গল্পঃসুখের খোঁজে | ডিভোর্স নারীর গল্প

ডিভোর্সি নারী

ডিভোর্সি নারী

 ডিভোর্সের কয়েকদিন আগে আমার ননদ আমার রুমে এসে আমার পাশে বসে আমাকে বলল।

"তোমার স্বামী তোমাকে কি জন্য ডিভোর্স দিচ্ছে জানো?"


আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম।

"হ্যাঁ,জানিত। বিয়ের তিন বছরেও আমি তাকে বাবা ডাক শোনাতে পারিনি এটাই হয়তো মেইন কারণ। কিংবা আমি সংসার করার মতো মেয়ে না। আমার কোন দোষ খুঁজে পেয়েছে তাই হয়তো তোমার ভাই আমাকে আর রাখবে না। শুধু তোমার ভাই না তো তোমার বাবা মাও তো চায় না আমি আর এই সংসারে থাকি।"


আমার কথা শুনে আমার ননদ বলল।

"তুমি অনেক বোকা একটা মেয়ে। তোমার সন্তান হয় না তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কারণ এটা না। তাছাড়া এখন এসব কারণে কেউ কারো সাথে পবিত্র সম্পর্ক ছিন্ন করে না। টাকা হলেই তো বাচ্চা দত্তক নেওয়া যায়। এরকম নিচ্ছেও অনেকে৷ এতে করে তো আল্লাহও খুশি হয়। একটা গরির ঘরের বাচ্চা আরাম আয়েশে বড় হবে৷ আর আমি যতদূর জানি সন্তান না হওয়ার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীরা দায়ী। কিন্তু আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে এই দোষটা মেয়েদের ঘাড়ে চাপানো হয়। তোমার স্বামী অন্য কোন কারণে তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছে। বাবা মায়ের কথা বাদ দাও,তারা যেখানে টাকার জন্য আমাকেই বয়স্ক পাত্রের কাছে বিয়ে দিতে চায় সেখানে তুমি তো অনেক দূরে। তুমি এই বাড়িতে আসার পর থেকেই সবকিছু মুখবোজে সহ্য করেছো। কিন্তু যাওয়ার আগে এভাবে সহ্য করো না। আমার ভাই মানুষটা মোটেও ভালো না। তাঁর কাছে মেয়েদের শরীরটাই আগে। তাকে আমি ছোট থেকেই চিনি। তাঁর জন্য আমি আমার কোন বান্ধবীকেও বাসায় আনার সাহস পেতাম না। তোমার স্বামী হয়তো অন্য কোন মেয়ের প্রতি আসক্ত। হতে পারে সেটা তোমার কোন আপনজন। তুমি এত সহজেই হার মেনে নিলে ওরা তোমাকে এভাবেই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিবে।"


নাদিয়া কথাগুলো বলে চলে গেলো। এই বাড়িতে একটা মানুষই আমাকে কখনো ছোট করে কথা বলে না। আর সবাই আমাকে কাজের মেয়ে ভেবেই একের পর একটা কাজের অনুমতি দিয়ে যেত৷ আমিও বাঁধ্য হয়ে সবার মন রক্ষা করার জন্য কাজগুলো করতাম। আমি চাইতাম সবার প্রিয়পাত্র হতে,সবার ভালোবাসার মানুষ হতে কিন্তু আমি পারিনি। কিছু কিছু মানুষের যতই কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি না কেন সে মানুষগুলো যদি নিজ থেকে একটু কাছে আসতে না চায় তাহলে কখনোই তাদের কাছে যাওয়া যায় না। তারা কখনোই চায়নি আমি তাদের কাছে গিয়ে তাদের কাছ থেকে একটু আদর স্নেহ পাই। অথচ আমি তাদেরকে সবসময় নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে গিয়েছি। বিনিময়ে কিছুই পাইনি,সবশেষে পেলাম ডিভোর্স নামক অসহ্য একটা যন্ত্রণামায় উপহার। 


বিকেলে বারান্দায় বসে বসে চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম একটা মানুষের জীবনে কত কষ্ট থাকতে পারে? জন্মের দুইবছর পরেই নাকি বাবা আমাকে ছেড়ে চিরতরে চলে যান। তাই বাবা নামক মানুষটার মুখ কখনোই আমি দেখতে পারিনি। তার কিছুদিন পরেই মা অন্য একজনকে পুরুষকে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করেন। অনেক বাবা মায়েরা নাকি নিজের সন্তানের জন্য সংসার,শারীরিক চাহিদা সবকিছুই ত্যাগ করতে পারে৷ খুঁজলে হয়তো এমন অনেক বাবা মা পাওয়াও যাবে যারা শুধুমাত্র সন্তানের কথা চিন্তা করে কখনো বিয়ের কথা মাথায় আনেনি। অথচ তারা চাইলে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে পারত নতুন কাউকে নিয়ে কিন্তু তারা নিজের যৌবনের সুখ বিসর্জন দিয়েছে সন্তানের সুখের জন্য। কিন্তু আমার মা এতটা ত্যাগী ছিলেন না। তিনি বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। অবশ্য এটা ভেবে ভালোই লাগে আমার মা আমার জন্য তাঁর সুন্দর জীবনটা নষ্ট করেনি। কিন্তু আমি ঠিকই বাবা মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছি। কারণ বিয়ের আগের দিনই আমার মা আমাকে অন্য একজনের কাছে রেখে নিজে বিয়ের পিরিতে বসেছিলেন৷ সাত বছর বয়সে মা আমাকে হোস্টেলে ভর্তি করেন৷ তিনি ভেবেছিলেন বিয়ের কিছুদিন পর আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবেন কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতাম, কথা বলতাম। কিন্তু কখনো মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সুযোগটুকু পেতাম না। কারণ আমার মা আমাকে তাঁর নতুন স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাক এটা ওই বাড়ির কেউ চাইতো না। আর যখন আমার মায়ের কোল ভোরে ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান আসল তখন আমার মায়ের আদরটাও যেন আমার জন্য কমে গেল। আমার বোন আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। সবাই জানতো আমার কথা,জানত আমার মায়ের একটা মেয়ে আছে তবুও কেন আমাকে ওই বাড়িতে নেওয়া হয়নি সেই উত্তরটা আমার কাছে অজানা।


