গল্প:_ধুলো_জমা_এই_শহরে | খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প

 অবহেলা কষ্টের গল্প

অবহেলা কষ্টের গল্প

ভাই এখানে কি,এক রাতের জন্য মেয়ে পাওয়া যায়?

---হ্যা পাওয়া যায় তবে রেড বেশি?

---কত?

---৫ হাজার।

---শুনেছি আপনার নাকী একটা বোন আছে? 

---হ্যা।(অবাক হয়ে)

---তবে আমার আপনার বোন কেই এক রাতের জন্য 

চাই?রেড বাড়িয়ে দিবো।

---চুপ-চাপ এখান থেকে চলে যা?শুধু শুধু নিজের 

স*র্বনাশ ডেকে আনিস নাহ!(রেগে)

---সর্ব*নাশ তো আমার সেদিনি করেছিলেন যেদিন

আমার হবু স্ত্রী কে বিয়ের দিন এখানে তুলে এনে তার সুন্দর পবিত্র জীবনটাকে অপবিত্র করে?

আমার এরুপ কথা শুনে লোকটি ভ্রু কুচকে বললেন,

---কে তুমি?

আমি মুচকি হেসে বললাম,

আমিই সেই ছেলে যাকে আজ আপনার বোন অন্ধের

মতো ভালোবেসে নিজের ইচ্ছেই স*তিত্ব বিলিয়ে দিয়ে

৪ মাসের প্রেগনেন্ট হয়েছে।


---কু*ত্তার বাচ্চা তাহলে তুই সেই.... ?(কলার ধরে)


কিহ রাগ হচ্ছে?সেদিন আমারো আপনার উপর

প্রচুর রাগ হয়েছিলো।


---তুই আমার বোনের এত বড় স*র্বনাশ কেনো করলি?


সেটা আপনি নিজেই খুব ভালো করে জানেন?কথাটা 

বলেই আমি চুপ চাপ সেখান থেকে চলে আসলাম।

লোকটি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এখন

আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না হয়তো।দেখে মনে

হচ্ছে লোকটি নিজের বোনের কষ্টে কষ্টিত।তারপরেও

নিজের করা অন্যায় গুলো থামাচ্ছেন না লোকটি।

ছয় বার শুনেছি সু*ইসাইড করতে গিয়ে ছিলো তার 

বোন।আসল সত্যি কেউ না জানলেও ছয় বার 

সুই*সাইড কারার চেষ্টা করার বিষয়টা এ শহরের সবাই

জানে।শহরের সুনাম ধন্য লোক হয়েও রাতের আধাঁরে 

অন্যায় কাজ করে বেড়ায় লোকটি।শহরের লোকজন

হয়তো দিনের আলোতে তার ভালো রুপটাই দেখেছে,

কিন্তু সবাই যদি রাতের আঁধারে লোকটির পশু রুপ

খানি দেখতো তাহলে হয়তো সবাই নিজারা নিজেকেই

ঘৃনায় ধিক্কার জানিয়ে বলতো,এতো দিন তারা কাকে

সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছিলো।ভালোবাসার মানুষটিকে

আপন করে না পাওয়ার যন্ত্রণাটা হয়তো আমার থেকে

আর কেউ বেশি উপলব্ধি করতে পারবে নাহ।আজো

তার সৃতি আমাকে ঘুমাতে দেয় না।চোখ বুজতে দেয়

না,চোখ বুজলেই সেই তার মায়াবী প্রতিচ্ছবি আমার

চোখের জলের,কারন হয়ে দাঁড়ায়।আমার হৃদয় কে

কম্পিত করে তুলে।এমনো রাত গেছে,যে রাতের

প্রতিটা প্রহর আমার নির্ঘুমে কেটেছে।৩ বছর রিলেশন

করার পর যখন আমাদের কারো পরিবার থেকেই

আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছিলো না। 

যখন সব পথি আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিলো

তখন বাধ্য হয়ে আমরা একে অন্যের হাত ধরে পালিয়ে

আমার ভালোবাসার মানুষ শান্তার এক ধুর বান্ধুবীর 

বাসায় আশ্রয় নিয়ে ছিলাম।সেদিনি রাতেই আমাদের 

বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ভাগ্য সেদিন সহায়

হয়নি আমার।কিছু কেনা কাটা করার জন্য শান্তাকে

বাসায় রেখে বের হয়েছিলাম আমি।ভালোবাসার

মানুষটির জন্য সেদিন তার প্রিয় সব জিনিস পত্র 

কিনে বাসায় ফির ছিলাম।কিন্তু বাসায় এসে জানতে 

পারলাম।শান্তা আশ পাশটা ভালো করে দেখার জন্য 

ছাদে গিয়ে ছিলো কিন্তু কিছুটা ধুরের ছাদ থেকে কিছু

ছেলে শান্তাকে ইশারায় বাজে বাজে ইঙ্গিত করাতে 

শান্তা ছাদ থেকে রুমে এসে তার বান্ধবী রুহি কে এসব

বলছিলো আর সেই সময় কিছু লোক জোর পূর্বক

ভাবে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে শান্তাকে উ*ঠিয়ে 

নিয়ে চলে যায়।রুহি ও তার বৃদ্ধ বাবা বাধা দিতে গিয়ে

ও ব্যার্থ হয় তারা।সেদিন শান্তাকে রাস্তার কু*কুরের 

মতো এদিক ওদিক খুঁজেও পেলাম না তার দেখা।

দুদিন পর শান্তা ফিরে এসেছিলো।তবে তার এরুপ

করুণ অবস্থা আমাকে প্রচুর কাঁদিয়েছে।সেদিন শান্তা

কে একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে দুদিন ট*র্চার,শা*রীরিক মা*নসিক দুটোই করা হয়ে ছিলো শান্তার সাথে।অতএব

