ডিভোর্স নারীর গল্প | টাকা ছাড়া পৃথিবী খুব স্বার্থপর

 ডিভোর্সের গল্প

ডিভোর্সের গল্প

বাবার লা'শে'র পাশে বসে আছে তানিয়া। তানিয়াকে ডি'র্ভো'স পেপার এগিয়ে দিলো তন্ময়। তানিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তন্ময়ের হাত থেকে ডি'র্ভো'স পেপার নিয়ে সাক্ষর করে দিলো?  তন্ময় খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়েই ছিলো তানিয়ার দিকে। তানিয়া অশ্রু সংবরণ করে বললো,, 


" আমি আপনাকে মুক্তি করে দিলাম! এই বিয়ের শর্ত যেমন ছিলো পাঁচ লক্ষ্য টাকার বিনিময়ে আপনি আমাকে বিয়ে করছেন।  তেমন উল্টোভাবে শর্ত ছিলো দেনমোহর ছয় লক্ষ্য টাকা। আমি আপনার মতো কা'পু'রু'ষে'র কাছে কিছু দাবি করে নিজের মনুষত্ব্যকে  অপমান করতে পারবো না। আজকের এই ম'র্মা'হত ঘটনায় আপনার মুখ দেখতে চাইনা। দয়া করে আপনি এক্ষুণি এই স্থান ত্যাগ করবেন। "


" তন্ময়ের মুখে কোনো কথা নাই?  নিজের জিহ্বাকে মুখের লালা দিয়ে ভিজিয়ে বলে কাজটা তুমি ঠিক করলে না তানিয়া?  এর পরিণতির জন্য পস্তাতে হবে তোমাকে? "


" কোন পরিণতির কথা বলছেন?  যেই পরিণতির জন্য আমার বাবার লা'শ দাফন হচ্ছে না। তারচেয়েও কি করুণ পরিণতির কথা বলছেন?  আমার জানামতে এরচেয়ে করুণ পরিণতি হয়না? "


" সময়ের সঙ্গে যু'দ্ধ মোকাবিলা করার জন্য  প্রস্তুত থাকো তানিয়া?  জীবন এতো সহজ নয়। জীবনকে পরিচালনা করা সহজ নয়। আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছো। তার প'রিণতি তোমাকেই ভোগ করতে হবে? "


তানিয়া বাবার লা'শে'র সামনে তন্ময়কে কাঠকাঠ গলায় বলে,, 


" জানেন তন্ময় আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভূল ছিলো আপনাকে বিয়ে করা। আপনি বিয়ের পণ নিচ্ছেন জেনেও আপনাকে কবুল করা, আমার জীবনে অনেক বড় ভূল ছিলো। কারণ প্রথম দেখাতেই আপনাকে ভালো লেগে গেছিলো?  তখনকার সিদ্ধান্ত টা ছিলো আবেগের। কারণ যে পুরুষ আমার বাবার মৃ'ত্যু'র দিন পণের টাকা দাবি করতে পারে। আমার বাবার লা'শ'কে দাফন করতে মানা দেয়। তার সঙ্গে আর যাই হোক সংসার হয়না? "


"  আমিতো আমাদের সংসারের সমৃদ্ধির জন্য টাকাগুলো চেয়েছিলাম?  আচ্ছা তুমি বলো বাবার লা'শ দা'ফ'ন হয়ে গেলে আমাদের পণের টাকা কে দিতো?  তোমার ছোটভাই তো এসব কিছু অস্বীকার করতো?  এরজন্য আমি চেয়েছিলাম। এর বিনিময়ে তুমি আমাকে ডি'ভো'র্স দিলে?  "


" মৃ'ত্যু'পুরিতে হঠাৎ অট্টহাসি দিয়ে উঠলো তানিয়া। এরপরে বললো আপনার কপাল ভালো এখনো এখানে দাড়িয়ে কথা বলতেছেন?  কারণ আপনার প্রতি একটু হলেও আলাদা অনুভূতি জন্ম নিয়েছিলো?  এরজন্য জেলে পাঠালাম না আপনাকে।  নিজের ভালো চাইলে এখান থেকে চলে যাবেন। কখনো এই কাপুরুষের চেহেরা নিয়ে আমার সামনে আসবেন না?  "


