টাকা নিয়ে কিছু বাস্তব কথা | বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

বাস্তব জীবন নিয়ে স্ট্যাটাস

বাস্তব জীবন নিয়ে স্ট্যাটাস

-আমার রুমমেট প্রায় গভীর রাতে রুম থেকে বের হয়। কালো একটা চাদর আর হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে।


-কিছুদিন হলো নতুন ম্যাসে এসেছি।আর তাই সবার সাথে তেমন কথা বা পরিচয় হইনি। আর আমার রুমমেট আমার সাথে কোন কথায় বলে না, মনে হয় রুমে ও মনে হয় একা থাকে। কোন কথা জিজ্ঞেস করলে খালি হুম,আচ্চা এগুলো বলে। আমার মনে হয় আমার রুমমেট (অনিক) আমার উপর খুব বিরক্তি প্রকাশ করে। তার বিষয়ে খোজ নিয়ে জানলাম সে এই এলাকারই তবে সে ম্যাসে থাকে।


আবার আমি রাতে দেখি প্রায় প্রতিরাতেই বের হয়। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শুয়ে আছে। আমার খুব কৌতুহল জাগল বিষয়টি নিয়ে, তো আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে অনিকের(আমার রুমমেটের) পিছু করব।


রাত হলো আমি জেগে আছি আর অপেক্ষা করছি যে কখন বের হবে। ঠিক ঠিক রাত ২ টাই বের হলো সেই চাদর আর ব্যাগ নিয়ে। আমি ও তার পিছু পিছু চলতে লাগলাম। দেখতে দেখতে অনিক(রুমমেট) একটা কবরস্থান এর ভেতর ডুকছে।আমি কিছুটা অবাক হয়,তবে আমি ও তার পিছু পিছু কবরস্থানে ঢুকেই একটা গাছের পেছনে লুকিয়ে পড়ি।তখন দেখতে পেলাম যে,


অনিক তার ব্যাগটা কবরের পাশে রেখে খুব জোরে জোরে কান্না করছে আর ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ডাইরি বের করে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।

বিষয় গুলো দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যায়,আর ভাবি আমার রুমে ফিরতে হবে অনিকের আগে তাই আমি ম্যাসের দিকে রওনা হলাম। আমার রুমে এসে আমি ঘুমিয়ে থাকার অভিনয় করে থাকলাম। 

৩ টার দিকে অনিক রুমে ডুকল তারপর ব্যাগটা তার খাটের তলে রেখে শুয়ে পড়ল।


পরের দিন সকালে উঠে আমি নাস্তা করে নিলাম তারপর কালকের বিষটা নিয়ে ভাব মতে থাকলাম। রুমে অনিক ছিল না তাই আমি বিষটা জানার জন্য তার ব্যাগটা বিছানার নিচে থেকে বের করলাম। ডাইরিটি হাতে নিতেই দেখি

প্রথম পাতায় লেখা, "আমার ছোট ভাইকে তার ১৫ তম জন্মদিনের উপহার দিলাম।" তারপরের আস্তে আস্তে ডাইরিটা পড়ে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম।


এমন সময় অনিক চলে এল রুমে আর আমার হাতে ডাইরিটি দেখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল


অনিক আমার হাতে তার ডাইরিটি দেখে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,যেন আমি কি যেন একটা দেখে ফেলেছি! আমি কিছু বলতে না বলতেই অনিক আমার হাত থেকে ডাইরিটি নিয়ে আমাকে বলল,"কেন তুমি আমার ডাইরিটি খুলেছ।" আমি কি বলব কিছুই বুঝে পাচ্ছি না। আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল যে একজনের জিনিস আমি না বলে  পড়লাম। তবে ডাইরির পাতাগুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।


সারাদিন অনিকের সাথে দেখা নাই।রাতে সে রুমে ডুকল, কোন কথা নাই। সে খাটের উপর বসে কিছু একটা ভাবছে। আমি গিয়ে অনিকের পাশে বসে অনিককে বললাম, আমি জানতে চাই তোমার জীবনে এমন কি হয়েছিল যে তুমি এমন কর?"