সেখান থেকে বহু কষ্টে শান্তা পালিয়ে আসতে সক্ষম 

হয়।শান্তা ফিরে আসার পর থেকেই অনেক বার সু*ইসাইড করার কথা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত আমার

সামনে প্রকাশ করে।শান্তা একবার মুখ দিয়ে যা বলে

তা অক্ষরে অক্ষরে করে থাকে।এই নিয়ে অনেক

সংশয়ের ভেতরে ছিলাম আমি।সেদিন শান্তাকে বুকে জড়িয়ে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম।কিন্তু নিয়তি হয়তো

এটাই চেয়ে ছিলো।যেই হাত দিয়ে যাকে সারা জীবন আমার বুকে জড়িয়ে রাখার কথা ছিলো সেদিন বুক

শূন্য করে সেই হাত দিয়েই শান্তাকে দাফন দিতে হয়ে

ছিলো আমায়।সেদিন কার পর থেকে আমি রুহিদের 

বাসা ত্যাগ করে সেই শহরেই থাকতে শুরু করি।এবং 

রুহির সাহায্যে একটা মোটামুটি ভালো বেতনের 

চাকরি পাই।অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও

শান্তার পরিবার বা আমার পরিবারের লোক জন 

কেউ একবার ফোন করে খোঁজ খবর নেওয়ারও

প্রয়োজন বোধ করেনি।হয়তো তাদের কাছে আমরা

সেদিনি মৃত হিসেবে গন্য হয়ে ছিলাম যেদিন সবার

অমতে আমরা পালিয়ে এসে ছিলাম।এই মুহূর্তে নিজের বাসার ছোট্ট একটা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি

হাল্কা হাল্কা বাতাস আমার শরীর কে দুলিয়ে তুলার

চেষ্টা করছে।হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো।

ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নুসরাত বলল,


---আমি চার মাসের প্রগনেন্ট শাহরিয়ার?


তো আমি কি করবো?


---আমার পেটে তোমার সন্তান।কেনো তুমি আমাকে

বিয়ে করার প্রতিস্রুতি রাখছো না?আমার সাথে এখন

কেনোই বা এমন করছো।তোমার ভালোবাসায় অন্ধ

হয়ে তোমার কাছে নিজের স*তিত্ব পর্যন্ত বিলিয়ে

দিয়েছি।প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।আমাকে

এভাবে সবার সামনে কলঙ্কিত করো না।দোহাই লাগে

আমাকে তুমি হয় বিয়ে করো না হয় গলা টি*পে মে*রে

ফেলো?তোমার এরুপ অবহেলা সত্যিই আমি আর সয্য 

করতে পারছি নাহ।


ফোনটা রাখো এখন আমার কথা বলার মুড নেই 


---প্লিজ আমার সাথে তুমি এমন করিয়ো নাহ?


