স্বামী নামে জানোয়ার | বাস্তব জীবনের কষ্টের স্ট্যাটাস

 বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

প্রাক্তন স্বামী রাফির মুখোমুখি বসে আছে সম্পূর্না। প্রায় দুটো বছর পর সম্পূর্না রাফিকে দেখলো। বেশ শুকিয়ে গেছে আগের থেকে,  মুখে আর আগের মতো সেই পাগল করা হাসি লেগে নেই। 

সম্পূর্না এবার একটু নড়েচড়ে বসে বললো "কিছু বলার হলে একটু তাড়াতাড়ি বলুন। আমার এতো সময় নেই এখনে বসে বসে সময় নষ্ট করার মতো।"


রাফি এতক্ষণ সম্পূর্নাকেই দেখছিলো। বেশ সুন্দর হয়েছে মেয়েটা আগের থেকে। গায়ের রং যেনো ফিরে এসেছে, চোখ মুখ শক্ত করে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখে সত্যিই তার নামের সাথে মিল খুঁজে যাচ্ছিল রাফি,  তখনই সম্পূর্ণার মুখে এই কথা শুনে সে করুন চোখে তাকিয়ে বললো "আমার সাথে কথা বলা তোমার কাছে সময় নষ্ট বলে মনে হচ্ছে সম্পূর্ণা..?"


সম্পূর্ণা এবার আগের মতোই চোখ মুখ কঠিন করে বললো " আমাকে এই নামে সম্মোধন করা আপনার আর আপনার মায়ের মুখে মানায় না রাফি। আপনাদের কাছে আমার অসম্পূর্না নামটাই ঠিক আছে। তা হটাৎ কি মনে করে আমার কাছে..? আপনার নতুন বউ রাগ করবেনা জানলে..?" 


রাফি এবার বিব্রত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। সম্পূর্না তা দেখে সামনে রাখা জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে দিয়ে বললো "এমন ভাব করছেন যেনো আপনার নতুন বউ পালিয়ে গেছে।"


রাফি দ্রুত সামনে থাকা জলটা ঢক ঢক করে খেয়ে শার্টের প্রথম বাটনটা খুলে মাথা নিচু করে বললো " সে সত্যিই পালিয়ে গেছে তার পুরতন প্রেমিকের সাথে তাও আমার সাথে বিয়ে হওয়ার এক মাস বাদ।"


সম্পূর্না কফির মগে চুমুক দিয়ে ছোট্ট করে বললো "ওহ" 


রাফি সম্পূর্ণার মুখে হালকা একটা তেছরা হাসি দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল "আর একটা বার কি সুযোগ দেওয়া যায় না আমায় আর আমার মাকে..?"


সম্পূর্না কিছুক্ষণ চুপ করে রাফির দিকে তাকিয়ে সশব্দে হেসে উঠলো। হাসির তাড়নায় তার চোখের কোনে জল চিক চিক করে উঠলো। তাও তার হাসি যেন থামছে না।


রাফি এবার একটু রেগে বললো " আমি কোনো জোকস্ বলিনি সম্পূর্না তোমায় যার কারণবশত তোমায় এইভাবে হাসতে হবে।"


সম্পূর্না এবার নিজের হাসি থামিয়ে রাফির চোখে চোখ রেখে বললো "মজা তো আপনি করছেনই রাফি। জীবনটা আপনার কাছে তো মজার জিনিসই। নইলে কি আর আপনি আর আপনার মা একটা অনাথ আশ্রম থেকে সুন্দরী শিক্ষিতা সর্বগুণে সম্পূর্ণা বউ নিয়ে আসতেন ঘরে..? যাতে করে আপনাদের পরে কোনও  শশুর বাড়ির ঝামেলাই না থাকে। তারপর কি করলেন..?আপনি আর আপনার মা তার সাথে..? ঘরের সব কাজ করিয়ে নিতে লাগলেন কাজের লোক ছাড়িয়ে, তারপর সারাদিন আপনি অফিস করে ঘরে ফেরার পর মায়ের কথা শুনে বউকে দিনের পর দিন নির্যাতন করতে লাগলেন। কোনো দিন তার সিগারেট দিয়ে হাত পুড়িয়ে দিলেন বা কখনো তাকে মেরে অজ্ঞান করে দিলেন। তারপরও আপনাদের শান্তি হলো না রাফি। তার পেটের পর পর দুটো সন্তানকে তার পেটেই খুন করলেন। কেনো..? না তখন আপনার আর আপনার মায়ের মনে হলো এখন বাচ্চা হলে আপনাদের বিলাসিতায় আঁচড় পড়বে। আবার তারই কিছুদিন পর আপনাদের মনে হলো আপনাদের ঘরে একটা বাচ্চা চাই। তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিলেন মা ছেলে মিলে। কিন্তু মেয়েটার কথা একবারও চিন্তা করলেন না। মেয়েটা পর পর তার দুটো সন্তানকে হারিয়ে একটা কাঠপুতুলে পরিণত হয়েছিল তখন। মানসিক চাপে নিজেই নিজেকে আঘাত করে ফেলতো সে রোজ। তাও তার শরীরের ক্ষতই মলম লাগাতে তো যেতেনই না আর মনের ক্ষত তো বাদ দিন। 


