রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প | ভালোবাসার রোমান্টিক স্ট্যাটাস

 রোমান্টিক স্ট্যাটাস

রোমান্টিক স্ট্যাটাস

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে পাশে তাকিয়ে দেখি মীরা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।বালিশের নিচ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি দেড়টা বাজে।ব্যাপারটায় বেশ অবাক হয়েছি।যে মেয়ে রাত এগারোটার পরে চোখ খুলে রাখতে পারে না সে কি না এতো রাত জেগে মোবাইল দেখছে।হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ওকে ডাকলাম,


– " মীরা? "

– " কি হয়েছে, বল। "


ফোনে চোখ রেখেই আমার কথার উত্তর দিলো।মুখে হাসিটা লেগেই আছে।

– " কিরে তুই এখনও জেগে আছিস কিভাবে? "

– " এমনি ঘুম আসছে না,তুই ঘুমিয়ে পড়। "


মীরার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।পুরো কথোপকথনে মীরা একবারও মোবাইল থেকে চোখ সরায়নি।একটুখানি সন্দেহ মনে উঁকি দিলো।কিন্তু পুরো বিষয়টা কাল সকালে ভাবা যাবে মনে করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।

.

.

মীরা আমার ফুপাতো বোন।ছোটবেলা নিয়ে মানুষের রঙিন স্মৃতি থাকলেও মীরার রয়েছে কতোগুলো কালো অধ্যায়ের স্মৃতি।বাবা মায়ের আদরের মেয়ে হলেও সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।পাঁচ বছর পেরোতেই এক্সিডেন্টে বাবাকে হারালো।সুখী পরিবারটাকে গ্রাস করে নিলো একরাশ অন্ধকার।মীরার হাসিমুখটা মিলিয়ে গেলেও মায়ের ছায়ায় বড়ো হতে লাগলো।বাবার আদর থেকে বঞ্চিত মীরাকে ফুপি তার সবটা দিয়ে বড়ো করতে লেগেছিলেন।সেলাই মেশিন চালানো বাচ্চাদের পড়ানো উঠোনে সবজির বাগান করা কোনটাই বাদ ছিল না।সবকিছুর বিনিময়েও সে মীরার মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলেন।মীরাও বড়ো হতে হতে বাস্তবতা সম্পর্কে বেশ ভালো বুঝতে শিখেছিল।যে বয়সে আমরা হৈ-হুল্লোড় করে কাটিয়েছি,সেই বয়সে মীরা ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে অবসর যাপন করেছে।মীরা আর আমি সমবয়সী হলেও গুনের দিক দিয়ে আমি ওর নখেরও যোগ্য না।একই কলেজে পড়াশোনা করি,অথচ মীরার দুর্দান্ত রেজাল্ট আর আমি টেনেটুনে ক্লাস টপকিয়ে যাচ্ছি।


এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন মীরা হাসিমুখে বাড়ি ফিরছিলো।জিপিএ ফাইভ নিয়ে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছে।এবার হয়ত মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে মীরা।কিন্তু এবারও সময় ওর সঙ্গ দেয়নি।বাসায় ফিরে মীরা জানতে পারে ফুপির হার্ট-অ্যাটার্ক হয়েছে।এখন হসপিটালে ভর্তি।ছুটে গিয়েছিল কিন্তু শেষ বারের মতো মাকে খুশির খবরটা দিতে পারেনি।সেদিন মীরার কান্নায় পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছিল।


ফুপি মারা যাওয়ার পরে বাবা ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।সেই থেকে আমরা একসাথে আছি।সবাই আমার চেয়ে বেশী ওকে ভালোবাসলেও কোথাও একটা হীনমন্যতা কাজ করে ওর।সবসময় চুপচাপ থাকে।ভার্সিটিতে এডমিশনের পর হলে'ই থাকতে চেয়েছিল।কিন্তু আব্বু আম্মুর জোড়াজুড়িতে বাসায় থাকতে বাধ্য হয়েছে।কলেজে যখন আমরা সবাই মিলে আড্ডা দেই তখন মীরা গাছের নিচে একা ঘাপটি মেরে বসে থাকে।মাঝেমাঝে ক্লাস শেষে বলি চল শপিং করে আসি সবাই মিলে।তার উত্তর, – "তোরা যা আমি লাইব্রেরিতে বসি।ফেরার সময় আমাকে নিয়ে যাস"।অগত্যা ওকে ওর মতো ছেড়ে দিতে হয়।

.

.

.

সকালে ঘুম থেকে উঠে মীরাকে বিছানায় দেখলাম না।রুম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মুর সাথে রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছে।কাল রাতের ব্যাপারটা মাথা থেকে যাচ্ছে না।মীরাকে ইশারায় ডাকতেই আম্মু ধমক লাগালো।মীরার ম্যাচিউরিটি নিয়ে আম্মুর আক্ষেপের শেষ নেই।একই বয়সের হয়েও মীরা এতো কিছু বোঝে।সবকিছু সুন্দর করে সামলাতে পারে।অথচ আমি কেন এতো নির্বোধ।


মীরাকে মাঝেমধ্যে চুপিচুপি বলে,

– " মীরা,মা আমার।তনুকে একটু বোঝা।এতো বড়ো হয়েও এরকম উড়নচণ্ডী হয়ে থাকতে নেই।তোর মতো একটু শান্ত থাকতে বল।তুই কতো লক্ষী মেয়ে। "


মায়ের কথা শুনে মীরা মিষ্টি করে হাসে।মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়।সকালের নাস্তা করে মীরাকে টেনে ছাদে নিয়ে এসেছি।


ওকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম,

– " ছেলেটা কে?