অতঃপর ফোন কেটে দিলাম।কথা বলার কোনো মন 

মানসিকতা বা ইচ্ছেই আমার নেই।বেলকনি থেকে

রুমে এসে সুয়ে পড়লাম।কাল সকাল সকাল আবার

অফিসে যেতে হবে।পরের দিন সকাল সকাল ঘুম

থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে অফিসে চলে আসলাম কিন্তু 

অফিস থেকে আমাকে ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দেওয়া

হলো জানি না কেনো এমনটা করলো তারা।অফিস

থেকে বাহিরে এসে দেখলাম নুসরাতের ভাই অর্থাৎ

সেই মানুষ রুপি জা*নোয়ার টা কে দেখতে পেলাম।যে 

রাতের আধাঁরে বিভিন্ন  অপকান্ডের চক্র  কন্ট্রোল

করে।তাকে দেখেও না দেখার অভিনয় করে আমি 

সেখান থেকে রুহিদের বাসায় চলে আসলাম দেখি 

এই বিষয়ে রুহি আমাকে কোনো সাহায্য বলতে

কিছু করতে পারে কি না?অতঃপর রুহিদের বাসায় 

এসে আমি আরো এক বিরাট শকড খেলাম।রুহি ও

তার বৃদ্ধ বাবার লা*শ পড়ে আছে ফ্লোরে।র*ক্তে ফ্লোরটা

মাখা মাখি।হঠাৎ পিছন থেকে কয়েক জন পুলিশ 

এসে আমাকে খু*নি হিসেবে আক্ষাহিত করে গ্রেফতার

করে থানায় নিয়ে এসে উদুম যন্ত্রণা দায়ক অ*ত্যাচার

করে আমার উপর।তবুও তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই 

আমার।কারন আমি জানি এটা নুসরাতের ভাইয়ের 

কাজ।তবে তিনি আমার বেশি ক্ষতি বলতে কিছুই 

করতে পারবে না কারন তার সবচেয়ে বড় দর্বলতা

তার একমাত্র বোন।এবং তার একমাত্র বোন নুসরাত

এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছি আমি।অতএব নুসরাত 

এসেছে সঙ্গে তার ভাই ও।নুসরাতের ভাই  আমাকে

বার বার বলছেন,যদি বাচঁতে চাস তাহলে আমার 

বোন কে বিয়ে কর আর নাহলে ফাঁ*সির দড়িতে জু*লান্ত

অবস্থায় নিজেকে নিজেই দেখার জন্য প্রস্তুত হ।


গল্পঃ  ধুলো জমা এই শহরে

পর্বঃ১

শাহরিয়ার


_ধুলো_জমা_এই_শহরে

পর্ব--০২ এবং শেষ পর্

শাহরিয়ার


নুসরাতের ভাই আমাকে বার বার বলছেন,যদি বাচঁতে

চাস তাহলে আমার বোন কে বিয়ে কর আর নাহলে

ফাঁসির দড়িতে জুলান্ত অবস্থায় নিজেকে নিজেই

দেখার জন্য প্রস্তুত হ? 


নুসরাত কিছু বললো না শুধু ছলছল চোখে আমার

দিকে তাকিয়ে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে আমার থেকে 

পাওয়া অবহেলা গুলো নুসরাত কে প্রতিদিন হত্যা করে 

হয়তো নুসরাত বুঝতে পারছে না আমি কেনো তার 

সাথে এমন করছি।নুসরাতের ভাইয়ের কথা গুলো শুনে 

আমি হাসিলাম।অতঃপর তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে 

নিলাম।পরিশেষে তারা চলে গেলেন।আর আমি জেল 

খানার এক কোণে শিতল দেয়ালের সাথে নিজের পিঠ 

স্পর্শ করিয়ে বসে পড়লাম।ঠান্ডা দেওয়ালটা বার বার 

আমার শরীরটা শির শির করে কাপিয়ে তুলছে।চোখ 

গুলো বন্ধ করতেই সেই ঘুরে ফিরে আমার কল্পনায় 

একজনেরই অবস্থান আর সে হলো শান্তা।জীবনে 

একজন কেই নিজের জান প্রান দিয়ে মন থেকে 

ভালোবেসে ছিলাম।আমার মনে হয় না তাকে ছাড়া 

আমি অন্য কাউকে দ্বিতীয় বারের মতো ভালোবাসতে 

পারবো।চোখের কোণ থেকে বেয়ে বেয়ে অজস্র জল পড়ছে আমার।ছোট বেলা থেকেই পরিবারের

অবহেলায় বড় হই আমি।মা মারা যাওয়ার পরে বাবার 

হঠাৎ দ্বিতীয় বিয়ে সত্যিই আমাকে প্রচুর কাঁদিয়েছে।

ছোট বেলা থেকেই সৎ মায়ের অত্যাচারে তিলে তিলে

আমি অনেক কষ্টে বড় হই।পরবর্তী তে শান্তার পবিত্র 

ভালোবাসা যেন আমার সব কষ্ট কে ভুলিয়ে দিয়ে 

আমাকে নতুন এক জীবন প্রদান করে।সবার মতো 

আমিও মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনেছিলাম।কিন্তু কখনো 

ভাবতে পারিনি আমার দেখা সব স্বপ্ন গুলো এক

নিমিষেই ভেঙ্গে চুরে ধ্বংসতে রুপান্তর হবে।সবাই তো 

সুখি হতে চায় মনে মনে প্রিয় মানুষ কে নিয়ে অনেক 

স্বপ্নের জাল বুনে কিন্তু সুখ তো উপার-ওয়ালা সবার 

ভাগ্যে লিখে দেননি।সুখি হতে আমি পারিনি,এভাবে 

ভেঙ্গে যাবে সব কিছু আমি ভাবতেও পারিনি।ব্যার্থ 

প্রেমের ব্যার্থ আমার জীবন কাহিনি।আমার এটা ভেবে 

ও খুব খারাপ লাগছে শুধু মাত্র আমার জন্যই রুহি ও 

রুহির বৃদ্ধ বাবাকে নিজ প্রান হারাতে হলো।আমি এটা 

নিশ্চিত যে রুহি ও রুহির বাবার হত্যার পিছনে একমাত্র 

নুসরাতের ভাইয়ারই হাত রয়েছে।


রাত জানি না কিভাবে পার হয়েছে আমার কিন্তু 

সকালটা আমার পুলিশের যন্ত্রণা দ্বায়ক অত্যাচার গুলো দিয়েই শুরু হয়েছে।তবে বেশিক্ষণ তারা আমাকে

মারধর করতে পারেনি।কারণ নুসরাত সেই সময় চলে 

এসেছিলো।আর নুসরাত কে দেখে পুলিশ গুলো থেমে

যায়।নুসরাত আমার খুব নিকটে চলে এসেছে, আমার

চোখে চোখ রেখে দু কাঁধে দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,


---কেনো এরকম করছো?আগের থেকে কতটা বদলে

গেছো তুমি?কি এমন অপরাধ করেছি আমি যে তুমি

আমাকে আজ এত বড় শাস্তি দিচ্ছো।প্লিজ রাজি 

হয়ে যাও।তুমি কি চাও তোমার জন্য একটা নিষ্পাপ 

শিশু মৃত্যুর কুলে ঝুকে পরুক?ওর কি বা দোষ বলো?

