হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | খুব রোমান্টিক গল্প

  •  রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

বাবা-মা আমাকে এমন একটা বেয়াড়া ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে যে, মাঝেমাঝে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, হাসবো না কি কাঁদবো! 


বান্ধবীদের কাছে কত শুনেছি নতুন নতুন বিয়ে হলে বরের সাথে গল্প শেষ হতেই চায় না। আর আমি কী কপাল করে যে এসেছিলাম দুনিয়ায়! আল্লাহ মালুম। বিয়ের সপ্তাহখানেক পার হয়েছে মাত্র। বিয়ের পর অহনের সেদিন প্রথম অফিস। এদিকে বাসায় আমায় একটুও ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে ওর সাথে বাইরে কোথাও গিয়ে একটু ঘুরে আসি। ফুচকা-টুচকা খাই। সাজুগুজু বিশেষ কিছু করিনি তবুও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মন্দ লাগলো না। অহনকে ফোন দিয়ে একটু আহলাদ করেই বললাম,

- বলো তো, এখন আমার মনের মধ্যে কী চলে?

- দূরভিসন্ধি!

-কী!

-নাহ, কিছু না।

-কিছু না মানে? দূরভিসন্ধি চলে মানে কী?

-মানে এখন তুমি আমাকে নিয়ে ফুচকা খাওয়ার জন্য  বের হবে। সেজেগুজে বসে আছো। এদিকে আমার সাতদিনের কাজ জমে আছে!


ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেরকম বসে ছিলাম,

সেরকমই বসে রইলাম। অভিমান করবো না কি লজ্জা পাবো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। 


সেদিন অহনের জিনিসপত্র গোছগাছ করছিলাম। বইয়ের আলমারি গোছাতে যেয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। সাধারণত বইয়ের আলমারি কবি-সাহিত্যিকদের নাম অনুসারে সাজানো থাকে কিন্তু উনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন! কোথাও লিখে রেখেছে বিন্দু, কোথাও শ্রাবণ, কোথাও মহুয়া, কোথাও জালাল ভাই! এরকম অন্তত দশটা নাম পাওয়া গেলো। সেদিন রাতে বাসায় ফিরলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বইয়ের আলমারিতে যে এসব নাম লেখা। এরা কারা? 


এতে তার বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। শুধু বললো,

- ওহ! এরা? এদের কাছ থেকে বইগুলো চুরি করে আনা তো। তাই! কারও কারও কাছ থেকে অবশ্য ধারও এনেছিলাম, আর ফেরত দেইনি! 


সেদিনই বুঝলাম এমন জিনিস আমার কপালে জুটেছে! খুবই একছেপশনাল, নিঃসন্দেহে! 


গুনে দেখলাম বইয়ের আলমারির যে তাকে মহুয়া লেখা সেখানে কম করে হলেও পঁচিশটা বই আছে। তাকে জেরা করলাম,

- মহুয়া কে?

- আমার বন্ধু। 

-তোমাকে এতগুলো বই দিলো সে? ঘটনা কী?

- ঘটনা তেমন কিছুই না। মহুয়ার সাথে শ্রাবণের রিলেশন ছিলো। আর মহুয়ার বাবার একটা লাইব্রেরিও ছিলো। তো মহুয়া বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে চিঠি দিতো আমাকে।

- তোমাকে চিঠি দিতো কেন?

-শ্রাবণকে দেওয়ার জন্য।

-তুমি দাওনি সেসব চিঠি।

-চিঠি তো দিয়েছি, শুধু বইগুলো আমার কাছে রেখে দিয়েছি। 


পাঁচ মিনিট আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বেরুলো না। শেষে প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমিই বললাম, তা তুমি প্রেম-টেম করোনি কখনও? সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দিলো। করেছিলাম একটা, টিকলো না! 

-কেন?

