গল্প: কলঙ্কীনি | অবহেলার কষ্টের গল্প

 অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

আজ আমার স্বামী প্রমোশন পাওয়ার জন্য আমাকে বিক্রি করে দিলো তার বসের কাছে।আর তার বস হচ্ছে আর কেউ না আমার প্রাক্তন..


আজ দুপুরে কাজ করতে ছিলাম। আমার হাজবেন্ড পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বললো,,


আরিয়ানঃ আজ বাইরে ঘুরতে যাবো সারা বিকেল ঘুরে বাইরে হোটেলে রুম নিয়ে থাকবো,,রেডি থেকো পাগলি(এই বলে চলে গেলো)


তার কথায় আমি অবাক হলাম কারণ,,  তিনি আমাদের বিয়ের পর মেনেই নেয়নি আমাকে।খুব খুশি লাগছে,,তাই তারাতারি কাজ গুলো করে ফেললাম।


কাজ শেষ করে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে লাগলাম।হঠাৎ একটা মেসেজ আসলো তিনি দিয়েছেন।মেসেজে,,


"একটু সুন্দর করে সাজবে আর বেডের কোনায় একটা ব্যাগ রাখছি তার মধ্যে শাড়ি রেখেছি পরে নিও"


আমি তারাতারি ব্যাগটা নিলাম,, ব্যাগ খুলে দেখি নীল শাড়ির উপর গোল্ডেন কালারের কাজ করা,,,শাড়িটা এতো ভালো লাগলো যা বোঝাতে পারবোনা।তার প্রথম গিফট এটা।


খুব যত্ন করে শাড়ি পরলাম,,ম্যাচিং কানের দুল,,চুড়ি,নেকলেস আর চোখে কাজল,,চুল ফুলিয়ে বাঁধলাম..


আমি রেডি হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি কোন কিছুর কমতি আছে কিনা দেখছি।তিনি পেছনে এসে দাড়ালেন..


আরিয়ানঃ আয়শা তোমাকে তো অত্যান্ত সুন্দর লাগছে এইবার চলো বেরাতে হবে নয়তো লেট হয়ে যাবে..


আমিও বেরিয়ে পরলাম অনেক জায়গায় ঘুরলাম আজ।বিকেল গড়িয়ে রাত হতে আসলো।একটা হোটেলে নিয়ে গেলো আমাকে,,অনেক সুন্দর পরিবেশ ১০২ নম্বর রুম ছিলো আমাদের দুজনের জন্য।গিয়ে আমিই শকড কারণ বেডে হৃদয় বসে আছে মানে আমার প্রাক্তন..


আরিয়ানঃ স্যার দিয়ে গেলাম আমার দিকটা একটু ভাবেন,,প্রোমশন নিয়ে


আয়শাঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন আর একানে উনি কেন?


আরিয়ানঃ স্যারের কাছেই জিজ্ঞেস করে নিও(চলে গেলো গেট আটকিয়ে)


আমিও গেট ধাক্কা দিতে থাকলাম,,, আমার এক অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো বুকটা।


হৃদয়ঃ দরজা বারিয়ে লাভ নেই ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে গেছে তোমার হাজবেন্ড


কথাটা যেন বুকে এসে লাগলো,,,


আয়শাঃ কি বলছেন আপনি..


হৃদয়ঃ ঠিকি বলছি,,,কার সাথে বিয়ে করলে আশু যে তোমাকে শুধু প্রমোশন পাওয়ার জন্য তার বসের কাছে বিক্রি করে দিলো ছিঃ ছিঃ(আমার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে বলতে লাগলো)


আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে,,চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে,,নিজেকে আজ বোকা মনে হচ্ছে ছিঃ,,,কাকে ভালোবাসি আমি,, না প্রথম ভালোবাসা ঠিক ছিলো না প্রথম বিয়ে


হৃদয়ঃ সেদিন যদি আমাদের বন্ধুদের খুশি করতে তাহলে কিছুই হতোনা।আর কি জানো আশু আমি তোমাকে টাস করবো না।কারণ,, আমি জানি আজকের পর তোমাকে আমার কাছেই আসতে হবে...হা হা হা( নিক্রিষ্ট হাসি দিয়ে) আজকের পর থেকে এই দরজা পেরোলেই তুমি হবে বেশ্যা,,শুধু সময়ের অপেক্ষা।। 


এই বলে হৃদয় চলে গেলো বাট কাল সকালের আগে আর আমাকে ছাড়বেনা।।।


আসলে সময়টা ছিলো কলেজ লাইফ এ,,,তখন সে ভালো মানুষের অভিনয় করে আমার সাথে রিলেশনে জড়ায়।এইভাবে কলেজ থেকে ভার্সিটিতে গিয়ে তার আসল রুপ দেখতে থাকি। একদিন তো মেসেজের মাধ্যমে  তার কুরুচির প্রমাণ দেখান।তিনি তার বন্ধুদের সাথে ফুর্তি করতে বলেন আমি রাজি হয়নি সেই জন্য আমাকে যেখানেই পাবে মেরে দিবে।আমি বাঁচার জন্য বাড়ি থেকে বেড়ানো বন্ধ করে দি।তার মধ্যেই আমার বিয়ে ঠিক হয় আরিয়ানের সাথে হৃদয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি রাজি হতে বাধ্য হয় বাট আজ এই পরিস্থিতির শিকার হলাম আমি। বিয়ের পর জানতে পারি আমার হাজবেন্ডের চরিত্র ভালো নয়,,বিয়ের পরও বেডরুমে অনেক মেয়ে এসেছে আমার চোখের সামনে।কিন্তু আমি স্পিকলেস,, সৎ মা থাকলে তো এরকমই পরিবারে আমাকে বিয়ে দিবেন