আজ আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে সত্যিই সেই তুমি কি

আজকের এই তুমি?তোমার মুখ মন্ডলের দিকে দু'নয়ন দিয়ে চাহনি দিলেও কেনো যেন খুব অচেনা লাগে

তোমাকে!তুমি কি জানো আমার হাতে থাকা এই ছোট্ট 

সিসিটার ভেতরে ঠিক কি আছে? 


নিশ্চয়ই বিষ আছে?


---ছিহ তোমার কি আমার উপর একটুও মায়া হয় না?

তুমি কি এতদিন আমাার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার

অভিনয় করে ছিলে?


হ্যা অভিনয় করেছি তো?


---ওহ তাহলে তোমার দেখানো সব স্বপ্ন গুলোই মিথ্যে 

ছিলো?আমাকে মিথ্যে ভালোবাসার মায়ায় ফেলে 

আমার সর্বোচ্চটা লুটে নিয়েছো।কিন্তু বিশ্বাস করো

আমি তোমাকে সত্যিই মন থেকে ভালোবেসে ছিলাম।

তোমাকে আমার মনের গহিন ঘরে খুব আদরে রেখে

ছিলাম কিন্তু এতো কিছুর যোগ্য তুমি ছিলে না।আমার

সাথে ছলোনা করেছো তুমি?আমাকে ধোঁকা দিয়েছো,

আমার ভালোবাসা আবেগ অনুভুতি গুলো নিয়ে তুমি 

ক্ষণে ক্ষণে খেলা করেছো।একজন ফ্রট তুমি,নরকেও 

ঠাই বলতে কিছুই মিলবে না তোমার।


চুপচাপ নুসরাতের কথা গুলো শুনছিলাম।উত্তরে 

কিছুই বললাম না আমি।হঠাৎ নুসরাত তার হাতে 

থাকা বিষটা আমার চোখের পলক ফেলতে না 

ফেলতেই খুব দ্রুত পান করে ফেললো।বিষ পান 

করার কিছু সময় পর নুসরাত লুটিয়ে পড়লো।হুঠ 

করে নুসরাতের এমন কান্ড সত্যিই আমাকে খুব 

হতভম্ব করে তুললো।আমি কখনো ভাবতেই পারিনি

নুসরাত এমন একটা কাজ করতেও সক্ষম হবে?নিস্তব্ধ 

হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি।এখনো মুখে কোনো শব্দ 

নেই আমার।হঠাৎ কিছু পুলিশ ছুটে আসলেন 

আর নুসরাত কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে 

নিয়ে আসেন।তাদের সঙ্গে কেনো যেন আমিও চলে

আসলাম কিন্তু আশ্চর্য পুলিশ আমাকে তাতে কোনো

রকম বাধা দেয়নি।নুসরাতের ভাই খবর পেয়ে ছুটে

এসেছেন হাসপাতালে।আসা মাত্রই দুজন পুলিশ কে

ঠাঠিয়ে দুটো থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে বললেন,তোরা

থাকতে এসব হলো কি করে?পাগলের মতো আমার

চোখের সামনে, এদিক থেকে ওদিক কিছুক্ষণ পর পর

দৌড়াচ্ছেন আর ডাক্তার কে যা তাই না উল্টা পাল্টা 

বলছেন!পরিশেষে তিনি আমার কাছে এসে দু হাত

দিয়ে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে,চোখ গুলো

অগ্নি পিন্ডের মতো গাঢ় লাল বর্ণের আকার ধারণ করে বললেন,ইউ বাস্টার!!যদি আজ আমার বোনের 

দূর্বলতা তুই না হতিস তাহলে সেই কখনি মাঝ রাস্তায় 

তোকে কুকুরের মতো দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে হত্যা করতাম 

আমি।প্রার্থনা কর!আমার বোনের যেন কিছু না হয়ে 

যায়?যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে পরক্ষণেই আমি 

তোকে কেটে কেটে টুকরো টুকরোতে এক নিমিষেই 

রুপান্তর করে ফেলবো!!


এই মুহূর্তেও কেনো জানি আমি তার কথা শুনে মুচকি

হাসিলাম।আমার মুখে মুচকি হাসি দেখে তিনি আরো

রেগে গেলেন কিন্তু কিছুই বলতে পারলেন না।কিছু 

বলতে গিয়েও বলতে না পেরে চুপচাপ আমার চোখের

সামনে থেকে চলে গেলেন।বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার 

তার কার-সাজি সম্পন্ন করে অপারেশন থিয়েটার 

থেকে বের হলেন।ডাক্তারের মুখ মন্ডলটা কিছুটা 

নুসরাতের ভাইয়ের চোখের দৃষ্টিতে কালো হিসেবে 

চিহ্নিত হলে নুসরাতের ভাই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কলার 

চেপে ধরে কিছুটা কান্না মিশ্রিত ধমকের সুরে বললেন,

আমার বোন ঠিক আছে তো?নুসরাতের ভাইয়ের কথার 

উত্তরে ডাক্তার পজিটিভ উত্তর প্রকাশ করলে,সঙ্গে সঙ্গে 

নুসরাতের ভাই কলার ছেড়ে দিলেন।তাকে দেখে মনে 

হচ্ছে এই মুহূর্তে তিনি যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলেন।দ্রুত 