-কাহিনী আছে একটা।

-শুনবো, বলো। 


-'আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। পকেটে টাকা পয়সা তেমন থাকে না বললেই চলে। প্রেম করে ডেট-ফেট আর কীভাবে করব? বড়জোর টিএসসি আর কলা ভবনের সামনে দশ টাকার বাদাম কিনে খাই। এদিকে ইশতিরও আবার বাদাম খুব পছন্দ। তা তাকে শুধু কিনে দিলেই হয় না, ছিলেও দিতে হয়। এদিকে দু আঙুলে চাপ দিয়ে বাদাম ভাঙতে আমার বেশ কষ্টই লাগে। আমি আবার ছোটবেলা থেকেই অলস প্রকৃতির। তো আমি ইশতিকে দাঁতে কামড় দিয়ে বাদাম ছিলে দেওয়া শুরু করলাম। ওমা! মেয়েটা দেখি আকাশ থেকে পড়লো! 


মনে মনে বললাম, খাবি যখন নিজে ছিলেই তো খেতে পারিস। কিনে তো আমিই দেই। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত বাদামওয়ালা মামাকেই বললাম, তুমিই ছিলে দিবা। দশ টাকার বাদাম পনের টাকা পাবা। বাদামওয়ালা মামা রাজিই ছিলো, কিন্তু মেয়েটা সেই যে গেলো আর ফেরার নাম নেই।' 


নিজের বরের প্রেমকাহিনী শুনে হেসে ফেলার মতো সৌভাগ্যবতী আমার মতো আর কজন আছে দুনিয়ায়? তবুও মেয়েদের মন বলে কথা। হাসি আর কাঁদি, সারারাত মনের ভেতরে খচখচ করতে থাকলো। শুধু এই কারণেই কি ইশতি নামের মেয়েটার সাথে অহনের ব্রেকাপ হয়েছিলো? না কি ঘটনা অন্য কিছু? 


তার দিন দুয়েক পর অহন অফিস থেকে এসে বললো,

- এই শোনো না? আমার ডাক্তার দেখানো খুব জরুরি।

-কেন? কী হয়েছে তোমার?

-আমি না অতীতের কিছু মনে করতে পারছি না। স্মরণ শক্তি একদম কমে গেছে। 

-কী মনে করতে পারছো না তুমি?

-ওই তো আমি কলেজে আরও একটা মেয়ের সাথে দুই বছর প্রেম করেছি। কম তো না, দুইটা বছর! অথচ এখন মেয়েটার নামই মনে করতে পারছি না! বলো তো এটা খুব জটিল সমস্যা না?

-হ্যাঁ, বুঝেছি!

-কী বুঝেছো?

-আসার পথে এক কেজি রসুন কিনে আনতে বলছিলাম। সেটাই আনোনি! ভুলে গেছো। তাই তো? 


সে রাতে জনাব একদম চুপচাপ! বোধকরি একটা ধাক্কা খেয়েছে! বিয়ে করা নতুন বউ! শুরুতেই তার ভুজংভাজং ধরে ফেলছে, এটা সম্ভবত সে মেনে নিতে পারছে না। 


এদিকে আমার মনের খচখচানি কিছুতেই যায় না।কাজেই পরদিন তার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম, কখন ফেরে? তাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতেই হবে। দেখি আজ সে একটু আগেভাগেই এসেছে! আসার পথে এক কেজি রসুনও কিনে এনেছে। ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে রসুনের প্যাকেট খুলছে। আমি বললাম, 

- তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার।

- বলো।

- বিয়ের আগে প্রেম তো তুমি করছো তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কয়টা করছো? 


উনি দেখি আমার কথা শোনার চেয়ে কয়েকটা রসুন বের করে উল্টে-পাল্টে দেখছে, খুব মনোযোগ তার। রাগ উঠে গেলো আমার। বললাম,

- আমার কথা না শুনে তুমি কী দেখছো এগুলি?

- সবাই বলে না? সব রসুনের টুটটুট এক? ওটাই চেক করছি! কথাটা আসলে কতখানি সত্যি! 


রাগ উঠেছিলো, হাসিও পেলো! নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

- বলতে চাচ্ছো তো সব মেয়েরাই অহেতুক সন্দেহ করে? ঠিক আছে বলো, আমি ছাড়া আর কোন মেয়েকে তুমি সন্দেহ করতে দেখেছো?

- ওই তো, আমাদের কলিগ সোমা আপা! তার বরকে অযথাই সন্দেহ করে। অবশ্য তার বর সোহান ভাইও একখান চিজ! এমন একটা কাজ করেছে না?

- কী করেছে?