আমি আল্লাহ কাছে কান্না করতে থাকি নামাজে। যাতে তিনি ভালো হয়ে যান এবং আমাদের সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয়।কিন্তু আজ তা হিতে বিপরীত হলো। কলঙ্কিত হয়ে গেলাম,,অন্যায় না করেও শাস্তি পাচ্ছি।


সকালে,,, 


হৃদয় আমার শশুড় বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো।।শশুড় বাড়িতে পা দিতেই শাশুড়ি বললেন কলঙ্কিনি অন্য জনের সাথে রাতে মুখপুড়িয়ে এ বাড়িতে পা দিবিনা,,বুঝলাম আরিয়ান লোকটা নিজের দোষ ঢাকতে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে।


আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো বাড়ি থেকে,,ফোন করে বাপের বাড়ি থেকে বলে দিলো বাপের বাড়ি মুখ হলেই আমাকে জবাই করবে।।সবই ছেড়ে দিলাম আল্লাহর উপরে,,আমি পুরো নিঃস্ব 


হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো হৃদয়ের নাম্বার থেকে,, 


"" তোমাকে আমার কাছেই পরাধীনতা শিকার করতে হবে আশু""


আমি মনে মনে ওয়াদা করলাম,,মরে যাবো তারপরও নিজেকে কলঙ্কিত করবো না।


হঠাৎ  একটা ছেলে এসে বললো গাড়িতে উঠেন,,আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম,,চিনিও না সে কে?? 


নাহহ,,আর কারোর উপর বিশ্বাস করবো না কিছুতেই না।এই বলে হাটতে লাগলাম।তিনি আবার বললো নাহলে আমার নাকি বিপদ হবে,,,কিসের আর বিপদের ভয় যা বিপদ তা তো হয়েই গেছে।আর পেছনে তাকালাম না তিনি পেছন থেকে এসে ঘাড়ে কি যেন ফুটিয়ে দিলো আমি সাথে সাথে  অজ্ঞান  হয়ে গেলাম তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই।


যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নুপুর আন্টিকে দেখলাম।এবং তাকে  জড়িয়ে কাঁদতে থাকলাম..(চলবে)


কলঙ্কীনি

পর্ব ০১


কলঙ্কীনি

পর্ব_০২


আমার কান্না দেখে নুপুর আন্টি বিভ্রান্তে পরে গেলো।বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়ছে তোর শুনলাম তোর স্বামী নাকি তোকে ডিভোর্স দিছে।


আমি এবার কিছুটা চমকে উঠলাম নুপুর আন্টি জানলো কোথা থেকে।কান্না কোন রকম থামিয়ে তার থেকে দূরে সরে আসলাম।


আন্টিঃ কি হয়ছে তোর বল না‌ মা..


আয়শাঃ নিশ্চুপ..


আন্টিঃ তুই তো আগে এই আন্টিকে সব বলতিস এখন কেন চুপ করে আছিস। 


আয়শাঃ আন্টিকে যদি সব বলে দি তাহলে তো তিনিও আমাকে। কলঙ্কিনি বলে তাড়িয়ে দিবে।এই নিকৃষ্ট মানুষগুলো তো আমাকে শেষ করে দিবে যেভাবেই হোক একটা আশ্রয় পেয়েছি,, সব বলবো না অল্প কিছু বলি(মনে মনে)


আন্টিঃ কি হলো বল??


আয়শাঃ তুমি তো জানো আমার পোড়া কপালের কথা,,আমার স্বামী আমার চোখের সামনে অন্য মেয়েকে নিয়ে রাত কাটায়ছে আরও অনেক কারণ আছে আন্টি যা আমি প্রকাশ করতে পারবো না।বাপের বাড়ি থেকে সাফ মানা করে দিছে ওখানে না যেতে সৎ মায়ে নাকি আমাকে জবাই করবে আমি কোথায় যাবো এখন(মাথা নিচু করে)


আন্টিঃ আমি থাকতে তুই কোথায় যাবি আমার কাছেই থাকবি..


আয়শাঃ কিন্তু আমি এখানে কিভাবে আসলাম


একজন ছেলে রুমে প্রবেশ করলো,,মনে পরলো এই তো সেই ছেলে যে আমাকে অজ্ঞান করে কোথায় যেন নিয়ে গেলো,, কে উনি??


নিমেষেই আবার বুকের মধ্যে ভয় হওয়া শুরু হলো।


ছেলেটিঃ আমি এনেছি আপনাকে..


আয়শাঃ আপনি কে??


আন্টিঃ আরে এই আমার ছেলে যার সম্পর্কে তোর কাছে গল্প করেছি।এইতো কয়েকমাস হলো বিদেশ থেকে এসেছে।আমি অসুস্থ ছিলাম তোকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো ও তোকে অনেক খুঁজেছে বাট পায়নি হঠাৎ তুই রাস্তায় পাগলের মতো বেড়াচ্ছিলি তাই ও তোকে অজ্ঞান করে এনেছে..


আয়শাঃ ওওও,,তো তোমরা কেমনে বুঝলে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে..


ছেলেটিঃ আসলে আপনি অজ্ঞান থাকা কালীন আপনার ফোনে আরিয়ান বলে একজনের ফোন আসে আমি রিসিভ করি বাট কথা বলিনা উনিই অনর্গল ডিভোর্সের কথা বলে কেটে দেন..


আয়শাঃ এই হলো আমার পোড়া কপাল,,এই জন্যেই বলে কোন কিছু বিবেচনা না করে কোন কাজ করা উচিত না(মনে মনে)


আন্টিঃ তুই রেস্ট নে,, বাবু চল এই রুম থেকে..


উনারা চলে গেলেন।আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না সব কি বলে দিবো আন্টিকে কিন্তু তারা যদি ভুল বুঝে তখন কি হবে আমার।এসব ভাবতে ভাবতেই আমার মাথা ব্যাথা প্রচন্ড আকারে শুরু হলো.