তার বোনকে দেখার জন্য ভিতরে চলে গেলেন।

পরিশেষে যখন নুসরাতের জ্ঞান ফিরে তখন নুসরাত 

আমাকে দেখার জন্য ছটফট করতে লাগলো।অতএব 

আমাকে নুসরাতের সাম্মুখে নিয়ে যাওয়া হলে নুসরাত 

কিছুটা স্বাভাবিক হয়।সর্বশেষে আমি নুসরাত কে বিয়ে 

করার জন্য হ্যা সম্মতি প্রকাশ করার দুদিন পর আমার 

আর নুসরাতের ধুম-দাম ভাবে বিয়ে হয়।আমাদের 

বাসরটা নুসরাতদের বাড়িতেই সাজানো হয় কারন 

এখন থেকে আমাকে এ বাড়িতেই থাকতে হবে।কিন্তু 

আমার মনে হয় না আমি,বেজি হয়ে সাপের সাথে 

একদিনও ঠিক মতো এক ছাদের নিচে থাকতে 

পারবো?সবাই তো প্রচুর পরিমান স্বপ্ন নিয়ে বাসর ঘরে 

প্রবেশ করে কিন্তু আমি প্রবেশ করছি প্রতিশোধের এক 

অদ্ভুত নেশায় নেশাক্ত হয়ে।আমার এক হাতে রয়েছে 

একটা ফোন।যে ফোনে রয়েছে আমার আর নুসরাতের 

অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও যা আমি হয়তো আর কিছু 

খানিক পর অনলাইনে বিসর্জন দিয়ে দিবো এবং

আমার অপর হাতে রয়েছে এমন এক বিষের সিসি 

যেটা খেলে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমার মৃত্যু 

নির্ধারিত হবে।প্রতিশোধের আগুন ধাউ ধাউ করে

জ্বলছে আমার এ বুকে।অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর হাসি দিয়ে 

দাঁড়িয়ে আছি,ঠিক আমার বাসর ঘরের দরজার 

নিকটে.........


অদ্ভুত এক ভয়ঙ্কর হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,ঠিক

আমার বাসর ঘরের দরজার নিকটে।কিন্তু কেনো

যেন আমার মন বারবার আমাকে প্রশ্ন করছে,এটা 

করা কি সত্যিই ঠিক হবে?নাহ নিশ্চয়ই ঠিক হবে না।

কারণ নুসরাতের তো কোনো দোষ নেই সে কেনো তার

ভাইয়ের পাপের শাস্তি পাবে।আর যতই হোক এ কথা 

তো আমি অস্বীকার বলতে কিছুই করতে পারবো না,

যে নুসরাতের গর্ভে আমারি সন্তান।প্রতিশোদের নেশায়

নেশাক্ত হয়ে আমি দু-জন নির্দোষ কে এভাবে মৃত্যুর 

অতি নিকটে ঠেলে দিতে পারিনা।কিন্তু আমার কথা

কি নুসরাত বিশ্বাস করবে,যে তার ভাই আসলে মানুষ 

রুপি এক ঘৃনিত জঘন্য নরপশু!!অতঃপর বাসর ঘরে 

প্রবেশ করা মাত্রই নুসরাত খুব সুন্দর ভাবে আমার

নিকটে এসে সালাম করে,এক অবাক করা চাহনিতে 

আমার দিকে তাকিয়ে রইলো,হয়তো নুসরাতও হাজার

টা নারীর মতো ভেবে ছিলো,আমি তাকে জড়িয়ে ধরে 

কপালে এক অদ্ভুত ভালোবাসার ছোয়া একে দিয়ে 

বলবো,তোমার জায়গা আমার চরনে নয়।তোমার

জায়গা আমার বুকে,হৃদয়ে,কলিজায়।কিন্তু এসবের 

কোনো মুড অনুভূতি কিছুই নেই আমার।চুপচাপ পাশ

কাটিয়ে সোফায় গিয়ে পা জোড়া হাল্কা মেলে সুয়ে

পড়লাম।নুসরাত বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমার 

নিকটে এসে আমার গাল দুটো দু হাত দিয়ে হাল্কা 

চেপে ধরে নিজের কপালের সাথে আমার কপাল খানি

ঠেকিয়ে,চোখ জোড়া কান্নায় জড় জোড়িতো করে 

ফিস ফিস করে বলল,


---কেনো?কেনো তুমি আমার সাথে এরুপ অদ্ভুত 

আচরণ করছো?তুমি কি জানো না আমি তোমাকে 

খুব ভালোবাসি।তারপরও কেনো আমাকে অবহেলার

শীর্ষ স্থানে তুলে দিয়েছো।আগে তো তুমি এমন ছিলে

নাহ?তাহলে হঠাৎ করে কি বা হয়েছে তোমার যার

কারণে তুমি আমাকে আজ এতটা অবহেলার পাত্রি

হিসাবে চিহ্নিত করেছো।তুমি তো খুব ভালো করেই 

জানো আমি কারো অবহেলা একদম সয্য করতে 

পারি না।তারপরেও কেনো তুমি আমার সাথে এমন 

করছো।ও বুঝতে পেরেছি?কেউ একজন ঠিকি 

বলেছিলো কিছু ছেলেরা দেহ লোভী হয়ে থাকে আর

তুমি হয়তো তাদের মধ্যেই একজন।


নুসরাতের কোনো কথার উত্তরি আমি দিলাম না।মুখ

ঘুরিয়ে নিয়ে নুসরাতের থেকে কিছুটা দুরত্বে চলে

গেলাম।অতঃপর নুসরাত ও আর কিছু বললো না।

হয়তো সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তার কোনো মায়া আমার উপরে এখন আর কোনো কাজ করবে

