না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প | ভালোবাসা কষ্টের গল্প

 ভালোবাসা কষ্টের স্ট্যাটাস

ভালোবাসা কষ্টের স্ট্যাটাস

আগামীকাল থেকে অবন্তীর ফাইনাল এক্সাম। মন না চাইলেও রাত ২টায়ও তাকে দেখা যাচ্ছে গভীর মনোযোগে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে থাকতে।


মাঝরাতে হঠাৎ মুঠোফোনের শব্দে বই থেকে মুখ তোলে অবন্তী। ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই একটি অপরিচিত নম্বর চোখে পড়ে।


—এত রাতে কে ফোন দিল...


নিশ্চিত, ক্লাসের কেউই হবে...


এটা ভেবেই ফোনটি রিসিভ করে অবন্তী।


‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে একটি মোটা গলা ভেসে আসে...


—হ্যালো...


অবন্তীর কাছে গলার স্বরটি অপরিচিত মনে হয়...


—কে বলছেন?


—আমি তমাল...


—ওহ, তমাল মামা! এত রাতে কী মনে করে?


গম্ভীর গলায় জবাব,


—মামা! আমি তমাল; কিন্তু আপনার মামা নই। আমি আরেকজন তমাল, আমাকে চিনবেন না।


—কাকে চান?


—এত সময় যখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি, ধরে নিন আপনাকেই চাইছি।


—স্টুপিড!


বলেই ফোন কেটে দিল অবন্তী। মনোযোগী হয়ে পড়া শুরু করল। কিন্তু কী আশ্চর্য! বারবার কেন যেন ওই কণ্ঠটাই কানে বাজছে!


ইস্! কী অসম্ভব সুন্দর কণ্ঠ লোকটির।


অনেকটা আরজে নীরবের মতো।

কথাগুলো ভাবতেই হঠাৎ আবার মুঠোফোনটি বেজে ওঠে। অবন্তী এবার ঠিক করল, কলটি আর রিসিভ করবে না। কিন্তু কী অদ্ভুত, এত রাতে নির্লজ্জের মতো লোকটা কেন যে বারবার কল করেই যাচ্ছে!


মুঠোফোনটি বেজেই চলেছে...মিশ্র প্রতিক্রিয়া অবন্তীর। শেষ পর্যন্ত কলটি রিসিভ করল...


‘হ্যালো’ বলতেই...


—কী ব্যাপার, রেখে দিলেন কেন?


—এত রাতে অচেনা একজন মেয়েকে বিরক্ত করতে লজ্জা করছে না আপনার! অসভ্য একটা লোক আপনি।


—প্লিজ! দয়া করে এভাবে বলবেন না। আমি বাজে ছেলে নই। এটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারেন। আপনি আমার পরিচয়টুকু দেওয়ার সুযোগ দিন...


আমি তমাল। বুয়েটে সিভিলে পড়ছি, তিতুমীর হলে থাকি। সামনে টার্ম ফাইনাল প্রিপারেটি লিভের গ্যাপে আছি। রাত জেগে পড়তে পড়তে হঠাৎ এক বন্ধুকে কল দেব ভেবে ডিজিট ভুলে কলটি আপনার নম্বরে চলে যায়। আমার কী দোষ বলুন, আপনার কণ্ঠে জাদু আছে। যে কেউ আপনার সঙ্গে কথা বললে অবচেতন মনে চাইবে আরেকবার কথা শুনতে!


—দেখুন, কাল আমার ফিজিওলজির কার্ড এক্সাম। এমনিতেই আমি খুব টেনসড। দয়া করে আর বিরক্ত করবেন না। আপনাদের মতো ছেলেরা মেয়েদের ইমপ্রেস করায় খুব পটু।


কথাগুলো বলেই কলটি কাটল অবন্তী। ফোনটি রাখার কিছু সময় পর মুঠোফোনের মেসেজ রিংটোন বেজে উঠল...


‘ফিজিওলজির কার্ড এক্সাম! তার মানে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট! ডাক্তারদের মেজাজ এত রুড হলে চলবে? আবার বিরক্ত না করে পারব না হয়তো। এতটা বকাঝকা আগামী দিন আর করবেন না আশা রাখব। শুভ রাত্রি। ’


কী রকম যেন এক অদৃশ্য ভালোলাগার শিহরণের মধ্য দিয়ে সময় কেটে যায় অবন্তীর। অবচেতন মন কেন যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ফোনের জন্য! খাবার টেবিল থেকে পড়ার টেবিল—সারাটা সময় মুঠোফোনটি ওর সঙ্গেই আছে। 


বাড়ির কারোরই ব্যাপারটা দৃষ্টি এড়ায় না। এমনিভাবে এক সপ্তাহ শেষে একদিন রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় সেই প্রতীক্ষিত নম্বরটি ফোন স্ক্রিনে ভেসে ওঠে।


অবন্তী ফোন রিসিভ করতেই সম্ভাষণের বদলে চমত্কার ভরাট কণ্ঠের আবৃত্তি শোনা যায়...


‘পাইনি বলে আজও তোমায় বাসছি ভালো রানি...


মধ্যসাগর এপার-ওপার করছে কানাকানি...’


ফোনের ওপাশ থেকে ভদ্রলোকের কবিতা পড়া শুনে অবন্তী যেন ভালোলাগার বিস্ময়ে ভাষা হারিয়ে ফেলে!


—কী ব্যাপার, কথা বলবেন না? কেমন লাগল কবিতাটা? আজ কিন্তু হঠাৎ করে ফোন কাটা যাবে না!


—অসাধারণ! খুব ভালো কবিতা আবৃত্তি করেন তো আপনি!