আসলে হৃদয়ের সাথে সম্পর্ক চলাকালীন নুপুর আন্টির সাথে পরিচয়।একটা ছোট এক্সিডেন্ট হয়ছিলো তো নুপুর আন্টিই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।আর আস্তে আস্তে গভীর থেকে গভীরে চলে আসে আন্টির সাথে সম্পর্ক,, আমার মা নাই সৎ মা আবার কতোটা ভালো হয়,,তিনিই আমাকে মায়ের আদর দিয়েছেন,,প্রায় সময় কলেজ থেকে আন্টির কাছে চলে আসতাম তার সাথে অনেক কথা,,আন্টি অনেক সুন্দর রান্না করতে পারে,, তিনিই শিখিয়ে ছিলেন,,আবার অনেক সময় বাড়ি থেকে খাবার আর জুটতো না আমার কপালে তিনি খাইয়ে দিতেন।কেমন জানি মুখ দেখে বুঝতে পারেন আমার কিছু হয়ছে।তিনিই আমাকে হৃদয়ের আসল চেহারা দেখাতে সাহায্য করেছেন।


তিনি ডিভোর্সি,,তার একটা ছেলে তাও পড়ালেখার জন্য বিদেশ চলে গেছে।ছেলেটি চান্জ পাওয়ার পর ও যেতে চায়নি আন্টিই জোর করে পাঠায়ছে।যতোদূর জানি আন্টির সাথে তার হাজবেন্ডের কোন সমস্যা ছিলো তা আন্টি কখনো আমাকে বলিনি এরিয়ে গেছেন।তাকে মাঝে মাঝে খুব রহস্যময়ী মনে হয়।


বিকেলে,,


আন্টি রুমে ঘুমাচ্ছিলেন হয়তো শরীরটা এখনো তেমন ভালোনা।আমি ছাদে এসে রেল ধরে দাঁড়ালাম। 


নীল আকাশে সাদা মেঘ তার সাথে কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে দেখার মতো দৃশ্য। গাছের পাতা বাতাসে নড়ছে আর আমার কপালের চুলগুলো ছুয়ে দিচ্ছে।ইসস বড্ড ইচ্ছে করছে রং তুলিতে একটা দৃশ্য আঁকি কিন্তু নিমেষেই আবার আগের চিন্তা চলে আসলো।আমার পাশে এসে যে কেউ দাড়িয়েছে তা আমি এখন বুঝতে পারলাম,,তার থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলাম আমি।


ছেলেটিঃ আপনার কথা আমি আম্মুর কাছে থেকে অনেক শুনেছি আপনার নাম আয়শা সবাই আশু বলে ডাকে তাইতো,,


আয়শাঃ জ্বী আপনার পরিচয়..


ছেলেটিঃ আমার নাম শুভ্র আহম্মেদ,, পড়ালেখা শেষ করলাম এবার চাকরি খোঁজার পালা,,,চাকরি হয়েই গেছে বিদেশে বাট একটু কয়টা দিন শান্তিতে থাকতে চায়,,তাই আম্মুকে দেখতে এসেছি।


আয়শাঃ ওও তো আম্মুর কথা মনে পরেনা আপনার!


শুভ্রঃ আমি আম্মুকে অনেকবার বলেছি আমার কাছে চলে আসো আসিনি আবার আমি দেশে ফিরতে চেয়েছি কিন্তু তাও আম্মু ফিরতে দেয়নি।কি জানি কি হয় তার..


আয়শাঃ কি আজব মা,,সন্তানকে আসতেও দেয়না আবার তিনিও যায় না তারপরও এতো ভালোবাসে।কেন জানি একটু গোয়েন্দা হতে ইচ্ছে করছে বাট গোয়েন্দার আগা মাথাই আমি জানিনা।কেমন জানি ঘটকা লাগারই কথা(মনে মনে)


শুভ্রঃ কি ঘটকা লাগছে তাই তো,,আমার ও লাগে মাঝে মাঝে,,বাট কিছু বলিনা কারণ আমি চায় না আম্মু আবার কোনো কষ্ট পাক..


আয়শাঃ আল্লাহ ইনি কেমনে জানলো(মনে মনে) আচ্ছা আপনার বাবার কোন খবর আপনি জানেন?


শুভ্রঃ নাহহহ,,কোন খোঁজ নেইনি।আমি তাকে অত্যান্ত হেট করি আর তার কথা বলবেন না কেমন..


আয়শাঃ সরি!


শুভ্রঃ ইট'স ওকে,, সন্ধ্যা হবে ভেতরে চলেন..


এই বলে তিনি আগে আগে আর আমি উনার পিছে পিছে যেতে লাগলাম।


রাতে খাওয়ার ইচ্ছা না হলেও আন্টি জোর করে খাইয়ে দিলেন।তারপর শুয়ে পরলাম কিন্তু ঘুম আর আসলো না।আমার আর আরিয়ানের বিয়ে একটা বছর হতে আসলো,, তারপরও আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কোন সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি।কিন্তু আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে অনেক মেয়েই কে বেডরুমে নিয়ে কাটিয়েছেন..


আন্টির সাথে বসে গল্প করছি এমন সময় আন্টির ছেলে শুভ্র আসলো তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো,,আমার বুকের মধ্যে কেমন জানি অনুভুতি হলো,, আরিয়ান বা হৃদয় কেউ না তো।আমাকে ভুল প্রমাণ করে কুরিয়ার আসলো তাও আবার ডিভোর্স পেপারের আমি থমকে গেলাম,,কি করবো একটা বছরের সম্পর্ক এইভাবেই মাটিতে মিশিয়ে দিবো নাকি ক্ষমা করবো..


