স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা
ক্লাস সিক্স থেকেই রাত জেগে পড়াটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রাতে হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাসও ছিল। যখন রাত জেগে পড়তাম না তখনও রাতে উঠে খাওয়ার অভ্যাসটা রয়ে গেছিল। বাবা মা বুঝতো তাই সবসময় আমার হাতের কাছে কিছুনা কিছু শুকনো খাবার রেখে দিতেন রাতে খাওয়ার জন্য। এটা একটা বাজে অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছিল আমার।
তবে বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে থাকাকালীন এ বদঅভ্যাসটার জন্য কয়েকদিন বেশ কষ্ট হয়েছিল। আমি ২০১৪ তে HSC পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরীক্ষা দেওয়ার মাত্র দেড় মাসের মাথায় হুট করে আমার বিয়ে হয়ে গেল। মেন্টালি বিয়ের জন্য কোনো প্রিপারেশনই ছিল না। যার ফলটা আমার উনি খুব করে ভোগ করছেন। সহ্য করতে হয়েছে তাকে আমার পাহাড় সমান ছেলেমানুষী।
যাক সেসব কথা।
বিয়ের পর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে আবার শুয়ে পড়তাম। নতুন বিয়ে তার সাথে তেমন ভাব ভালোবাসা ছিল না। কিছুটা বন্ধুত্ব অবশ্য হয়েছিল। আমরা তখন ছিলাম একই রুমে দু প্রান্তে থাকা দুজন মানুষ।
আমার সমস্যাটা কীভাবে যেন বিষয়টা ও বুঝতে পারলো। (অবশ্য আমার না বলার কথার ৯০% সে কীভাবে যেন বুঝে যায়। মাঝে মাঝে তো এ নিয়ে তাকে বলি আমার রুমে বা আমার শরীরে কোন হিডেন ক্যামেরা লাগাইছো। নয়তো এভাবে বুঝো আমার সব কথা! তখন শব্দ করে হাসে।)
তখন আমার বিয়ের মাত্র এগারো দিন হলো। সেদিন রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ওয়াশরুম গেলাম। সেখাস থেকে ফিরে দেখি টেবিলের উপর ছোট দুটো কৌটায় শুকনো খাবার রাখা। আর পাশের বাটিতে ফল। আমি বিষয়টা অত খেয়াল না দিয়ে শুয়ে পড়তে নিলাম। সে হাত ধরে বসিয়ে বললেন
"একটা কথা জিজ্ঞেস করি?"
"হ্যাঁ করেন।"
"জানি আমাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবে, তার উপর খুব তাড়াহুড়োয় হয়েছে। নিজেদের জানার মত কোন সময় পাইনি। সে জন্য আমাদের সম্পর্ক সামনে আগাতে তুমি যত খুশি টাইম নাও আমার সমস্যা নেই।
কিন্তু ডিয়ার এ ঘরটা ততটা তোমার যতটা আমার। তাই এ ঘরে ঠিক তেমন থাকবে যেমন আমি আর আমার বড় ভাই বা বোন থাকে। এখানে তোমার কোন কাজে কেউ বাঁধা দিবে না। যদি দেয় সেটা আমি দেখবো প্রমিজ।"
তার প্রতিটা শব্দে আলাদা রকম একটা ভরসা পেয়েছিলাম আমি। আল্লাহর রহমতে এখন সে তার ভরসাটা বজায় রেখেছেন।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
"এসব বলার কারণ?"
"কারণ তোমার যে, রাতে ক্ষুধা লাগে তুমি সেটা আমায় বলতে পারতে, মা বাবা, বা ঘরের যে কাউকে বললেই হতো। এভাবে না খেয়ে কষ্ট পাবার মানে কী?"
"আমি নিশ্চুপ।"
"আমাদের সম্পর্ক থেকে যত খুশি টাইম নাও। আই ক্যান ওয়েট। বাট আমাদের ঘরটাকে যত দ্রুত সম্ভব আপন করে নাও প্লিজ। এ ঘরের প্রতিটা মানুষ তোমায় খুব বেশি ভালোবাসে। আর সবচেয়ে বেশি ভালো...।
তারপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল,
'এখন খেয়ে নাও। এমনিতেই যা শুকনা তুমি ফুঁ দিলেই উড়ে যাবা, না খেয়ে খেয়ে কী আকাশে উড়ার প্ল্যান আছে নাকি?'
সেদিন তিনি জোর করেই খাইয়ে দিছিলেন। তার সাথে বন্ধুত্বটা আগেই হয়েছিল, কিন্তু কেয়ারিংটা সেদিন থেকে প্রাগাঢ় হয়েছিল।
বিয়ের পর অধিকাংশ ছেলেরা একবারেই তার স্ত্রীর থেকে পুরোটা পেতে যায়, কিন্তু সেটা ঠিক না। কখনো কোনো মানুষের একসাথে পুরোটা পাওয়া সম্ভব না। সময়ের সাথে সাথে অর্জন করে নিতে হয়।
আমার উনি ধাপে ধাপে এগিয়েছিল বন্ধুত্ব থেকে, কেয়ারিং, শেয়ারিং তারপর ফট করে একদিন আমার মনে ঢুকে গেড়ে বসলো। এমনভাবে মনটাকে দখল করছে এখন বের করে দেওয়ার কথা বললে বলে অনেক কষ্টে তোমার হৃদয়ে স্থান পেয়েছি এত সহজে নিজের জায়গা থেকে যাচ্ছি না।
আমিও তো চাইওনা সে যাক। আমি চাই সে শত শত বছর এভাবেই আমার মনে পাকাপোক্ত হয়ে থাকুক। আমার অস্তিত্বে মিশে থাক প্রতিটা মুহূর্তে।
ভালোবাসা একদিনে তৈরি হয় না। একদিনে যেটা তৈরি হয় সেটা হলো মোহ। আর মানুষের মোহ কাটতে সময় লাগে না। যেটা স্নিগ্ধতার আবেশে জড়িয়ে হৃদয়সমার্পণ করে সেটাকে ভালোবাসা বলে।
আমাদের দুজনে দুজনার হৃদসমার্পন তো সেই কবেই করে ফেলছি। এখন যেটা আছে সেটা দুজনের মাঝে রোজ তৈরি করে খুঁনসুটিময় ভালোবাসার নতুন নতুন মুগ্ধতা। আমরা এখন একে অপরের মুগ্ধতায় আছি।
এডিট: এটা বাস্তব ঘটনা। আমার জীবনের ছোট্ট একটা মুহূর্ত, গল্প নয়।
-মুগ্ধতা
শারমিন আক্তার সাথী