বাসর রাতের রোম্যান্টিক গল্প | বাসর ঘরে কি হয়

 বাসর রাতের গল্প

বাসর রাতের গল্প

বাসর রাতের একটা ঘটনা বলি আপনাদের৷

আমার খুব কাছের এক বন্ধু বিয়ে করেছে। প্রেম করে বিয়ে। ওদের বাসর ঘর আমরা বন্ধুরা মিলে সাজিয়েছি। আমাদের ভাবি তখন হবু ভাবি। তিনি ঠিক যেভাবে নির্দেষ দিয়েছে, বাসর ঘর আমরা ঠিক সেভাবেই সাজিয়েছি৷ বাসর ঘর সাজানো শেষে আমাদের বন্ধুদের মাঝে এক আগ্রহ তৈরি হলো যে ওরা সারা রাত কি করে সেটা শোনার। দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না কারন এই রাতটা তাদের জীবনের এই প্রথম এবং এই শেষ, তার উপর করেছে প্রেম করে বিয়ে। জামাই যেহেতু আমাদেরই বন্ধু কাজেই ওকে আমরা ভালো করেই চিনি, আবেগ একটু ধাক্কা দিলেই অনেক কিছু করে বসবে। কাজেই আমরা কোথাও মোবাইল ক্যামারা বসালাম না। শুধু ওদের কথা শুনার আগ্রহে বালিশের ভেতর আমাদেরই আরেক বন্ধুর ফোন রেখে কল দিয়ে কথা শুনার জন্য আমরা অন্য রুমে বসে আছি।


বন্ধু এবং ভাবি ভেতরে ঢুকল। দরজা লাগানোর শব্দ পেলাম আমরা ফোনে। পরিষ্কার শব্দ। মেসেঞ্জার কলে সাউন্ড ভালোই শুনায়। দরজা লাগানোর পর পরেই বন্ধু মুখ দিয়ে প্রথম যে কথাটা শুনলাম আমরা তা হচ্ছে, ‘উফফ! ফাইনালি বিয়েটা হয়েই গেল। আমার বাবু এখন আমার বউ’।


অন্য রুমে আমরা পাঁচজন বন্ধু মিলে শুনছি এই ঘটনা। সবাই সবার গলা চিপ দিয়ে ধরলাম যেন আমাদের হাসির বিকট শব্দ না হয়। শব্দ হলে ফোনের অই পাশে শোনা যেতে পারে। পাঁচ বন্ধুর মধ্যে একজনের আবার হাঁপানির সমস্যা আছে। আমরা সবাই গলা চিপ দিয়ে ক্যা ক্যা করে হাসছি, অই বন্ধু কো কো করছে। বুঝলাম তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কাজেই গলা ছেড়ে দিলাম। আমাদের হাসির পালা শেষ হলে আবার বিবাহিত বন্ধুর কথা শুনায় মনোযোগ দিলাম।


জামাই বন্ধু বলছে, ‘জামাই সেজে ঠিক মতো খাইতে পারলাম না। যা ক্ষুধা লাগছে এখন, একদম ভাদ্র মাসের কুত্তার মতো ক্ষুধা লাগছে। খাবার তো ঘরে নাই, এখন তোমারে ছাড়া আর তো খাওয়ার কিছু দেখছি না’।  


আমাদের ভাবি বলল, ‘আজকে উল্টা পালটা কিছু করবা না। আমি খুব টায়ার্ড। চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে ঘুমাও’।


বন্ধু বলল ‘এই রাত ঘুমায়ে পার করব? ফুলের কি সুন্দর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে তোমার আমার এই পৃথিবীতে ফুল ছাড়া আর কিছুই নাই’।


বন্ধুর এমন কাব্যিক কথা শুনে আমরা বন্ধুরা খুব অবাক হচ্ছি। ছেলে ভালো পারফরমেন্স দেখাচ্ছে। অথচ ও যে এমন কথা বলতে পারে সেটা আমাদের আগে জানা ছিল না।


ভাবি বলল, ‘লাইট নিভায়ে দিয়ে আমরা ফুলের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে ঘুমাবো বুঝছো। তার আগে এই বাসর ঘরে আমার কয়েকটা মাথা নষ্ট করা ছবি তুলোতো। এটা আমার বাসর, ভাবতেই কেমন অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে। সারাজীবন শুনেছি, এখন নিজ চোখে দেখছি। আমার চোখে যে সুখের পানি আসছে সেটা কি খেয়াল করেছ’?


‘কই নাতো!’


