ভালোবাসার অনুভূতি | সত্যি কারের ভালোবাসা নিয়ে স্ট্যাটাস

 সেরা ভালোবাসার গল্প

সেরা ভালোবাসার গল্প

বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে পরাগ। দেখতে যেমন হেন্ডসাম,,,চরিত্রও তেমন মাধুর্য। জীবনে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। অভাব কথাটা হয়তো সে কখনও শুনেনি।ভোগ করেনি কোনো কষ্ট। তবুও তার মনে নেই কোনো অহংকার। খুব সহজেই আপন করে নেয় মানুষকে। মিশে যায় সবার সাথে।

কাল পরাগের অফিসে প্রথম দিন।সবে মাত্র পড়াশুনা শেষ করে দেশে আসলো। এর মধ্যে তার ঘাড়ে কম্পানির সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিলো তার বাবা। কাল থেকে অফিসে যাবে।কোনো কিছুতেই তার এতো মায়া নেই। শুধুমাত্র এতিম খানার বাচ্চাদের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। এক মাত্র সেই জায়গায় গেলেই তার শান্তি লাগে। দেশে থাকতে প্রচুর যেতো সেখানে। বাচ্চাদের সাথে খেলা করতো।তাদের জন্য কাপড়, আইসক্রিম ,চকলেট নিয়ে যেতো। এতে বাচ্চারা যে কতো খুশি হতো বলা বাহুল্য। সাথে পরাগও।


কাল থেকে একটা নতুন দায়িত্বে নিতে হবে।তাই আজকের দিনটা সে এতিমখানা বাচ্চাদের সাথেই থাকতে চায়। তাদের মুখের হাসি তার জীবনের অনুপ্রেরণা হতে পারে। তাই বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা,খেলনা,চকলেট,আইসক্রিম নিয়ে রওনা দিলো এতিমখানার উদ্দেশ্যে।


অনেকদিন পর বাচ্চাদের সাথে কিছুটা মুহুর্ত। ভাবতেই ভালো লাগছে পরাগের। এই সুখটা মনে হয় লক্ষ লক্ষ টাকাতেও খুঁজে পায়না পরাগ। মনের আনন্দে আপন মনে এগিয়ে চলেছে পরাগের গাড়ি।


কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেলো স্বপ্নের ঠিকানায়। পরাগ গাড়ি থেকে নেমে দুজন লোককে বললো গাড়ি থেকে বাচ্চাদের জিনিস গুলো নামিয়ে ভেতরে নিয়ে আসতে। 


পরাগ একপা দুপা করে ভেতরে ঢুকে গেলো। ভেতরে ঢুকতেই তার কানে ভেসে আসলো একটা মিষ্টি গানের সুর। যে সুর এতোই মধুর যে,, পরাগ মুহুর্তেই বিলিন হয়ে যাচ্ছে সেই অজানা সুরে। সে যেন হারিয়ে যাচ্ছে অজানা এক ভালো লাগায়।


সুরের ধোঁয়ায় এগিয়ে যেতে লাগলো সেই মনমাতানো সুরের দিকে। কিছুটা এগিয়ে এসে দেখে একজনকে হাজারটা বাচ্চা ঘিরে রেখেছে। সুরটা সেই জায়গা থেকেই ভেসে আসছে।এতো সুর নয়,,,যেন মধু মাখা কোকিলের ডাক। সে ধীর পায়ে আরো একটু এগিয়ে গেলো। এবার স্পষ্ট দেখতে পেলো সেই মায়াবতীকে। মায়াবতী বললে ভুল হবে। এ যেন এক স্বর্গের পরী। মুহুর্তেই ঝাপসা হয়ে এলো পরাগের চোখ।


সে কাকে দেখছে?? এ কি আসলে কোনো মেয়ে নাকি অন্য গ্রহ থেকে ভুল করে চলে আসা কোনো অপ্সরা। বসে কি চোখে ঠিক দেখছে??? নাকি সে ঘুমের মধ্যে কোনো স্বপ্ন দেখছে??


