প্রেগনেন্সির সময় স্ত্রীর যত্ন | স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প

 প্রেগ্ন্যাসির গল্প

প্রেগ্ন্যাসির গল্প

আমি আমার পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট স্ত্রী আরিশার শাড়ি ধুয়ে ছাদে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলাম। 

আমার বোন ছায়া এসে চেচিয়ে উঠলো। 


- বাচ্চা কি শুধু তোর বউয়ের একার হচ্ছে?দুনিয়ায় আর কারো হয় না? কি এমন নাবাবের মেয়ে যে তোর বউ জামাইকে দিয়ে কাপড় ধোয়াতে হচ্ছে। 


আমি আপাকে বললাম, 

- নাবাবের মেয়ে তো তুইও না তাও তো ভাইয়া তোর জন্য দুই টা কাজের মেয়ে রেখেছে। আমার যখন সে সামর্থ্য নাই আমিই করছি! 


- যা যা। কর বউয়ের কাজ। বউকে শোকেসে তুলে রাখ। 


আমি আবার হেসে বললাম,

- পারলে তো রাখতাম যেমন করে তোকে রেখেছিল মা। মা তো নেই। আর ওর মা ও নেই। তাহলে কে রাখবে বল। তোর ও সে সময় নেই। 


- আমি কি তোর বউ কে কোন অপূর্ণ রাখছি। সব তো দিচ্ছি। 


- তাইলে আপু ওর জন্য থাই স্যূপ টা বানিয়ে দেয় না আমি যাওয়ার আগে খাইয়ে দিয়ে যাই। 


আমার কথা আপু রেগে স্যূপের প্যাকেট নিয়ে ওর কাজের মেয়েকে দিয়ে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। 

বন্ধ করা আগে বলল, 


- আমরা যেন মা হই নি?এমন বেড রেস্ট আমাদের তো কোন ডাক্তারে দেয় নি


 আমি শামীম। আমার মা বাবা নেই। আমার স্ত্রী আরিশার ও মা নেই। বাবা আছে তাও অনেক অসুস্থ। আমি বোনের সাথে থাকি। যেহেতু আমি সারাদিন বাইরে থাকি তাই বোনের কাছে রাখলাম। 

আরিশার প্লাসেন্টা নিচের দিকে থাকার কারণে ওকে বেড রেস্ট দেওয়া হয়েছে। কোন ভারি কাজ করতে মানা করছে। 

একেক জনের শরীর তো একেক রকম। কেউ খুব দুর্বল হয়, কেউ খেতে পারে না। 

কারো বেশি কারো কম। 

কিন্তু যে মেয়েরা এইসব ফিল করে যায় তারাই যেন আরেক জনের ব্যাপারে এইসব বুঝতে চায় না। 


আমি রুমে যেতে আরিশা বলে উঠল, 


- বোনের সামনে আমাকে ছোট বানিয়ে নিজে মহান সাজছো? আমি কিছু করতে পারি না। আমি খারাপ বউ এইটা বলছো? এইটা প্রমান করতে চাইছো? 


বলতে বলতে কান্না শুরু করে দিলো আরিশা। আমি চুপ করে তাকিয়ে রইলাম। 


আমি চুপ করে আছি দেখে আরিশা আবার বলল, 

- তুমি আমার জন্য আপুর সাথে ঝগড়া করে এলে আর আমি তোমাকে কথা শোনাচ্ছি। আমি খুব খারাপ তাই না? 

এই বলে আবার কান্না করতে লাগলো। 


আমি জিব বের করে ওকে এক ভেঙচির মতো দিতে ওর আবার হেসে উঠলো।


- ডিম সিদ্ধ রেখে গিয়েছি।খেয়েছো? 

