স্বামীর সাপোর্ট | স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত

 স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

আমার হাজবেন্ডের সাথে ৬ বছর রিলেশন করে পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা করেছিলাম আমরা। আমাদের দুজনের ফেমিলিই শুরুতে রাজি ছিলো না এই বিয়ে তে, অবশেষে বিয়েটা হয়। কিন্তু, আমার শাশুড়ী আমাদের বিয়েতে আসে নি কোনো অজুহাতে। বিয়ে হয়, কিন্তু উঠিয়ে নিয়ে যায়নি। আর আমার পরিবার এর ইচ্ছাও ছিল আমি যেন আমার পড়ালেখা শেষ করি। দেখতে দেখতে ৩ মাস পার হয়ে যায় আর অইদিকে আমার শাশুড়ী আমাকে গ্রামে নেওয়ার জন্য পা'গল হয়ে যায়। উনি নানান অসুস্থতা দেখায় আর বলে উনার সাথে একজনের থাকা উচিৎ। আমার হাজবেন্ড ও ঢাকা থেকে পড়াশোনা করে আর আমার ও সামনে পরিক্ষা তাই যাওয়া হয়না। পরে আমার হাজবেন্ড ঈদে তার সাথে গ্রামে নিয়ে যায় আমার শশুর আমাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর করে সেখানে কিন্তু আমার শাশুড়ী আমাকে নানান ভাবে খোটা দিয়ে কথা বলে ঈদের উপলক্ষে শশুর বাড়ির সবার জন্য আমার বাবা শপিং করে দেয় আমার শাশুড়ীর জন্য একটা শাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু আমার শাশুড়ি অই শাড়ি টা ধরেও নাই উলটা মুখের এমন এক্সপ্রেশন ছিল যেন সেটা তার পছন্দ হয়নি। আমার হাজবেন্ড সব ই দেখে এবং আমাকে বলে আরে তুমি রাগ কইরো না আম্মু এমনিতেই শাড়ি তেমন পড়ে না। আমিও আর কিছু বললাম না। আমার শাশুড়ী আমাকে কাজের তেমন চাপ দিতেন না। উনি যথেষ্ট কাজের নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করেন। তবুও আমি যত টুকু পারতাম উনার সাথে থেকে হেল্প করতাম ভোরে উঠে কাজ করা শুরু করতাম। তবুও যেন উনার মন জয় করতে পারছিলাম না। আমি কখনো মাটির চুলায় রান্না করি নি কিন্তু সেখানে যেদিন যাই পরের দিনি আমাকে মাটির চুলায় রান্না করতে দেয় আমি বেশ মজার সাথেই রান্না টা করি। সত্যি বলতে এই সব কাজে আমার হাজবেন্ড আমাকে সাহায্য করছে নিজ হাতে আমাকে বুঝিয়ে দিছে। আমি গ্রামে যাওয়ার পর থেকেই আমার শাশুড়ী আমাকে ও আমার হাজবেন্ড কে খো'চা মে'রে অনেক কথাই বলতো। আমি চুপ থাকতাম। কারন আমার আব্বু আমাকে বার বার বলে দিছিল রাগ করা যাবে না যে যাই বলুক। চুপচাপ শুনবা আর হাসি মুখে মানায়া নিবা। কিন্তু আমি ছোট থেকেই খুব রাগি আর আমি আমার পরিবার এর বিরুদ্ধে কোনো রকম কথা সহ্য করবো না সেটা আমার হাজবেন্ডের থেকে অজানা ছিল না। তাই সে যত টুকু পারতো তার মা কে বুঝাইত যেন এসব না বলে। একদিন আমার শাশুড়ী আমার মা কে নিয়ে কিছু কথা বলে যেটা শুনে আমি চুপ থাকলেও আমার হাজবেন্ড চুপ ছিলো না সেদিন সে তার মায়ের সাথে তর্ক করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আর আমার শাশুড়ী বার বার বলতাছিল আমি নাকি তাকে তাবি'জ করছি। উনার চি'ল্লাচি'ল্লি তে আমার চাচি শাশুড়ী রা আসে আর তাদের কাছেও তিনি অনেক কা'ন্না করে আর বলে ছেলে আর ছেলে নাই। এই সেই অনেক কিছু আমি চুপ করে বসে থাকি। আর আমার শাশুড়ী কে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম আম্মু ওর কথায় রা'গ হবেন না রা'গের মাথায় কি না কি বলে ফেলছে। আমার শাশুড়ী আমার সাথে কোনো কথাই বলছিল না। এরকম প্রায় ই হইতো আমাকে কিছু বললেই আমার হাজবেন্ড আমার শাশুড়ীর সাথে রা'গ হইতো। আর আমার হাজবেন্ড আলহামদুলিল্লাহ আমাকে সেখানে