আপনারা জানতেন মেয়েটি অনাথ তাকে মারুন আর কাটুন তার কোথাও যাওযার জায়গা নেই তাই সে আপনাদের কথা শুনতে বাধ্য। হলোও তাই মেয়েটি আবার কনসিভ করলো। সেই খবর শুনে আপনরা ছেলে মা মিলে কদিন তার খুব খাতির যত্ন করেলেন। তারপর আবার শুরু করলেন সেই আগের মত নির্যাতন। তখন একবারও আপনাদের মনে হলো না মেয়েটা প্রেগনেন্ট। সাত মাস চলাকালীন মায়ের কথায় তাকে পরপুরুষের সাথে ফোনে কথা বলায় সন্দেহ করে রাতে বেধরক মারলেন। তাতেই যা হওয়ার হয়ে গেলো। মেয়েটি সেই বাচ্চাটাও হারালো আর তার সাথে হারালো সারাজীবনের মতো মা হওয়ার ক্ষমতা। 

আপনাদের তখন মনে হলো মেয়েটি আর কোনো কাজের না।" তারপর কিছুটা থেমে সম্পূর্না আবার বললো " তখনও আমার চরিত্র নিয়ে কথা তুলে দুবার ভাবলেন না আপনারা। আমার সাথে জুড়ে দিলেন অসম্পূর্না ট্যাগটা। তারপরের দিনই আপনি আর আপনার মা আমার চোখের সামনেই নতুন বউ ঘরে তুললেন আর সেইদিনই বের করে দিলেন আমায় বাড়ি থেকে। একবারও ভাবলেন না ওই অবস্থায় মেয়েটি কোথায় যাবে..? কি করবে..?"


এইটুকু বলেই সম্পূর্না থামলো। না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো তার সেই ভয়ানক রাতের কথা মনে পড়লে এখনও সে ঘুমের মাঝে কেঁপে কেঁপে ওঠে।


 রাফিকে অনুতপ্ত চোখে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকতে সম্পূর্না আবার বললো " আপনি আর আপনার মা মেয়েদের কি মনে করেন বলুন তো..? আপনাদের হাতের পুতুল..? নাকি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মেশিন..? আর আপনি চান আমি ওই বাড়িতে আবার ফিরে যাই..? ওটা আমার কাছে নরকের সমান রাফি। আগের জন্মে বোধহয় অনেক পাপ করেছিলাম জানেন রাফি নইলে কি আর আপনাদের মতো সো কোল্ড শশুরবাড়ি পাই..? আমারও এই শাস্তিটা পাওয়ার দরকার ছিল জানেন তো কারণ আপনাদের চাপে পরে আমি মা হয়েও আমার দুই দুইটা সন্তানকে খুন করেছি। আমি সেই শাস্তি সারাজীবন ভোগ করতে রাজি। তবে আপনাদের মতো পশুর অস্থানায় আমি আর মরে গেলেও ফিরে যাবো না।" 


রাফি এতক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকলেও এবার মাথা তুলে করুন চোখে বললো " এভাবে বলো না সম্পূর্ণা আমারও তো পুরোপুরি দোষ ছিল না বলো আমি তো মায়ের কোথায় ওইসব করতে বাধ্য হয়েছিলাম যতোই হোক আমি তোমায় ভালোবাসতাম।"


সম্পূর্না তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো " ওহ প্লিজ, আপনি এইটাকে আর যাই বলুন ভালোবাসা বলবেন না প্লিজ। ভালোবাসা কাকে বলে আপনি জানেন..? ভালোবাসা সাধনার জিনিস, আর আপনি সাধক নন আপনি খুনি। আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে এখন।  আমি শুধু এইখানে এইটুকু দেখতে এসেছিলাম এতগুলো জীবন নষ্ট করে আপনি কেমন খুশি আছেন। দেখা হয়ে গেছে এবার চলি। আর আশা করছি ভবিষ্যতে আমায় আর ডিস্টার্ব করবেন না এভাবে।"


বলেই সম্পূর্না ব্য্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজের কফির বিলটা পে করে রাফির উদ্দেশ্যে বললো "ভালো থাকবেন বলবো না। আপনাদের মতো খুনিদের ভালো থাকার অধিকার নেই। এটা অভিশাপ থেকে নয় একটা মায়ের হাহাকার থেকে বলছি.....চলি।


সম্পূর্না যাওয়ার দিকে রাফি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। একসময় যে মেয়েকে তারা অসহায় নরম ভেবে প্রতিদিন আঘাত করতো সে এখন শক্ত মনের আত্মনির্ভরশীল নারী যার কথার ধারের সামনে একটা কথা বলা যায় না। রাফিও পারেনি বলতে চোখ বুজে সেও এবার নিজের শাস্তি কামনা করলো।


সম্পূর্ণা সেই কফিহাউস থেকে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে একটা মুচকি হাসি দিল। কে বলেছে সে মা হতে পারবে না..? তার অধীনে থাকা সবকটা অনাথ আশ্রমের শত শত শিশুদের মা সে। তাদের মুখে মা ডাক শুনলে তার যেনো পূর্বের অর্ধেক ক্ষত মুছে যায়। তারা  প্রমাণ করায় সে সত্যিই সম্পূর্ণা। 


আর যাদের চোখে সে বাচ্চা জন্ম না দেওয়ার জন্য অসম্পূর্না হয়েছে। তাদের কাছে সে তথাকথিত অসম্পূর্ণই থাক। এতেও যেনো তার বিশাল প্রাপ্তি। 


অনুগল্প

অসম্পূর্না

চন্দ্রাবতী


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।