নারীকে অবহেলা করার কারণে ডিভোর্স হয় | ডিভোর্সের গল্প

 ডিভোর্স নারীর গল্প

ডিভোর্স নারীর গল্প

শুক্রবার দিন আজাদ সকালবেলার হাঁটাহাঁটি শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেতে বসেছে। তখন বড় ছেলে আতিকের  বউ লোপা এসে একটা খাম দিয়ে বলল, বাবা এ চিঠিটা কাল এসেছে আপনার নামে।দিতে ভুলে গেছি। আজাদ নাশতা শেষ করে আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে খামটি খুললো। একটি ডিভোর্স লেটার।থমকে গেল আজাদ। ডিভোর্স লেটার!! কার হতে পারে? 


দ্রুত খাম খুলতে গিয়ে কেমন যেন হাত কাপঁছে। খাম খুলে পড়ার পর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না আজাদ। তার আটাশ বছরের সংসার করা স্ত্রী মোনা তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে।এর মানে কী? তামাশা নয় তো? আদ্যোপান্ত পড়ার পর আজাদ স্তব্ধ। 


সারাজীবনই সে আবেগহীন, ভাবলেশহীন মানুষ।তার চিন্তা চেতনা, বিশ্বাস আর মূল্যবোধ একটা ছকের ভিতরে বাঁধা। এই ছক থেকে সে কোনোদিন বের হয়ে আসতে পারেনি। না স্ত্রীর বেলায়।না সন্তানদের বেলায়।  প্রচন্ড নেতিবাচক মনোভাবের একজন মানুষ সে।কিন্তু এটা সে কোনোদিন উপলব্ধি করেনি।স্বীকারও করেনি কখনো।সারাজীবন বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে  শুধু মোনাকেই দোষ দিয়ে গেছে সে।


আজ তার মনে পড়ল মোনা কয়েকবারই কথায় কথায় তার ছেলেদের বলত,তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলেই আমার দায়িত্ব শেষ। আমার মুক্তি।আমি শুধু তোমাদের জন্যই স্যাক্রিফাইস করছি।তোমরা পড়াশুনা করে তাড়াতাড়ি মানুষ হও।আমার জন্য দরোজা তো খোলাই আছে। তোমরা দাঁড়িয়ে গেলেই আমি আমার মত করে চিন্তা করব।আমি তো বন্ধনহীন।


কথাগুলি মোনা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে বলেছে।আজাদ পাত্তা দেয়নি।৷   আজাদ চুপ করে শুনেও না শোনার ভান করেছে। মনে মনে বলেছে, মেয়েমানুষের দৌড় আর কতদূর।  দৌড় যে এতদূর হবে সে চিন্তাই করেনি।


মোনা কদিন হলো তার বাবার বাসায় গিয়েছে। সবদিন নাশতা খাওয়ার সময় মোনা সাথে বসে থাকে।টুকটাক সাংসারিক কথাবার্তা চলে।সবকিছু একদম রুটিন মাফিক। আজাদের পছন্দমত খাবার তৈরি করা থেকে শুরু করে সবকিছুই ঠিকঠাক।যাওয়ার দিনও বলে গেলো, খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করো।তুমি এত চিনি খাও।এবার একটু কমাও। চিনি ছাড়া চা খেতে অভ্যাস করো।

অথচ চারদিনের মাথায় ডিভোর্স লেটার চলে এলো।তার মানে এর ব্যাবস্হা আগে থেকেই চলছিল।আজাদ খামটি হাতে নিয়ে নিজের শোবার ঘরে ঢুকল।চারদিন আগেও যে গরম গরম ইলিশ ভাজার সাথে ইলিশের তেলে ভাজা শুকনো মরিচ ভাতের সাথে দিতে ভোলেনি।শুকনো ভাজা মরিচ  আর সর্ষের তেল দিয়ে পেঁয়াজ ধনেপাতা ভর্তা দিতে ভুল হয়নি।অথচ চারদিন পর কী করে এই চিঠি আসতে পারে?তখন তো এতটুকুও মনে হয়নি যে অচিরেই এরকম একটা ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে।