- এক পীর বাবার কাছ থেকে কি এক তাবিজ এনে বেঁধে রেখেছে সোমা আপার কোমরে। আর তার যা ফল; খুবই মারাত্মক!

- কী ফল শুনি?

- সোমা আপা সোহান ভাইকে অহেতুক সন্দেহ করে কোনো কথা বললেই, সোমা আপার দাঁত পড়ে যায়! পড়তে পড়তে আটাশটা দাঁত পড়ে গেছে। মাত্র চারটা দাঁত অবশিষ্ট আছে। ওই চারটা দাঁত দিয়ে সোমা আপা কেবল স্যুপ খেতে পারেন!

- মানে কি!

- সিরিয়াসলি! 


বুঝলাম, ইনস্ট্যান্ট গল্প বানাতে জনাবের জুড়ি নেই। যাই হোক তার পরদিন শুক্রবার। অহনের সাথে শপিংয়ে যেয়ে সোমা আপার সাথেই দেখা। কী চমৎকার মহিলা, দাঁতগুলোও ভীষণ সুন্দর। বাসায় ফেরার পথে রিকশায় বসে অহনকে জিজ্ঞেস করলাম,

- তুমি যে বললা, সোমা আপার দাঁত নেই। শুধু স্যুপ খায়। অথচ সোমা আপার কী সুন্দর দাঁত!

- তুমি তো দেখছি আসল- নকলই বোঝো না? ওগুলি বাঁধাই করা দাঁত। গোল্ডের বদলে ইমিটেশন কিনে দিলেও তো দেখি ধরতে পারবা না তুমি!

আমি আর কি বলবো! হা হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকি তার দিকে আর বিস্মিত হই! শেষমেশ আমার কপালেই জুটলো? 


তার ঠিক সপ্তাহ দুয়েক পরের কথা। শাহজাদপুর থেকে আমার বড় মামা এসেছেন। তিনি এসেছেন আমাদের দাওয়াত দিতে। আমার কাজিন মাহির বিয়ে। আমরা যেন বিয়ের অন্তত এক সপ্তাহ আগে যাই। গ্রামের বাড়িতেই অনুষ্ঠান। শুধু আমরাই না, বড় মামা বললো আমাদের সব কাজিনরাও আগে চলে আসবে। বাড়ির আঙিনায় তাবু টানানো হবে। সবাই মিলে খুব মজা করবে। এটা শুনে অহন উশখুশ শুরু করে দিলো। তার যথেষ্ট কারণ আছে। সে সাতদিন আগে কিছুতেই ছুটি পাবে না। কাজেই সে বড় মামাকে বললো,

- মামা আপনাদের ওদিকে কি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় লঙ্গরখানা খুলে রাখা নিয়ম? 


ওর কথা শুনে সেদিন আমার রাশগম্ভীর মামাটাও হো হো করে হেসে ফেললো! মামা চলে যেতেই বললাম,

- আমার সব কাজিনরা আসবে। এতে তুমি লঙ্গরখানার কী দেখলে!

-কতজন কাজিন তোমার?

-সব মিলিয়ে সাতাশজন।

- সরকার নতুন একটা জেলা ঘোষণা করে দিলেই তো পারে!

- কথা বলার সময় খোঁচা তোমার দিতেই হবে?

-তবুও তো বলো, নতুন নতুন বিয়ে অথচ কিছুই দেই না তোমাকে! 


সে রাতে আর বিশেষ কোনো কথা হলো না। আমি একটু রাগ করেছি এটা বুঝতে পেরে পরদিন নাস্তার টেবিলে অহন বললো,

- বিভা শোনো?

-বলো।

- বউ রাগ করে থাকলে আমাদের জালাল ভাই কী করে জানো?

- কী করে?

-অফিস থেকে ফেরার পথে এক কেজি ছোট মাছ কিনে নিয়ে আসে। আর ভাবী মাছ কাটার সময় জালাল ভাইকে ইচ্ছেমতো গালাগাল দিতে থাকে। আর জালাল ভাই বলে, কইছিলাম না বউ, আমার সাথে রাগ করে কথা না বলে একদিনও থাকতে পারবা না তুমি!

কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বললাম,

-আচ্ছা! এরাই তাহলে তোমার আইডল? 


অহন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, 

-আর আইডল!

-এত লম্বা শ্বাস কেন?

