ভালোবাসার স্ট্যাটাস
পালিয়ে যাওয়ার আগে তুই আরেকবার চিন্তা কর সুস্মিতা। তুই চিনিস না, জানিস না, এমন অপরিচিত একটা ছেলের জন্য হলুদের রাতে পালিয়ে যাবি?
হ্যা যাবো। কে বলেছে চিনি না? আমাদের প্রেমের বয়স এক বছর তিন মাস। এটা কি খুব অল্প সময়!
আমাদের কখনোই দেখা হয়নি এটা সত্যি। কিন্তু রঞ্জু ভাইয়া কে আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি। ভাইয়া ও আমাকে ভালোবাসে। আমি তাকে কথা দিয়েছি কখনো তাকে ছেড়ে যাবো না।
আর বাবা মায়ের কাছে ধরা পরে গেলাম জন্য এখন তাদের পছন্দের ছেলে কে বিয়ে করে লক্ষী মেয়ের মতো সংসার শুরু করবো সব কিছু ভুলে গিয়ে!
আজব!
সুস্মিতা তবু ও আরেকবার ভেবে দেখ প্লিজ। আজকে তোর হলুদ হয়েছে। রাত পোহালেই কাল তোর বিয়ে। চাচা চাচী কতো কষ্ট করে তোর বিয়ের আয়োজন করেছে। এখন তুই তাদের কথা ভাববি না।
ভেবেছি অনেক ভেবেছি। কিন্তু কি করবো বল?
আমি যে রঞ্জু ভাইয়া কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। তার জায়গায় অন্য কাউকে বসানোর কথা আমি যে ভাবতেই পারছিনা।
তানিয়া প্লিজ তুই না আমার প্রাণের সখি। আমার জন্য এইটুকু কর প্লিজ প্লিজ। তোর মোবাইলটা আর তোর পার্সে যা টাকা আছে আমাকে দিয়ে দে। আমার ফোন তো মা সেদিন কেড়ে নিয়েছে। তারপর থেকেই আর যোগাযোগ করতে পারছি না। না জানি রঞ্জু ভাইয়া কতো টেনশন করছে আমাকে নিয়ে।
আমি যে, পালিয়ে গিয়ে চিটাগাং রঞ্জু ভাইয়ার কাছে যাব। আমার কাছে না আছে টাকা, না আছে ফোন। এক সপ্তাহ ধরে তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই ফোনের অভাবে। এখন তোর ফোন টাই সম্বল।
তা না হলে নতুন শহরে গিয়ে আমি যোগাযোগের অভাবেই হারিয়ে যাব।
তুই চিন্তা করিস না। রঞ্জু ভাইয়ার সাথে দেখা হবার পর তোর ঠিকানায় আমি তোর ফোন, টাকা পাঠায় দিব।
আমি ফোন বা টাকা নিয়ে ভাবছি না রে সুস্মিতা। তুই আমার প্রিয় বন্ধু। তোর জন্য কিছু করতে পারলে আমার ভালো লাগেবে। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।
কি কথা?
তুই বলছিস তাকে চিনিস না। ঢাকা থেকে কতো বড়ো রিক্স নিয়ে তুই চিটাগাং যাবি। যদি তাকে না চিনিস। অথবা তোর রঞ্জু ভাই যদি না আসে। তখন কি করবি? তার ছবি আছে তোর কাছে? দেখলে চিনতে পারবি?
কিছুই নেই। আমাদের কথা ছিল আমরা সেদিন সরাসরি দেখা করবো যেদিন দেখা করার ডিসিশন নিব।
কিন্তু তার আগেই তো সব উল্টা পাল্টা হয়ে গেলো ভাবির জন্য।
ভাবি টের পেয়েই মাকে সব জানিয়ে দিলো।
তুই ভাবিস না তানিয়া। আমি রঞ্জু ভাইয়াকে ঠিক চিনতে পারব। আর আমার ডাক সে অগ্রাহ্য করতে পারবে না কখনো।
তারপরও আমার খুব ভয় করছে রে সুস্মিতা। আর আমার পার্সে মাত্র এক হাজার টাকা আছে। এতে হয়তো তোর যাওয়ার ভাড়া হবে। কিন্তু কোন কারনে যদি তোকে ফেরত আসতে হয়, তখন কি করবি?
ধুর পাগল। আমি ফেরত আসব কেন? শুধু শুধু সময় নষ্ট করিস না তো। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমার জন্য এটাই সুযোগ। দে তোর পার্স আর মোবাইল দে।
আর তোর মোবাইল আমি নিছি এটা কাউকে বলবি না। তুই বলবি তুই ঘুমিয়ে ছিলি। কিছুই জানিস না।
ইফতির ঘুম ভেঙেছে অনেক ক্ষণ হলো। কিন্তু সকাল থেকে এমন বৃষ্টি হচ্ছে। একদম ইচ্ছে করছে না বিছানা ছাড়তে। সে অলসতা করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে স্ক্রল করছে।
এরমধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করা মাত্র মিষ্টি একটা কন্ঠস্বর হুড়মুড় করে যা বললো, তার সারমর্ম হলো এই যে
রঞ্জু ভাইয়া আমার আজকে বিয়ে। গতো কাল হলুদ হয়েছে। হলুদের পর রাতে আমি পালিয়ে চলে আসছি তোমার শহর চিটাগাং এ।
তোমার চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আমি সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছি। সারারাত তোমার ফোন নাম্বার মনে করার চেষ্টা করছি। কিন্তু মা আমার ফোন কেড়ে নিয়েছে জন্য বান্ধবীর মোবাইল ফোন নিয়ে আসছি।
এখন অনেক কষ্ট করে তোমার নাম্বার মনে করে ফোন দিলাম। তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আমার কাছে কোন টাকা ও নেই। তুমি না আসলে আমি খুব বিপদে পড়ে যাব কিন্তু।
হড়বড় করে কথা গুলো বলেই ফোন কেটে দিল। আজব তো মেয়েটা। কে রঞ্জু ভাই?