আজাদ কী করবে বুঝতে পারছে না।একবার ভাবল ফোন দেবে।পরক্ষনেই ভাবল দেখা যাক কি হয়।বারান্দায় বসে চিঠিটি আবার খাম থেকে বের করতে গিয়ে টুক করে ছোট্ট একটা চিরকুট নীচে পড়ে গেলো। তাড়াতাড়ি তুলে নিয়ে ভাজ খুলল।


লিখা ছিল,  " আজ আটাশ বছর হয়ে গেলো। জীবনের না বলা কথাগুলো জমতে জমতে আজ এমন মহীরুহের মতো শিকড় গেড়ে ফেলেছে যে চাইলেও উপড়াতে পারছি না। তোমার সংসার করতে গিয়ে বহুবার শুনেছি দরজা খোলা আছে চলে যাও।আমি যাতে বলতে না পারি আমার ছেলে দুটো না থাকলে আমি চলে যেতাম।সেই বলার জায়গাটায়ও তুমি সুকৌশলে স্ক্রুপ এঁটে দিয়েছ। বলেছ, তোমার ছেলেদের নিয়েই চলে যাও। কেউ আটকাবে না।

 কথায় কথায় বহুবার  বলেছ, " তোমার এখানে ভালো না লাগলে তোমার যেখানে খুশি চলে যাও।কেউ তোমাকে আটকাবে না।কেউ  তোমার জন্য কাঁদবে না"। অর্থাৎ যতটুকু বললে শতভাগ আঘাত দেয়া নিশ্চিত হয় ততটুকু বলতে  কার্পণ্য করোনি কখনো। ধরেই নিয়েছ অধ্যাপক বাবা আর শিক্ষিকা মায়ের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মোনা। প্রচলিত সংস্কারের সূক্ষ্ম জাল বিস্তৃত তার শিরা উপশিরায়।এই জাল থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।সত্যিই কঠিন ছিল।  আর এই সুযোগের সবটুকুর সদ্ব্যাবহার করেছ  সারাজীবন। 


আমি সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ছেলেদের বঞ্চিত করব না। তাই এতটি বছর মনের সাথে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছি।যুদ্ধ করে করে আমার ছেলেদের মানুষ করেছি।আমি কীভাবে একটা নিঃশব্দ যন্ত্রনাময় জীবন যাপন করেছি তার কিছু খন্ডচিত্র লিখা আছে আমার ডায়েরীতে।সেটা রেখে এসেছি তোমার জন্য। যাতে নিজের আসল চেহারাটা দেখতে পাও। অবশ্য অহমিকা আর দাম্ভিকতা তোমাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে সেই আবরন ভেদ করে তোমার আসল চেহারা তোমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে কি না বলা মুশকিল। যাক গে।সেটা এখন আর আমার ভাবার বিষয় না।আমার ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এবার আমার দায়িত্ব শেষ।দরোজাটা আর খোলা রাখতে হবে না। দয়া করে এবার বন্ধ করে দিও"।


ইতি

মোনা


চিরকুটটা কয়েকবার পড়ল আজাদ।দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে সে ভালো করেই জানে মোনা আর সে দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। মোনা তাকে নিয়ে সুখী না এটা সে জানে।মোনা খুবই অন্তর্মুখী ধরনের মেয়ে।ঝগড়াঝাঁটি তার ধাঁচে নেই।খুব বেশি সহ্য না হলে কথা বন্ধ করে দিত।মাসের পর মাস কেটেছে দুজনের কোনোরকম বাক্যালাপ ছাড়াই।দুজনেই চাইতো অন্যজন কথা বলুক।কিন্তু কেউই ইগো বিসর্জন দিতে রাজি নয়।