বারান্দা থেকে নিচের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম আমার স্বামী আবির একটা মেয়ের সাথে বাসায় ঢুকছে। মেয়েটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর৷ আমি তাঁর সৌন্দর্যের কাছে হয়তো কিছুই না। এই কালো চোখের নীল শাড়ি পড়া মেয়েটাই হয়তো আমার স্বামীকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার দাঁড় প্রান্তে আছে। এই মেয়েটার জন্যই কি তাহলে আবির আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছে? আমার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। আমি জানি আবির আমাকে ডিভোর্স দিবে তবুও তাদের দুজনকে এভাবে একসাথে দেখে ভিতরটাতে প্রচন্ড অসহ্যনীয় এক ব্যথা অনুভব করলাম৷


আমি বারান্দায় থেকে উঠে রুমের দিকে গেলাম। ভেবেছিলাম মেয়েটাকে নিয়ে আবির রুমের দিকে আসবে। কিন্তু এমনটা হলো না। আবির মেয়েটাকে নিয়ে তাঁর বাবা মায়ের রুমের দিকে গেল। আমার খারাপ লাগার মাত্রাটা আরও বেড়ে গেল। বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলাম ঠিক এমন সময় দরজার ওপাশ থেকে আমার শাশুড়ির কণ্ঠ শুনতে পেলাম। সে স্পষ্ট গলায় বলল।


"বাসায় মেহমান আসছে। ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করো৷ তার আগে চা বিস্কুট কিছু দিয়ে এসো ওদের।"


কথাগুলো বলে এক সেকেন্ডও দেরি করল না।


ঠিকমতো কাঁদার জন্যও মনে হয় ভাগ্য লাগে যেটা আমার নেই। মানুষ সবকিছু এত সহজভাবে কিভাবে নেয়? আমি কেন পারি না? কয়দিন পরেই আমাকে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে,আমিও মেনে নিয়েছি। তাছাড়া কোন উপায়ও তো নেই। কারণ অামার অভিযোগ দেওয়ার মতো কোন মানুষ নেই। কেউ নেই যে আমাকে একটু সাহায্য করতে পারে৷ অথচ আমার শাশুড়ি আমাকে এভাবে আদেশ দিয়ে গেল মনে হলো আমি এখনও এই বাড়ির বউ,ভবিষ্যতেও থাকব তাই কাজগুলো আমাকে করতেই হবে।


আমি চা বিস্কুট নিয়ে যখন আবির আর মেয়েটার সামনে গেলাম তখন নিজের প্রতি অনেক ঘৃণা হল৷ নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের কাছে স্বইচ্ছায় তুলে দিতে হচ্ছে বাঁধ্য হয়ে। এক পর্যায়ে আবির আমাকে রুম থেকে চলে আসতে বলল। আমি আর দেরি না করে চলে আসলাম কারণ রুমটাতে আমারও দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই মনে মনে আবিরকে ধন্যবাদ জানাই চলে আসতে বলার কারণে। যদিও সে অপমান করার জন্য এমনটা বলেছে তবুও সে ভালো করেছে।


আটটার সময় আবির মেয়েটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাদের চলে যাওয়াটা দেখতে থাকলাম। বুঝতে বাকি রইলো না তারা দুজন হোটেলে রাত কাটাতে যাচ্ছে৷ আমি মনের ভিতর এক আকাশ কষ্ট নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। কারণ আজ আমার কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। একসময় মনে হতো আর কেউ ভালো না বাসলেও আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আজ তো সবকিছু নিজের চোখেই দেখলাম। মধ্যো রাতে কারো গালির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কেউ খুব বিশ্রী ভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে।

"ওই খানকি, দরজা খোল। দরজা লাগিয়ে কি করোছ? তোর প্রেমিকের সাথে মজা করোস নাকি মাগি?"


আমি শব্দ পেয়েই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পাই আবির মাতাল অবস্থায় এসব বলছে৷ আমার তাকে ধরতে ঘৃণা হচ্ছিল তবুও যখন তাকে ধরতে গেলাম তখন সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেল দিল। তারপর বলল।


"আমাকে ধরেছিস কেন? তুই তো জানিস আমি রাতে আসব তারপরেও কেন দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়েছিস? গরম পানি কর। আমি গোসল করব।"


আমি না বলাতেই সে আমাকে থাপ্পড় মারল৷ আমারও ইচ্ছে করছিল তাঁর গালে থাপ্পড় মারি৷ কিন্তু সাহস হল না কারণ সে পুরুষ আমি নারী। তাঁর সাথে শক্তিতে পেরে উঠব না। পরে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাঁধ্য হয়ে রাত একটার সময় পানি গরম করে দেই। সেই পানিতে আমার স্বামী তাঁর নোংরা দেহটা ধুয়ে ফেলে।


কিছুদিন পরের কথা।

রাত দশটা বাজে,আমি অনেক চেষ্টা করেছি সব কষ্ট সহ্য করে বেঁচে থাকার জন্য কিন্তু পারিনি। আমার মনে হয়েছে আমার বেঁচে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছি তাই মৃত্যুটাকে বেছে নেওয়াটাই আমার জন্য একমাত্র শান্তির পথ। মৃত্যুর আগে আবিরের মুখটা একবার দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে বাসায় ফেরেনি। খুব কম সময়ের জন্য হলেও এই একজন মানুষই আমাকে ভালোবেসেছিল তাই খারাপ হলেও শেষবারের মতো তাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু সেটা হলো না। সে হয়তো ওই মেয়েটার সাথে মজা মাস্তিতে ব্যস্ত। তাই এখনও বাসায় আসেনি। আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে রেললাইনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অপেক্ষায় আছি কখন ট্রেন আসবে। ট্রেন আসা মাত্রই নিজের মাথাটা এগিয়ে দিব চলন্ত ট্রেণের দিকে। নিমিষেই মুহূর্তের মধ্যে এই সুন্দর পৃথিবী থেকে একটা জলজ্যান্ত আত্মার সমাপ্তি হবে।


অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ করে দেখতে পেলাম দুইজন মেয়ে আর একটা ছেলে বস্তায় করে কি যেন একটা রেললাইনে ফেলে যাচ্ছে৷ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলাম তারা একজন মানুষকে হাত পা বেঁধে রেললাইনে ফেলে যাচ্ছে। আমার ভিতরটা শুকিয়ে গেল যখন দেখলাম এই তিনজন মানুষকেই আমি চিনি। একজন আমার স্বামী আবির,অন্য জন্য সেই নীল শাড়ি পড়া মেয়েটা। আর যাকে দেখে আমার আত্মাটা প্রতিনিয়ত কাঁপছিল,ভিতরটা ফুলে ফেঁপে উঠছিল সে হল আমার বোন তানিয়া। আমার মায়ের পেট বোন হলেও সে আমার সৎ বোন। আমি তাদেরকে দেখে কিছুটা আড়ালে চলে গেলাম যাতে করে তারা আমাকে দেখতে না পায়।