ইফতি একবার ভাবলো যাবে না এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।
পরক্ষণেই মনে হলো মেয়েটা বলছে তার কাছে টাকা নেই। আবার বৃষ্টি তে ভিজতেছে সকাল থেকে।
ইফতি ঘড়ি দেখলো। দশটা বাজে। গাড়ি নিয়ে বের হলে চিটাগাং ভার্সিটিতে পৌঁছাতে এক ঘন্টা সময় তো লাগবেই। বাইকে আধা ঘন্টা। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে বাইক নিয়ে ভিজার কোন ইচ্ছা নেই ইফতির। বৃষ্টির পানিতে তার এলার্জি আছে।
সে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে ঝটপট রেডি হয়ে নিলো। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হলো। ব্লু জিন্স আর ব্লাক টি শার্ট খুব মানিয়ে গেছে তাকে।
ইফতি যখন তাড়াহুড়ো করে বের হচ্ছে, ইফতির মা পেছন থেকে বলে উঠলো এই ইফতি নাস্তা না খেয়ে এমন ছটফট করে কোথায় যাচ্ছিস?
তোর পছন্দের গরুর মাংস আর খিচুড়ি করছি বৃষ্টি দেখে। খেয়ে যা বাবা।
মা এখন সময় নেই। এসে খাব।
তোর বাবা কিন্তু আজকে অফিস যেতে বলছে। বিদেশী বায়ারদের সাথে লাঞ্চের পর মিটিং আছে।
আচ্ছা সে দেখা যাবে মা। আমি যাব আর আসব।
ইফতির গাড়ি যখন ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছে, বৃষ্টির বেগ তখন আরো বেড়েছে। কোথাও কোন মানুষ নেই। এত জোরে বৃষ্টি হচ্ছে যে, কুয়াশার মতো ছেয়ে আছে চারদিক। আশেপাশে সেভাবে কিছু দেখাও যাচ্ছে না।
ইফতি একটা ছাতা নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। চারদিকে ভালো করে নজর বুলিয়ে কোথাও কাউকে না পেয়ে যখন ফিরে আসবে চিন্তা করছে, তখন চোখ গেল পুকুর পাড়ের কাছে একটা নারকেল গাছের নিচে বসে একটা মেয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে।
ইফতির কাছে মনে হল এটা কোন মানুষ নয়। হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি পরা অসম্ভব রুপবতী এক মেয়ে নারকেল গাছের নিচে হাঁটু মুড়ে বসে কান্না করছে। তার গায়ের রঙ আর শাড়ির রঙ মিলেমিশে একাকার।
আরো একটা জিনিস মিলেমিশে একাকার। সেটা হলো তার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি।
ইফতি দূর থেকে দেখে ও বুঝতে পারল মেয়েটা কাঁদছে। সেই চোখের পানি বৃষ্টির পানি ধুয়ে মুছে নিয়ে যাচ্ছে। ইফতি বুঝতে পারছে না কি বলবে এই মেয়েকে!
হঠাৎ করে তার মনে হলো তার কাছে এই মেয়র ফোন নাম্বার আছে। সে কাছাকাছি গিয়ে ফোন দিল।
সুস্মিতা ফোন বের করতে গিয়ে আবিষ্কার করলো তার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সে যখন মুখটা উঁচু করে ছেলেটার দিকে তাকালো, মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তার জন্য এমন কোন রাজপুত্র অপেক্ষা করছে এটা সে ভাবতেও পারেনি।
ইফতি হাতটা বাড়িয়ে দিলো সুস্মিতার দিকে।
সুস্মিতা কাঁপা কাঁপা হাতে ইফতির হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বললো, এতো দেরি করলে কেন রঞ্জু ভাইয়া?
আমার খুব ভয় করছিলো। আমার মনে হচ্ছিল তুমি আসবে না।
ইফতি সুস্মিতার হাত ধরে ছাতার নিচে এনে আবেগীয় কন্ঠে বললো, তুমি ডেকেছো আমি না এসে পারি!
পরিশেষে ইফতি কি করবে?
সে কি সুস্মিতা কে বলে দিবে সে রঞ্জু নয়। সে রং নাম্বারে ফোন দিয়েছিলো।
নাকি এ হাত যখন একবার ধরেছে, তখন আর কখনোই ছাড়বে না। সে আজীবনের জন্য সুস্মিতার রঞ্জু হয়েই থাকবে।
ছেড়ে দিলাম পাঠকের হাতে। পাঠক নিজের মতো করে শেষটা ভেবে নিক।
-তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_আমি_হবো_না_আর_কারো।
লেখা- রোকেয়া পপি