যে হাজবেন্ড নিজের প্রমোশন পাওয়ার জন্য বসের কাছে বেঁচে দিতে পারে তাকে অন্ততো ক্ষমা করা যায় না।আন্টি ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বলে দিলো সে কিছুটা জানতো বাট শেষের খবরটা আর জানতো না।


আমিও আর ক্ষমা করলাম না একটা জেদ উঠে শেষ করে দিলাম ১ বছরের সম্পর্ক,,একটা সাইন করে ডিভোর্স দিলাম আরিয়ানকে।

"

"

কলঙ্কীনি

পর্ব ০৩


দুদিন হচ্ছে খাওয়া-দাওয়ায় অনেক অরুচি হয়ছে।হৃদয়ের ফোন আর মেসেজের জন্য শুভ্রকে দিয়ে সিমটা পাল্টে ফেললাম। আরিয়ানের সাথে এখন টোটালি কথা বলা বন্ধ। 


এখন নিজেকে বাঁচার উপযোগী করতে হবে।তাই শুভ্রকে বললাম আমাকে একটা চাকরি ম্যানেজ করে দিতে কিন্তু আন্টি এতে মানা করছে।কোন ভাবে বোঝাতেই পারছিনা আমি তাকে,,সে চায় আমি তার মেয়ের মতো তার পাশে থাকি বাট এই কথাটা আমায় সায় দিচ্ছেনা।


শুভ্র ও আন্টিকে বোঝাতে পারলো না,,তাই এখন বাড়ির রান্না বান্নার কাজ আমি কারণ আন্টি অনেক অসুস্থ। 


বিকেলে,,,


বসে বসে ফোন টিপছি,,,নিউ ফেসবুক আইডি খুললাম আগেরটা ডিলিট করে দিলাম।হঠাৎ আন্টি এসে হাজির।।আমার পাশে বসলো,,


আয়শাঃ কিছু বলবা..


আন্টিঃ কিভাবে বলবো?


আয়শাঃ এতো সংঙ্কোসবোধ করছো কেন বলো..


আন্টিঃ তোর একটা বিয়ে করা দরকার আশু।


আয়শাঃ (আন্টির কথায় আমি ফোন থুয়ে তার দিকে তাকালাম) কে বিয়ে করবে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে ?


আন্টিঃ একজন রাজি হয়ছে,,,কিন্তু তুই রাজি হহ মা,,একটা মেয়ে একা থাকতে নেই তুই এখনো অল্প বয়সী কখন কি হয়ে যায় কে জানে..


আয়শাঃ কিন্তু আন্টি,,আমি আর বিয়ে করতে চায়না,,বিয়ের সাধ মিটে গেছে আমার।


আন্টিঃ তুই এর আগে বিয়ে করেছিলি হৃদয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাও হৃদয়ের বন্ধু আরিয়ান কে।।


আয়শাঃ কিহহহ আরিয়ান হৃদয়ের বন্ধু (অবাক হয়ে) তুমি কি করে জানলে আর আমাকে কেন আগে বলোনি( নোনা জল পরতে লাগলো চোখ দিয়ে)


আন্টিঃ আমি জানলাম তোর বিয়ের ২ দিন আগে অনেক বার তোকে বলার চেষ্টা করেছি,,বাট তোর ওই সৎ মা তোর সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে দেয়নি।


আয়শাঃ তার মানে ওই মহিলা সব জানতো,,


আন্টিঃ হুম,,, ৪ লাক্ষ টাকা দিয়েছে এই কাজটা করার জন্য।হৃদয় এইদিয়ে চারজন মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে।তিনজন মেয়েকে তাদের জালে ফাসিয়েছে আর এখন তুই বাকি।


সব শুনে যেন আমার শরীর অবশ হয়ে আসছে,,কেউ যেন গলা টিপে ধরছে আমাকে।এতোটাই কষ্ট হচ্ছে যে আন্টিকে কিছু প্রশ্ন করতে ভুলেই গেছি।


আন্টি আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,আমার কষ্ট তিনিও সহ্য করতে পারছেনা।এই একটা মানুষ যে আমার মুখ দেখেই সব বুঝে যেতো।কেন এমন মানুষকে আমার মা হিসেবে পাঠালোনা।আমি কিছুটা স্বাভাবিক হলাম,,


আয়শাঃ তুমি যেন কি বলতে গেছিলে,,


আন্টিঃ তুই শুভ্রকে বিয়ে কর,,


আমি আরেক দফা অবাক হলাম শুভ্রর নামটা শুনে।এতো শিক্ষিত ছেলে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করবে তাও আবার ৫ দিনের পরিচয়ে,,বিষয়টা খুব অদ্ভুত।


আন্টিঃ কি হলো কিছু বলছিস না যে,,


আয়শাঃ আমাকে একটু সময় দেও,, আন্টি।। আমি একটু ভাবতে চায়..


আন্টিঃ শুভ্র রাজি,,, হুম ভাব কিন্তু ২/৩ দিনের মধ্যে। আমার হাতে ওতো সময় নেই,,


আয়শাঃ মানে,,


আন্টিঃ আরে,,, শুভ্র আবার বিদেশে যাবেনা,,তাই।আচ্ছা তুই চিন্তা কর আমি শুভ্রকে কফি দিয়ে আসি..


আয়শাঃ আচ্ছা,,


এই বলে চলে গেলো আন্টি।আমার মাথায় হাজার চিন্তা চাপ দিলো।আমার সাথে যা যা হয়ছে তা তো আন্টি বা কাউকেই বলা হয়নি,,এগুলো বললে হয়তো রাজি হবেনা এগুলোই বলি তাকে। সে তো আমার সাথে ঠিক মতো কথাও বলেননা।।।


যখন সবাই ঘুমিয়ে পরলো তখন আমি শুভ্র‌ সাহেবের রুমে গেলাম। রুম একবার খটখটাতে তিনি দরজা খুলে দিলেন।


আয়শাঃ আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো


শুভ্রঃ ওও আসুন।


আয়শাঃ আপনার কি ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম।।।


শুভ্রঃ নাহহ আমি কাজ করছিলাম,,বলুন কি বলবেন


আয়শাঃ আপনি বিয়েতে রাজি হয়েছেন


শুভ্রঃ হুম,,কেনো।।


আয়শাঃ আমি কিছু কথা বলতে চায় আমি


শুভ্রঃ হুম বলুন


আমি সব খুলে বললাম তাকে।বলতে বলতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি এসেছে খেয়াল করিনি।