ছেলেরা বাবা মায়ের মধ্যে কখনো হৈচৈ দেখেনি।দেখেছে একই ঘরে পাশাপাশি থাকা দুটি শীতল সম্পর্কের মানুষকে।মোনা জীবনে একটা কথা সবসময় মনে রেখেছে সে তার আত্মমর্যাদা কখনোই নষ্ট হতে দেবে না।আজাদ এমনিতে সাধারন মনের দেখা গেলেও ভিতরে সে প্রচন্ড রগচটা।মোনা উচ্চবাচ্য করলে গায়ে হাত তুলে ফেলাও তার জন্য কোনো ব্যাপার না।


তাই মোনা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিজের সম্মান বাঁচিয়ে চলেছে।আর আজাদের চিন্তা চেতনা অন্যরকম।ঘরের বৌকে শুরু থেকেই চাপের মধ্যে রাখতে হবে।কোনোরকম অন্যায় প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।এদেরকে লাই দিলে মাথায় উঠে যায়।মানতে চায় না। বৌয়ের কোনো কাজ যথেষ্ট প্রশংসাযোগ্য হলেও সেটা করা যাবে না। বৌকে কোনো সাজে অনেক সুন্দর লাগলেও না দেখি ভাব করতে হবে।যেন বুঝতেই না পারে তাকে সুন্দর লাগছে।বরং তখন আরো যত না তাকিয়ে পারা যায়।


রান্না করতে গিয়ে হাত ঝলসে ফেললেও না দেখার ভান করতে হবে।আহা উঁহু করে বেশি আহ্লাদ দেয়া যাবে না।সে ভেবেছে খুব কঠিন একটা আদর্শ নিয়ে সে সংসার চালাচ্ছে।সে তার মাকে যেভাবে পরিচালিত হতে দেখেছে সেটাকেই সঠিক পন্হা হিসেবে ধরে নিয়েছে। তার একবারও মনে হয়নি একটা উচ্চশিক্ষিত স্বাবলম্বী মেয়ের সাথে তার এই আচরন একদম ঠিক হচ্ছে না।


বারান্দায় বসে ভাবছে আজাদ। কী করবে।কী করা উচিত। তার দম্ভ অটুট এখনো।খুব যে হাপিত্যেশ করতে ইচ্ছে হচ্ছে তাও না।আবার স্বস্তিও পাচ্ছে না।এমন সময় আতিক এসে বলল,বাবা, আজ একটু লোপাদের বাসায় যাব।আসতে আসতে রাত হবে।রান্নার খালাকে লোপা সব বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।তুমি সময়মত খেয়ে নিও।

আজাদকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে আতিক বলল, তুমি কি কোনো কারনে আপসেট?  মা' র সাথে কথা বলা বন্ধ তাই না? তাই বলি মার ফোন বন্ধ কেন।সকাল থেকে কয়েকবার ফোন দিলাম। একনাগাড়ে বন্ধই বলে যাচ্ছে।


আজাদ ছেলেকে কিছুতেই বলতে পারলনা যে মোনা তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে। আতিক বলল, চিন্তা করোনা বাবা।মা চলে আসবে।


আতিকের বৌ লোপা তৈরি হয়ে এসে বলল, বাবা যাই।আপনি কিন্তু সময়মত খেয়ে নেবেন। মা কবে আসবে?


এবার আজাদ একটু হাসতে চেষ্টা করে বলল, আসবে।অনেকদিন পর গেল। থাকুক কিছুদিন। তোমরা যাও।আমি খেয়ে নেব।


একটু পর ওয়াইন রেড কালারের গাড়িটা বের হয়ে গেল বাড়ির গেট দিয়ে।বাসায় এখন আজাদ একা।সে উঠে গিয়ে আলমারি খুলল।মোনার কাপড় চোপরের ওপরে একটা চকোলেট রঙের ডায়েরি পড়ে আছে।ইচ্ছে  করেই সামনে রেখে গেছে মোনা।ডায়েরিটা নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসল আজাদ।আস্তে করে খুলে পাতা ওল্টালো।প্রথম বেশ কয়েকটি পাতায় কিছু লেখা নেই। তারপর থেকে লেখা শুরু। বিভিন্ন সময়ে অবসরের ফাঁকে মোনাকে লিখতে দেখেছে আজাদ।মনে মনে ভেবেছে, আদিখ্যেতা! 