সে কিছুক্ষন অপলক ভাবে চেয়ে রইলো এই অপ্সরার দিকে। তারপর নিজে নিজেকে যাচাই করে নিলো এ কোনো স্বপ্ন কিনা। না এ স্বপ্ন নয়। এ সত্যি। একটা মেয়ে বসে গানে সুর তুললো আর হাজারটা বাচ্চা নিশব্দে শুনছে সেই গানের ধোঁয়া।


পরাগ আগের মতোই সেই জায়গায় দাড়িয়ে আছে। আছে তাকিয়ে আছে সেই মেয়েটার দিকে। তার যেন এক রকম নেশা লেগে গেছে। এই নেশার ঘোর যে ছাড়তেই চাইছে না। এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করলো মেয়েটার প্রতি।


পরাগ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো। সে কি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলো নাকি কোনো মায়া কাজ করছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কোনো উত্তর পেলো না। আনমনে এসব ভেবেই যাচ্ছে। কারো ডাকে পরাগ বর্তমানে ফিরে আসে।তাকিয়ে দেখে এতিমখানার হুজুর। পরাগ হুজুরকে সালাম দেয়।


হুজুর অনেক্ষন খেয়াল করলো পরাগ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। হুজুর বিষয়কে আর তেমন কোনো গুরুত্ব না দিয়ে পরাগকে সাথে নিয়ে বাচ্চাদের কাছে গেলো। পরাগ বাচ্চাদের কাপড়,খেলনা,চকলেট,আইস্কিম দিলো। বাচ্চাদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটালো। এখন পরাগের অনেক ভালো লাগছে। সারাটা দিনেই চলে গেলো বাচ্চাদের সাথে। এবার নিজের গন্তব্যে যাওয়ার পালা।


কিন্তু কি যেন একটা পিছুটান।হ্যাঁ সেই অপ্সরা। যাকে আরো একবার দেখার জন্য বেকুল হয়ে উঠলো পরাগের মন। কিন্তু কোথায় সেই মায়াবতী?? কোথাও তো তাকে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি চলে গেছে?? আচ্ছা এই মেয়ে কি এখানে প্রতিদিন আসে?? নাকি আজকে শুধু এসেছিল?? নানা রকম প্রশ্ন ঘুরছে তার মাথায়।


কিন্তু কোনো প্রশ্নের উত্তর তার এখন জানা নেই। ব্যর্থ হয়ে সে বাসায় ফিরে আসলো। রাতে সবার সাথে ডিনার করলো। নিজের রুমে এসে গিটারটা হাতে নিলো। টিকটক শব্দে সুর তুলার চেষ্টা করলো। কিন্তু না। সে সুরটা তুলতে পারলো না। বার বার সেই অপ্সরার সুরটাই গিটারে চলে আসছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে অজানা অপ্সরার মুখ। কানে গালছে সেই সুর,,,


সারা রাত ঘুমাতে পারেনি পরাগ। অস্থিরতা কাজ করছে পরাগের মনে। বারবার ছুটে যেতে মন চাইছে সেই মায়াবতীর কাছে। কি নেশা মায়াবতীর সুরে।কি মায়ায় মাখা তার টানাটানা দুটি চোখে। কি অপরুপ তার তার চাহনি। বার বার যেন কাছে টানে।মনে এখনি তার চোখ দিয়ে তাকে বশ্য করবে।


সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে পরিবারের সাথে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো। আজ তার অফিসে প্রথম দিন। আজ থেকে কতো দায়িত্ব তার। অফিসে সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে নিজের কেবিনে চলে আসলো। কিন্তু না,কিছুতেই কাজে মন বসছে না। একটি বার যদি সেই মায়াবতীর মুখটি দেখতে পেতো।তাহলে হয়তো ভালো লাগতো। কিছুক্ষন ছটপট করে অফিস থেকে বের হয়ে আসলো।