আয়শাঃ আমি চায়না আপনার জীবনটা নষ্ট করতে,,আপনি যদি আন্টির কথায় রাজি হন তাহলে আমি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো কাব্য পেইজে সব পাবেন


এই বলে আমি চলে আসতে লাগলাম তিনি পেছন থেকে ডাকলো।


শুভ্রঃ আমি এই বিয়ে রাজি আর এই  নিন(একটা রুমাল এগিয়ে দিয়ে)


আমি তার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি এতো কিছুর পরও তিনি রাজি।আমার হাতে তিনি রুমাল ধরিয়ে চোখ মুছতে বললো।


শুভ্রঃ এতো কিছুতে আমি তোমার দোষ কোথাও খুঁজে পেলাম না।আমার মায়ের ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা,, তুমিও রাজি হয়ে যাও আমি সবোর্চ্চ দিয়ে তোমাকে আগের মতো করবো।


আয়শাঃ একটা মানুষ কি এতোটা ভালো হতে পারে,,আমার বিশ্বাসের বাইরে।কারণ আজ পর্যন্ত যাদের ভালো ভেবেছি তারাই আসল রুপ দেখাইছে। তাই একটা ভয় মনের ভেতর কুরে কুরে খাচ্ছে আমাকে(মনে মনে)


শুভ্রঃ জানেন আমার আম্মু কিন্তু ডিভোর্সি,,জানিনা কি কারণ??কে আমার বাবা ছিলেন??  আমি আপনাকে বিয়ে করতে চায়,,কারণ আপনার তো কোন দোষ নেই আপনাকে আরেকটা সুযোগ পাওয়া উচিত,, বাকিটা আপনার ইচ্ছা।আমি চায় আপনি আপনার মতামতকে গুরুত্ব দিতে শিখেন(একটা হাসি দিয়ে) আর ঘুমিয়ে পড়ুন,,এসব বিষয়ে আর ভাবতে হবেনা..


আমিও তারপর চলে আসলাম।ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানা নেই।কেমন জানি শান্তি ফিল হচ্ছে।


সকালে,,


ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে,, নিচে চলে আসলাম,, এসেই আন্টির একই প্যাচাল কি ভাবলি বল।


আমিও বিয়েতে মত দিয়ে দিলাম।কেন রাজি হলাম তার কোন নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারবোনা। কেউ জানলে আমাকে নিয়ে সমালোচনা করবে কারণ ৩দিন আগে ডিভোর্স পেপারে সাইন করলাম আর ৫ দিনের পরিচয়ে একজনকে বিয়ে করবো।জানিনা ভাগ্য আমাকে আর কতো দূর অবধি টানবে।


আন্টি খুশির ঠেলাই আজই বিয়ে ঠিক করে দিলো রাতে,,,,


কলঙ্কীনি

পর্ব০৪


শুভ্র বাড়িতে এসে আন্টির পাগলামো দেখে অনেক রাগ করে।সে বলেই দিছে একমাসের আগে তিনি বিয়ে করবেন না,,আমাকে সে আরও ভালোভাবে চিনতে চায়।


আন্টিও মন খারাপ করে রেখেছে বাচ্চাদের মতো।রাতে ডিনার ও পর্যন্ত করলো না দরজা বন্ধ করে রাখলো,,শুভ্র ও বাধা দিলোনা।ঠিকি তো  ৫ দিনে পরিচয়ে কেউ বিয়ে করে।আমারও কোনো খাওয়ার রুচি হলোনা এক গ্লাস পানি খেয়ে রুমে চলে আসলাম।


এই কয়েকদিনে বুঝতে পারছি,,আমি আর আগে মতো নেই।আঘাত পেতে পেতে পাথর হয়ে গেছি।আমি যে আরিয়ান ও হৃদয়ের উপর রিভেন্স নিবো ওতোটাও সাহস নেই কারণ,, আমি মেয়ে হাজার চিন্তা মাথার মধ্যে আসলেও তা বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন।মেয়ে মানেই সব কিছু হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখা যা ছোটবেলা থেকে করে আসছি।আল্লাহর কাছে সব বিচার তুলে রাখলাম তিনিই আরিয়ান ও হৃদয়ের বিচার করবে তার সাথে সেই মহিলাকেও।খুব ইচ্ছে একটা ছোট পরিবার হবে আমি মা আর আব্বু,,আমাকে অনেক আদর করবে এটাই আমি চায় কিন্তু তা....


হঠাৎ  গেট খটখটের আওয়াজ আসলো আমি গেট খুলে দেখলাম শুভ্র এসেছে।আমিও ভিতরে আসতে দিলাম তিনি নাকি কিছু কথা আমাকে জিজ্ঞেস করবে।


আয়শাঃ জ্বী বলুন আমার সম্পর্কে কি জানতে চান


শুভ্রঃ আসলে,,, একটা মেয়ে এতো কষ্ট পাওয়ার পর এতোটা শান্ত কি করে থাকতে পারে বলতে পারেন যেন কিছুই হয়নি??


আমি তার কথা শুনে ফুল হাতা জামার হাতা গুছাতে লাগলাম কনু পর্যন্ত উঠিয়ে তাকে দেখালাম। তিনি আমার হাত দুটো দেখে অবাকের ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছি।


শুভ্রঃ এগুলো কিভাবে হয়ছে আপনার??


