মেয়েদের সংসার জীবন | সংসার জীবনের কষ্ট

 সংসারে অশান্তি

সংসারে অশান্তি

বাসায় ঢুকবো তখনি খেয়াল করলাম আমার স্ত্রী চুপিচুপি আমার ছোট ভাইয়ের রুমে একটি স্বর্ণের চেইন হাতে নিয়ে প্রবেশ করলো।বিষয়টি আমার কাছে বেশ সন্দেহজনক মনে হওয়াতে আমিও সরাসরি বেডরুমে না গিয়ে আড়াল থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম যে আমার স্ত্রী সজীবের রুমে গিয়ে আসলে করছেটা কি?


আমাদের বেডরুমের দরজায় দাঁড়ালে সজীবের রুমের সবকিছু স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় তাই আর একমুহূর্ত দেরী না করে সেখান থেকেই রুমি তথা আমার স্ত্রীর কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি করছি।একটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলাম রুমি চেইনটা সজীবের বিছানার নিচে আস্তে করে লুকিয়ে রাখলো।পরক্ষণেই ধীরপায়ে ওকে রুম থেকে বের হয়ে আসতে দেখে আমি তখনি নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নিজেদের রুমে প্রবেশ করলাম।আমাকে হঠাৎ করে রুমে দেখে আমার স্ত্রী কিছুটা চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো,


-- "কি ব্যপার? এতো তাড়াতাড়ি দোকান থেকে এসে পড়লে? আর যাবে না দোকানে?"


আমি নির্লিপ্ত স্বরে বলি,

-- "আজকে শরীরটা ভালো লাগছে না। সজীবকে দোকানে রেখে এসেছি। ওকে বলেছি একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাবো। সে যাই হোক তুমি এতক্ষণ কি করছিলে?"


আমার প্রশ্ন শুনে রুমি থতমত খেয়ে বললো,

-- "কি আর করবো? রান্নাঘরে ছিলাম একটু। থালাবাসনতো একটাও ধোয়া হয়নি।"


আমি কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলি,

-- "কেনো রিয়া কোথায়?"


রিয়ার কথা শুনে আমার স্ত্রী বেশ রাগান্বিত স্বরে বললো,

-- "সে আর কোথায় থাকবে? হয়তো ঘুরতে গেছে, ঐরকম ছোটলোক ঘরের মেয়ে এই বাড়িতে এসেই রাজরানী হয়ে গেছে।এখন কি কাজ করার সময় আছে নাকি?আমি ভেবে পাইনা সজীব কি দেখে ঐ ছোটলোকের বাড়িতে গিয়ে হানা দিলো?আমার কথা হলো প্রেম করে বিয়ে কর সমস্যা নেই তাই বলে ওখানেই বিয়ে করতে হবে?এই মেয়ে নিজের সাদা চামড়া দেখিয়ে আমার দেবড়টাকে ফাঁদে ফেলে এইবাড়িতে এসেছেই শুধু বাড়িটাকে লুটপাট করার জন্য।"


রুমির কথায় আর কথা বাড়ালাম না। কারণ এখন কিছু বললেই ঝগড়া বাঁধবে নিশ্চিত।


সজীব আমার ছোটভাই। বাবা মাকে হারিয়েছি কয়েক বছর,তাই বড় ভাই হিসেবে সজীবের সকল দায়িত্ব আমার কাঁধে এসেই পড়েছিল। কিন্তু আমাদের অমতে যখন সজীব রিয়াকে বিয়ে করে নিয়ে আসে তখন আমি বেশ কষ্টই পেয়েছিলাম। তবে রিয়া মেয়েটি আমার সেই কষ্টকে কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের ব্যবহার এবং কাজকর্ম দিয়ে স্নেহে রূপান্তর করেছে। তবুও আমার স্ত্রী প্রতিনিয়তই মেয়েটিকে নিয়ে হিংসা করতো আর এর কারণটাও বেশ সুস্পষ্ট। কেননা প্রথমত রিয়ার পারিবারিক অবস্থা একেবারেই নিম্নবিত্ত তার মধ্যে রুমি চেয়েছিল ওর ছোট বোনের সাথে সজীবকে বিয়ে দিতে। আর এসব কিছু মিলিয়ে রিয়ার প্রতি রুমির আলাদা একটা ক্ষোভ ছিল রিয়ার এই বাড়িতে আসার পর থেকেই।

.

.

সন্ধ্যায় দোকানের কাজ সেরে দুই ভাই বাড়ি ফিরেছি। আমি রুমে প্রবেশ করতেই খেয়াল করি আমার স্ত্রী আলমারি থেকে কাপড় চোপড় অগোছালো অবস্থায় এদিক সেদিক ফেলে দিয়ে কি যেন গভীর মন দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছে। কৌতূহলী স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,


-- "কি ব্যপার? এমন হন্তদন্ত হয়ে কি খুঁজছো?"