নাহ।শান্তার মৃত্যুর পর থেকেই আমার প্রতিটা রাত

কাটে ঘুম হীন অর্থাৎ নির্ঘুমে।আজও তার বেতিক্রম

হলো নাহ।আজকের রাতটাও আমার নির্ঘুমেই পার 

হচ্ছে।রাত যতই গভীর হচ্ছে আশপাশটা যতই

শুনা-সানে পরিবর্তন হচ্ছে।আমার বুকের ভিতরের লুকায়িত কষ্ট গুলো ততই ধীরে ধীরে অনাবরত বেড়ে

চলেছে।আস্তে আস্তে কয়েকটা দিন কেটে গেলো।এ

কয়েক দিনে আমার থেকে পাওয়া তীব্র আকারের 

কষ্ট অবহেলা যেন নুসরাত কে প্রতিনিয়তো চির চির 

করে খাচ্ছিলো।নুসরাতের কষ্ট যেন নুসরাতের ভাইয়ের 

সয্যই হচ্ছিলো না।যা ওনার মুখ দেখলেই বুঝতে 

সক্ষম আমি।নুসরাত কে এত কষ্ট অবহেলা করার

কোনো ইচ্ছেই আমার নেই কিন্তু আমি যে নিরুপায়।

নুসরাতের ভাই কে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মৃত্যুর কোলে

ঠেলে দিতে হলে আমাকে এরুপ করতেই হবে।রাত 

১১ঃ৩০ মিনিট আমি একটা ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে 

আছি।এত রাত হওয়ার পরেও নুসরাতদের বাড়িতে 

যাওয়ার কোনো ভ্রুক্ষেপ আমার নেই।নিরিবিলি 

দাঁড়িয়ে আছি আমি।আশে পাশে কোনো মানুষ নেই 

বললেই চলে।হঠাৎ একটা মেয়ে কে কুকুরের মতো

দৌড়ে এদিকে আসতে দেখতে পেলাম।মেয়েটি আমার 

নিকটে এসেই হুমরে খেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।আমি 

এক দৃষ্টি তে অবাক করা চাহনিতে তাকিয়ে রয়েছি 

মেয়েটির দিকে কারণ মেয়েটি আর কেউ না স্বয়ং রুহি।

যার রক্তাক্ত লাশ আমি সেদিন দেখেছিলাম কিন্তু 

আশ্চর্য রুহি কি করেই বা বেঁচে থাকতে পারে।সে তো 

মারা গেছে!মারা যাওয়া মানুষ আবার ফিরে আসতে 

পারে নাকী?


---প্লিজ শাহরিয়ার আমাকে বাঁচাও?ওদের হাত থেকে!

চির চির করে ক্ষুদার্ত হায়নার মতো আমার দেহ ভোগ

করে মেরে ফেলবে ওরা?প্লিজ সাহায্য করো আমায়?


রুহি তুমি বেঁচে আছো কিন্তু কিভাবে আর কারা

তোমাকে মেরে ফেলবে?কাদের কথা বলছো তুমি? 

কেনোই বা তারা তোমাকে মারতে চায়?


---সব বলবো আগে তুমি ওদের হাত থেকে আমাকে 

রক্ষা করো?ওই যে ওরা এসে পড়েছে প্লিজ বাঁচাও

আমাকে........নাহলে মেরে ফেলবে আমায়.........


সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম অনেক গুলো,লোক

দাঁড়িয়ে আছে।তাদের প্রত্যেকের মুখেই নারী লোভী 

এক ভয়ানক হাসি।বুঝতে তেমন একটা অসুবিধা 

হয়নি আমার,লোক গুলো এখন রুহির সাথে কি 

করতে চায়।কিন্তু আমি একা কি করেই এত গুলো 

লোকের সাথে পেরে উঠবো।জানি না কিভাবে সম্ভব 

তবে আমাকে আজ এই অসম্ভব কে সম্ভব করতেই

হবে।সেদিন শান্তাকে তো আর ক্ষুদার্ত হায়নাদের হাত

থেকে রক্ষা করতে পারিনি কিন্তু আজ আমাকে রুহির

সতিত্ব বিলীন হওয়া থেকে যে করেই হোক আটকাতেই

হবে।জানি না সঠিক হঠাৎ করেই আমার ঠিক কি হয়ে 

গেছিলো তবে আমি সব গুলো লোককেই একা

প্রতিরোধ করে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হই।অতঃপর রুহি

তার চোখ জোড়া চোখের অশ্রুতে ছলমল করে 

আমাকে বলল,


---আমায় পারলে ক্ষমা করে দিয়ো শাহরিয়ার?তোমার

ভালোবাসার মানুষ শান্তার সর্বনাশের পিছনে আমার

ও হাত রয়েছে।যা আজও তোমার অজানা!


কি....কি.... বলছো এসব তুমি?