" তন্ময়  বলে উঠে, এই পৃথিবীতে টাকাই সব?  যার টাকা আছে তার সব আছে?  আলহামদুলিল্লাহ তোমার মতো আপদ আমার ঘাড় থেকে নামলো?  "


তানিয়া এবার বাবার সাদা কাপড়ে আবৃত থাকা লা'শে'র গলা ধরে কাঁদতে কাদতে থাকে। নিঃশ্ব মনে প্রলাপ বকতে থাকে!  বাবা আপনি আমাকে এই কোন কাপুরুষের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে গেছিলেন?  যে আপনার মৃ'ত্যু'র দিন আমাকে এতোবড় কষ্ট দিতে পারলো?  আজ তুমি নেই বলে তানিয়াকে সবাই এতকিছু বলতে পারছে?  


" তানিয়া ছোটভাই ছামাদ রেগে যায় তন্ময়ের উপর। মা'র'তে যায় তন্ময়কে। কিন্তু গ্রামের লোক ছামাদকে আটকায়। "


মৌলভী সাহেব বলে উঠে,, 


লা'শ'কে সামনে রেখে এভাবে মা'রা'মা'রি ক্র'ন্দ'ল করা ঠিক না ছামাদ?  তোমার বাবার শেষকৃত্য দ্রুত করতে হবে?  অনেক তো হলো চলো এবার জানাযা অনুষ্ঠিত করতে হবে? 


" গ্রামের আরো দুজন পাওনাদার এসে বলে,, আমরা ছামাদের বাবার কাছে পাঁচ লক্ষ্য টাকা পাই। এই লা'শ দাফন করার আগে আমাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে?  "


" ছামাদ আর তানিয়া এই কথা শুনে ভেঙ্গে পড়ে। দুই ভাইবোন একে অপরকে দেখে। তন্ময় মিঠিমিঠি হাসে। হুট করে ছামাদ বলে উঠে,,  


আপনাদের কাছে যে বাবা পাঁচ লক্ষ্য টাকা ঋণ নিয়েছে?  তার প্রমাণ কি?  "


" পাওনাদার দুজনেই তার বাবার বন্ডসই করা দলিল দেখায়। এরপরে নিচে সাক্ষীর নাম ও দেখায় । সাক্ষীগুলো এসে বলে হ্যা তোমার বাবা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে?  মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে দুই লাখ আর ছামাদকে বিদেশে নিয়ে  যাওয়ার জন্য তিন লাখ নিয়েছে। "


" তানিয়া এবার বাবার লা'শ ছেড়ে তার মায়ের কাছে যেয়ে বলে মা তুমি এসব জানতে না?  "


" তানিয়ার মা অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে ওরা ঠিক বলছে?  "


" তানিয়া নিজেকে শক্ত করে। এরপরে গ্রামের সবার সামনে বলে বাবার যাবতীয় পাওনা আমি শোধ করবো?  "


" গ্রামের সকল লোক অবাক চোখে তাকায় তানিয়ার দিকে?  তন্ময় মিটিমিটি হেসে বলে এতো সহজ না ইনকার্মের জগৎ তানিয়া?  যে চাইলেই সবকিছু করা যায়?  "


" তানিয়া উ'গ্র'স্বরে বলে,, আপনি কে ভাই মাঝখানে কথা বলছেন?  আপনাকে তো আমি বা আমার পরিবারের কেউ চিনে না?  তাহলে অযথা এখানে দাড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করতেছেন ক্যান?  পুলিশ ডাকবো?  "


" তন্ময় তানিয়ার বলা ব্যাঙ্গ নিতে পারলো না?  দ্রুত তানিয়ার বাড়ি থেকে চলে গেলো। "