গল্পঃসুখের খোঁজে 


পর্ব১


গল্পঃসুখের খোঁজে

পর্ব-২+৩


ওরা তিনজন যখন মানুষটাকে রেললাইনের ওপর শুইয়ে রাখছিল তখন আমার ভিতরটা কাঁপছিল। তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন বলল,ট্রেন আসার পর সবাই যাব। কণ্ঠ শুনে বুঝলাম এটা নাদিয়া। কথাবার্তা শুনে যা মনে হলো এই মৃত্যুমুখী মানুষটার সাথে নাদিয়ার হয়তো কোন কারণে শত্রুতা ছিল। তাই সে এমনটা করছে। তবে তাঁর সাথে আবির আর ওই মেয়েটা কেন সঙ্গ দিচ্ছে আমার জানা নেই,এই মুহূর্তে জানার ইচ্ছেও হচ্ছে না। নাদিয়া থাকতে চাইলেও কিছুক্ষণ পর সবাই চলে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পরপরই আমি দৌড়ে গেলাম মানুষটার কাছে। গিয়ে দেখলাম একটা পঁচিশ ছাব্বিশ বয়সের ছেলেকে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। অন্ধকার রাত হলেও মাঝে মাঝে কিসের যেন আলো এসে পড়ছে রেললাইনের ওপর। ক্ষণিকের আলোর সাহায্যে ছেলেটাকে দেখতে পাচ্ছি। দেখে বুঝা যায় ভালো ঘরের ছেলে। ছেলেটার সারা শরীর রক্তে রঞ্জিত,গায়ে দেওয়া টিশার্টটা রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। বুঝায় যাচ্ছে অনেকটা অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব বেশি সময় বাঁচতে পারবে না যদি না তাকে তাড়াতাড়ি ভালো কোনো ট্রিটমেন্ট না দেওয়া হয়।


কখনো ভাবিনি নিজের জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে এসে এমন একটা অবস্থায় আমাকে পড়তে হবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার জীবনের হয়তো কোন মূল্য নেই,আমি বেঁচে থাকতেও কেউ একটু ভালোবাসেনি,মরে গেলেও আমার জন্য কেউ কাঁদবে না। কিন্তু এই মানুষটা হয়তো তেমন না। তাঁর জীবনের দাম আছে। আমি নিজের মৃত্যুর কথা বাদ দিয়ে তাকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। কারণ অন্য একজন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেকে কখনো মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া যায় না। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কি করত জানি না তবে আমার এই মানুষটাকে বাঁচাতে হবে৷ আমার ভিতরে যে রহস্যের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে সেটা আমাকে জানতে হবে,জানতে হবে এর সাথে আবিরের কি সম্পর্ক,নাদিয়ার কে হয় ছেলেটা৷ এরকম আরও অনেক অজানা প্রশ্ন মস্তিষ্কের নিউরনে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেগুলো আমাকে জানতে হবে।


আমি ছেলেটার খুব কাছে গিয়ে যখন দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম ছেলেটা বেঁচে থাকার আশায় শ্বাস নিচ্ছে। ওরা ছেলেটাকে অনেক মেরেছে। তবে এত মারার পরেও কেন তারা তাকে একেবারে না মেরে এভাবে এখানে ফেলে রেখে গিয়েছে সেটা আমার ভাবনা শক্তির বাইরে। হয়তো এর পেছনেও কোন কারণ থাকতে পারে। আমার কাছে তেমন কোন টাকা পয়সাও ছিলো না যে তাকে নিয়ে কোন হাসপাতালের দিকে যাব৷ তবে এই মুহূর্তে তাঁর জন্য ভালো চিকিৎসা দরকার,না হলে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমি ছেলেটার কাছে গিয়ে তাঁর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলাম। তখনও ছেলেটা একটা ঘোরের মধ্যে। সে বুঝতে পারছে আমি তাঁর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিচ্ছে কিন্তু কোনকিছু বলতে পারছে না। এতটা খারাপ ভাবে কেউ কাউকে মারতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি তাকে ধরে রেললাইন থেকে সরে নিচে যাওয়ার কিছুসময় পরেই বন্দুকের গুলি বেগে একটা ট্রেন আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। অথচ কিছুক্ষণ আগেও আমি জানতাম এই ট্রেনের নিচেই আমার জীবনের ইতি ঘটবে। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি,হয়তো সৃষ্টিকর্তা চাননি আমার এভাবে মৃত্যু হোক,তাই এখনও আমি পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছি।


অনেক কষ্টে ছেলেটাকে নিয়ে পাশের একটা বাড়িতে গেলাম আমি। রেললাইনের পাশেই গ্রাম,তাই বাড়ি খুঁজে পেতে কোন সমস্যা হলো না। কারণ এই মুহূর্তে হাসাপাতালে যাওয়া সম্ভব না। এত রাতে কেউ জেগে নেই,কি বলে ডাক দিব সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। সবশেষে যখন বললাম।


"বাড়িতে কেউ আছেন? আমার একটু সাহায্য দরকার।"


আমার কথা শুনে সত্তর বছরের বয়স্ক একজন মানুষ দরজা খুলে দিল। আমার কাঁধে রক্তাক্ত ছেলেটাকে দেখে তিনি এগিয়ে আসলেন আর বললেন।


"কি হয়েছে? এত রাতে আপনারা কারা? আপনাদের তো ঠিক চিনলাম না।"


আমি লোকটাকে সব খুলে বললাম। তবে মনে হলো না সে আমার সব কথা বিশ্বাস করেছে। আমি যখন তাকে বললাম,ওর চিকিৎসা করা দরকার,না হলে বাঁচবে না। আপনি সাহায্য না করলে সেটা সম্ভব না।