সেই এতিমখানায় ডুকে চার পাশে খুঁজতে লাগলো সেই মায়বতী কন্যাকে। কিন্তু না।কোথাও তার কোনো অস্থিত্ব নেই। সাথে সাথে পরাগের মুখে হতাশার চাপ চলে আসলো। সে অসহায় বাচ্চার মতো দাড়িয়ে আছে। আর তাকিয়ে আছে বকুলতলায়। যেখানে গতকাল সে মায়াবতীকে দেখেছিল।


বেলাশেষে একরাশ হতাশা নিয়ে বাসায় আসলো। বাসায় কোনো কিছুতেই তার মন বসলো না। শুধু ছটপট করছে। এটা তার মায়ের চোখ এড়ায় নি।তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে তার মাকে সব খুলে বলে।তার মা তাকে শান্তনা দেয়।


এমন করে দুটিদিন কেটে যায়। পরাগ প্রতিদিন এতিমখানায় যায়। কিন্তু সেই মেয়ের দেখা পায় না। পরাগ অস্থির হয়ে উঠে। তার বুকে ব্যথা অনুভব করে। প্রথম দেখাতেই সেই মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। পরাগ বুঝতে পারে এই মেয়েকে ছাড়া তার জীবন গতিহীন হয়ে পড়বে। সেই মেয়েটাকে যে তার জীবনে বড্ড প্রয়োজন।


আজ আবার সেই জায়গায় গিয়ে দাড়িয়ে আছে পরাগ। কিন্তু আজও তার কোনো খুঁজ নেইতবে কি হারিয়ে গেলো সে? হঠাৎ পরাগ নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শো পেলো। তাকিয়ে দেখে হুজুর,,,,,,


আমি খেয়াল করছি কিছুদিন ধরে তুমি এখানে এসে দাড়িয়ে থাকো। তুমি কি কাউকে খুঁজছো বাবা???(হুজুর)


আসলে আমি যেদিন প্রথম এখানে এসেছিলাম সেদিন এখানে একটা মেয়েকে গান গাইতে দেখেছিলাম। আপনি বলতে পারেন সেই মেয়েটা কে?? কি তার পরিচয়? কি তার নাম?? কোথায় থাকে? আর এখানে কেন এসেছিল?? সে কি প্রতিদিনি এখানে আসে????(পরাগ)


পরাগ এক দমে সব কথা বলে ফেলে। পরাগের প্রশ্ন শুনে হুজুর একটু মুচকি হাসি দেয়। তার পর পরাগকে নিয়ে নিজের জায়গায় বসে। তার পর বলতে শুরু করে।


সেই মেয়ের নাম মিষ্টি। তার কোনো পরিচয় নেই। ছোট বেলা থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে।তার দুটি পা নেই। সে এখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ায়।খুব ভালো একটা মেয়ে।(হুজুর)


হুজুরের কথা শুনে পরাগের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে তার দুটো পা নেই?? সে এতিম?? সে অন্য পাচঁজনের মতো জীবন যাপন করতে পারে না? পরাগের বুক ফেটে কান্না বের হতে চাইছে। কিন্তু না,,,লোকে বলে ছেলেদের চোখে নাকি পানি মানায় না। তাই সে কষ্ট করে পানিটা লুকিয়ে নিলো। তার পর হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলো,,,,,,


আমি কি মিষ্টির সাথে দেখা করতে পারি?? কিছু কথা বলতে পারি??? (পরাগ)


হুজুর পরাগকে দেখা করার অনুমতি দেয়। পরাগ চলে যায় মিষ্টির সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখে মিষ্টি হুইল চেয়ারে বসে বাচ্চাদের পড়াচ্ছে। পরাগ অপলক ভাবে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে, পা নেই তো কি হয়েছে।না হয় আমার দুটি পা দিয়েই দুজন বাকি পথটা চলবো। পরিচয় নেই। তাতে কি? আমিই তার পরিচয়।


মিষ্টি খেয়াল করে একটা ছেলে তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। ক্লাস শেষে মিষ্টি বাইরে বেরিয়ে আসে। পরাগ মিষ্টির দিকে এগিয়ে যায়।


