বউ শাশুড়ির ঝগড়া
আমার স্বামী ঘর থেকে বের হবার সময় আমি তাকে বলেছিলাম আমার জন্য যেন একটা ক্রিম আনে। এই কথাটা আমার শ্বাশুড়ি শুনে ফেলেছিলো। স্বামী চলে যাবার পর আমার শ্বাশুড়ি আমায় বললো,
-”লাগাও, মুখে আরো বেশি করে ক্রিম লাগাও। এই রুপ দেখিয়েই তো আমার ছেলের মাথাটা খেয়েছিলে। তা না হলে আমার ছেলেকে কি এমন ছোটঘরে বিয়ে করাতাম। কত বড় বড় ঘর থেকে আমার ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিলো আমার ছেলে বিয়ে করলো না। শেষে এই রূপ দেখে পাগল হয়ে আমার ছেলে বিয়ে করলো”
আমি কিছু না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম।
বিকালের দিকে বারান্দায় বসে ননদীর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছিলাম। পাশে আমার শ্বাশুড়ি বসা।এমন সময় স্বামী এসে আমার দিকে ক্রিমের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-”এই নাও তোমার ক্রিম।”
আমি বললাম,
- আমার কোন ক্রিম লাগবে না।
স্বামী কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
-”লাগবে না তাহলে আনতে বলেছিলে কেন?এখন যেহেতু এনেছি নিতে বলছি নাও–
তখন বারান্দায় বসে থাকা শ্বশুড়ি চেঁচিয়ে বললো,
-” এক কাজ কর বউকে সাজিয়ে গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখ। কারণ তোর বউয়ের তো এই রূপটা বাদে আর কিছু নাই। না পারে সংসারের কোন কাজ আর না পারে বাপের বাড়ি থেকে কিছু আনতে।”
ননদী তখন আমার স্বামীর হাত থেকে ক্রিমের প্যাকেটটা নিয়ে বললো,
-”ভাবী যেহেতু নিতে চাইছে না তুমি জোর করছো কেন? এটা আমি নিয়ে নিলাম।”
আমার স্বামী কোন কিছু না চুপচাপ চলে গেলো। আমি ননদীর চুলে তেল দিচ্ছি আর আনমনে ভাবছি একটা মেরুদন্ডহীন পুরষকে বিয়ে করেছি। চোখের সামনে নিজের বউকে কত কি বলে অপমান করে অথচ কিছু বলার সাহস নেই—-
আমার ননদীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। কয়েকদিন ধরে শ্বাশুড়ি আমায় খুব চাপ দিচ্ছে আমি যেন আমার বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে দেই উনার মেয়ের বিয়ের জন্য। আমি যখন আমার স্বামীকে বিষয়টা বললাম তখন আমার স্বামী হ্যা না কিছু বলে নি। শুধু চাপচাপ শুনেছে। তাই বাধ্য হয়েই বাবাকে ফোনে টাকার কথাটা বললাম। পরেরদিন বাবা ঠিকই ৫০ হাজার টাকা নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়েছিলো। আর আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেছিলো,
-”তুই চিন্তা করিস না মা আমি আছি তো।”
আমি বুঝতে পারছিলাম টাকাটা জোগাড় করতে আমার গরীব বাবার খুব কষ্ট হয়েছে। আমারও তো কিছু করার নেই নিরবে চোখের জল ফেলা বাদে—-
পুকুরঘাটে কাপড় ধুচ্ছি তখন শ্বাশুড়ি আমার কাছে এসে আরো একগাদা কাপড় দিয়ে বললো এইগুলোও ধুয়ে দিতে। আমি উনার দিকে না তাকিয়েই একমনে কাপড় ধুতে লাগলাম। তখন শ্বাশুড়ি কিছুটা রেগে বললো,
-”তোমার বাবাকে বলো নি ইফতারি পাঠাতে?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– বাবার অবস্থা তো এমনিতেই খারাপ। কয়দিন আগেই তো বাবা ৫০ হাজার টাকা দিলো। এখন বাবা ইফতারের জন্য টাকা পাবে কোথায়?
-” ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মনে হয় উদ্ধার করে ফেলেছে। মেয়েকে তো ঠিকই বিনা পয়সায় বিয়ে দিয়েছে। আমার ছেলে যদি তোমার রুপ দেখে পাগল না হতো তাহলে আমার সরকারি হাই স্কুলের মাস্টার ছেলেকে এমন বড় ঘরে বিয়ে করাতাম যে ওদের কাছে কিছু চাইতে হতো না। ওরা এমনিতেই দিতো—
আমি শ্বাশুড়ির অপমান আর অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না। রাতে স্বামীকে যখন বলি ইফতারের বিষয়টা তখন ও কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে বাবাকে কাঁদতে কাঁদতে ফোনে বললাম, বাসায় ইফতার পাঠাতে।
কয়েকদিনের মধ্যেই বাবা ছোটভাইকে দিয়ে ইফতার পাঠায়। এতো ইফতার দেখেও আমার শ্বাশুড়ির মন ভরে নি। উনি শুধু বারবার বলছে, “ইফতার তো কম হয়ে গেলো। আরেকটু বেশি ইফতার পাঠালে এখান থেকে আমার মেয়েকেও পাঠাতে পারতাম।”
আমি আর শ্বাশুড়ির কথাগুলো নিতে পারছিলাম না। রেগে গিয়ে উনাকে বললাম,
-আমার বাবার বাড়ি থেকে আনা ইফতার কেন আপনার মেয়েকে দিবেন? নিজের মেয়েকে নিজের টাকা খরচ করে ইফতার কিনে দেন না। কিছু হলেই শুধু আমায় বলেন বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে।আমার বাবার তো টাকার গাছ নেই যে আপনারা যখন খুশি চাইলেন আর আমার বাবা গাছ থেকে টাকা পেড়ে আপনাদের দিলো। নিজের মেয়ের বিয়ে দিবেন অথচ আমার বাবার টাকা দিতে হলো। কেন নিজের মেয়ের বিয়ে নিজেদের টাকায় দেন না। ছোটলোকের মতো আমার বাবার থেকে কেন আনতে চান।
শ্বাশুড়িকে যখন এই কথাগুলো বলছিলাম তখন আমার স্বামী তড়িঘড়ি করে এসে আমায় বললো,
-” কি সব যা তা বলছো মাকে। বাদ দাও না দয়া করে। একটু মানিয়ে নাও না কষ্ট করে।”
তারপর শ্বাশুড়িকে বললো,
-”ওরে মাফ করে দাও। ওর ভুল হয়ে গেছে।”
আমি রাগী গলায় আমার স্বামীকেও বললাম,
-” আমি আর একদিনেও মানিয়ে সংসার করতে পারবো না। স্কুলে তো ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, যৌতুককে না বলতে। অথচ নিজে ছোট লোকের মতো শ্বশুর বাড়ির জিনিস আশা করেন। আপনার মতো মেরুদন্ডহীন মানুষের সাথে একদিনও সংসার করতে পারবো না।”
আমি সেদিনেই শ্বশুর বাড়ি থেকে রাগে বাপের বাড়ি চলে আসি। বাবা আমার মুখ থেকে সবটা শুনে আমায় বললো,
-”জামাইকে শুধু শুধু ভুল বুঝিস না। আমি যে তোকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি কিংবা ইফতারি পাঠিয়েছি এইগুলো কিন্তু কোনটাই আমার নিজের টাকায় কিনা না।সব জামাই আমায় দিয়েছে। জামাই আমায় বলেছিলো আমি যেন এই কথাটা তোকে না বলি। তাই এতোদিন বলি নি। তুই বিশ্বাস কর মা আমি যা যা তোর শ্বাশুড়িকে দিয়েছি সেগুলো একটাও আমার নিজের না। সব জামাইয়ের। আমি শুধু তোদের বাসায় পৌঁছে দিয়েছি এই যা। শুধু শুধু নিজের এতো ভালো স্বামীটাকে ভুল বুঝিস না।”
কথাগুলো বলে বাবা চলে গেলো।আমার নিজের ভুলের জন্য খুব খারাপ লাগছিলো। আমি আমার স্বামীকে ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
--কাল এসে আমায় এইখান থেকে নিয়ে যাবেন।
আমার স্বামী তখন বললো,
-”আমার মতো মেরুদন্ডহীন পুরুষের সাথে কি তুমি আর সংসার করবে।আমি বড়জোর তোমায় বলতে পারি মানিয়ে নাও আর মাকে বলতে পারি মাফ করে দাও”
আমি রাগী গলায় বললাম,
-”আমি এতো কিছু বুঝি না। তুমি কাল সকালেই আমাদের এইখানে আসবে।”
স্বামী মুচকি হেসে বললো,
-”যদি না আসি?”
আমিও হেসে দিয়ে বললাম,
--তাহলে আমি একাই চলে আসবো।
-ছোট_গল্প
-শেষটা সুন্দর