আরিশা মুখ চেপে ধরে বাচ্চাদের মতো বলল, 

আরিশা- না না না৷ 

আমি ওকে চেপে ধরে খাওয়াতে লাগলাম। 


এইসময় মেয়েদের খুব মুড সুইং হয়। এই হাসে আর এই কাঁদে। 

কেন কাঁদছে নিজেও জানে না। অনেক দিন ধরে নিজেকে বন্ধী রাখা বা হরমোন চেঞ্জের কারণে মেয়েদের মনে হয় তারা কিছু না এখন আর। তাদের সব যত্ন বেবির জন্য। 


কিন্তু এদের এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আপনি মন খারাপ করলে বা কথা শোনালে বা তাকে সামলাতে বললে কোন কাজ হবে না। উল্ট সে আরো ভেঙে যাবে।  

এইগুলো তো ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু যে কষ্ট টা আপনি এখন দেবেন তা সারাজীবন দাগ কেটে থাকবে। 


আমি অফিসের যাওয়ার আগে ওর ওষুধ আর সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে অফিসে গেলাম।  

সন্ধ্যায় যখন ফিরলাম দেখলাম ও ঘুমাচ্ছে৷ আমি ওকে জাগালাম না। 

কারণ আমি যখন রাতে আরামে ঘুমাই সে দশ থেকে বারো বার উঠে উঠে ওয়াশরুমে যায়। 

যে মেয়ের রাতে ঘুমালে কোন দিকে রাত যাচ্ছে খবর থাকতো না সে মেয়ে এখন একঘন্টাও টানা ঘুমাতে পারে না। 


আমি চা বানিয়ে এনে বসলাম। 

আপু এসে বলল, 


- এই অবেলায় ঘুমাচ্ছে কেন ও?ডেকে দেয় না। 


- ওর ঘুম যখন আসে সে ঘুমাক না। রাতে তো ঘুমাতে পারে না ও। 


 - তাই বলে ভর সন্ধ্যায় ঘুমাবে? বাচ্চার জন্য ভালো না। 


- তুই ইকোনোমিকে মাস্টার্স করেও এখনো এইসব মানিস? ওর সুবিধা মতো ও যত ঘুমাবে বেবিও রেস্ট পাবে। এমন না যে ও সারাদিন ঘুমাচ্ছে৷ 


- আমরা তো মানছি। মানলে তো দোষের কিছু না। আমরা মানছি আমাদের তো কোন ক্ষতি হয় নাই।।


আমাদের কথা আরিশা উঠে গেল। 


- আমার চোখ লেগে এসেছিল। রাতে ঘুম হয় না তো। 


আমি ওর দিকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বললাম।  

- ঠিক আছে। খাও। 

আরিশা উঠে বসতেই আপু বলল- 


- যে জন্য এসেছিলাম, কাল আমার জায়ের ভাইয়ে বিয়ে। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি আসিস। 


আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আরিশা খুব খুশি হলো। 

তারপর ও রান্নাঘরে রান্না করতে চলে গেল। 


পরের দিন আমি অফিস থেকে ফিরে দেখি আরিশা অনেক গুলো শাড়ি নামিয়ে রেখেছে কোন টা পরবে না কোন টা পরবে। অনেক গুলো সেট আর চুড়ি। 

তার মধ্যে লাল রং এর একটা শাড়ি নিলো।আমাকে দেখালো। আমি সায় দিতেই ও সেটা পরে নিলো। আমি জানি ওর প্রিয় রং লাল। 


তারপর ও রেডি হয়ে নিলো। 


আপু ডাক দিলো, 


- কি রে রেডি তুই? 


- হ্যাঁ আমরা রেডি আসছি। আরিশা চুড়ি পরবে শুধু। 


আপু তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে বলল৷ 

- আমরা? মানে আরিশা রেডি হচ্ছে কেন? 


- কেন ও যাবে না? 


- এই অবস্থায়? 


আমি হেসে বললাম, কি অবস্থায়? 


- এই অসুস্থ অবস্থায় ও বিয়েতে যাবে এত মানুষের সামনে?

- প্রেগ্ন্যাসির কি অসুস্থতা নাকি? ওর ভারি কাজ করা বারণ বেড়াতে যাওয়া না। 


আরিশা কান্না কান্না চোখে তাকিয়ে আছে। চুড়ি খুলে রেখে দিলো।


- মা নেই বলে কি বড় দের কোন নিয়ম মানবি না?। মানুষের চোখে পড়বে। ভালো না। তারপর লাল শাড়ি পরেছে। তোমাকে না আমি বলেছি এই সময় লাল রং এর কিছু পরতে নেই, বাচ্চার ক্ষতি হয়। আমাদের শেখানো হয়েছে। 


আরিশা শাড়ি খুলতে নিলে আমি বললাম, 


- শাড়ি খুলিও না তুমি। আর আপু, মানুষের চোখে পরবে মানে? আমাদের অফিসে তিন জন মাহিলা আসে প্রেগন্যান্ট। রোজ এত মানুষের সাথে তাদের দেখা হয় তাদের তো কিছু হয় না। দুজনে লাস্ট মাসে সুস্থ স্বাভাবিক বেবি হলো। কই কি হলো?

