একটি মেয়ে কি কান্ড করলো পড়ুন | প্রচুর হাসতে হবে

 বাঁচতে হলে হাসতে হবে

বাঁচতে হলে হাসতে হবে

'ভাইয়া বাইট্টা কালারের প্লাজু আছে?'

 কিউট, হিরোইন, অপ্সরী, লীলাবতী, পরীর মতন একটা মেয়ে কাস্টমারের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। 

জীবনে বহুত কালারের নাম শুনছি কিন্তু বাইট্টা কালারের নাম এই প্রথম শুনলাম। 

তাও আবার এত কিউট একটা মেয়ের মুখ থেকে। বললাম....

.

--আসলে আপু এরকম কালারের নাম এই প্রথম শুনলাম।

.

-কি বলেন এসব?

.

--জি আপু, আপনি বসুন। 

আমি বের করছি দেখি আছে কিনা।

.

-আচ্ছা বের করুন।

.

দোকান হচ্ছে আমার মামার। মামার বাসা পাবনায়। আমি বেড়াতে এসেছি এখানে। মামার কথামতো দু'একদিন তার সাথে দোকানে বসছি। মামা একটু বাজারের ভিতরে গেছেন তাই আমি একাই সামাল দিচ্ছি। কিন্তু এই মেয়ের কথা শুনে টাস্কি খেয়ে বসে আছি। দোকানে যতগুলো প্লাজু আছে সব বের করলাম। বললাম....

.

--দেখেনতো এগুলোর মধ্যে বাইট্টা কালার আছে কিনা?

.

মেয়েটা এক এক করে সব দেখলো। মুখটা মলিন করে বলল....

.

-কই ভাইয়া বাইট্টা কালারের প্লাজুতো পেলামনা।

.

--হয়তো শেষ হয়ে গেছে আপু।

.

-আচ্ছা তাহলে অন্য কালারের একটা বের করুন।

.

--কি কালার?

.

-এই মনে করেন, পিংকের মধ্যে হালকা গর্জিয়াছ দেখতে কমলা কমলা মনে হবে, পরলে সবাই ভাববে নীল রং এর প্লাজু।

.

মেয়েটির কথা শুনে আমার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো। "পিংকের মধ্যে হালকা গর্জিয়াছ দেখতে কমলা কমলা মনে হবে পরলে সবাই ভাববে নীল রং এর প্লাজু।" এ কেমন কালার? কালারের মায়রে বাপ। এ মেয়ে যে আমার মাথা খারাপ করে দিবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললাম....

.

--আসলে আপু আমাদের এখানে তেমন কোন কোয়ালিটি নেই। আপনিই বরং নির্দিষ্ট কোন কালারের নাম বলুন। এই ধরুন লাল, নীল, কালো, হলুন, বেগনি এই ধরনের কালার।

.

-এগুলোতো কমন কালার। 

.

--আচ্ছা তাহলে অন্য কালারের নাম বলুন।

.

-তাহলে চুকা কালারের প্লাজু দিন একটা?

.

--চুকা কালার আবার কি?

.

-এ মা, আপনারা তো মিষ্টি কালারের কথা বলেন। তাই আমি মিষ্টির বিপরীত চুকা কালারের কথা বললাম। বের করেন চুকা কালারের প্লাজু।

.

--দেখুন আপু আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন না। আসলে মিষ্টি হলো এমন একটা জিনিস যারসাথে কালারের একটা সাদৃশ্য আছে। কিন্তু চুকা ফুকা কোন কালার নেই। 

.

-তাহলে আরো কোয়ালিটি আছে সেগুলো দেন।

.

--আপনি ভালো করে বলুন কি চানন।

.

-আচ্ছা এক কাজ করুন। পান্তা ভাতের সাথে পেঁয়াজ, কাচা মরিচ মাখিয়ে সেখানে মাংশের ঝোল মাখালে যেমন হয় ঠিক তেমন কালারের প্লাজু দিন।

.