আয়শাঃ আপনাকে পুরো ঘটনায় বলি তাহলে।।।পূর্ণিমার রাতে হঠাৎ আমার মায়ের প্রসব ব্যাথা ওঠে,,,তখন কিছু কুসংস্কার ছিলো এই রাতটা নিয়ে। কেউ গর্ভবতী নারীকে নিয়ে বাইরেই যেতে চায়না।আব্বু যখন বাড়িতে ফেরে তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছিলো খুব তারাতারি এসব বিপত্তি সরিয়ে আম্মুকে একটা ক্লিনিক এ ভর্তি করা হয়। পরিচিত ডাক্তার ছিলো তিনি আম্মুর ডেলিভারি করে কিন্তু আমার আম্মু আর সেই দিন চোখ খুললো না আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা গেলেন।আব্বুও আমাকে সহ্য করতে পারতো না কারণ আব্বুর লাভ মেরেজ ছিলো।তিনি ভেবেছিলেন আমার জন্য আম্মু মারা গেছেন।তার কিছু মাস পর আব্বুকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হলো। মেয়েটা ছিলো গরিব,,সব মেনে বিয়ে করলেন আব্বুকে।আব্বু তার কয়েকদিন পরই আর্মিতে যোগ দিলেন আর আমি বড় হতে লাগলাম।যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন থেকে সৎ মায়ের অত্যাচার শুরু হলো আমি কোন অন্যায় করলে একটা শাস্তি তা হলো গ্যাসে খুন্তি গরম করে আমার হাতে চেপে ধরতো আমি চিৎকার করলেও ছাড়তেন না তিনি।


একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেওয়ার পর আবার শুরু করলাম,,,,,


জানেন হাতের জ্বলার কারণে অনেক বার জ্বর চলে আসতো,,,আব্বু আমার সাথে কথা বলতো না ছুটিতে আসলেও।আল্লাহ কাছে শুধু অভিযোগ করতাম কেন একটা সুস্থ পরিবার আমার দিলোনা। আমি ভেতর ভেতরে পুড়ে শেষ হয়ে গেছি তারপর আসলো হৃদয়ের বেইমানি।আমি এর মাঝে একবার সুইসাইড করারও ট্রাই করছিলাম বাট আমার বোন শশির জন্য পারিনি।এখন আমার এমন এক অবস্তা হাজার অত্যাচার করলেও আমি সবার মাঝে হাসতে শিখে গেছি।


আমার জীবনী শুনে আজ আমি আর কাদলাম না কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কয়েকবার গড়িয়ে পরেছে পানি।তিনি আর এক সেকেন্ডের জন্য ও আমার রুমে দাড়ালো না কারণটা আমিও বুঝতে পারলাম না।হয়তো এখন তিনিও আমাকে ঘৃণা করবেন


সেই রাতেও আমার চোখে ঘুম নামক জিনিসটা আসলো না।আচ্ছা,,,আমি সত্যিই অপয়া না হলে এতো কষ্ট আমাকেই কেন দেখে।


সকালে,,,,


ঘুম ভাঙ্গলো দরজা খটানোর শব্দে তাড়াতারি উঠে দেখি আন্টি। তিনি একটা নতুন জামদানী শাড়ি আর কিছু জুয়েলারি আমাকে দিয়ে জলদি পড়ে আসতে বললেন।আমি কিছুই বুঝলাম না,, তাকে কিছু বলার আগেই তিনি ছুটলেন।


বিছানায় কিছুক্ষণ বসে চিন্তা করলাম কেন এমন করলো তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে শাড়ি গহনা পরে নিলাম।এবার নিচে যাবো কেমন জানি লাগছে,, হাজার সংঙ্কোচ বোধ দূর করে নিচে গিয়ে আমি আমি শকড কারণ শুভ্র বরের বেশে বসে আছে পাশে যতোসম্ভব কাজি আন্টি মিষ্টি রাখলেন আমাকে দেখে নিচে নামিয়ে আনলেন এবং শুভ্রর পাশে বসিয়ে দিলেন।শুভ্রের দিকে তাকালাম তিনি একটা মুচকি দিলেন।


সকাল সকাল করে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো আমার।যে শুভ্র একমাস টাইম নিছিলো সেই শুভ্র একটা দিন যেতে পারলো না বিয়ে করে নিলেন একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না।আন্টি তো মহা খুশি। 


সকালে বিয়ের কারণে আমি চেন্জ করে আন্টির হাতে হাতে কাজ করতে লাগলাম।কেমন জানি আজব লাগছে কিছুক্ষণ পর নিজের রুমে এসে গেট বন্ধ করে দিলাম।বুকের মধ্যে যেনো ছিড়ে যাচ্ছে কেন এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা না হলেই ভালো হতো।আমি আরিয়ানকে যে বড্ড ভালোবাসি যতোই তিনি আমার প্রাক্তন হক না কেন,, হাজার অন্যায় করুক। ভালোবাসায় ধোকা পাওয়ার পর আবারও কাউকে ভালোবেসে ছিলাম আমি।আজ সেইদিনের মতো কষ্ট হচ্ছে...


সেদিন রাতে,,


আরিয়ান তার রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় সেখানে অন্য নারীর সাথে সারারাত কাটায় তার দরজার পাশে আমি বসেছিলাম।নাহহ,, আমি তো কম চেষ্টা করিনি তাকে পাওয়ার সংসারটা টেকানোর।।। কেন সবসময় সংসার টিকানোর ভাড় মেয়েকেই দেওয়া হয়???কেন মানিয়ে নেওয়া শিখিয়ে দেয়??