---সব সত্যিই বলছি।আজ আর নিজের কু-কর্ম গুলো

লুকাতে ইচ্ছে করছে নাহ।শান্তার সাথে আমার পরিচয় 

হয় ফেসবুকে।অনলাইনে বিভিন্ন মেয়েদের টার্গেট করে

তাদের সাথে মিথ্যে বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরণ করে এখানে 

নিয়ে আসাটাই ছিলো আমার একমাত্র প্রধান কাজ।

তেমনি শান্তাও আমার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তোমাকে 

নিয়ে এখানে আমার বাসায় এসেছিলো।সেদিন আমি

তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম।শান্তা নিজে থেকেই আশ-পাশটা ভালো করে দেখার জন্য ছাদে যায়নি।

স্বয়ং আমিই তাকে ছাদে যেতে বাধ্য করেছিলাম। 

কারন তার পাশের ছাদেই আমাদের চক্রের লোকজন

শিকার দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলো।অতঃপর 

শান্তাকে তাদের পছন্দ হলে তারা আমাকে ফোন করে 

জানিয়ে দেয়।অতএব শান্তা ছাদ থেকে নিচে আসলে 

আমি ছল করে শান্তাকে ঘুমের ঔষুধ মিশ্রিত পানিটা 

পান করানোর কিছুক্ষন পর তারা এসে কোনো এক 

ব্যাক্তির ভোগ বিলাসের বস্তু হিসেবে শান্তা কে তুলে 

নিয়ে এক গোডাউনে নিয়ে যায়।যে গোডাউনে সব 

ধরণের অন্যায় কাজ হয়ে থাকে।কিন্তু পরবর্তীতে 

শান্তার সুন্দার্যের উপর মুগ্ধ হয়ে নুসরাতের ভাই 

শান্তাকে নিজের ভোগ বিলাসের বস্তু হিসেবে চিহ্নিত 

করে শান্তার সর্বোচ্চটা লুটে নেয়।নুসরাতের ভাই হচ্ছে 

এই চক্রের লিডার।দিনের আলোতে যতই নিজেকে মহান হিসেবে চিহ্নিত করুক না কেনো!রাতের আধাঁরে 

পশু রূপ ধারন করে সেইই কন্ট্রোল করে আসছে এ 

শহরের সব অন্যায় মূলক চক্র বা কাজ।তার নির্দেশেই 

এসব যঘন্য থেকে যঘন্য তম কাজ কর্ম

হয়ে থাকে।সেদিন অফিস থেকে বের করে দেওয়ার 

পর তুমি আমার কাছেই আসবে এটা আমি অনেক 

আগে থাকেই আন্দায করে ছিলাম।তাই আমি আমার

সৎ বাবাকে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে তাকে খুন করে তার 

সম্মুখেই আমি মৃত হওয়ার নাটক করে পড়ে ছিলাম।

সৎ বাবা কে খুন করার আরো একটা বিশেষ কারন

ছিলো সেটা হলো তিনি সব জেনে গিয়ে ছিলেন আমার

সম্বন্ধে।পরবর্তীতে পুলিশ এসে তোমাকে ধরে নিয়ে

যাওয়াটা, এটাও একটা চক্রান্ত।পরিশেষে সব 

চক্রান্তের পিছনে একজনই আর সে হলো নুসরাতের 

ভাই।আজ আমিও সত্যিই অবাক হয়ে ছিলাম যাকে

নিজের প্রানের চেয়েও অধিক ভালোবেসে ছিলাম

যার জন্য বিভিন্ন অন্যায় কাজ করতেও আমার হাত 

কাপতো না সেই নুসরাতের ভাই অর্থাৎ আমার 

ভালোবাসার মানুষই আজ আমাকে হত্যা করার জন্য 

এদের পাঠায়।সত্যিই আজ খুব অনুতপ্ত হচ্ছে আমার 

নিজের করা অন্যায় ও পাপ কাজ গুলো করার জন্য।

দয়া করে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।


রুহির কথা গুলো শুনে আমি নিজেকে বহু কষ্টে শান্ত 

করিয়ে রুহি কে বললাম, ভুল আমারি ছিলো কি 

কারণেই বা তখন তোমার মতো এক জানোয়ার কে

অন্য জানোয়ারদের হাত থেকে বাঁচালাম!কখনো 

কখনো জানোয়ারদের সম্মুকে অন্য এক জানোয়ারকে

ও তুলে দিতে হয়।তুমি আমার জীবনটাকে ধ্বংসের 

শীর্ষ স্থানে পৌছাতে সাহায্য করেছো।সে তোমার সৎ 

বাবা তারপরও তিনি তোমাকে নিজের বাড়িতে থাকতে 

দিয়েছেন,খাইয়ে পড়িয়ে আজ তোমাকে এত বড় 

করেছেন আর এমনিতেও এত অন্যায় পাপ করার পরেও তুমি কি করে ক্ষমা চাইতে পারো?কি করে 

বাঁচার ইচ্ছে প্রকাশ করো আমার সম্মুখে।তোমার মতো 

মেয়েদের তো বাঁচার কোনো অধিকার নেই তাহলে তুমি 

এখনো কেনো বেঁচে রয়েছো, মরে কেনো যাচ্ছো নাহ??