হারামজাদি বলে কি। এতো দেখছি সাক্ষাত পাগলি। মাথা টাথা ঠিক আছেতো। নাকি পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে। নাহহহ...দেখতেতো মার্কা মারা সুন্দরী। পাগলি হবে কেনো? কি জানি। বললাম.... 

.

--সরি আপু ওরকম প্লাজু নেই। আসলে আপনার কথামতো প্লাজু হবেনা। অন্য কিছু দেখতে পারেন।

.

-আচ্ছাদ তাহলে সিম্পল একটা প্লাজু দেন।

.

--কি কালার?

.

-ঠ্যাং ভাঙ্গা কালার আছে না? অমন দেখে সুন্দর একটা প্লাজু দেন।

.

মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো। ঠ্যাঙ ভাঙ্গা আবার কেমন কালার। মনে মনে কালারের চৌদ্দ, পনেরো গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম। মন চাচ্ছে চুলের মুঠি ধইরা উরাধুরা কিলাই। কিন্তু নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলাম। বললাম....

.

--আপু প্লাজু বাদ দিন অন্য কিছু যদি নেন তাহলে বলেন।

.

-কোনো ঠ্যাঙ ভাঙ্গা প্লাজু নেই? 

.

--না আপু, ঠ্যাং, পাও, হাত, মাথা কোন ভাঙ্গা কালার-ই নেই।

.

-ও তাহলে আরর কি করার।

.

--অন্য কিছু নিবেন?

.

-আচ্ছা টিয়া রং এর গাউন বের করেন।

.

এইতো ফইন্নি লাইনে আইছে। তাড়াতাড়ি করে টিয়া কালারের একটা গাউন বের করে দিলাম। হাতিয়ে হাতিয়ে কি যেন দেখছে। বললাম....

.

--এটা চলবে, সুন্দর কিন্তু। চাইলে নিতে পারেন আপনাকে দারুণ মানাবে।

.

-আসলে এটার ছাপ গুলো কেমন জানি। 

.

--যেমন?

.

-পিংকের মাঝে ছোট ছোট মুরগীর বাচ্চার পায়ের ছাপ থাকলে আরো ভালো হতো। আচ্ছা দেখেনতো ওরকম ছাপ ওয়ালা কোন গাউন আছে কিনা।

.

--সরি আপু ওরকম ছাপ ওয়ালা গাউন নেই। এগুলো এইরকমি।

.

-তাহলে গাউন বাদ দিন, থ্রি-পিচ বের করেন।

.

হায় আল্লাহ এই মেয়ে কি কিছু কিনবে নাকি শুধু আমায় খাটুনি করাবে। মনে মনে বললাম.. 'হে আল্লাহ তুম মুঝে ধৈর্য্য দিয়ে, নইলে এই মেয়েকে মুই পিটুঙ্গি।' অনেক গুলো থ্রি-পিচ বের করে দিলাম। মেয়েটা মুখ কালো করে বসে আছে। মনে হচ্ছে পছন্দ হয়নি। আশে পাশে লাঠি খুজলাম। পেলাম না, যাক মেয়ের কপাল ভালো। বললাম.....

.

-এগুলো পছন্দ হয়নি?

.

--না ভাইয়া আসলে থ্রি-পিচ নিবনা। 

.

-তাহলে বের করতে বললেন যে?

.

--সরি ভাইয়া, আচ্ছা একটা শাড়ি বের করুন।

.

-কেমন শাড়ি নিবেন?

.

--আগে বের করেন।

.

মেয়েটার কথামতো শাড়ি বের করলাম। সব শাড়ি খুলে খুলে মেয়েকে দেখালাম। মেয়েটা শাড়ি দেখছে আর আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ভাগ্যিস আজ দোকানি বলে, নইলে বাইরা মাথা ফাটাতাম। মেয়েরা নীল শাড়ি পছন্দ করে। আমি একটা নীল শাড়ি নিয়ে মেয়েটিকে বললাম....

.

--আপু নীল শাড়িটা নিন, আপনাকে অপ্সরীর মতন লাগবে। 

.