রুমি চিন্তিত মুখে বলে,

-- "আরে আমার মায়ের দেওয়া সেই স্বর্ণের চেইনটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।কে নিলো সেটাই বুঝতে পারছি না।"


আমি সীমিত সময়ের জন্য অবাক হলাম সকালের ঘটনা ভেবে পরক্ষণেই সেসব ওকে বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলি,

-- "ভালো করে খুঁজে দেখো, হয়তো ভুলে কোথাও রেখেছো। এইবাড়িতে আর কে নিবে তোমার চেইন? এই কদিনে তো বাড়িতে কেউ আসেওনি।"


রুমি ভ্রু কুঁচকে বললো,

-- "নেওয়ার মানুষের অভাব আছে নাকি?তোমার ভাই যে ঐ ছোটলোক মেয়েটাকে বিয়ে করলো, আমারতো সবসময় ওকেই সন্দেহ হয়।মেয়েটা তোমার ভাইয়ের গলা ঝুলে এবাড়িতে এসেছেই শুধু বাড়িটাকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য।"


আমিও ওকে খুঁজতে সাহায্য করতে করতে বলি,

-- "তোমার সমস্যাটা কি সেটাই বুঝলাম না।মেয়েটি এই বাড়িতে আসার পর থেকেই দেখছি তুমি ওর পিছে লেগে আছো।এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে এসব বলে কি আর লাভ আছে? রিয়াও এখন এই বাড়িরই সদস্য। আর ওতো এতোটাও খারাপ না যে তোমার চেইন চুরি করবে।"


আমার কথার প্রতিউত্তরে রুমি তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,

-- "হ্যাঁ এখনতো তুমি ওর পক্ষই টানবা। আমার থেকেও এখন নিজের ভাইয়ের বৌয়ের প্রতি দরদ উতলে উতলে পরছে।"


-- "আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে এখন ভালোভাবে খুঁজে দেখো পাও কিনা?"


রুমি রাগমাখা মুখে বলে,

-- "আজকে যদি না পাই তাহলে আমি সত্যি সত্যি তোমার ভাইয়ের বৌকে ছাড়বো না। কারণ আমি জানি এটা ও ব্যতীত আর কেউ নেয়নি।এরকম স্বর্ণের চেইন জীবনে দেখেছে নাকি?তাইতো লোভ সামলাতে পারেনি।"


আমি আর কথা বাড়ালাম না, কারণ মেয়েদের সাথে ঝগড়া করার সাধ্য কোনো পুরুষের নেই। এখন যতই কথা বলবো ততই সমস্যা। 


ডাইনিং টেবিলে আমি সজীব আর রুমি বসে আছি। এদিকে রিয়া খাবার গরম করতে রান্না ঘরে অবস্থান করছে। নীরবতা ঠেলে হঠাৎই রুমি সজীবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, 

-- "শোন সজীব! তোকে একটা কথা বলার ছিলো।"


সজীব কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকাতেই পরমুহূর্তেই রুমি বলে,

-- "তুই জানিস আমি সব কথা সোজাসুজিভাব বলি। তুই রিয়াকে বিয়ে করার পর থেকে এইবাড়িতে আমার একটার পর একটা জিনিস চুরি হচ্ছে।আগের জিনিসগুলো ছোটখাটো হওয়াতে সেসবের কথা তোকে বলিনি কিন্তু এবার আর চুপ থাকা যায় না।আজ আমার আলমারি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমার মায়ের দেওয়া স্বর্ণের চেইনটি পাইনি। আগেতো এমন হয়নি এখন কেনো এমন হচ্ছে বুঝতে পারছিস?"


আমি তখনি রুমিকে ধমক দিয়ে থামিয়ে বললাম,

-- "তোমাকে না এসব ওদের সামনে বলতে মানা করলাম?"


আমাকে পাল্টা ধমক দিয়ে আমার স্ত্রী বললো,

-- "তুমি চুপ থাকো! আমার মায়ের দেওয়া এক ভরি স্বর্ণের চেইনের আবেগ তুমি কি বুঝবা?যার জিনিস হারিয়েছে সেই বুঝে এটা কতটা কষ্টের।"


সজীব রুমির কথা শুনে ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো, 

-- "জ্বী ভাবী কিন্তু রিয়াতো এমন স্বভাবের মেয়ে না। ওর পরিবার হয়তো একটু নিম্নবিত্ত হতে পারে তাই বলে নিজের বাড়ির জিনিস নিজেই চুরি করবে? এটা কেমন কথা?"


-- "শোন! দুই একটা জিনিস চুরি হলে মানা যেতো কিন্তু দুদিন পরপর যদি এরকম চুরি হয় তাহলে সেটার জন্য কি বলবি? নিজের বউ বলে এতো নিষ্পাপ মনে করিস না। যেমন ছোটলোক বাড়িতে বিয়ে করেছিস তেমনি মেয়ের চরিত্র।"


আমার স্ত্রীর কথা শুনে সজীব লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেললো ঠিক তখনি রিয়া রান্নাঘর থেকে খাবারের বাটি নিয়ে এসে যখনি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসতে যাবে সেসময় সজীব রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,


-- "তুমি কি ভাবীর স্বর্ণের চেইনটা নিয়েছো? নিলে এক্ষুণি দিয়ে দাও।"


ওর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে স্বভাবতই রিয়া চমকে ওঠে।সে সীমিত সময়ের জন্য থমকে যায় বটে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

-- "কি বলছো! আমি কেনো ভাবীর চেইন নিতে যাবো?"