কথাটা বলার পরপরই আমি রুহিকে নিজের সর্ব শক্তি 

দিয়ে ব্রিজ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে তীব্র স্রোতে বয়ে

চলা গভীর নদীতে ফেলে দিই।যে নদীতে পড়লে রুহির

বেঁচে ফেরাটা অসম্ভব একটা বিষয়।হয়তো এতক্ষণে 

রুহি নদীর তীব্র স্রোতে তলিয়ে গেছে অতল গভীরে।

অতঃপর আরো বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে 

থেকেই নিজেকে কোনো রকম শান্ত হিসেবে চিহ্নিত

করে রাত ১ঃ২০ এ নুসরাতদের বাড়িতে আসলাম।

করণ একটাই দ্বিতীয় পাপী কেউ তার উপযুক্ত শাস্তি 

প্রধান করে তাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া।বাড়ির 

ভিতরে প্রবেশ করতেই কেমন একটা শুন-সান অনুভব 

করলাম আমি।সাথে কোনো এক বাজে দুর্গন্ধও

আসছে আমার নাকের সম্মুখে।আরেকটু সামনে 

যেতেই দেখতে পেলাম,নুসরাত পায়ের উপর পা তুলে

সোফায় বসে আছে। আমাকে দেখতে পেয়েই নুসরাত 

মুচকি এক অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,


---যদি আজ তোমার কোনো ভাই থাকতো এবং সেই 

ভাই যদি কাউকে ধর্ষন করে হত্যা করতো তাহলে

তুমি ঠিক কি করতে শাহরিয়ার?


হঠাৎ নুসরাতের এমন অবাক করা কথা শুনে আমি 

একটু বিচলিত হয়ে উত্তরে বললাম,মেরে ফেলতাম।


---আমিও আমার পশু রুপি ভাই কে নিজের হাতে 

বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছি।


নুসরাতের এমন কথা যেন আমাকে বেশ অবাক করে দেয়,কি বলছো এসব তুমি?? 


---হ্যা!আজি জানতে পারলাম আমার ভাইয়ের ভয়ঙ্কর 

পশু রুপের সম্পর্কে।আজ যদি আড়ালে না থেকে

নিজের ভাইয়ের কথা গুলো না শুনতাম তাহলে হয়তো 

কখনো আমার ভাইয়ের জানোয়ার রুপ খানি সম্পর্কে 

জানতে পারতাম না।বেশ করেছি ওকে বিষ খাইয়ে 

মেরে ফেলেছি।ওর মতো নরপশুর বাঁচার কোনো 

অধিকার নেই,ওর মতো ভাই আমার থাকার চেয়ে না 

থাকাটাই অধীক উত্তম।


কথাটা বলেই নিজেকে বেশ শক্ত করে নুসরাত তার

রুমে চলে গেলো।দক্ষিণ দিকে পড়ে আছে 

জানোয়ারের লাশটা।নিজের রাগ আর সামলে নিতে 

না পেরে ওর নিথর শীতল দেহটাকেই ক্ষত বিক্ষাত

করে রাস্তার কুকুরদের মাঝে বিতারন করে আসলাম।

পরের দিন সকালে নুসরাতের ভাইয়ের ক্ষত বিক্ষাত 

লাশ ড্রেন থেকে পুলিশ উদ্ধার করেন।শহরের অনেক

মানুষই বলেছেন, নুসরাতের ভাই খুব ভালো মানুষ

ছিলেন।অনেক ভালো ভালো কাজ করতেন।জানি না

কে মেরেছে তবে ওনার অনেক শত্রু ছিলো।তাদের 

প্রত্যেকের কথা শুনে আমি প্রচুর হেসে ছিলাম সেদিন।

সবাই যদি ওর আসল রুপটা দেখতো তাহলে মনে 

হয় না কেউ আর তার নাম ঘৃনায় মুখে উচ্চারণ অবদি

করতো?পরিশেষে নুসরাতও এই বিষয়ে পুলিশ বা

কাউকে কিছু বলেনি।নিরবতাই নুসরাতের কাছে স্নেহ

মনে হয়ে ছিলো তাই হয়তো নুসরাত কারো কোনো 

প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সেদিন নিরবি ছিলো।


অতঃপর আমার আর নুসরাতের অনেকটা দিন খুব

ভালো ভাবেই কেটে যায়।সর্বশেষে সেদিন আজ এসেই 

গেলো যেদিন নুসরাতের ডেলিভারি হবে।সেদিন 

সৃষ্টি কর্তার কাছে খুব করে নুসরাত ও আমার সন্তান উভয়কেই চেয়ে ছিলাম।অনেক প্রার্থনা করেছিলাম 

কিন্তু সৃষ্টি কর্তা হয়তো সেদিন আমার প্রার্থনা শুনেননি।

আমার ভাগ্যে হয়তো সৃষ্টি কর্তা এটাই লিখে

রেখেছিলেন।


সেদিন অপারেশন থিয়েটারে নুসরাত এবং আমার 

সন্তান উভয়ই আমাকে এই রঙের পৃথিবীর বুকে

একলা ফেলে রেখে ধুর কোথাও চলে যায়।সেদিন

অনেক কেঁদে ছিলাম আমি।কিন্তু ভাগ্যের লিখন যে

আমাকে মেনে নিতেই হবে।সুতরাং অপূর্ণতাই রয়ে 

গেলো আমার জীবনের প্রতিটা গল্প।


চোখের জল গুলো মুছে নিজের অসমাপ্ত ডায়েরীটা

বন্ধ করে সোফা থেকে উঠে দাড়ালাম আমি।ধীর

পায়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রতিদিনের

মতো আজও আকাশ ভরা তারার দিকে নয়ন মেলে

তাকিয়ে একটা কথাই বললাম,প্রিয় মানুষ গুলো 

যাতে পরোপারে ভালো থাকে.....................


(সব গল্পই পূর্ণতা পায় না🙂)


____________সমাপ্ত_________________


   এমন আরও অনেক গল্প রয়েছে পড়ুন।