কথাগুলো বলার পরেই দেখলাম আর একজন বয়স্ক মহিলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম আমাদের কথা বলার আওয়াজ শুনেই সে জাগা পেয়েছে। আমার সব কথা শোনার পরে তারা আমার সাথে থাকা ছেলেটা নিয়ে একটা রুমের মধ্যে নরম বিছানায় শুইয়ে দিল। তাঁর কথা শুনে বুঝলাম সে কবিরাজ টাইপের কোনকিছু হবে৷ তাঁর কাছে কিছু ওষুধ ছিল সে সেগুলো দিয়ে ছেলেটাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করল। আমার সারারাত নির্ঘুম কাটল। ভোর রাতের দিকে একটু ঘুমানোর সুযোগ পেলাম কিন্তু সেটাও বেশি সময়ের জন্য না। ঘুমানোর কিছু সময় পরেই বয়স্ক লোকটা বললেন,ছেলেটাকে ভালো একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত হবে। তিনি যে ওষুধ গুলো দিয়েছেন সেগুলো তাকে সুস্থ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না।


আমি তখন ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসলাম,তারপর বললাম।


"আমি তো এখানকার কোনকিছু ভালোভাবে চিনি না৷ আপনি একজন ডাক্তারকে নিয়ে আসুন। টাকা পয়সা যা লাগে আমি দিব,এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। শুধু ছেলেটাকে সুস্থ করে তুলতে হবে।"


আমার কথা শুনে বয়স্ক মানুষটা কিছু বললেন না। আমার রুম থেকে চলে গেলেন। ঘুমটা হঠাৎ করে ভেঙে যাওয়ার কারণে আর ঘুম আসল না৷ তাই একটু বাহিরে বের হলাম,ভাবলাম ওই ছেলেটার রুমে গিয়ে তাকে একবার দেখে আসি। বাহিরে তাকাতেই দেখতে পেলাম আমি এই মুহূর্তে একটা রাজ প্রাসাদে অবস্থান করছি। এত সুন্দর মনোরম দৃশ্যের বাড়ি এর আগে আমি দেখেনি। যে দিকেই চোখ যায় ভালো লাগায় ভরে যায়। রাতের অন্ধকারে বাড়িটার সৌন্দর্য আর পরিধি বুঝতে পারিনি। কিন্তু দিনের আলোতে ঠিকই বাড়িটির মহত্ত্ব বোঝা যাচ্ছে। তবে এত বড় একটা বাড়িতে মাত্র দুজন মানুষ থাকে তাও আবার বুড়া-বুড়ি এটা যেন আমার কাছে একটা রহস্য মনে হলো৷ তাদের ছেলে মেয়েরাও তো তাদের সাথে থাকতে পারতো কিন্তু নেই।


কিছুসময় পর দেখলাম একজন সুদর্শন লোক ব্যাগ হাতে বাড়ির ভিতর ঢুকলেন। লোকটার বয়স ত্রিশ পয়ত্রিশ হবে। তবুও খুব সুদর্শন মনে হচ্ছে৷ এই লোকটা যে একজন ডাক্তার সেটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। মানুষ দেখে অনেক কিছুই বোঝা যায়। এই লোকটাকে দেখে মোটেও ডাক্তার মনে হয় না,কিন্তু তাঁর হাতে ব্যাগ দেখে বোঝা যায় সে একজন ডাক্তার। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে দেখার পর ডাক্তার চলে গেলেন। যাওয়ার আগে লিখে দিয়ে গেলেন একগাদা ওষুধ। এই ওষুধ গুলো খাওয়ালে ছেলেটা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে সময় লাগবে৷ আমার গায়ে সোনার কিছু গহনা ছিল,যদিও খুব বেশি না তবুও আমি যখন বয়স্ত লোকটাকে এসব দিতে চাইলাম তিনি তখন নিলেন না। তাঁর যে টাকা পয়সার কোন অভাব নেই,সেটা তাঁর রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িটা দেখলেই বোঝা যায়। তাই হয়তো আমার এসবে তিনি আগ্রহ দেখালেন না।


আমি বাসা থেকে চলে এসেছি প্রায় কয়েকদিন হয়েছে৷ আমি এতটাই হতভাগী যে আমি মরে গেলেও কারো কোনকিছু যায় আসে না। তাই হয়তো কেউ একটু খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি৷ আবির অন্তত একটাবার ফোন দিতে পারতো কিন্তু সেটা সে দেয়নি। অথচ ডিভোর্সের পরেও দুজন দুজনের সাথে কত ভালো সম্পর্ক থাকে,এমন নজির কম নেই। কিন্তু আমার সাথে ভালো সম্পর্ক তো দূরের কথা। কেউ চায় না আমি বেঁচে থাকি। সবাই কেন এমন করে আমার সাথে? আমি তো কাউকে কখনো কষ্ট দেইনি,খারাপ ভাবেও দেখিনি। তবুও আমার কাছের মানুষগুলোই কখনো আমাকে বুঝতে পারল না। মা ছাড়া আমাকে এই দুনিয়ার একটা মানুষও বোঝেনি। সবাই শুধু অবহেলা আর কষ্ট দিয়ে গেছে।


আস্তে আস্তে করে খুব ধীর গতিতে,কচ্ছপের চেয়েও ধীর গতিতে ছেলেটা সুস্থ হতে লাগল। একদিন আমি তাঁর রুমে তাঁর পাশেই বসেছিলাম। সে এখন সবকিছু দেখতে পারে,কথা বলতে পারে। তবে আমাকে দেখে সে একটি কথাও বলেনি। এমন করার কারণও আমার অজানা। তবে আমাকে তাঁর পাশে দেখে যে খুশি হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারি। সেও হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার কারণেই সে আজ বেঁচে আছে। ছেলেটার নামটা পর্যন্ত আমি জানি না অথচ কত কি হয়ে গেল। ছেলেটার প্যান্টের পকেটে একটা ফোন ছিল। ছেলেটা তখন ঘুমিয়ে ছিল তাই আমি আগ্রহের বশে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। জানতে চেষ্টা করলাম ছেলেটা সম্পর্কে। তবে পাওয়ার মত তেমন কিছুই পেলাম না। শুধু তাঁর ফোনে আমার বোন নাদিয়ার কিছু ন্যুড দেখলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম নাদিয়ার সাথে একটা ছেলেকে দেখে। সে ছেলেটার খুব কাছে গিয়ে অন্তরঙ্গ ভাবে ছবিটা তুলেছে। তাহলে কি এই ফোনটা অন্য কারো নাকি এই ছেলেটারই? এই ছেলেটার সাথে নাদিয়ার কি সম্পর্ক? আর ছবির ওই ছেলেটাই বা নাদিয়ার কে হয়? এসব অদ্ভুত সব প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। পিকের ছেলেটাকে আমি মনে হয় চিনি,কোথাও যেন দেখেছি। তবে কোথায় দেখেছি মনে করতে পারলাম না।