-ইচ্ছে ছিলো কমলাকান্তের মতো সারাজীবন একা থাকবো। সে-ই আমার প্রকৃত আইডল ছিলো।

-তা বিয়ে করলে কেন? কে হাতে-পায়ে ধরেছিলো বিয়ে করার জন্য?

-ওই আমাদের পাড়ার রিফাত? ওর ডেঙ্গু হলো বলেই বিয়েতে মত দিয়ে দিলাম।

-ও মা! কেন?

-বিয়ের আগে আমি তো জীবনেও মশারি টানাইনি। এদিকে মা বললো, আর অমত করিস না বাবা। বউ তোকে সারাজীবন মশারি টানিয়ে দিবে!

কোনোরকমে হাসি চেপে বললাম,

- ওই! সারাক্ষণ ফাজলামো করো তুমি আমার সাথে? রোমান্টিক কিছু জানো না? 


সেদিন রাতে বাসায় ফিরে অহন বললো, 

-শোনো বিভা! তুমি যে আমাকে একটুও রোমান্টিক মনে করো না, এটার একটা সমুচিত জবাব দিবো আজকে।

- কী জবাব?

-ব্যাগটা খুলে দেখো, কিছু ফুল নিয়ে এসেছি তোমার জন্য। 


আমি তড়িঘড়ি করে ব্যাগ খুলে দেখি, আট-দশটা মিষ্টি কুমড়ার ফুল! 


এমন ত্যাঁদড় একটা ছেলে! কী করে তাকে সোজা করবো সেটাই ভেবে পাই না। এদিকে ছোট ভাবী প্রায়ই ফোন করে বলে, বিয়ের এক মাস হতে চললো। অহনের সাথে তোর বোঝাপড়া ভালো তো? মা তো প্রতিদিন এক কথা! বাচ্চাকাচ্চা নিতে দেরি করবি না কিন্তু। তোর বাবা তো নাতি-নাতনীর জন্য অস্থির হয়ে আছে! সেদিন রাতে অহনকে তাই বললাম, 

- আমাদের ফেমিলি প্ল্যানিং থাকা উচিত। কী বলো?

- সারাদিন অফিসে আমার প্ল্যানিং এর কাজ। বাসায় ফিরেও রাত-বিরাতে এসব করতে পারবো না। বাসা ভাড়া পঁচিশ হাজার, বাজার খরচ বিশ, ডিশ বিল,পানি বিল, বিদ্যুৎ বিল-এসব তুমিই করো। 

-ধ্যাত! তোমার মাথা-মুণ্ডু! 


আমি রাগ করে পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। ওমা! একটু পর জনাব দেখি নাক ডাকছে! বিয়ের পর সেদিনই প্রথম অসহায় লাগলো নিজেকে। মনে হলো, বিয়ের পরে মেয়েরা আসলেই বন্ধুহীন হয়ে পড়ে। 


মস্ত একটা দিন-একা কীভাবে কাটে বাসায়? এটা-ওটা করি কিন্তু কিছুতেই সময় যায় না। এরকম অলস দিনে কত স্মৃতিই উঁকি দেয়-অতীত জীবনের কত কথাই মনে পড়ে যায়। সেদিন আমার মনটা বেশ বিষণ্ণই ছিলো। অহনও বাসায় ফিরে সেটা টের পেলো বোধহয়। কিন্তু আমাকে ঘাটালো না বিশেষ। পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসেছে মাত্র, আমি একটা ডিম ওমলেট করতে গিয়েছি কিচেনে। ফিরে আসা মাত্রই আমাকে চমকে দিয়ে বললো,

- এক্সের কথা খুব মনে পড়ছে বুঝি? 


আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম! অহন ওমলেট খেতে খেতে বললো, 

-তোমার ফোনে একটা মেসেজ এসেছে। হঠাৎ চোখ পড়ে গেলো। স্যরি। 


আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। ডাইনিং টেবিলের ওপর আমার ফোনটা রাখা ছিলো। অহনের বিশেষ কোনো ভাবান্তর নেই। নাস্তা করতে করতেই প্রশ্ন করলো, তোমরা বিয়ে করলে না কেন? 