পাশ থেকে আমার স্ত্রী হুট করে বললো,

-- "রুমে খুঁজলেই বুঝা যাবে কে নিয়েছে আর কে নেয়নি।"


রুমির এমন কথায় ওরাতো দূরে থাক আমি নিজেও কিছুটা লজ্জায় পরে যাই।কিন্তু এখনো আমি সবকিছু জানা সত্ত্বেও চুপ করে বসে আছি।কেননা এর শেষটা আমি দেখতে চাই এবং আমার স্ত্রী হিংসার বশে কোথায় চলে গেছে সেটাওতো ওকে বোঝাতে হবে ঠিকঠাক ভাবে।


রুমি সজীবের ঘরে এসে আলমারি সহ বিভিন্ন জায়গায় নিজের চেইন খোঁজার অভিনয় করছে। পাশেই রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কারণ এভাবে চুরির অপবাদ দিয়ে কারো রুমে চুরির জিনিস খোঁজাখুঁজি করাটা নিশ্চই অপমানজনক।অন্যদিকে সজীবের চোখেমুখে এক রাগের আভা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ওর মনের কথাটা বুঝতেও আমার অসুবিধা হলোনা। আর আমি দাঁড়িয়ে আছি অনুভূতুহীন এক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। 


এক এক করে খুঁজতে খুঁজতে যখন আচমকাই আমার স্ত্রী ওদের বিছানার তোশকটা উঠালো তখনি সজীব আর রিয়া অবাক নয়নে সেদিকে তাকিয়ে আছে।রুমি তোশকের নিচ থেকে চেইনটা হাতে নিয়ে এক শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বললো,


-- "কিহ বলছিলাম নাহ? আর আমাকেতো কেউই বিশ্বাস করলিনা।এখন বুঝ তোর বউ কেমন ধরণের মেয়ে। এখনও তোর বউকে কি মাথায় উঠিয়ে রাখবি নাকি?"


ওর কথা শেষ হতে দেরী কিন্তু রিয়ার গালে সজীবের চড় মারতে দেরী হলো না।চড় খেয়ে লজ্জায় এবং অপমানে রিয়া মেঝের দিকে তাকিয়ে টুপটুপ করে নিজের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। এদিকে আমার স্ত্রীর চোখেমুখে এক প্রাপ্তির হাসি।আমিও আর একমুহূর্ত দেরী না করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সজীবের গালে সজোরে একটি চড় বসিয়ে দিলাম আর ঠিক তার পরমুহূর্তেই রুমির গালে চড় বসিয়ে দিলাম তারও দ্বিগুণ গতিতে। আমার এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে সজীব আর রুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।


নিরবতা ঠেলে সজীবকে উদ্দেশ্য করে বলি,

-- "তোকে চড় মেরেছি কি কারণে শুনবি? কারণ হলো তুই কোনো কিছু যাচাই না করেই এক নির্দোষ মানুষকে আঘাত করেছিস।"


পরক্ষণেই রুমির দিকে তাকিয়ে বললাম,

-- "তোমাকে কেনো চড় মেরেছি সেটাতো তুমি নিশ্চই জানো। রিয়াকে এই বাড়ি থেকে বের করার জন্য এসব যে তোমার চাল সেটাও আমি আগে থেকেই জানি। আর সকালে তো নিজ চোখেই দেখেছি তুমি নিজে গিয়ে ওদের বিছানার নিচে চেইনটা লুকিয়ে রেখেছো।তাছাড়া ওতো এতোটাও বোকা নয় যে তোমার চেইন চুরি করে এই বিছানার নিচেই রাখবে।এখনো কি আমার সামনে এই মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চাও?আমি আসলে তোমাকে বিয়ে করে একটি বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছি এতোদিনে যে, আমি কোনো মানুষকে বিয়ে করিনি বরং বিয়ে করেছি টাকাপয়সা ওয়ালা বাপের এক হিংসা-বিদ্বেষ ভরা অমানুষকে।"


আমার কথা শুনে সজীব আর রিয়া উভয়ই অবাকচিত্তে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর অন্যদিকে আমার মহামান্য স্ত্রী অন্যকে লজ্জা দিতে গিয়ে নিজের স্বামীর কাছেই ধরাশায়ী হয়ে লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না, উল্টো সে নিজেই এখন চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত। এছাড়া আর কিইবা করার আছে তার?


(সমাপ্ত)


গল্প-হিংসা_ও_বিদ্বেষ 


বাস্তব জীবনের সকল গল্প পড়ুন।