এসব ভাবতে ভাবতে বিছানার সাথে শরীর এলিয়ে দিলাম।তার কিছুক্ষণ পর ঘুমের দেশে পা রাখলাম,,,আজ সব ক্লান্তি এতোই ছিলো যে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন বিকেলে।বাইরে আন্টি টেনশনে পাগল হয়ে উঠেছে শুভ্রও বাড়িতে এখনো ফিরিনি।আমি গেট খুলে আন্টির কাছে যেতে না যেতেই তিনি ছটফট করে উঠলো।খুব কষ্টে সামলালাম


রাত হয়ে গেলো তার এখনো আসার নাম নেই আন্টি তার রুমটা পরিপাটি করে দেখেছেন।বাসররাতের জন্য যেটা শুনতেই আমার ঘৃণা শুরু হতে লাগলো কেন জানিনা।


তিনি  ১২ টায় ফিরলেন আন্টি চিল্লা চিল্লি শুরু করলো তার উপর।তারপর রুমে আসলো আমি বসে ছিলাম।তিনি একটা বালিস আর কাঁথা সোফায় রাখলো আর বললো,,


শুভ্রঃ হয়তো এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী,, কিন্তু আমি জানি তোমার মনের অবস্হাটা কেমন চলছে।আমি তোমার উপর অধিকার সেদিনই দেখাবো যেদিন তোমার মনে আমি জায়গা করে নিতে পারবো


এই বলে তিনি সোফায় শুয়ে পরলেন।তার এইসব কথায় আমিও স্বস্তি পেলাম।।। একটু হালকা লাগছে।হঠাৎ মাথায় এলো,,


আয়শাঃ আচ্ছা হৃদয়ের বিষয়ে আন্টি এতো কিছু জানলো কিভাবে আর কিভাবে বুঝলো হৃদয় মহিলাটাকে ৪ লাক্ষ টাকা দিছে যাতে আরিয়ানের সাথে আমাকে বিয়ে দিবে।নাহহ,, কিছুতেই আমার হিসেবটা মিলছেনা।কাল  সব জানতে হবে আন্টির থেকে।


আন্টির গেট কখন থেকে ধাক্কাচ্ছি কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিনা।নাহহ আন্টি তো সেই ফজরে উঠে আজ কি হলো অসুস্থ না তো।


আমি শুভ্রকে এসে সব বললাম তিনিও কয়েকবার ধাক্কালেন এবারো কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না।শুভ্র এবার অস্তির হতে লাগলেন।


তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন গেট ভাঙ্গবেন যেই বলা সেই কাজ,,, জোরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে কিছুক্ষণ পর গেট খুলে গেলো।গেট খুলে যা দেখলাম তা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা,,,চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো।।।কেন আমার সাথেই এমন হয়।।শুভ্র চিৎকার করে ভেতরে ছুটে গেলো


ফ্যানের সাথে আন্টির দেহ ঝুলছে।শুভ্র আমাকে ডেকে আন্টিকে আমি আর শুভ্র মিলে নামালাম।আন্টির শরীর একদম ঠান্ডা।শুভ্র কান্নায় ভেঙ্গে পরলো,, আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরতেই আছে।।


কেন করলো সুইসাইড আন্টি,,তার মানে এই কাজ করার জন্যই আমার আর শুভ্রের বিয়েটা এতো তারাতারি দিলো।সেদিনের কথা হুট করে মনে পড়লো,, 


"আমার হাতে বেশি সময় নেই"


এই কথা দ্বারা এটা বোঝালো আর আমি বুঝতেই পারলাম না। কাব্য পেইজ


ইতিমধ্যে প্রতিবেশিরা খবর পেয়ে দেখতে এলো,,সবার মুখে একই কথা "আন্টিতো অনেক ভালো ছিলো,,এমন কাজ করলো কেন"


তারপর সবাই মিলে আন্টিকে গোছল করানো শুরু করলো,,আমার মনে হচ্ছে আমার আত্না দেহ থেলে পালিয়েছে,,, আন্টির এমন কাজে আমি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।


খাটিয়া চলে আসলো আন্টিকে শুইয়ে দেওয়া হলো আমি শেষ মুখটা দেখে নিলাম কি নিঃস্পাপ লাগছে তাকে।


তারপর এক মাথা খাটিয়া শুভ্র ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।।ছেলেটা এতোটাই কষ্ট পেয়েছে যে এখনো পর্যন্ত একটা কথাও মুখ থেকে বের করিনি।বিয়ের পরের দিন যদি জানতে পারে তার মা সুইসাইড করেছে তাহলে তার কতোটা ধাক্কা লাগতে পারে।


সবাই চলে যাওয়ার পর আমি আন্টির রুমে গিয়ে আন্টির একটা ছবি ধরে কাদতে লাগলাম।হঠাৎ টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেলাম।কাগজে লেখা ছিলো,,


"" আমার দায়িত্ব শেষ,,,আয়শা মা তোর উপর আমি শুভ্রের দায়িত্ব দিলাম।আমি কেন এই কাজ করলাম তা আর বলতে পারলাম না।অনেক আগেই কাজটা করতাম,,কিন্তু শুভ্র মুখ চেয়ে করতে পারিনি।এখন আমি নিশ্চিত, খেয়াল রাখিস ছেলেটাকে,,মাফ করিস"


এই চিঠি টা পড়ে এখন যেন মাথার মধ্যে কেমন জানি হতে লাগলো..


কলঙ্কীনি

পর্ব০৫ এবং শেষ পর্ব


আজ আন্টি মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ হতে লাগলো।ইতিমধ্যে শুভ্রের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে,,এমনিই কম কথা বলতেন এখন আরও কম বলেন।আঘাতটা যে অনেক গভীরে গিয়ে লেগেছে।ছোটবেলা থেকে ছেলেটি পিতৃহারা এখন মা ও আর নেই।


তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাকে নিয়ে তিনি বিদেশ ফিরবেন আর দু-একদিনের মধ্যেই।আমার খুব একটা ইচ্ছা নাই,,আসলে  মাতৃভূমির প্রতি তো একটা টান থাকে।একটা একদম অপরিচিত জায়গায় কেমনে থাকবো।তারপর তিনি নাকি ওখানে গিয়ে চাকরিতে জয়েন্ট করবেন,,আর তার থেকে বড় কথা আন্টির একটা স্মৃতি এই বাড়িতে আছে এটা ফেলে কি করে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু কিছু করার নাই তার ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা আমার কাছে।তাকে যে আগলে রাখতে হবে আন্টির শেষ ইচ্ছার মতো।


