স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক গল্প | স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা স্ট্যাটাস

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

শীতে কাঁপতে কাঁপতে ইফতিকে বললাম, 

– “ কেমন হাসবেন্ড তুমি! জীবনে নিজের বউকে একটা সারপ্রাইজ দিলা না৷ ওদিকে আদনান ভাইকে দেখো কী সুন্দর এই শীতের মধ্যে মেরিনা ভাবিকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলো। আমার আসলে লাভ লসের আর কিছুই বাকি নাই। তোমারে বিয়ে করে আমার জীবনটাই পুরো লস প্রজেক্ট হয়ে গেছে।  ”


ইফতি ডিম ভাজি করতে করতে বললো, 

– “ এই অসভ্য মার্কা শীতের মধ্যে কোন পাগলরা যে কক্সবাজার ঘুরতে যায় আমার মাথায় ধরে না। এখানে আমি বাথরুমের ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার সময় এক ঘন্টা বসে বসে ভাবি যে, কী ভাবে আসলে পানি ঢাললে শীত কম লাগবে। সেখানে কক্সবাজার গিয়ে সমুদ্রের ওই হার কাঁপানো ঠান্ডা পানির সামনে বসে এক যুগ তপস্যা করেও মনে হয় না ভিজতে পারবো। তাহলে কোন দুঃখে এত গুলো টাকা খরচা করে কক্সবাজার যাবো? টাকা-পয়সার দাম নাই নাকি! ”


আমি কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে কম্বলের ভেতরে গিয়ে ঢুকলাম আর বললাম, 

– “ তুমি তোমার টাকা-পয়সা নিয়েই থাকো। আমাকে সারপ্রাইজ দিতে হবে না। ”


ইফতি রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো, 

– “ তোমার মেরিনা ভাবিকে জিজ্ঞেস করো তো আদনান তাকে জীবনে রান্না করে খাইয়েছে কি না। অথচ আমি ফ্রি থাকলেই তোমার জন্য রান্না করি। এই যে শুক্রবারের পুরো রান্নাটা আমিই তো করলাম। এগুলো তো ভাইরাল হয় না। আমাদের মতো বীর পুরুষদের রান্না করার ছবি গুলোও কোনো নামি দামি পেইজে কিংবা নিউজ চ্যানেলে ভাইরাল হবে না। ভাইরাল হবে আমার স্বামী আমাকে সারপ্রাইজ দিলো না, হার কাঁপানো শীতের মধ্যে কক্সবাজার ঘুরতে নিয়ে গেল না এসব। হায়রে দুনিয়া! ”


আমি মুখ বেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ভান ধরে রইলাম। আজ রাতে ইফতিকে খাটে শুতেও নিলাম না আমার সাথে। সোফার উপরেই সুন্দর করে বিছানা করে দিয়েছি। ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর এক্সট্রা আরও দুটো কম্বল চাপা দিয়ে দিলাম বেচারার গায়ে। বেচারা কেন বলছি আমি! বদের হাড্ডি একটা। এর সাথে রাগ করে থাকলেও সেই আমাকেই টেক কেয়ার করতে হয়। হুহহহ!

.

সকাল সকাল সবার ঘুম ভাঙ্গে কফির ঘ্রানে। আর আমার ঘুম ভাঙ্গলো ভূত দেখে ভয় পাওয়ার মতো অবস্থায়। এমন চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগেছি যে পাশের ফ্ল্যাট থেকে আমাদের দরজার উপর দুরুম দারুম কিল ঘুষির আওয়াজ পড়তে শুরু করেছে। সবাই ভেবেছে কী না কী ঘটে গেছে। আমি প্রচন্ড চমকে আছি। দুই মিনিট পর্যন্ত ইফতির দিকেই তাকিয়ে রইলাম। ইচ্ছে করছে ওর মাথার চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলি। না তাতেও হবে না। ঠান্ডা পানিতে চুবোতে পারলে ভালো লাগতো এই মুহুর্তে। 


ইফতি ইশারা করে বললো, 

– “ হোয়াট! এভাবে তাকায় আছো কেন? আর এত চিৎকার করার মতোই বা কী হইছে! ”


– “ কেন তাকায় আছি তুমি জানোনা! একটু আগে কী করছো তোমার মনে নাই? তোমার এই হাত দুটো কী সারারাত ফ্রিজের ভেতর রেখে দিছিলা? মরা মানুষের শরীরও তো এত ঠান্ডা হয় না। সাপের শরীরও বোধহয় এর থেকে কম ঠান্ডা। আর সেই হাত দিয়ে তুমি আমার গলা জড়ায় ধরছো কোন সাহসে! আবার বলতেছো আমি কেন চিৎকার করলাম!! ”


ইফতি বললো, 

– “ সকাল সকাল উঠে সব থালাবাসন মাজলাম। তারপর দেখলাম হাতের অবস্থা বরফের চেয়েও এক কাঠি উপরে। তারপরই মাথায় দারুণ একটা আইডিয়া এলো। সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলা তাই ভাবলাম ঠান্ডা হাতের স্পর্শ দিয়ে তোমাকে একটু সারপ্রাইজড করে দেই। এটা না করলে কী তুমি এত সারপ্রাইজড হইতা নাকি এইভাবে সারপ্রাইজ পেয়ে চেঁচিয়ে উঠতা! তোমার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে ভালোই বোঝা যাচ্ছিলো তুমি দারুণভাবে সারপ্রাইজড হইছো। এখন আর বলতে পারবা না যে আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেই নাই। দেখো সারপ্রাইজ ইজ সারপ্রাইজ। সেটা যেমনই হোক। অবশ্য এটাকে একটা সুন্দর নাম দেয়া যায়। ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল সারপ্রাইজ’ ”


মন চাচ্ছে মেরে আলু ভর্তা বানায় দিতে কিন্তু ওর শরীর যেই হারে ঠান্ডা হয়ে আছে তাতে গায়ে হাত দিতেও ভয় করতেছে। আমার সত্যিই আর লাভ লসের কিছু বাকি নাই। এমন বদের হাড্ডিকে বিয়ে করে আমার পুরো জীবনটাই লস প্রজেক্ট হয়ে গেছে।

.

(সমাপ্ত)


-------------------------------

রম্যগল্প

ঠান্ডা_ঠান্ডা_কুল_কুল

জান্নাতুল_ইভা

---------------------------------


স্বামী স্ত্রীর আরও গল্প পড়ুন।