পর্ব-৩


আমি ফোনটা যথা স্থানে রাখা মাত্রই দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারলাম না সে কত সময় ধরে আমার দিকে এভাবে এক নজরে তাকিয়ে আছে। তাহলে কি সে দেখে ফেলেছে আমি তাঁর ফোন ঘেটে দেখেছি? তাঁর চোখের ভাষা দেখে বুঝতে পারলাম সে আমাকে এর আগে কখনো দেখেনি। তাই হয়তো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বললাম না,চুপচাপ তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি কিছু না বললেও ছেলেটা কথা বলল। এই প্রথম আমি তাঁর কথা শুনতে পেলাম,এর আগে তাঁর গলার আওয়াজ শুনতে পেলেও কথা শুনতে পারিনি। সবসময় যে মেয়েরা খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে এমন না। অনেক সময় অনেক ছেলেরাও খুব সুন্দর করে মনোমুগ্ধকর কণ্ঠ নিয়ে কথা বলতে পারে। তা এই ছেলেটাকে দেখলে বোঝা যায়। আমাকে দেখামাত্রই কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে রইল তারপর বলল।


"আপনি কে? আর আমি এখানে কিভাবে এলাম? আপনি কি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন নাকি? তানিয়া আপনার কে হয়? ওই মেয়েটা খুব ডেঞ্জারাস, আপনি কি ওর হয়ে কাজ করেন? আপনার সাথে আর কে কে আছে? আমাকে তো মেরে ফেলার কথা ছিল,সেটা না করে এখানে কেন ধরে আনা হয়েছে?"


ছেলেটার মুখ থেকে এমন সব অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। বুঝলাম এসবের পেছনে বড় কোন কাহিনি আছে যেটা আমার অজানা। আমি একবার বলতে চাইলাম ওদের তিনজনের কথা। সবাইকে আমি চিনি,এটাও বলতে চাইলাম তানিয়া আমার সৎ বোন। কিন্তু পরে মনে হলো, না এটা এখন বলা ঠিক হবে না। তাহলে হয়তো সত্যি সত্যি ভাববে আমি তাকে কিডন্যাপ করেছি এবং আমার সাথে তানিয়াদের সম্পর্ক আছে। তাই এসব কিছু এড়িয়ে গিয়ে বললাম।


"ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আমি তানিয়ার কেউ হই না,আপনাকে কয়েকজন মানুষ মিলে রেললাইনে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে গিয়েছিল। তারা চলে যাওয়ার কিছুসময় পর যদি আমি আপনাকে সেখান থেকে না সরাতাম তাহলে আপনি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যেতেন। আপনি কয়েকদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। তাই আমাকে চিনতে পারছেন না। তবে আমি ভেবেছিলাম আপনি সেদিন আহত হলেও কিছুটা বোধশক্তি আপনার ছিল,আপনি হয়তো বোঝার কথা আপনাকে কেউ একজন বাঁচিয়েছে কিন্তু আফসোস আপনার কোনকিছুই মনে নেই। আর সেই মানুষটা আমি যে আপনাকে নির্ঘাত মৃত্যুর হাতে থেকে বাঁচিয়েছে। বিশ্বাস না হলে আপনি এই বাড়ির মানুষ দুজনকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন আমি কোন কিডন্যাপার নই।"


আমার কথা শুনে মনে হলো ছেলেটা আকাশ থেকে পড়ল। আমি যখন আবার প্রশ্ন করলাম।


"তানিয়া মেয়েটার সাথে আপনার কি সম্পর্ক? গার্লফ্রেন্ড?"


তখন ছেলেটা কিছু বলল না। বুঝলাম সে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাইছে না। আমিও জোর করলাম না। সে দেরিতে হলেও বিশ্বাস করল আমিই তাকেই বাঁচিয়েছি এবং তানিয়া নামের মেয়ের সাথে আমার কোন সংযোগ নেই। আমি যখন চলে আসব বলে রুম থেকে বের হলাম তখন সে আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কে? আমি তখন সত্য বলব নাকি মিথ্যা বলব বুঝলাম না। কারণ নিজের দুঃখের কথা কাউকে বলা মানে নিজেকে দুর্বল করে তোলা। আমি তো এমনিতেই অনেকটা ভেঙে পড়েছি,মৃত্যুর পথে পাও বাড়িয়েছিলাম কিন্তু সবশেষে মৃত্যুটাকে আপন করে নিতে পারেনি। হয়তো সৃষ্টিকর্তা চাননি তাই এই ছেলেটার উছিলায় এখনও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা এমন একটা সুদর্শন ছেলের কাছে নিজেকে কেউ ডিভোর্সী পরিচয় দিতে চায় না। সে যেই হোক না কেন। তবে আমি এমনটা করলাম না কারণ আমি আর কাউকে নতুন করে বিশ্বাস করতে চাই না। যখন শুনবে মেয়েটা ডিভোর্সী,সে দুইবছর সংসার করে টিকতে পারেনি তখন পৃথিবীর খুব কম সংখ্যক ছেলেই মেয়েটাকে ভালো চোখে দেখবে। তবুও আমি আমার সত্যটাকে লুকায়িত রাখলাম না। যাকে চিনি না,জানি না। মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়,তাও কিনা তেমন কোন কথায় হয়নি সেই মানুষটাকে আমি আমার সবকিছু খুলে বললাম। বললাম আমার কষ্টের কথা,আমার সংসার ভাঙার কথা,আমার নরপিশাচ স্বামীর কথা। আমি আমার সমস্ত অতীত তাকে বললাম,আমার আত্মহত্যার কারণটাও তাকে বললাম। আমি জানি না তাকে কেন এসব বললাম কিন্তু বলতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই না বলে পারিনি। কেউ একজন তো জানুক আমার খারাপ থাকার কথা,কেউ একজন তো জানুক আমার ভীষণ দুঃখ তাই আমার বাঁচতে ইচ্ছে হয় না,কেউ একজন তো জানুক আমার কেউ নেই,আমি আগেও একা ছিলাম,এখনও আছি,হয়তো ভবিষ্যৎ এও থাকব।


আমার কথা শুনে ছেলেটা অনেক হতাশ হল,তাঁর মুখ দেখে এমনটাই বুঝলাম আমি। সে আমাকে যখন বলল।


"আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। দেখুন না আপনি এসেছিলেন নিজের জীবনটাকে শেষ করে দিতে। অথচ সেটা আপনি না করে অন্য একজন মানুুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেন। আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমিও আর আপনাকে একা ছাড়ছি না। আমি জানি আমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে বিপদ৷ তবুও আপনি এখন থেকে আমার সাথেই থাকবেন। আপনি কেন আপনার হাসবেন্ডেন জন্য নিজের জীবন দিবেন? আপনি বেঁচে থাকবেন, নিজের জন্য হলেও বেঁচে থাকবেন। আপনি হয়তো জানেন না পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ নিজের জন্য বাঁচে। যারা বোকার স্বর্গে বাস করে তারাই অন্য কারো জন্য বাঁচতে চায়,অন্য কারো জন্য মরতে চায়। নিজের জন্য বেঁচে থাকার মতো সুখ আর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আপনাকে যারা চায় না আপনি তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন তাদের ছাড়াও আপনি সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন। যারা আপনাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাঁধ্য করেছে তাদেরকে এত সহজেই আপনি ছেড়ে দিবেন?"


আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা আমাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে,উৎসাহ দিচ্ছে। অথচ তাকে আমি চিনি না। আর আবির আমার এত আপনজন হয়েও কখনো আমাকে নিয়ে ভাবেনি। আমি যদি বলতাম তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না,তুমি আমার সব,তুমি আমাকে যদি ছেড়ে দাও তাহলে আমি সত্যি সত্যিই মরে যাব। তখন আবির হেসে বলত,

"এসব বাংলা সিনেমার ডায়লগ কম মারবি আমার সামনে। মরার ইচ্ছে হলে মরবি আমি তোকে আটকাব কেন? কেউ মরতে চাইলে তাকে আটকাতে নেই। আরও অনেক কিছু বলত আবির আমাকে নিয়ে। তাঁর কথা শুনে অন্তত এটা বুঝতে পারতাম আমার মরে যাওয়া কিংবা বেঁচে থাকাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। অথচ এই মানুষটা কত আলাদা। সত্যিই মানুষ বিচিত্র। যুগ যুগ ধরে একসাথে থাকার পরেও কেউ চায় না মানুষটা ভালো থাকুক,আবার দুইদিনের পরিচয়েও কেউ কেউ চায় মানুষটা ভালো থাকুক,সুখে থাকুক।


আমি কিছু বললাম না। সে যখন আমার নাম জিজ্ঞেস করল তখনও আমি চুপ করেছিলাম। দ্বিতীয় বার যখন জিজ্ঞেস করল আমার নাম কি? তখন আমি আমার নামটা বললাম।


" আমি ইসরাত।"


আমার বিপরীতে সে বলল তাঁর নাম হাসান। তারপর কথা শেষ করে রুমে চলে আসলাম।


আমি রুমে এসে অনেককিছু ভাবতে লাগলাম। কয়েকদিন আগেও মনে হয়েছিল আমার বেঁচে থাকার মতো কোনকিছু অবশিষ্ট নেই। কিন্তু ছেলেটার সাথে দেখা হওয়ার পর কথা বলার মনে হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য কিছু দরকার হয় না। কাউকেই দরকার হয় না দরকার হয় শুধু নিজের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসা। নিজের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসা থাকলে কেউ কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। যেসব মানুষের নিজের প্রতি কোন বিশ্বাস নেই,যারা নিজেকে কখনো ভালোবাসে না তারাই আত্মহত্যা নামক জঘন্য রাস্তা বেছে নেয়। আমিও নিয়েছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। হাসান নামক অপরিচিত ছেলেটার সাথে কথা বলার আমি জেনেছি আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। বেঁচে থেকেই সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।


পরের দিন যখন আমরা দু'জন আশ্রিত বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম উদ্দেশ্যেহীন ভাবে। উদ্দেশ্যেহীন বললাম এ কারণেই আমি জানি না আমার গন্তব্য কোথায় হবে। যাওয়ার সময় বয়স্ক মানুষটার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে ভুল করলাম না। কারণ এমন ভালো মানুষ আজকাল খুব কম পাওয়া যায়। পথে এসে আমি হাসানকে বললাম।


"আমি আপনাকে সমস্যায় ফেলতে চাই না। আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন। আপনার কথাগুলো মনে রেখে হলেও বাকিটা জীবন নিজের জন্য বেঁচে থাকব। আপনি সাবধানে থাকবেন,ভালো থাকবেন।"


কথাগুলো বলে আমি হাসান নামক মানুষটা থেকে আলাদা হয়ে যাই। সে আমার দিকে জাস্ট থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বুঝতে পারলাম হয়তো ভাবেনি আমি এমনটা করব। আমাদের দুজনের রাস্তাটা আলাদা হয়ে যাবে এটাই সত্য। আমি এখন যাব আমার মায়ের বাড়িতে। সেই মায়ের বাড়িতে যে মা শুধুমাত্র মাত্র নিজের সুখের জন্য আমার জীবনের সুখ গুলো ছিনিয়েছে নিয়েছে৷ আমি আমার সৎ বাবার কাছে যাব। যার কারণে আমি আমার জন্মদাত্রী মায়ের আদর স্নেহ মায়ামমতা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমি সেই বোনের কাছে যাব যে আমার নিজের মায়ের পেটের বোন হওয়ার পরেও কখনো আমাকে একটু আপন ভাবেনি,সবসময় পরই ভেবে এসেছে। সবার কাছে আমি আমার খারাপ থাকার জবাব চাইবো। আমি জানি তারা আমাকে মেনে নিবে না তবুও আমি তাদের কাছেই যাব। কারণ আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। আমিও দেখতে চাই আমাকে জন্ম দেওয়া মা আমাকে কিভাবে তাঁর বাড়িতে না রেখে তাড়িয়ে দেয়। আমি তানিয়াকে প্রশ্ন করব আবিরের সাথে তাঁর কিসের সম্পর্ক? আমার মাকে আমি বলব তুমি তোমার ভালো মেয়েকে কখনো বুকে টেনে নাওনি অথচ নষ্টা মেয়েকে ঠিকই দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর আদর ভালোবাসায় আগলে রেখেছো।


আমি চাচ্ছিলাম এই অজানা অপরিচিত ছেলেটা আমাকে পেছন থেকে ডাক দিক। বলুক,"আমি আপনাকে কখনোই একা ছাড়তে পারি না। আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন,আপনি আমার সাথেই থাকবেন যতদিন না আপনি স্বাভাবিক হন ততদিন পর্যন্ত আপনি একা কোথাও যেতে পারবেন না।"