আর কাপড়ের সাথে বেবির ক্ষতির কোন কানেশন নেই৷ বরং আরিশা ওর পছন্দ মতো কাপড় পরতে পারলে ওর মন ও ভালো থাকবে বাচ্চার মন ও ভালো থাকবে । আর ও যে ডাক্তারে কাছে যায়৷ সব মেয়েই যায় তখন ওখানে এত মানুষে দেখে তখন তো কিছু হয় না।  

কবে যে ছাড়বি আপু এইসব? 


- আমরা তো বেবি হওয়ার আগে আর পরে দুই বছর এইসব অনুষ্টানের মুখ দেখি নাই।তোদের না যত ইচ্ছে? 


- তুই দেখিস নাই, কিন্তু তোর কি ইচ্ছে হতো না? হতো কিনা বল? 


- হতো। কিন্তু আমরা বাচ্চার কথা ভেবে সেক্রিফাইস করছি। একটায় তো বছর। 


- কিন্তু তাও তোর ইচ্ছে হতো৷ তুই পারিস নি বলে কি সেও পারবে না। এইটাকে সেক্রিফাইজের নাম দিয়ে আর কত কাল মেয়েদের ইচ্ছে গুলো দমিয়ে রাখবি বল তো?


- থাক এত কথা বলার দরকার নাই। আমি যাব না। 


- দরকার আছে। কত শখ করে সারাদিন খুশি মনে সেজেছো তুমি। খুলবা না কিছু৷ চল আমরা বের হই। 


আপু তুই যা বিয়েতে আমি যাব না৷ আমি ওকে নিয়ে অন্য কোথায় ও ঘুরে আসি। 


- আমি তো তোদের ভালোর জন্যেই বলেছি।

 

- জানি আপু। তবে ল্যান্ডফোনে ভালো কল কথা শোনা যেত বলে কি তুই এখন স্মার্ট ফোন উইস করিস না? 

চলার পদ্ধতি যেমন চেঞ্জ হচ্ছে চিন্তাও চেঞ্জ করতে হবে। 


এই বলে আমি আরিশা কে নিয়ে বের হয়ে গেলাম।  

ওর চোখে মুখে যে হাসি ফুটে উঠেছে আমার মনে হলো ওর ভেতরের আমার সন্তান ও হাসছে৷ 


প্রেগ্ন্যাসির দারুন একটা জার্নি মেয়েদের জন্য। তাদের চেনা জানা পুরো জীবন উলটপালট হয়ে যায়। তাদের শরীর তাদের চিন্তা ভাবনা সব। 

হাজারো সমস্যা ঘুমাতে না পারা৷ মুড সুইং। 

এইসবে বিরক্ত না হয়ে তাদের বুঝার চেষ্টা করুন। 

যে মেয়েটা তার পুরো শরীর বাজি রেখে আপনার সন্তান আনছে এই পৃথিবীতে। সব টা উজার করে। এত কষ্ট সহ্য করে সে মা হয়ে উঠছে। 


আর আপনি যদি তাদের সামান্য ইচ্ছে পূরণ করতে না পারেন৷ যত্ন নিতে না পারেন, মুড সুইং সহ্য করতে না পারেন তাহলে আপনি বাবা হচ্ছেন কীভাবে? 

শুধু নাম দিলে কি বাবা হওয়া যায়? বাবা হওয়াও একটা প্রক্রিয়া। 

প্রেগ্ন্যাসির দুজনেরি মা বাবা হওয়ার সমান প্রক্রিয়া। 

সমান জানিং। 


প্রেগ্ন্যাসি_যত্ন

দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা


এমন আরও বাস্তব স্বামী স্ত্রীর গল্প পড়ুন।