শান্ত গলায় আমাকে বললো, মামনী তুমি মনে হয় চিনির বদলে লবন দিছো তাও এক চামচ না দুই চামচ, 

আমি বললাম আমি লবন দিতে যাবো কেনো আমি তো চিনি-ই দিছি, 

আব্বু বললো ঠিক আছে রুমে যাও, আমি রুমে চলে আসলাম।


বেহায়ার মতো রাতেও আবার রান্না ঘরে যাই, আম্মু ঝাড়ি দিয়ে বললো রুমে আসতে কিন্তু আমি আসি নি, আমি আজ ভালো করে রান্না করবোই, বেশ ভালো মতেই রান্নাটা সেরে নিলাম এবার চুলায় ভাত বসিয়ে দিলাম, ভাতের ফেন ঝেড়ে আবার চুলায় বসিয়ে দিলাম চুলার আচ একটুও কমাই নি, কিছু সময় পর একটা পুড়া পুড়া গন্ধ আসলো তারপর চুলার আচ নিবিয়ে দিলাম,


রাতে সবাই খেতে বসে আবার আম্মুর মেজাজ বিগড়ে গেলো, 

-আরেব্বা আজ ভাত পুড়িয়ে ফেলছো তাই না? 

-কই না তো আম্মু, ভাতে তো একটু স্মোক ফ্লেভার আনলাম, 

-তুমি আর তোমার বাবা মিলে খাও এই খাবার, 

ওমনি ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, 

-কিরে ভাইয়া খাবি না, 

-না আমার খিদে নেই।

-সত্যি করে বল খাবি না কেনো। 

-কাল থেকে তো এই অঘটন দেখে আসছি আমি জানি এরকম কিছু একটা হবে তাই তো বাইরে থেকে আমার জন্য বিরিয়ানি  নিয়ে আসছি,  বলেই ভাইয়া চলে গেলো।


আমি ফোন টিপতে টিপতে খাচ্ছিলাম আর আম্মুকে চিল্লিয়ে বললাম, কই আম্মু খারাপ লাগতেছে না তো, ফোন টিপে টিপে খাও দেখবে ভালোই লাগবে, ফেসবুকে একবার দেখছিলাম একটা মেয়ে ফোন টিপতে টিপতে  ধনে পাতার ভর্তা মনে করে মেহেদী পাতা খেয়েছে,  একটা পুরুষ ডাল মনে করে পানি ঢেলে ভাত খেয়েছে,  সেই ফিল আসে,  তুমিও আসো,

-ওইরকম গরু ছাগলের মতো রুচি আমার নেই আরেব্বা, 

-এরে আম্মু কি আমায় ইনডিরেক্টলি গরু ছাগল বললো, আড় চোখে আব্বুর দিকে তাকালাম, দেখলাম উনি খাচ্ছে,  দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ কষ্ট হচ্ছে,  শুধু আমার মন রক্ষার্থে খাচ্ছে। 


আমি নিজের রুমে চলে গেলাম,  কাল বন্ধবীদের জন্য বিরিয়ানি আর নুডলস রান্না করে নিয়ে যাবো, 

যেই ভাবা সেই কাজ, পরের দিন কলেজ গেলাম বিরিয়ানি আর নুডলস নিয়ে, বিরিয়ানি শুনে লকলক করে আমাকে ঘিরে বসলো আমার বান্ধবীরা,  কিন্তু একি হলো পুরো বিরিয়ানিতে তো দেখছি মাংসের ছিটেফোঁটাও নেই, তাও দুইজন দুই লোকমা মুখে দিয়ে বমি করে দিছে, আম্মুকে ফোন করে বললাম আম্মু দেখতো বিরিয়ানির হাড়ির নিচে কি সব গোস্ত রয়ে গেলো, আম্মু বললো গোস্ত কি গোস্তর একটা হাড্ডি ও নাই হাড়ি তে,  বুঝতে পারলাম আমি গোস্তো ছাড়াই বিরিয়ানি রান্না করেছি,,, এবার বান্ধবীদের নুডলস দিলাম কেউ খেতে চাইছে না এক প্রকার জোর করে দিছি ওরা কান্না করে দিছে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছেরে বললো এটা নুডলস বানিয়ে এনেছিস নাকি শুধু তেলে বেজে নিয়ে এসেছিস, ওদের আর কিছু বললাম না। 