—সত্যি, আপনার ভালো লেগেছে? ধন্য আমি! আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম, এই বুঝি অভদ্র-অসভ্য বলে কল কেটে দেবেন!


এর পর থেকে শুরু ওদের একসঙ্গে পথচলা। সময় গড়িয়ে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা পেরিয়ে সপ্তাহ থেকে মাস ছুঁয়ে যায়...


সকাল-বিকেল কিংবা মাঝরাতে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে চ্যাটিং ঘণ্টার পর ঘণ্টা...ভালোলাগার অনুভূতিটা কখন যেন ভালোবাসা হয়ে মন জুড়ে বসে...


দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়...কাছে আসার আকুল তৃষ্ণায় মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে...দীর্ঘ এক বছর পর তমাল আর অবন্তী পহেলা ফাল্গুনের এক বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরিতে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়...


পাবলিক লাইব্রেরির রাস্তা দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সময় এদিক-সেদিক তাকিয়ে মনের অজান্তেই কাউকে খুঁজে যায় অবন্তী। ঠোঁটের কোণে তখনো একচিলতে হাসি...


হঠাৎ মুঠোফোনে মেসেজ রিংটোন বাজতেই অবন্তী চোখ রাখে স্ক্রিনে। ছোট্ট একটা মেসেজ,


‘আসছি অবন্তী, শাহবাগে আমি...। ’


হাঁটতে হাঁটতেই রিপ্লাই করে অবন্তী...


‘স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি’...


পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে কিছুটা দূর থেকেই তমাল দেখে, অবন্তী সিঁড়ির একপাশে চুপচাপ বসে আছে। মেয়েটি...মেয়েটি আসলেই সুন্দরী...হলুদ রঙের শাড়িতে ওকে একটু বেশিই মানিয়েছে।


অবন্তী তমালকে বলেছিল কালো রঙের পাঞ্জাবি পরতে অথচ ও পরে এসেছে সাদা রঙের ক্যাজুয়াল শার্ট।


সিঁড়ি বেয়ে অবন্তীকে পাশ কাটিয়ে একটু দ্রুতই পাবলিক লাইব্রেরির ভেতর চলে যায় তমাল। এর একটু পরই অবন্তীর পেছনে এসে দাঁড়ায়...


হঠাৎ করেই ডেকে ওঠে অবন্তী বলে...


অবন্তী পেছন ফিরে তাকাতেই ভীষণ চমকে ওঠে! একি, তমালের পাশে রূপক কেন!


এই ছেলেটা অবন্তীর ক্লাসমেট। দীর্ঘ দুই বছর ধরে ওকে বিরক্ত করে যাচ্ছে...একে দেখলেই অবন্তীর ভীষণ রাগ হয়।


অবন্তী কোনো প্রশ্ন করার আগেই তমাল বলে ওঠে, ‘রূপক আমার ছোট ভাই। ওর ধারণা ছিল, তুমি নাকি ভালোবাসতেই জানো না। ওর সঙ্গে আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, তোমাকে ভালোবাসতে শেখাব আমি। তোমার সঙ্গে সম্পর্কের শুরুটাই ছিল একটা জেদ। তোমাকে আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছিলাম, ভালোবাসার অনুভূতিটা কেমন হয়...ভালোবাসা আসলে কী...’


দীর্ঘ সময় নির্বাক হয়ে তমালের কথাগুলো শোনে অবন্তী। চোখ দুটি কখন যেন নিজের অজান্তেই অশ্রুসজল হয়ে ওঠে...


তমালের কথার প্রত্যুত্তরে অবন্তী শুধু একটি কথাই বলে...‘তমাল, আপনি আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন? আমার কল্পনায় যে ভালোবাসা ছিল তা আসলে ভালোবাসা নয়, শুধুই প্রতারণা। ভালোবাসা কী, তা হয়তো আর এ জন্মে বোঝা হলো না...’


কথাগুলো শেষ করেই অবন্তী হাঁটতে শুরু করে, পাবলিক লাইব্রেরির গেট থেকে বেরিয়ে দ্রুত রিকশা নেয়। রিকশা চলতে শুরু করে সন্ধ্যার আবছা আলো-আঁধারি পথ ধরে। রিকশা এগিয়ে যায় সামনে...


পেছনে পড়ে থাকে অনেক কল্পনায় আঁকা কিছু স্বপ্ন...


স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় এত দিনের রঙিন স্বপ্নে বিভোর দুটি চোখ বেয়ে অপমানের, দুঃখের আর হতাশার জল গড়িয়ে পড়ে। তবু মন মানে না। নিজের মনকে বিশ্বাস করতে পারে না।


শাহবাগ পেরিয়ে রিকশা বাংলা একাডেমির সামনে যেতেই একটি মোটরবাইক অবন্তীর রিকশার সামনে এসে থামল...


চমকে উঠল অবন্তী। বাইক থেকে নেমে তমাল রিকশার সামনে দাঁড়াল...


‘আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন? ভালোবাসা কী, তা শেখাতে চেয়েছিলেন! আমি তো ভালোবাসতে শিখে গেছি...’


কথাগুলো বলতে গিয়ে রাগে-অপমানে কেঁদে ফেলল অবন্তী।


তমাল হাত জোড় করে ওর রিকশার সামনে দাঁড়াল...‘ক্ষমা করে দাও অবন্তী...আমিও যে ভালোবাসতে শিখে গেছি তোমার পাশে থেকে...তোমার অভিমানী চোখ বলে দিয়েছে, আমি কতটা অপরাধী...নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়... তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না...প্লিজ! ফিরিয়ে দিও না।


সমাপ্ত-----


সেরা ভালোবাসার গল্প পড়ুন।