-ওয়াও দারুন তো, কিন্তু ভাইয়া আমার ফ্রেন্ডস সবারই নীল শাড়ি আছে।

.

--তাহলে লাল শাড়ি নিন।

.

-না, আচ্ছা আপনি বরং নীলের মধ্যে বৃষ্টি কালারের ম্যাচিং করে কিউট দেখে একটা শাড়ি বের করুন।

.

আমার মাথায় ঢুকলো শাড়ি কিভাবে কিউট হয়। মন খারাপ করে বললাম....

.

--আপু ঠাডা কালার শাড়ি আছে নিবেন?

.

-মানে?

.

--তর মাথা, হারামি। (অস্ফুট সুরে)

.

-কিছু বললেন?

.

--না।

.

-আচ্ছা ভাইয়া ওটা না থাকলে অন্য একটা দিন। এই মনে করেন যে বেগুন কালারে শাড়ি, পারটা থাকবে রেশমি ইন্দুর কালার, সাথে ম্যাচিং ওড়না দিবেন পেঁপেঁ তরকারী যেমন হয় ঠিক তেমন কালারের। আর একটা কাঠ কালারে স্কার্ফ দিবেন।

.

মেজাজ সারাক্ষণ ভালো ছিলো। এবার আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। বললাম....

.

--হারামজাদি ফাইজলামি পাইছো? বেগুন কালারের শাড়ি, পেঁপেঁ তরকারিরর মতন ওড়না, কই পামু।

.

-রাগছেন কেনো?

.

--চুপ কর চিকা, তরে আলু ভর্তা কালারের লাঠি দিয়া পিটামু হারামি। 

.

এক কথা দুই কথা মেয়েটার সাথে তুমুল ঝগড়া। শুধু হাতাহাতি বাকি। ঝগড়া যখন চরম পর্যায়ে পৌছে গেলো ঠিক তখন-ই দুইটা পুলিশ আসলো দোকানে। পুলিশ দেখে মুখ চুপসে গেলো। পাছে যদি নারী নির্যাতন মামলা দেয়। পুলিশ দুটি দৌড়ে আমার কাছে আসলো। ভয়ে আমার কলিজা শেষ। কিন্তু পুলিশ দুটি আমাকে এসেই বলল....

.

--সরি স্যার কিছু মনে করবেন না।

.

-কেন? (অবাক হয়ে)

.

--আসলে এই মেয়েটা কালার পাগলি, সবাইকে কালারের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে। আজকে পাগল গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে। কিছু মনে করবেন স্যার আমরা দুঃখিত। 

.

আমার মুখ হা হয়ে হয়ে গেলো। পুলিশ বলে কি? এত সুন্দর মেয়ে তাও আবার পাগলি। হোয়াট দা ফাপর...মাথা ঘুরাচ্ছে। পুলিশ দুটো মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলাম। চোখে সরষে ফুল দেখতে পাচ্ছি। মেয়েটি কি আমাকেও পাগল বানিয়ে দিয়ে গেলো। ডাঃ এর কাছে গেলাম, বললাম....

.

--মাথা ঘুরাচ্ছে ঔষধ দেন। 

.

-কি ঔষধ?

.

--কারেন্টের থাম্বা কালার হালকা চার্জারের মতন বরি। মাঝখানে ঢেরশের মতন পিছলে। দেখনে ট্যাপা মাছের মতন।

.

ডাঃ আমার কথা শুনে আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বললো.....

.

-রুবেল ভাই ঠিক আছেন তো?

.

--জানিনা ভাই, মাথা ঘুরাচ্ছে ঔষধ দেন।

.

ডাঃ ঔষধ দিলো। 

বাসায় চলে আসলাম। 

কিন্তু মাথায় কালারের বর্ণনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। 

জানিনা আমার সাথে কি হবে, 

খুবি শিঘ্রই বোধহয় একটা সিট আমার জন্ম বুকিং হচ্ছে। আই যাইতামনা...!!

 

-কালার_বিভ্রাট


সমাপ্ত-----


মজার রোমান্টিক গল্প পড়ুন।