আমার নাম পরাগ। আমি কি তোমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলতে পারি??? (পরাগ)


হ্যাঁ,বলুন কি বলতে চান (মিষ্টি)


পরাগ মিষ্টির জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করে। মিষ্টির সাথে কথা বলে বুঝতে পারলো মিষ্টির জীবনটা কষ্টে ভরপুর। পরাগ মিষ্টির কষ্ট কমানোর জন্য কিছু করতে চায়। এমন একটা মেয়েকে সে এভাবে ঝড়ে দিতে চায় না। মিষ্টি যেন এক সদ্য ফুটন্ত গোলাপ। যেটা পরাগ তার বেডরুমে সযত্নে সাজিয়ে রাখতে চায়। মিষ্টির সাথে পরাগের একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায় কয়দিনে।


আজ পরাগ রাস্তা থেকে কয়েকটা গোলাপ কিনে নিয়ে যায় মিষ্টির কাছে।মিষ্টি ক্লাস শেষে বাইরে বেরিয়ে আসে।পরাগ মিষ্টির সামনে গিয়ে হাটুবাজ করে বসে।


আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম মিষ্টি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি তোমার পরিচয় হতে চাই। আমি এই কয়দিনে বুঝতে পেরেছি পরাগ কে সতেজ রাখতে হলে তার জীবনে মিষ্টিকে খুব প্রয়োজন।

আমি তোমাকে নিয়ে আমার বাকি জীবন পাড়ি দিতে চাই। আমাকে কি তোমার চলার পথের হুইল চেয়ারের দায়িত্বটা দিবে?? আমাকে কি তোমার হাতটা ধরার একটা সুযোগ দিবে??? কথা দিচ্ছি সারা জীবন আগলে রাখবো।হয়তো তোমাকে সব সুখ দিতে পারবো না। কিন্তু কথা দিলাম কোনো কষ্টের ছায়াও তোমার কাছে আসতে দিবো না। আমার কি প্রতিদিন তোমার গানের নেশায় আসক্ত হতে পারবো?? এই সুযোগটাকি আমি পেতে পারি????(পরাগ)


পরাগের এমন কথায় মিষ্টির চোখ কান্নায় ভরে যায়। সে স্বপ্নেও কোনোদিন কল্পনা করেনি একজন কেউ তাকে এমন করে কিছু বলবে।কষ্টেভরা জীবনে কেউ তাকে ভালোবাসবে।কান্নার বন্যা বইছে মিষ্টির চোখে। পরাগ উঠে এসে মিষ্টির চোখ দুটি মুছে দিলো। মিষ্টি পরাগকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পরাগ কিছুই শুনতে চায় না। পরাগ মিষ্টিকে কোনো রকম বুঝা মনে করে না। সে মিষ্টিকে মন দিয়ে ভালোবাসে।


সেদিনেই পরাগ মিষ্টিকে বিয়ে করে নিজের বাসায় নিয়ে যায়।পরাগের পরিবারও মিষ্টিকে মেনে নেয়। পরাগের এমন মন মানসিকতা দেখে তার বাবা মার গর্বে বুক ভরে যায়। এমন একজনকে জন্ম দেওয়া শত জনমের পূন্য। পরাগ মিষ্টিকে অনেক কেয়ার করে।আগলে রাখে বুকের পাজরে।প্রতিদিন মিষ্টি পরাগকে গান শুনায়। সেই গানে মাতাল হয় পরাগ। পরাগ হয়ে উঠে মিষ্টির পরিচয়।


আসলে পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কোনো না কোনো মিষ্টির পরিচয় হয়ে উঠে। অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া জীবনে আলো নিয়ে আসে। অসহায় একজনের হাত ধরে শিখায় বেঁচে থাকার মানে। যুগে যুগে বেঁচে থাকে দুটি মনে অব্যক্ত ভালোবাসা।


-সমাপ্ত


ভালোবাসার কষ্টের গল্প পড়ুন।