অনিক আমাকে বলল,"বাইরে চলো।" আমি আর অনিক চলে গেলাম ম্যাসের ছাদে। জোৎস্না রাত, অনিক তার জীবনে ঘটে যাওয়া কাহিনি বর্ণনা করতে শুরু করল,


"আমি (অনিক) একজন ধনী পরিবারের ছেলে।আমরা দুই ভাই। আমি পরিবারের ছোট ছেলে। ছোটবেলা মা-বাবাকে হারিয়েছি সড়ক দুর্ঘটনায়। বাবা আমাদের দুই ভাইয়ের নামে প্রচুর সম্পত্তি রেখে যান। যার কারণে আমি আর আমার ভাই ভালোভাবেই বড় হতে থাকি। নানুবাড়ি, দাদুবাড়ি সবাই আমাকে খুব ভালোবাসত,বন্ধুরাও অনেক সাহায্য করত, সুখেই চলছিল জীবন। তবে জীবনের সবথেকে বড় ধাক্কাটা খায় যখন আমার বড় ভাই হার্ট এট্যাকের মারা যান। মনে হচ্ছিল যে কেন আল্লাহ আমাকে এত বড় একটা কষ্ট দিলেন?মা-বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই আমাকে মা-বাবার মত না হোক তার সবোচ্চটা দিয়ে আমাকে ভালোবেসেছে,আর আজকে তিনি নেই। ভাইকে হারানোর পর মানসিকভাবে ভেংগে পড়ি। আমি খালা বাসায় থাকতাম, তবে সবাই কেন জানি না আমার সম্পত্তি সম্পত্তি করত। সবাই আমাকে জোর করে আমার বাড়ির জমি বিক্রি করায়। এভাবে বাবার সব সম্পত্তি শেষ হয়ে যায়।যখন আমার কাছে আর কোন সম্পত্তি নেই,  আস্তে আস্তে দেখতে শুরু করলাম সবাই আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নানুবাড়ি দাদুবাড়ির সবাই আমাকে বোঝা মনে করছে, আমি বুঝতে পারলাম তাড়া আমাকে চাই না তারা চাই আমার নামে লিখা সম্পত্তিকে। খুব খারাপ লাগত এটা ভেবে যে টাকায় সব। এভাবেই আমি সবার দেখে দূরে সরে যেতে থাকি।এমনকি আমার বন্ধুরাও আমার থেকে দূরে সরে যায়। কেউ আমার সাথে কথা বলত না।তাই আমার ভাই এর দেওয়া ১৫ তম জন্মদিনের উপহার,ডাইরিতে আমার সব কষ্টের কথা লিখতে  থাকি। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকে আর আমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহারের পরিমাণ ও বাড়তে থাকে। খালারা আমাকে লেখাপড়ার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন, দাদুরা তো আমার খোজই নিত না। আমি দেখলাম আর এভাবে এই বাড়িতে থাকলে হবে না তাই নিজেকে শক্ত করে আমার মা-বাবার, ভাইয়ের কথা ভেবে আমি সেই বাড়ি থেকে রাতের আধারে চলে আসি। আমার মা-বাবার আশা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে কিন্তু আল্লাহর কি নিয়তি। জীবনে সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়ে যখন কেউ ছিল না, তখন ছিল ভাইয়ের দেওয়া ডাইরিটি তাই ডাইরির একএকটা পাতা যেন আমাকে বাসতে শিখার আশা দেখিয়েছে।


আমি অনিককে প্রশ্ন করলাম তাহলে প্রতিদিন তুমি কাদো ক্যান কবরের সামনে গিয়ে? অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে বলল,"

ওখানে আমার মা-বাবা আর ভাইয়ের কবর দেওয়া তাই প্রতিরাতে আমি সেখানে গিয়ে আমার ডাইরিটি রেখে একটা কথাই বলি যে যদি তোমরা আজ বেচে থাকতা তাহলে আমাকে এইভাবে কেউ কষ্ট দিতে পারত না৷ আর আমার ভাইয়ের দেওয়া ডাইরিটিকে আমার ভাই মনে করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরি,আর বলি- যদি আমার ভাই ও আজ বেচে থাকত তাহলে এইভাবে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার মনে কথা শুনত।


অনিকের চোখের কোনের পানির ফোটা দেখা যাচ্ছে। আকাশের চাদটা ঢেকে গেছে মেঘের ছায়ায়। অনিক কথাগুলো বলে তার রুমে গিয়ে প্রতিদিনের মত কালো চাদর আর ডাইরিটি নিয়ে বের হয়ে গেল। আমি চুপটি করে বসে ভাবলাম,


পৃথিবীতে লোভ লালসা সম্পত্তি সবাইকে অন্ধ করে দেই। সমাজে খুজলে এমন অনেক অনিক পাওয়া যাবে যারা তাদের কষ্টগুলো কোন এক ডাইরির পাতায় লিখে রাখে। হয়ত কেউ না দেখলে সেই কষ্টগুলো মনে গহিনের ভেতরই রয়ে যায়,রয়ে যায় ডাইরির ধুলো জমা পৃষ্টায়।


                       ° সমাপ্ত °


এমন আরও গল্প পড়ুন।