ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস | ভালোবাসার গল্প

সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে স্ট্যাটাস

সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে স্ট্যাটাস

 ছেলেটাকে বলেছিলাম " আমার পরিবার তোমায় মেনে নিবে না।ওনাদের চাকরিজীবী জামাই চাই "


" চাকরির চেষ্টা তো করছি।হচ্ছে না তো "


" কি করবে তাহলে? "


" তুমিই বলে দাও কি করবো "


" আমায় নিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার সাহস আছে তোমার? "


ছেলেটা বিষণ্ন মুখ করে বললো " পালাতে পারবো না।পরিবারের মত নিয়ে তবেই বিয়ে করবো।তুমি ওনাদের একমাত্র মেয়ে।তোমার বিয়ে নিয়ে ওনাদের মনে হাজারো অনুভূতি "


" তাহলে কি করবো? তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না।অন্য কারোর সাথে বিয়ে হলে সুই"সাইড করবো এই বলে রাখলাম।আমার জেদ তো তুমি জানোই "


তার ঠিক দু’মাস পর আমার বিয়ে ঠিক হলো।বিয়ের দিন সকালে ওকে ফোন করে বললাম 


" আজ আমার বিয়ে "


ছেলেটা বললো " আমি সবাইকে মানানোর চেষ্টা করবো।তুমি ভেবো না,তোমার বিয়ে আমার সাথেই হবে "


দুপুরের দিক ও বাড়িতে এসে উপস্থিত।বাবার ঘরে আমার ডাক পড়লো।ঘরে যাওয়ার পর বাবা বললো 


" এই ছেলেকে চেনো? "


মাথা নীচু করে বললাম " হ্যা "


ছেলেটা বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো আমাদের ভালোবাসার কথা।বাবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।মা ইতোমধ্যে আমার গা"লে কয়েকটা চ"র বসিয়ে দিয়েছে।


সব শুনে বাবা বললো " দরজা খুলে দিচ্ছি,সোজা চলে যাবি।পেছন ফিরে তাকালে ঠ্যাং ভেঙ্গে রেখে দিবো।ওঠ,যা "


ও করুন চোখে আমার দিকে তাকালো।আমার বু"কে ততক্ষণে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়েছে।যাওয়ার সময় শুধু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।


মনে মনে ঠিক করলাম যাই হয়ে যাক,বিয়ে করবো না।আ"ত্নহ"ত্যা করতে হলে তাই করবো।


সন্ধায় বাড়ির সামনের রাস্তা ভর্তি শতশত মোটরসাইকেল হাজির হলো।আমি বিস্মিত হয়ে ঘরের বাইরে এলাম।পুরো বাড়ি থমথমে।বাবাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে চার পাঁচটা ছেলে।ও আমার কাছে এসে বললো 


" বাবাকে মানাতে চেয়েছিলাম।পারিনি,তবে একদিন ঠিক পারবো।বিশ্বাস রাখো,তোমার পরিবার একদিন আমায় নিজের ছেলে করে নিবে। যাবে আমার সাথে? "


সেদিন বিয়ের আগ মুহুর্তে ও আমায় নিয়ে পালিয়েছিলো।আজ বিয়ের দুবছর পূর্ণ হলো।কোল জুড়ে ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে।


সন্তান হওয়ার পর যখন মি মোটামুটি সুস্থ তখন ও আমায় নিয়ে বাইরে এলো।রাস্তায় মাইক্রো দেখে বললাম


" মাইক্রো কেনো?কোথায় যাবো? "


" শ্বশুর বাড়িতে "


" তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? বাবা এতোটাই রেগে আছে যে এতোদিনে একটাবার খোঁজ ও নেয়নি "


" চলোই না "


ভয় ভয় নিয়ে গেলাম।বাড়ির সামনে আসতেই পুরনো অনুভূতি গুলো মনে পড়ে চোখ ভিজে উঠলো।মেয়েকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম।


দেখলাম বারান্দায় বাবা বসে দাড়ি সেভ করছেন।আমাদের দেখে বাবার চোখ শান্ত হয়ে গেলো।একপলক কোলের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো।বুঝলাম বাবার মন এখনো গলেনি।


তবে মা আমার মেয়েকে দেখে খুশিতে আত্মহারা।ইতোমধ্যে পাড়ার লোক জড়ো করে ফেলেছে।সবাইকে বলেছে " আমার মেয়ের রাজকন্যার মতো ফুটফুটে মেয়ে হইছে।আহা,আজ আমার কি যে খুশির দিন! "


মাকে বললাম " মা একটু দুধের ব্যবস্থা করো।ওর খিদে পেয়েছে "


 মা ব্যস্ত হয়ে ঘরে গেলো দুধের খোঁজ করতে।অন্য ঘর থেকে বাবা মায়ের কথোপকথন শুনতে পেলাম।বাবা বলছে


" আর কতবার বলবো দিদিভাইকে নিয়ে আসো একটু? কি ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে,যাও নিয়ে আসো,আমি কোলে নিবো "


মা বিরক্তির স্বরে বললো " ওর এখন খিদে লাগছে,কান্না করতেছে।আগে যাও দুধ নিয়ে আসো "


" এখন দুধ কই পাবো! দাঁড়াও চার দোকানে গিয়ে খোঁজ করি "


" দোকান তো অনেক দূর,সময় লাগবে "


" দৌড়ে যাবো আর আসবো।বেশি সময় লাগবে না "


এতটুকু বলে বাবা দৌড়ে বেড়িয়ে গেলেন।ওনাদের মধ্যেকার এসব কথা শুনে আমার বু"ক ফে"টে কান্না আসতে লাগলো।নাতনিকে কাছে পেয়ে তাদের কতোই না আনন্দ,কতো খুশি! দুবছরের এতো রাগ,অভিমান গলতে দু মিনিট সময় ও লাগলো না।


রাতে বাবা কাতল মাছ কিনে আনলো।খাবার সময় মাছের মাথাটা বাবার প্লেটে দিলে বাবা গম্ভীর স্বরে বললো 


" জামাইয়ের প্লেটে না দিয়ে আমায় দিচ্ছো কেন? "


কথাটা বলে বাবা নিজেই তার প্লেট থেকে মাথাটা তুলে স্বামীর প্লেটে দিলেন।বাবাকে এতো আনন্দিত এর আগে কখনো দেখিনি। 


গল্প প্রাপ্তি

লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়


আমাদের নতুন ওয়েব সাইট এমন গল্প গুলো পড়ুন।