কিন্তু অনেকটা সময় পাড় হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ পেছন থেকে ডাক দিল না। আমি বিশ্বাস করি এই মানুষটার সাথে আবার আমার দেখা হবে। তানিয়ার দ্বারাই হয়তো কাজটা হবে। কারণ তানিয়া এখনও জানে না তারা যাকে মেরে রেললাইনে ফেলে রেখেছিল সে মানুষটা এখনও বেঁচে আছে৷ আর এটাই হবে তানিয়াকে দেওয়া আমার সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ।


গল্পঃসুখের খোঁজে

পর্ব-৪ (শেষ পর্ব)


আমি হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে চলে গেলাম কিন্তু কেউ আমাকে ডাক দিল না। আমিও পেছন দিকে না তাকিয়ে আরও সামনের দিকে চলতে লাগলাম। অনেকটা সময় পর আমি যখন কারো পায়ের শব্দ শুনে পেছন দিকে তাকালাম তখন হাসানকে দেখতে পেলাম। আমি কোন কথা না বলে তাঁর দিকে চেয়ে রইলাম। সেও চুপ আমিও চুপ। কেউ কোন কথা বলছি না। এমন সময় মনে হলে কেউ একজন কথা বলা উচিত। এভাবে আর কতক্ষণ চুপ করে থাকা যায়? আমি যখন বললাম।


"আপনি আমার পেছনে পেছনে আসছেন যে?"


তখন হাসান বলল।


"আপনি তো আমার কথা শুনলেন না,আমার সাথে গেলেন না। আমার আপনাকে একা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। তাই আপনার পেছন পেছন যাচ্ছি। আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাব। যদিও আপনি বলেছিলেন আপনার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তবুও যেখানেই যান না কেন আমি আপনার সাথেই যাব।"


তাঁর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি আমার ভাবনার পরিবর্তন করলাম। আমি ঠিক করলাম আমি আমার মায়ের বাসায় যাব না। এমন একজন মানুষকে নিয়ে ওখানে যাওয়া যায় না। তাছাড়া তানিয়াও তো আছে। অনেক বড় একটা সমস্যা হতে পারে সেখানে গেলে তাই আমি সেখানে যাব না বলে ঠিক করলাম। হাসান নামের কয়েকদিনের পরিচিত মানুষটার সাথেই আমি ঠিকানাবিহীন পাখির মতো উড়ে চললাম। আমাদের দুজনের কাছেই তেমন কোন টাকা পয়সা ছিল না। তাই একটু সমস্যায় হচ্ছিল। পরে হাসান তাঁর বন্ধুর থেকে টাকা আনার পরে আমরা দুপুরে হোটেলে খাওয়া দাওয়া করলাম৷ তারপর হাসানের সাথে চলতে শুরু করলাম। আমি তাকে একবারও জিজ্ঞেস করলাম না কোথায় যাচ্ছি আমরা। রাতে হাসান আমাকে একটা জনমানবশূন্য বাসায় নিয়ে গেল। বাসায় একটা কাকপক্ষীও নেই। আমার কিছুটা ভয় হতে লাগল কারণ সে একজন পুরুষ আমি একজন নারী। যে কোন সময় মাইন্ড চেঞ্চ হতে পারে। তবে ভয় পেলেও কিছু করার ছিল না আমার। হাসান রুমে ঢুকে বাতি জ্বালালো তারপর সে তাঁর ল্যাপটপ অন করল। সে ইমেইল চেক করে কিছু একটা দেখল। আমি জানতে চাইলাম কি দেখলেন? সে তখনও কিছু বলল না। একসময় সে নিজ থেকেই বলল।


"এখানে তানিয়া মেয়েটার সমস্ত কুকর্মের প্রমাণ আছে। এটা দিয়ে ওকে আমি আইনি শাস্তি দিতে পারব,জেল খাটাতে পারব। আর আমি সেটাই করব।"


"আমি যখন বললাম,আরও দুইজন তো ছিল তাদেরকে আপনি চিনেন?"


তখন সে বলল।


"না,আমি শুধু তানিয়া আর সোহেলকে চিনি আর তানিয়ার নতুন বয়ফ্রেন্ডকে চিনি। সোহেল আর তানিয়া দু'জন দুজনকে ভালোবাসত৷ কিন্তু তানিয়া সোহেলকে ধোঁকা দিয়েছে৷ যার কারণে সোহেল তানিয়ার ওপর প্রতিশোধ নিবে বলে ঠিক করে। কিন্তু তাঁর আগেই তানিয়া সোহেলকে ফাঁসিয়ে দেয়। তানিয়া সোহেলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সোহেলকে খুন করে। খুন করার আগে তানিয়া সোহেলের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনেও করে। তারপর তানিয়া সোহেলকে নেশার ঘরে বশ করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সোহেল তানিয়ার অজান্তেই সেটা ভিডিও করে। তানিয়া আসার আগেই গোপনে সে একটা ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিলে যাতে করে পরবর্তীতে সে তানিয়াকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে। সে আমাকে এটা বলেছিল। আমার কেন জানি মন হয়েছিল কোনকিছু ঘটতে যাচ্ছে তাই আমি সোহেলের ওখানে যাই। আর সোহেলকে অর্ধ মৃত্যু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি৷ সোহেলকে খুন করে তানিয়া তাড়াহুড়ো করে সেখান থেকে চলে যায়। হয়তো সে বুঝতে পেরেছিল কেউ আসছে। আমি যখন ওপরে গেলাম তখন তানিয়া নিচে নামছিল। আমার মনের সন্দেহটা আরও জোড়ালো হল,আমি দৌড়ে সোহেলের কাছে গিয়ে দেখলাম সোহেল কিছুটা শ্বাস নিচ্ছে। সে আমাকে সবকিছু খুলে বলে গোপন ক্যামেরার কথাও বলে। এসব কিছু তানিয়া মেয়েটা কোন ভাবে জেনে যায়। তারপর থেকেই সে আমার কাছে থাকা ভিডিওটার জন্য পাগল হয়ে যায়। আমাকে মারার হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু আমি তাকে ভিডিও দেই না। তানিয়ার সাথে সঙ্গ দেয় তাঁর নতুন বয়ফ্রেন্ড। সে আমাকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। যখন ঠিক করলাম পুলিশের কাছে যাব,পুলিশকে সবকিছু দেখাব ঠিক তখনই তানিয়া আর তাঁর বয়ফ্রেন্ড আমাকে আক্রমন করল। তাঁর সাথে সঙ্গ দিয়েছে আরও দুজন। তাদেরকে আমি চিনি না। তবে তারা তানিয়ার কাছের কেউ হবে হয়তো। তারপর তারা আমাকে অনেক মেরেছে কিন্তু আমি ওই ভিডিওটার কথা বলিনি। যখন আমার ফোন চেক করেও তেমন কিছু পেল না তখন তারা হতাশ হয়ে আমাকে চিরতরে শেষ করে দিবে বলে ঠিক করল। কারণ তারা জানতো আমাকে মেরে ফেললেই সব প্রমাণ শেষ হয়ে যাবে। একসময় মনে হয়েছিল আমি বাঁচব না। কারণ ওই সময় অন্ধকার রাতে কোন মানুষ ওখানে আসার কথা না তাই হয়তো তারা আমার মৃত্যু নিশ্চিত করে ওখান থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে গিয়েছে। ঠিক তখনই আপনি এসে আমাকে বাঁচালেন।"