অনেক সাপোর্ট করছে। যে কয়দিন সেখানে ছিলাম আমার হাজবেন্ড বাড়িতেই ছিলো তার বন্ধুরাও তাকে নিতে আসলে যেতো না। সারাদিন আমাকে সময় দিতো। এমনকি আমার শাশুড়ী আর আমি রান্না ঘরে বসে কাজ করতাম সেখানেও সে এসে বসে থাকতো আর আমি যেটা না পারতাম সে করে দিত। এসব যেন আমার শাশুড়ীর বি'রক্ত লাগছিলো। সবসময় তাকে বাহিরে যেতে বলতো কেন সে মহিলাদের মতো বাড়িতে বসে থাকে এটা সেটা অনেক কথাই শুনাইতো তাকে কিন্তু সে কিছু বলতো না শুধু হাসতো। আমি একটা জিনিস খেয়াল করছিলাম আমার হাজবেন্ড কে যদি সারাদিন ও বকা ঝকা করতো সে কোনো সে চুপ করে থাকতো কিছুই বলতো না, কিন্তু যখন আমাকে কিছু বলত তখনি সে রেগে যেত। আমি ছোট থেকেই শহরে বড় হইছি তাই গ্রামের পরিবেশে মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। প্রথমত টয়লেট আর গোসলখানা। গোসলখানা টা খোলামেলা থাকার কারনে আমি যেতে চাইতাম না তাই আমার হাজবেন্ড নিজে দাড়িয়ে থেকে আমাকে গোসল করতে পাঠাইত যতক্ষন আমি ভিতরে থাকতাম সে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতো। সেখান থেকে নড়তো না এমন কি আমার শশুর বাড়ির টয়লেট এ আমার অনেক আনিজি লাগতো যেতে। তাই আমার হাজবেন্ড আমাকে নিয়ে আমার চাচি শাশুড়ীর বাসায় যেত টয়লেট ইউজ করার জন্য। তাকে যতবার বলতাম ততবারই আমাকে নিয়ে যেত আমি তাকে দেখে শুধুই মুগ্ধ হতাম। এত সাপোর্ট করে সে আমাকে। তো একদিন আমার ছোট চাচার বউ নিয়ে আসে বিয়ে করে। সবাই নতুন বউ দেখতে যাবে আমার শাশুড়ী ও রেডি হচ্ছিলো যাওয়ায় জন্য। আমার হাজবেন্ড মজা করে আমার শাশুড়ী কে বলে আরে কি দেখাবা বউ বেশি সুন্দর না আমি দেখছি, তাতে আমার শাশুড়ী বলে মানসের বউ নিয়ে এত কথা কছ যে নিজের টা কি অনেক সুন্দর নাকি? নিজের টা দেইখা মাইনসেরে কইতে আসিস, তাও তো ওয় টাকা দিয়া বিয়া করছে তুই তো মাগ'নাই নিয়া আইয়া পরছস,আবার বড় কথা। এটা শুনেই আমি আমার শাশুড়ী আর হাজবেন্ডের সামনেই কা'ন্না করে দেই। আমার হাজবেন্ড আমাকে অনেক্ক্ষণ বুঝায় যে তুমি কা'ন্না কইরো না আমরা আর কখনো গ্রামে আসমু না কাল সকালেই চলে যাবো। আর যা হইছে ভালোই হইছে কার মনে কি আছে সেটা তো জানতে পারছি তুমি কা'ন্না কইরো না। সেদিন আমি কা'ন্না থামাইলেও আমার হাজবেন্ড সারা রাত ঘুমায় নি আর পরের দিন আমার প্রচুর জ্ব'র আসে আমার শাশুড়ী আমাকে একটা বার দেখতেও আসেনি। সেদিন আমার হাজবেন্ডে আমাকে একটা কাজ ও করতে দেয়নি। সে ভোরেই আমাদের টিকিট কেটে রাখে আমরা সন্ধার দিকে চলে আসি। আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার হাজবেন্ডের মতো সাপোর্টিং হাজবেন্ড পেয়ে অনেক খুশি। 🥰🥰 এর মানে এই না যে সে তার মা কে অপ'ছন্দ করে, সে তার পরিবার কে অ অনেক বেশি ভালোবাসে। মায়ের চাওয়া পূরণ করে। ছোট একটা জব করে এখন তাও যা পায় পরিবার কে পাঠায় আর নিজের হাত খরচ রেখে আর প্রতি মাসে একবার আমাদের বাসায় এসে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায় আমার ও সব আবদার পুরন করার চেষ্টা করে। 🥰


এমন পরিস্থিতি তে আমার স্বামী যদি আমার পাশে না থাকতো তাহলে আমার গল্পটাও অন‍্যরকম হতো। আসলে শ্বশুরবাড়ির লোকগুলো যেমনি হোকনা কেন স্বামীর সাপোর্ট থাকলে সবকিছুকে তুচ্ছ মনে হয়। 


সবাই আমাদের জন‍্য দোয়া করবেন, যেন আমার স্বামী সারাজীবন এইভাবে আমার পাশে থাকে।


স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা গল্প পড়ুন।