আজ সেই ডায়েরি খুলে সে পড়তে বসল।মোটা ডায়েরি লিখায় ভরা।প্রথম লিখাটা চোখের সামনে তুলে ধরল আজাদ।

"০১-০৩-২০১৭

" আমার জীবনের কথাগুলো বলার মতো কোনো জায়গা নেই।ভাগ্যিস মানুষ মনের জগতে একা একা কথা বলতে পারে।নিজের ইচ্ছেমতো বিচরন করতে পারে। নইলে বেশিরভাগ মানুষ দমবন্ধ হয়ে মারা যেত। ভাবলাম, কিছু কথা লিখে রাখি।লিখলেও মনের ভার অনেকখানি লাঘব হয়।


তোমার সাথে যেদিন প্রথম দেখা হল সেই যে আমার খালাতো ভাইয়ের বিয়েতে।তার বন্ধু হিসেবে দাওয়াত পেয়েছিলে।আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার পর দেখেছি সারাক্ষণ তোমার দুচোখ শুধু আমাকেই অনুসরন করছে। আমি একটু বিব্রতবোধ করলেও ভালো লাগাটাই ছিল বেশি। একটা বয়সে মনে হয় পৃথিবীতে যতরকম সুন্দর অনুভূতি আছে, সবচাইতে সুন্দরতম অনুভূতি বোধ হয় এটাই যে," আমাকে কারো ভালো লাগে"। সেই বয়সটাই তখন ছিল আমার।


তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমার সাথে সম্পর্ক করলে।তোমার সেই প্রথম দিনের মুগ্ধতা চোখ বন্ধ করলে আজও টের পাই।


ঠিক দুইমাস পর।একদিন বেড়াতে গিয়ে দুজন হাত ধরে হাঁটছি। তুমি আমাকে হঠাৎ প্রশ্ন করলে," তোমার কি মনে হয় তুমি অনেক সুন্দর তাই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি"?

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম যেন।মনে মনে একটু অপ্রস্তুতও হয়েছিলাম। তুমি তখন বললে,"তোমার চালচলন আমার খুব ভালো লেগেছে। এই যেমন সবসময় হাসিমুখে থাকা।মুরুব্বিদের জড়িয়ে ধরে গল্প করা।আজান দিলে মাথায় আঁচল তুলে দেওয়া।উগ্র সাজে নিজেকে উপস্থাপন না করা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমি আমার মা কে ম্যানেজ করতে পারবে"।


আমি সেদিন কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল আমার।আমি আহামরি সুন্দরী নই।কিন্তু অসুন্দরও নই এমন প্রমান জীবনে অনেকবার পেয়েছি। আজ,এত বছর পর এসে আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি তুমি তোমার অজান্তেই সেদিন তোমাকে প্রকাশ করে ফেলেছিলে।আমিই ধরতে পারিনি।এটা আমার ব্যর্থতা।


আমি প্রশ্ন করেছিলাম, এভাবে বলছ কেন? উনাকে ম্যানেজ করা কি খুব কঠিন কাজ?


তুমি বলেছিলে,আজ আমরা এতদূর এসেছি শুধু মায়ের জন্য।রিটায়ারমেন্টের পর বাবা সারাক্ষণ তার ব্যাবসা নিয়ে পড়ে থাকতেন।আমার মা একা একহাতে আমাদের পড়াশুনা,এই বাড়িঘর করা সব সামলেছেন।আমাদের সংসারে আমার মায়ের অবদান বলে শেষ করার মত না। তার ইচ্ছে তিনি নিজে দেখেশুনে আমাকে বিয়ে দেবেন।


তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমাদের বিয়ে হল।নারায়নগন্জ  শহরের এক সাদামাটা দুইতলা বাড়ির অধ্যাপকের মেয়েকে বৌ হিসেবে তুলে নেয়ার ইচ্ছে ছিল না তোমার মায়ের।ঢাকা শহরে কত বড় বড় বাড়ির মেয়ে দেয়ার জন্য লাইন দিয়েছিল তাদের বাবারা।নেহায়েতই ছেলের পছন্দ তাই ইচ্ছে না থাকলেও রাজি হয়েছেন এ গল্প যে কতবার তার মুখে শুনেছি কোনো হিসেব নেই।


আমাদের বিয়ের দুইমাস ছাব্বিশ দিন হলো যেদিন। সেই উপলক্ষে তুমি একটি সামান্য কারনে আমাকে প্রথম চড় মেরে বসলে।  কারনটি ছিল কোথাও একটা দাওয়াতে যাচ্ছি।শ্বাশুড়ি  মা এসে আমাকে শাড়ি সিলেক্ট করে দিলেন।বললেন, এইটা পড়ো। ঠিক আছে এটা উনি করতেই পারেন।কিন্তু সমস্যা হলো তিনি যেই শাড়িটি পরতে বললেন সেটি একদমই স্ট্যান্ডার্ড  ছিল না।তার বোন না কে দিয়েছেন তাই আমাকে এটা পরতে হবে।আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম, মা এটা অন্য কোনো সময় পড়ব।আজকের দাওয়াতে এটা মানানসই হবে না।উনি কিছু না বলে বের হয়ে গেলেন।আমি ভেবেছিলাম উনি বোধ হয় বুঝতে পেরেছেন। উনি যে তোমাকে গিয়ে নালিশ করেছেন আমি ভাবিইনি।আমি আমার মত শাড়ি বের করে পরলাম। সেজেগুজে তৈরি। এমন সময় তুমি এসে ঘরে ঢুকলে। ঢুকেই জিজ্ঞেস করলে,মায়ের পছন্দের শাড়ি পরোনি কেন? আমি বললাম,ওটা একটু অন্যরকম।আজকের অনুষ্ঠানে এটা পরা ঠিক হবে না।এটা পরে আমরা নিজেরা কোথাও ঘুরে আসব একদিন।


তুমি জেদ করে বললে, না।এটা তুমি আজই পরবে।আমি বললাম, এটাতো তোমারও প্রেস্টিজের ব্যাপার।  না, তুমি একেবারে সিদ্ধান্তে অটল।এটাই পরতে হবে।আমি সারাজীবন মার্জিত ফ্যাশনদুরস্ত মেয়ে। যা খুশি একটা পরে অভ্যস্ত নই। একটু রাগ হলো আমার।    হাত থেকে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলে দিলাম অভিমান করে।


বাবার সাথে অভিমান করেছি।মায়ের সাথে অভিমান করেছি।সেই ছেলেমানুষী অভিমান করার দিন যে আর নেই এটা আমার মাথায় আসেনি।

তুমি কালবিলম্ব না করে ঠাস করে আমার গালে চড় মেরে দিয়ে বললে,দুদিন হয়নি এখনই আমার মাকে অবজ্ঞা করতে শুরু করেছ? এসব এখানে চলবে না।ওখানে যেতে হলে মায়ের পছন্দের শাড়িটি পরতে হবে।


তোমার চড়টি আমার কানেও লেগেছিল।কান ঝাঁ ঝাঁ করছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছিনা এটা কি হলো  ৷     আমি দুঃখ পেতেও যেন ভুলে গেছি।এটা কী করে সম্ভব! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এই লোক কে আমি এতো ভালোবাসি! তুমি গট্ গট্ করে বেরিয়ে গেলে। একটু পরে নীচে গাড়ি বের হয়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে বুঝলাম আমাকে ছাড়াই তুমি বেরিয়ে গেলে"।


ডিভোর্সী আরও গল্প পড়ুন।