আমি কোনো জবাব না দিয়ে তেমনিই দাঁড়িয়ে রইলাম। অহন সেদিনের মতো নাস্তা করে অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে গেলো। 


এমন একটা ধাক্কার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ভেতরে ভেতরে খুব অস্থিরতা কাজ করছিলো। রুমের ভেতরেই পায়চারী করলাম, বারান্দায় গেলাম। কিছুতেই মন বসছে না। কী হতে যে কী হয়ে গেল! কিছুই মেলাতে পারছিলাম না। হ্যাঁ, তমালের সাথে প্রেম আমার ছিলো। বিয়েও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি। সে দায় একটুও আমার না। আমি যখন তমালকে যা হোক একটা জব নিয়ে বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছিলাম তখন ও ওর খালাতো বোনের সাথে নবপ্রেমে মশগুল। যেদিন হাতে-নাতে ধরে ফেললাম সেদিন কিছুই বলিনি ওকে সত্যি কিন্তু মানসিকভাবে প্রচণ্ডভাবে ভেঙে পড়েছিলাম আমি। 


টানা ছয়টা মাস বদ্ধ ঘরে নিজের সাথে একরকম যুদ্ধ করেছি। কোনোরকমে স্বাভাবিক হতেই বাসা থেকে বিয়ের জন্য তাড়া দিলো। মেয়েদের বয়স বলে কথা, আমিও আর অমত করিনি। এতদিন তমাল যে আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেনি তা নয়, আমিই এভোয়েড করে চলেছি। গতকাল কী ভেবে যে ওকে নক করেছিলাম! আর আজ সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো! 


ভেতরে ভেতরে লজ্জায়-অপমানে মরে যাচ্ছি আমি। অপরাধবোধও কাজ করছে ভীষণ। অহন যদি মেসেজটা দেখে রিয়্যাক্ট করতো আমার বোধহয় এতখানি খারাপ লাগতো না। 


সারাদিনের অপেক্ষা! অহন কখন বাসায় ফিরবে? ও আজ বাসায় ফিরলে কিছু কথা ওকে বলতেই হবে। কীভাবে শুরু করবো, কী বলে শেষ করবো সেটাই গোছাচ্ছি মনে মনে। বিকেলের দিকে একবার ফোন করলাম অহনকে, সুইচড অফ। সাত-পাঁচ কত কী যে ভাবলাম! ছেলেটা দুঃখ পেয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো রকম রিয়্যাক্ট করলো না কেন? আর ফোনই বা বন্ধ কেন? 


কাকে যে কী বলবো, কার সাথে এসব বিষয় শেয়ার করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। অহন সাধারণত রাত আটটার মধ্যেই বাসায় ফেরে। ঘড়িতে এখন সাড়ে নয়টা। এদিকে ফোনও বন্ধও তার। শুরুতে নিজের ওপরই রাগ হচ্ছিলো, এখন রীতিমতো দুঃশ্চিন্তা। অহনের ওপরও রাগ কম হচ্ছে না! এভাবে আমাকে শাস্তি দেওয়ার মানেটা কী!

কান খাড়া করেই ছিলাম। সাড়ে দশটার দিকে কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলাম। উস্কোখুস্কো চুলে অহন বাসায় ঢুকলো। হাতে বেশ কয়েকটা তাজা গোলাপ। লাল, সাদা আর হলুদ। এত রাতে অহন তাজা গোলাপ কোথায় পেলো? আর হঠাৎ ফুলই বা কেন? 


অহন বেশ স্বাভাবিকভাবেই আমার হাতে গোলাপগুলো দিয়ে বললো, আজ সারাদিন খুব ভাবলাম। ভেবে দেখলাম, দেনমোহর দিয়ে বউ তো সহজেই পাওয়া যায় কিন্তু তার মন কি এতোটা সহজে পাওয়া যায়? 


আমি ফুলগুলো হাতে নিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চোখ তুলে তাকাবার মতো সাহস আমার অবশিষ্ট নেই। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, দু চোখ আমার জলে ভিজে গেছে! আমার চব্বিশ বছর বয়সের এই জীবনে এরকমটা আগে কোনোদিন ঘটেনি! 


-গল্প: 'কয়েকটি গোলাপ'

মঈনুল সানু।


রোম্যান্টিক স্বামী স্ত্রীর গল্প।