" সকল লোকের কাছে সেদিনকার মতো মীমাংসায় যেয়ে তানিয়া তার বাবার লা'শ দাফন করতে সক্ষম হয়। সব ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে বহন করে তানিয়া আর ছামাদ। "


" কিছুদিন পর তানিয়া তার বাবার মিলাতের ব্যবস্থা করে। ছামাদ বিদেশে চলে যায়। তানিয়া আর তানিয়ার মা ছাড়া তাদের বাড়িতে কোনো পুরুষ নাই।  তানিয়া রাতে সেলাইমেশিন চালাতো। দিনে একটা এনজিওতে কাজ করতো?  "


তানিয়ার সেলাই করা কাপড় গ্রামের লোকের কাছে অনেক পছন্দ হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন কারুকাজ করতেও সক্ষম তানিয়া। তাই ছামাদের কথামতো অনলাইনে একটা পেইজ খুলে। সেই পেইজে বিভিন্ন ধরনের কাপড় বেচাকেণা শুরু করে তানিয়া। ইন শা আল্লাহ  তিনমাসে তানিয়া সাবলম্বী হয়ে যায়। তানিয়া মা বাড়িতে শুধু রান্নার কাজ করতো?  তানিয়া ঘরে বাইরে বিভিন্ন জায়গায় নিজ হাতে তার তৈরি করা পোশাকগুলো ডেলিভারি পৌঁছে দিতো। তানিয়া আজ সফল হয়েছে। "


একবছরের মাথায় তানিয়া ও ছামাদ বাবার ঋণ পরিশোধ করে ফেলে। এখন দু ভাইবোন সাবলম্বী। 


২৩ জুলাই রাত ৮.৩০ টা 


তানিয়া একটা অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দিতে মোহাম্মদপুরের দিকে যাচ্ছে। ইদানীং তানিয়া অর্ডারের চাপে সিক্ত। তাই তানিয়া ঠিক করছে গতকাল থেকে এসব কাজ কুরিয়ারে করবে। কারণ বিশস্ত ডেলিভারি ম্যান পাচ্ছেনা। রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা মামাকে যাতায়াতের 

   ভাড়া গুজে দিয়ে সামনের দিকেই অগ্রসর হতেই দেখলো অনেক লোক  ভীড় জমে আছে সামনে। তানিয়া ভীড় টেলে সামনে যেতেই দেখতে পেলো?  একজন লোক এ'ক্সি'ডে'ন্ট  করে পড়ে আছে। তানিয়া মানবতার খাতিরে বললো আপনারা কেমন লোক অ্যাম্বুলেন্স না ঢেকে তামাশা দেখছেন এইভাবে। এইখানে এই লোক এভাবে পড়ে থাকলে তো মা'রা যাবে। তানিয়া ৯৯৯ এ কল করে। 


ভীড় থেকে একজন লোক বলে উঠে। এই আপু কল করে কি করবেন?  ওনাকে কি আপনি চিনেন?  ওনি তো মা'রা গেছে?  


তানিয়া বিস্মমিত হয়ে তাকায়  লোকটির উপর৷ এরপরে এ'ক্সি'ডে'ন্ট করা সেই মানুষটার মুখের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে। তানিয়া এইটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না?  দেখতো পেলো তার প্রাক্তন তন্ময় এইভাবে ম'রে পড়ে আছে।তানিয়ার চোখের কোণে অজান্তেই চোখের জ্বল এলো। 


তানিয়ার আজ মনে পড়লো তন্ময়ের শেষ কথাটি টাকাই সব?  


আসলেই কি পৃথিবীতে টাকাই সব?  সম্পর্কগুলো কিছুনা?  শেষমেশ তো আমাদের যেতেই হয় আল্লাহর ডাকে মোহের দুনিয়া ছেড়ে। তাহলে টাকার কারণে এভাবে সম্পর্ক গুলি নষ্টের মূল্য কি?? 


            ___   সমাপ্ত   ___    


-বাবার_ঋণ 

-রিয়া জান্নাত

-অণুগল্প


এমন আরও গল্প পড়ুন।