না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প ২০২৪

 তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা

তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা

শেষবার যখন দেখেছিলাম। তখন সে সাত মাসের সন্তান সম্ভবা। একটা সিএনজি থামিয়ে সামনের সিটে বসতে যাবো এমন সময় পিছন থেকে আমার রিপন্নাইয়া নামটা শুনতে পেয়ে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম। এই নামে আমাকে কে ডাকছে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি জ্বলজ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যার সাথে সারাজীবন কাটানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম। সেই । আমি কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। সব কিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। তাগাদা দিয়ে বললো পিছনে উঠে বসতে। সাথে ওর মাকে দেখে আমি আরো ঘাবড়ে গেলাম। আমাকে ডাকছে দেখে ওর মা কিছু বলতে যেতেই চুপ কর বলে থামিয়ে দিয়ে বললো অস্থির হয়ো না মা, পালিয়ে যাবো না। আমার হাত ধরে একপ্রকার টেনে তুললো সিএনজিতে। আমি একবার ওর মায়ের দিকে দেখলাম রেগেমেগে ফেটে পড়তে রাগ দেখাতে না পারায় একটু হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকতে। ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছি এতো সাহস কোথায় পেয়েছে। ও বিস্মিত হয়ে আমাকে দেখছে। আমি বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কোন ভাবেই মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। 


সিএনজি চলতে শুরু করে । আমরা চুপচাপ বসে রইলাম। সিএনজির শব্দ ছাড়া কোন শব্দ নেই নিঃশব্দে পাঁচসাত মিনিট অতিক্রম হয়েছে। হঠাৎ আমার দাঁড়িতে টান মেরে বলে উঠলো, দেবদাস হয়েছে? সেভ করো না কেন?? এ কেমন চেহারা করেছো? 


গলার স্বরে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে। আমার বুকের মাঝে কেউ যেন খামচে ধরেছে। চোখের দিকে তাকাতেই দেখলাম গড়গড় করে পানি পড়ছে। আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলো, রিপন ! আমরা কেন হেরে গেলাম? আমি কথায় বলতে চেয়ে ও বলতে পারছিলাম না। গলা ভারী হয়ে শক্ত হয়ে কথা বের হচ্ছে না। ওর চোখের পানি দেখে নিজের চোখের পানি কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারলাম না। 


আমার হাত তার পেটের উপর রেখে বললো, এখানে তোমার সন্তান লালন পালনের স্বপ্ন দেখেছি। সেই স্বপ্নের সমাধি দিয়েছে এরা (মাকে দেখিয়ে)। এখানে আজ অন্য কারো সন্তান লালন করছি। কথাটা শুনেই আমার মাথাটা আচমকা ঘুরতে লাগলো। কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়েছি। 


আন্টি পাশে বসে অবাক হয়ে মেয়েকে দেখছে , সামলাতে চেষ্টা করলে ও বারবার মেয়ের ব্যর্থ হয়েছে। 


আমাকে একের পর এক কথা জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে। ৪৫ মিনিটের রাস্তায় আমি কোন কথায় বলতে পারিনি। বিয়ের এগারোটা মাস পার হয়ে যাওয়ার পরে ও আমার জন্য তার অনুভূতি দেখে আমি অবাক হলাম। আমি কেবলই তাকিয়ে দেখেছি চোখের ভাষা। চোখের ভাষায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি অতীত। যার কিনা স্বামী রয়েছে, কিছু দিন পর কোল জুড়ে আসবে ফুটফুটে শিশু। তবুও মনের গভীরে একটা বিশাল জায়গায় আমাকে রেখে দিয়েছে। যতোক্ষণ একসাথে ছিলাম একটা পাগলের মতো আচরণ করে জানিয়ে দিয়েছে আমি আসলেই ভালোবাসার কাছে হেরে যাইনি। সময়ের কাছে হারিয়ে গিয়েছি মাত্র। 


পরিবারের কাছে হেরে যখন আলাদা হয়ে গেলাম। জোর জবরদস্তি করে বিয়ে দিলো। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে আমি ভাবতে শুরু করি, আমাকে হয়তো ভুলে গেছে। স্বামীকে মেনে নিয়ে মহানন্দে জীবন কাটাচ্ছে। অজান্তেই কতো না বাজে মন্তব্য করতাম । কিন্তু সে দিনের আচরণ জানিয়ে দিলো আসলেই আমি ভুল ছিলাম। 


আড়চোখে আন্টির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনারও জ্বলজ্বল করছে চোখ দু'টো। মনে হলো এটাই আমার বিজয়। 


রবীন্দ্রনাথের হঠাৎ দেখার মতো, 

আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশন, দূরে যাবে তুমি। 

দেখা হবে না আর কোন দিনই । 


সত্যি সত্যি আর কোন দিন দেখা হয়নি। শেষ দেখায় তার শেষ কথা ছিলো "আমি মা হচ্ছি এটা আমার জন্যে জীবনের সব থেকে আনন্দের হলে ও তোমার সন্তানের মা হতে না পারার কষ্ট আমার আজীবন থেকেই যাবে"। 


আজকে সেই মানুষটার জন্মদিন। যাকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম। শুভ জন্মদিন প্রিয়❤️


------সমাপ্ত


না পাওয়া ভালবাসার গল্প পড়ুন।