আমি শুধু কথাগুলো শুনছিলাম। একটা মেয়ে এতটা ডেঞ্জারাস হতে পারে আমার জানা ছিল না। যখন ভিডিওটা দেখলাম তখন আমার গায়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল মানুষ কতটা নির্মমভাবে মানুষ খুন করতে পারে আমার জানা ছিল না। কিন্তু এটা দেখার পর আর কোনকিছু জানার বাকি নেই। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম।


"তানিয়া যদি তাকে খুনই করবে তাহলে খুন করার আগে কেন ওটা করল? নিজের সতিত্ব কেন নষ্ট করল? কেন সে তাঁর বয়ফ্রেন্ড সোহেলকে মেরে ফেলার আগে তাঁর সাথে ফিজিক্যালি রিলেশন করল? তাহলে কি সেক্স এডিকটেড ছিল?"


তখন আমার কথার প্রতি উত্তরে হাসান বলল।


"এটা আমার জানা নেই,তবে যতটা মনে হয় সে চেয়েছিল সোহেলকে ফাসাতে। তখন সোহেল তানিয়ার ওপর প্রচন্ড রেগে ছিল। কারণ সোহেল তানিয়ার নতুন রিলেশনের কথা জেনে গিয়েছিল। তাই হয়তো তানিয়া তাকে সেক্সুয়াল চাহিদার লোভ দেখিয়ে ফাসাতে চেয়েছিল। এমনও হতে পারে যদি দুর্ভাগ্যক্রমে তানিয়া ধরা পড়ে যায় তাহলে নিজের সেফটির জন্য সে বলতে পারবে সোহেল তাকে ধর্ষন করতে চেয়েছিল কিংবা করেছে তাই তাকে সে মেরে ফেলেছে। এতে করে তো শাস্তি কিছুটা হলেও কম হবে। কারণ নিজেকে বাঁচানোর জন্য সবকিছুই তো করা যায়। তবে এসবের পেছনে অন্য কোন কারণেও থাকতে পারে। আমার এমনটাই মনে হয়েছে। তানিয়ার নতুন বয়ফ্রেন্ডের একটা মামাতো বোন আছে। সেও নাকি একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। হতে পারে যে দুজন মানুষকে আপনি রেললাইন দেখেছিলেন তারা সেই দুজন৷"


আমি জানতে চাইলাম,


"এখানে ওই দুজন মানুষের লাভ কি? তারা কেন শুধু শুধু তানিয়া আর তানিয়ার বয়ফ্রেন্ডকে সাহায্য করতে যাবে?"


তখন সে বলল।


"দুনিয়ার সবকিছুতেই লাভ খুঁজে পাওয়া যায় না৷ হয়তো তাদের লাভটা শুধু তারাই জানে। তবে লাভ তো অবশ্যই আছে।"


"আপনাকে রেললাইনে ফেলে দেওয়ার জন্য তানিয়ার নতুন বয়ফ্রেন্ড আসল না কেন? সেও তো আসতে পারত।"


"সে যে এসেছিল না আপনি এতটা সিউর কিভাবে হতে পারেন?"


আমি এটার শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি কিছুক্ষণ বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বললাম।


"আসলে তো আমি দেখতাম,কিন্তু আমি তো তাকে দেখিনি।"


"হয়তো আপনার চোখে পড়েনি।"


আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিন অন্ধকার রাত হলেও থেকে থেকে কিসের যেন আলো আসছিল। সেই আলোতে আমি তিনজন মানুষকেই দেখেছি এবং যাদেরকে আমি চিনি। চতুর্থ মানুষটা আমি দেখিনি। তাহলে কি চতুর্থ মানুষটা আমার চোখের আড়ালে ছিল?


আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।


"তাহলে এখন কি করবেন?"


তখন সে বলল।


"প্রমাণ গুলো পুলিশের হাতে দিব। আমি চাই আমার বন্ধুর হত্যাকারীর শাস্তি হোক। তবে তাঁর আগে আমি দেখাবো ব্ল্যাকমেইল কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। আর যারা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তাদেরকেও আমি এত সহজে ছেড়ে দিব না। তবে এই ঘটনার এখনই সমাপ্তি হবে না। ছয় মাস পরে হলেও আবার নতুন করে এখান থেকেই শুরু করব। ততদিন আমি বিশ্রামে থাকব।"


অনেক রাত,আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। রাতের আকাশটা বড্ড অন্ধকার। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে রুমের ভিতরটাতেও নিকষকালো অন্ধকার বিরাজ করছে। আমার খুব ভয় হচ্ছিল। এমন সময় বুঝলাম কেউ আমার গায়ে হাত দিয়েছে। আমাকে পেছন থেকে হিংস্র জানোয়ারের মত কেউ একজন শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না। আমি হাসান হাসান বলে চিৎকার করতে লাগলাম। তখন কেউ একজন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল।


"কাকে ডাকছো? আমিই হাসান।"


আমি বুঝলাম আমার সুখটা ধরা দিবে না। আমার জীবনে কোন সুখ নেই,থাকতে পারে না।


সমাপ্ত।


প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এভাবে গল্পটা শেষ করার জন্য। তবে অনেকদিন পরেও হলেও আপনাদের ধোঁয়াশাটা দূর করব। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।


সমাপ্ত।


পর্বের আরও গল্প পড়ুন।