রাতে আবার রান্নাঘরে গেলাম,আমাকে দেখেই আম্মু বললো যা রুমে যা তোকে রান্না করতে হবে না,  আমি বললাম না আমি রান্না করবো আমাকেও রান্না করা শিখতে দাও আমি রান্না করতে ভালোবাসি, আম্মু বললো তোর হাতের রান্না কেউ খাবে না আরেব্বা,  আগে শিখ পড়ে রান্না করবি, আমি বললাম না আমি রান্না করতে করতে শিখে যাবো।

আম্মু রাগ দেখিয়ে বললো তুই রান্না করলে আমি আর আমার ছেলে হাড়ি নিয়ে আলাদা হয়ে যাবো তুই থাক তোর বাপ নিয়ে, আম্মু চলে গেলো, আমি ভাবতে লাগলাম আমি কি উনার নিজের পেটের মেয়ে নাকি আমাকেও পুলের নিচ গাছের নিচ রাস্তা হাসপাতাল এসবের কোনো একটা থেকে কুড়িয়ে এনেছে?

যেই ভাবা সেই কাজ আম্মু আলু ভর্তা করেছে,  উনি আর উনার ছেলে খাচ্ছে,  আব্বু একটু চাইলো কিন্তু আম্মু দিলো না তো দিলোই না আরও উল্টো বললো মেয়েকে আশকারা দিয়ে তুমিই মাথায় তুলেছো এবার খাও এই অখাদ্য, আমিও বললো আব্বু তুমি আমার তরকারি দিয়েই খাও, আজকের তরকারি বেশ ভালো হয়েছে।

আব্বু কোনোমতে খেলো, খাওয়া শেষে আম্মুকে বললাম রান্না তো করতে দেও না বাসন গুলা অন্তত দাও একটু কাজ করে তোমায় হেল্প করি, আম্মু আমার কাছে বাসন দিয়ে রুমে চলে গেলো কিছু সময় পর চিল্লিয়ে উঠলো পুরো রুমে পঁচা পঁচা দুর্গন্ধ আসছে কোথা থেকে,  অবশেষে সবাই মিলে অনেক খোঁজাখুঁজির পর আম্মুর আলমারিতে পাওয়া গেলো সেই মাছের পলিথিন আর সেই মাছ পঁচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে,,, আম্মু আমায় আবারও ইচ্ছামতো বকা দিলো, গাল ফুলিয়ে রুমে এসে শুয়ে আছি তখন-ই আব্বু রুমে এসে আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,  তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে তুমি এ বাড়ি রাজকুমারী তোমাকে রান্না বান্না মানায় না মামনী, আমি বললাম আসল কথা কি তাই কও, আমি যাতে আর রান্না না করি তাই তো?

-হ্যা তুমি আর রান্না করার দরকার নাই মামনী, বুঝতেই তো পারো তোমার আম্মুর মাথা গরম খালি খেক খেক করে, শুধু শুধু তোমায় বকাচকা করবে, 

-ঠিক আছে আমি আর রান্না ঘরে যাবো না, 

আব্বু চলে গেলো, আমিও ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে ঘুম ভাঙে আম্মুর চেঁচামেচিতে রাতে আমি যে বাসন গুলো ধুয়েছিলাম ওইগুলো নাকি খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এইগুলো পাইবো ক্যামনে?  আমি নিজের দরকারি জিনিস-ই কই রাখি সেটাই ভুলে যাই আর ওইগুলো তো হলো বাসন মাত্র!!


_সমাপ্ত


গল্প_আমার_হাতের_রান্না


সব ধরনের রোম্যান্টিক মজার গল্প পড়ুন।