বিদেশ যাওয়ার সময় একটা এলবাম আর আন্টির ডাইরিটা নিয়ে আসলাম।যখন এর আগে আন্টির সাথে পরিচয় ছিলো তখন আন্টি এলবাম দেখাতেন কিন্তু তার ডাইরিটা একদমই ছুতে দিতেননা।হয়তো বিদেশ গিয়ে তার ডাইরির কিছু অংশ  পড়ে সময় কাটাবো।


বর্তমানে,,,


শুভ্র চাকরি করে খুব ক্লান্ত হয়ে যেতো।তাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরতো এটাই ছিলো তার রুটিন। মাঝরাতে তাকে ফুপিয়ে কাঁদতেও শুনেছি,,হয়তো তার মধ্যে একটাই প্রশ্ন কেন করলো এমন মা।


আমার আর তার মধ্যে এতোটুকুই পরিবর্তন হয়েছে যে আমরা একই বেডে ঘুমাই এর বেশি না।


এমনি একদিন রবিবার,,


ছুটির দিন শুভ্র ব্রেকফাস্ট করে সোফায় বসে টিভি দেখছে,,হঠাৎ তার নজর গেলো সেই এলবামে তিনি টিভি বন্ধ করে এলবাম নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন।তার মায়ের ছবিটা দেখতেই তিনি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন,,আমি বুঝতে পেরে তার পাশে গিয়ে বসে তার কাধে হাত দিলাম তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।এই প্রথম তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন আর কাদতে লাগলেন আমিও আর বাধা দিলাম না।


আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ভাবটা আসতে আসতে এখন প্রোপারলি আমরা স্বামী-স্ত্রী। কেউ যে একটা ডিভোর্সি নারীকে এতোটা ভালোবাসতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা।


তিনি রাতে বসে ফোন ঘাটছেন আমি এসে বললাম,,


আয়শাঃ এখনো ফোন ঘাটছেন


শুভ্রঃ আরে একটা গল্প পড়ছি


আয়শাঃ আপনিও গল্প পড়তে ভালোবাসেন


শুভ্রঃ হুম,,তুমি


আয়শাঃ আমিও আচ্ছা,, আপনি (তানিশা_ঈশু) এর গল্প পড়েছেন


শুভ্রঃ হুম বেশ ভালোই লাগে।।


আয়শাঃ আমারও।।।এবার ফোন রাখেন,, আর ফোন নাড়বেননা চলুন ঘুমাবো


শুভ্রঃ তুমি ঘুমাও


আয়শাঃ সত্যি তো( ভ্রু কুচকে)


শুভ্রঃ সরি বউ,,চলো  আমিও ঘুমাবো,, লাভ ইউ


তার এমন কান্ড দেখে আমার হাসি পেলো।তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।


আন্টির ডাইরিটা পড়ে খুবই কষ্ট লাগলো।শুভ্রের বয়স যখন মাএ একমাস তখন আন্টি ধর্ষিত হয় তার জন্য আঙ্কেল আন্টিকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।অল্প বয়সে এতো বড় ধাক্কা পেয়ে আন্টি মানসিক রোগী হয়ে গেছিলো।তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।আর শুভ্রকে বড় করে তুলছিলো তার নানু।যখন ওর বয়স নয় মাস তখন আন্টি সুস্থ হয়ে কিছুটা স্বাভাবিক। তারপরও  দুবার সুইসাইডের চেষ্টা করছে ধর্ষণের বিবরণ মনে পরলে।


তিনি কখনোই শুভ্রকে জানতে দেয়নি যাতে সে ধর্ষিতা মা হিসেবে চোখে না দেখে।এইদেশে তার মাকে নিয়ে কিছু শুনতে হয় তাই তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়।তার শেষ ইচ্ছা ছিলো,,ভালো একটা মেয়ের হাতে শুভ্রকে দিয়ে তিনি বিদায় নিবেন কিন্তু তার বিদায় নেওয়ার পথটা অন্যায়ের।


১ বছর পর,,,


আমি এখন সংসারী মেয়ে,,,প্রতি সানডেতে আমার বর আমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়।শুভ্র অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।এখন আমাদের সম্পর্কটা শুধুই ভালোবাসার।


আর বাকি থাকলো আরিয়ান,,হৃদয় আর সৎ মায়ের।মনে পড়ে কি,, আমি তাদের শাস্তি আল্লাহ উপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম তাদের শাস্তি দুনিয়ার উপর থেকে হয়ে গেলো হয়তো সময়ের অপেক্ষা। 


১/ হৃদয় ধর্ষণ আর ঘুস এর জন্য পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিলো,, তার ফাসি হয়েছে,, তার করা অপরাধ,, আর যে তিনটা মেয়েকে নষ্ট করছে তারাও কেস করে তাই তার আর দুনিয়া দেখা হলো না।


২/ আরিয়ান এক্সিডেন্টে তার দু-পা হারিয়েছে,,সারাজীন হাটার ক্ষমতা হারিয়েছে।এখন সে বোঝা ছাড়া কিছুই  না


৩/ বাবা সব কিছু জানার পর সৎ মাকে ডিভোর্স দিয়েছে।আমার বাবা সব ভুল বুঝতে পেরেছে।এখন সেই মহিলা পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।


এটাই হচ্ছে নিয়তি,,আমাকে কলঙ্কিনি বানাতে গিয়ে তাদের পুরো জীবন শেষ হয়ে গেলো।তখন আমি ছিলাম দুর্বল আর এখন আমি সুখী,,সাহসী।


আর একটা বছর পর বাড়ি ফিরছি।এখন প্লেনে জানালা দিয়ে বাইরের অংশ দেখছি আর শুভ্র আমার কাধে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

"

"

"

"

"

"

        ❤💓সমাপ্ত💓❤ 


পর্রবের আরও গল্প পড়ুন।