‘তা খেয়াল করবা কিভাবে। তোমার চোখ দেখছে অন্য কিছু, ক্যারেক্টারলেস কোথাকার। এখন সব বাদ দিয়ে আমার কতগুলো ছবি তুলো সুন্দর করে। বিয়ার আগে সুন্দর করে ছবি তুলে দাও নাই যেন আরেক ছেলে পছন্দ না করে সেজন্য। এখন সুন্দর কইরা তুলো ছবি’।


‘আচ্ছা আচ্ছা তুলছি’ বলে ফটো সেশন চলল ওদের। এরই মাঝে আমার জামাই বন্ধুটা খুশিতে গদ গদ হয়ে বলল, ‘ভাবছিলাম আমার হারামজাদা বন্ধুগুলা আমার এই রাতে বহু জ্বালাবে। ঘরে আইসা বইসা থাকবে। কিন্তু কিছু করল না। আমাকে শান্তি মতো ছেড়ে দিল। এতদিন ওদের খুব খারাপ ভাবতাম বউ, আজকে ধারনাটা বদলে গেল৷ ওদের একেকজনকে দেবতে বলে মনে হচ্ছে। কাল সকালে সবাইকে একটা করে সিগারেটের প্যাকেট গিফট দেই, ভালো হবে না’?


ভাবি ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘ওয়েট! আসলেই তো! ওরা জ্বালাচ্ছে না কেন! নিশ্চয়ই ঘরের মধ্যে কিছু রেখেছে। ক্যামারা ট্যামারা লুকায়ে রেখেছে নাকি দেখোতো। খুঁজো জলদি’।


বেডি মানুষ খুব চিকন বুদ্ধির হয় এতদিন অনেক শুনছি। আজকে প্রমাণসহ বুঝলাম।


ধরা খেয়ে যেতে পারি বুঝতে পেরে আমি জিহবে কামড় দিলাম। আমার দেখাদেখি পাশের বন্ধুও কামড় দিল জিহবে। তারটা দেখে পাশের জন, পাশের জনেরটা দেখে পরের জন্য। এইসব দেখে আমার শেষ বন্ধুটা জিহবে এমনি কামড় দিয়েছে যে রক্ত বের করে ফেলছে। 


যাই হোক, বন্ধুর বালিশের ভেতর থেকে মোবাইলটা নিয়ে আসতে হবে। ঠিক করলাম সবাই একসাথে যাবো, সারা রাত আড্ডা মারার কথা বলে খাটে বসব। সেই ফাকে মোবাইলটা নিয়ে  চলে আসব। প্লান মোতাবেক রুমে গেলাম। আমাদের দেখে জামাই বন্ধুর চোখে পানি চলে আসল কষ্টে যে তার বাসর রাত এই বুঝি মাটি হয়ে গেল।


আমাদের কাজ যখন হয়ে গেল। বেরিয়ে আসছি। জামাই বন্ধুর চোখে তখনো পানি। তবে সেটা আনন্দের যে তার বাসর রাত জীবিত আছে এখনো। বন্ধু আমাদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তোরা  মানুষ না ভাই, তোরা স্বর্গের বাসিন্দা’।


জামাই বন্ধুর মুখে হাসি ছুড়ে দিয়ে সবাই আমরা চলে এলাম। সবাই খুব টায়ার্ড। শোয়া মাত্রই ঘুম চলে এলো সবার।


হঠাৎ-ই শেষ রাতে বিকট চিৎকারে আমাদের সবার ঘুম ভাঙল। বুঝলাম চিৎকার করেছে আমাদের জামাই বন্ধু। বন্ধুর ঘরের দিকে যেতেই দরজা খুলে দিল ভাবি। আমরা হুরমুর করে ঘরে ঢুকলাম, লাইট জ্বালিয়ে বন্ধুকে জিজ্ঞাসা  করলাম, ‘কি হয়েছেরে!’


দেখলাম বন্ধুর চোখে মুখে ভয়। অসম্ভব ভয় পেয়েছে কোনো কিছু দেখে। হাপাতে হাপাতে জামাই বন্ধু বলল, ‘তেমন কিছু না দস্ত। তোরা যাওয়ার পর পরেই আমরাও শুয়ে পড়েছি। ক্লান্ত বলে ঘুমিয়ে গেছি। পেশাবের কারনে ঘুম ভেঙে গেছে। বাথরুমে যাবো বলে চোখ মেলে পাশে দেখি এক মেয়ে। প্রথমে ভেবেছি ভূত, আসলে জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ে পাশে শুয়ে আছে। তাও আবার রাতে। তাই খুব ভয় পেয়েছিলাম। পরে বুঝতে পেরেছি আরেহ এতো আমারই বউ। স্যরি দস্ত, স্যরি বউ ...’৷


-গল্প_বাসর

-লেখনিতে_রাব্বানী_মাসায়েখ_পনি


এমন আরও বাসর রাতের রোম্যান্টিক গল্প পড়ুন।