মীরা একটু চমকালো আমার প্রশ্ন শুনে।কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,

– " কোন ছেলে? "

– " যার সাথে রাত দেড়টার সময়ও হেসে হেসে চ্যাটিং করা যায়। "


বলে একটু চোখ টিপ দিলাম।মীরার মুখে হালকা রক্তিম আভা ফুটে উঠলো।ফোনের লক খুলে একটা শ্যামবর্ন ছেলের ছবি আমার সামনে তুলে ধরলো মীরা।


– " নিবিড়। "


আমি চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে ওর দিকে তাকালাম।মেসেঞ্জার অপশনে গিয়ে চ্যাটস লিস্ট বের করে দিল।মেসেজগুলো দেখতে দেখতে আমার ছাঁদ থেকে লাফ দেয়াই শুধু বাকি ছিল।প্রয়োজন ব্যাতীত একটাও কথা না বলা মেয়েটা অপ্রয়োজনীয় বকবক করে গেছে ঘন্টার পর ঘন্টা,দিনের পর দিন।মীরা এতো কথা বলতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছিল না।


বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ওকে প্রশ্ন করলাম,

– " তুই এতো কথা বলা শিখলি কিভাবে? "

– " জানিনা,ওর সাথে কথা বলা শুরু করলে শেষ হতে চায় না।কখন যে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারি না। "


মীরার কথা শুনে মনে মনে একটু খুশিই হলাম।অবশেষে কেও একজন ওর একাকীত্ব ঘুচিয়ে দিতে পারবে।আবার চিন্তাও হচ্ছিল যদি ওর বিষয়ে সব জানার পরে পিছিয়ে যায়।মীরাকে সেই বিষয়ে দুএকবার সতর্ক করেছিলাম।কিন্তু মীরা জানালো, সে সবকিছু জানিয়েই তার সাথে কথা বলছে।


মীরার চঞ্চলতার পরিমান দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল।রাতজেগে চ্যাটিং করা,মাঝেমধ্যে লুকিয়ে ফোনে কথা বলা,হুটহাট মায়ের শাড়ি পড়ে ছবি তোলা।এসব স্বভাববিরুদ্ধ কাজগুলোই মীরা মনের আনন্দে করতে লাগলো।কারনে অকারনে হাসাহাসি করা উদাস নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা মীরার রুটিনে পরিনত হলো।ওর এহেন পরিবর্তনে আম্মু আমার দিকে সরু চোখে তাকায়।আম্মুর ভাবনা আমি ওকে ফুসলিয়ে আমার মতো বানিয়েছি।কিন্তু আম্মুকে কি করে বলি আমাদের মীরা ম্যাডাম প্রেমে পড়েছেন।


নিবিড় ভাইয়ার সাথে মীরার সম্পর্ক বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল।ভাইয়া জব করার কারনে খুব একটা দেখা হত না।টুকটাক ফোনে কথা বলা আর দিনভর চ্যাটিং করা।মীরা এতেই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিল।


এরমধ্যেই একদিন বিকেলে আমার মুখে মিষ্টি গুঁজে দিয়ে মীরা বললো,

– " নিবিড়ের প্রমোশন হয়েছে। "

– " এতো খুশির খবর শুধু মিষ্টি খাইয়ে দিলে হবে না।ভাইয়াকে বল ট্রিট দিতে। "


মীরা হেসে ফেললো।ওর চোখে অনাগত জীবনের খুশি দেখতে পাচ্ছিলাম।

.

.

অনার্স শেষ হওয়ার পর মীরা বাসায় নিবিড় ভাইয়ার কথা বলেছিল।মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে আব্বু আম্মু রাজি হলেও একটুখানি দুশ্চিন্তা সবারই ছিলো।মীরার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে যদি ওই বাড়ির সবাই সহজভাবে না নিতে পারে।এরকম ভেবে আব্বু ওনাদের পরিবারের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন।কিন্তু নিবিড় ভাইয়া আর তার ফ্যামিলি মীরাকে আনন্দের সাথে গ্রহন করেছেন।আজ মীরার মুখে তৃপ্তির হাসি লেগে আছে।সব হারানো মেয়েটা নতুন করে সবকিছু পেতে চলেছে।মীরার দিকে তাকিয়ে আম্মু আমাকে চিমটি কেটে বললো,


– " মীরার সাথে থেকেও কিছু শিখতে পারলি না।গর্ধভই থেকে গেলি। "


আম্মুর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম।আম্মু চোখ রাঙিয়ে আমার পাশ থেকে উঠে গিয়ে মীরাকে বুকে টেনে নিলো।


সমাপ্ত


-পথিমধ্যে(ছোটগল্প)

কলমেঃ নিমিশা_জান্নাত


ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প পড়ুন।