- বাস্তব সম্মত কিছু কথা
" আপা,ওই বাড়ির বউটা সুবিধার না।স্বামীরে তোয়াক্কা করেনা,সংসারে মন নাই।বাচ্চারেও খেয়াল রাখেনা "
ভ্রু কুঁচকে বললাম " তুমি জানো কিভাবে? "
" কি যে কন! মুই জানবো না তা কে জানবে?মুই তো ওগো বারিত কাম করি।কাপড় ধুইয়া দেই "
" ওহ আচ্ছা "
" হেয় একখান বজ্জাত বেটি ছাওয়া বুঝলেন গো আপা,চরিত্রের দোষ "
বুয়া কথায় কথায় ওই মহিলাকে নিয়ে আরো কুৎসিত,নোংরা সব বিষয় বললো।বারন করা সত্ত্বেও যেন থামতেই চাইছে না।
স্বামী কাজের চাপে থাকে,কথা বলার সময় হয়না।তাই অবসর সময়ে বুয়ার সাথে বসেই গল্প করতাম।কিন্তু আজ তার মুখে অন্যজনাকে নিয়ে সমালোচনা করতে দেখে মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো।
বুঝতে বাকি রইলো না এই বুয়া অন্যজনার কাছে গিয়েও আমায় নিয়ে সমালোচনা করে!
গল্প-সমালোচনা
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- ভালোবাসার কিছু বাস্তব কথা
বিশ মিনিট আগে স্ত্রীকে চা দিতে বলেছি।এখনো আনার নাম নেই।রেগেমেগে গেলাম রান্নাঘরে।
" কতক্ষণ আগে চা চাইছি? এতক্ষণ লাগে?" কথাটা বলতে বলতে রান্নাঘরে ঢুকলাম।স্ত্রী নেই।দরজা খোলার শব্দ হলো।
দেখলাম স্ত্রীর হাতে চা পাতার প্যাকেট।আমায় দেখে স্ত্রী বিনীত ভঙ্গিতে বললো " চা পাতা ছিলো না গো।আর একটু দাঁড়াও।জল গরম আছে,বেশিক্ষণ লাগবে না "
রান্নার কাজে স্ত্রীর ঘর্মাক্ত শ"রীর,চোখে মুখে ক্লান্তিবোধ দেখে এতোক্ষনের রাগ মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে গেলো।কিছু বলতে পারলাম না।থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম।স্ত্রী সরল চোখে তাকিয়ে বললো
" কিছু বলবে? "
বললাম " তোমার কিছু লাগবে? "
স্ত্রী মুচকি হেসে বললো " তোমায় লাগবে "
ওর কথায় হাসলাম।টুলে বসতে বসতে বললাম " তারপর মহারানী, কি কি করলে সারাদিন?"
স্ত্রী মহাব্যস্ত হয়ে তার সারাদিনের কাজের কথা বর্ণনা করা শুরু করলো।আমি কোনো কথা শুনছি না,শুধু মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।মেয়েটার বয়স যেন দিনদিন কমছে,কি মিষ্টি মুখ!
কথা বলতে বলতে স্ত্রী বললো " ধুর,তোমার সাথে এইজন্য গল্প করে মজা নেই।সারাক্ষণ শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে "
" তুমি তো চাইলেই এই মুগ্ধ চোখ বন্ধ করিয়ে দিতে পারো,তোমার নরম ঠোঁ"টের স্পর্শে! "
এমন কথায় স্ত্রীর গা"ল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।নিজেকে তখন সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে।টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম,ঠোঁ"টের নরম স্পর্শ এবার না নিলেই যে নয়!
গল্প-নরম_স্পর্শ
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- বাস্তব জীবন বড়ই কঠিন
ভাইয়ের বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি।ভাই উপহার হিসেবে ভাবীকে হিরার আংটি পড়িয়ে দিলেন।
সবার করতালি।বলাবলি করছে " বউকে কত ভালোবাসে, হীরার আংটি উপহার দিলো।এত দামী উপহার ক'জন দিতে পারে? "
এসব শুনে মধ্যেবিত্ত আমি স্ত্রীর দিকে একপলক তাকালাম।স্ত্রীর মুখ হাসিহাসি।আমার মনে বেদনার ছাপ!বিয়ের পর ওকে দামী কিছু উপহার দেওয়ার সামর্থ্য আমার হয়নি।
এসব দেখে ওর ও মনে মনে হয়তো খারাপ লাগা তৈরি হচ্ছে!সেও হয়তে স্বামীর কাছে দামী উপহার পাওয়ার ইচ্ছক রাখে।নিজেকে ভিষণ তুচ্ছ এবং নর্দমার মতো মনে হতে লাগলো।
ভাবী তার হাতের আংটি আমার স্ত্রীকে দেখিয়ে বললেন " আংটিটা কি সুন্দর তাই না? "
স্ত্রী হেসে বললো " হ্যা দিদি,খুব সুন্দর।তোমার ফর্সা হাতে দারুণ মানিয়েছে"
" তুমি মন খারাপ করিও না।আমার সোনার একটা আংটি আছে,ওটা তোমায় পড়তে দিবো "
এতটুকু বলে ভাবী চলে গেলো।স্ত্রী ধৈর্য্যশীল মেয়ে,তাই ভাবীর এহেন অপমান ও হাসি মুখে সহ্য করলো।
লজ্জা,নিজের প্রতি একরাশ ঘৃণা এবং অসহায়ত্ব নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালাম।স্ত্রী চোখ ইশারায় আমাদের একমাত্র ফুটফুটে মেয়েকে দেখিয়ে দিয়ে বললো
" আমার ও আছে, হীরের টুকরো মেয়ে।সেরা উপহার! "
গল্প-উপহার
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব কথা
অবনী বন্ধ্যা,সে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম।এই নিয়ে পরিবার,এলাকায় সবাই তাকে অপয়া বলে ডাকে।
পরিবারেও সে অবহেলার পাত্র।সারাদিন সময় কাটে ঘরের টুকটাক কাজে।রান্না ছাড়া বাকি অবসর সময়টায় অবনী নীরবে কাঁদে।সে কান্না কারো কান অব্ধি পৌঁছায় না।
অবনীর এই চাপা ব্যাথা অবনীর শ্বাশুড়ী মা ঠিকই টের পান।টের পেলেও বা কি! এর যে কোনো সমাধান নেই।কিন্তু ছেলে বউয়ের এহেন কষ্ট কি মুখ বুজে সহ্য করা সম্ভব? চোখের সামনে মেয়েকে মনম"রা হয়ে থাকতে দেখে কোন মায়ের মন ঠিক থাকে?
অনেক ভেবে অবনীর শ্বাশুড়ী মা বুঝলো অবনীকে ব্যস্ত রাখতে হবে।ব্যস্ত না থাকলে এই ব্যথা নিরাময়ের কোনো উপায় নাই।
তিনি একরাতে অবনীকে গিয়ে বললেন " মা,তুমি বরং চাকরি যোগাড় করো।নিজেকে ব্যস্ত রাখো,দেখবে খারাপ লাগা আর থাকবে না "
অবনী প্রথমে রাজি হয়নি।শ্বাশুড়ির অনেক জোরাজুরিতে পরিচিত একজনের রেফারেন্সে অবনীকে চাকরি নিয়ে দেওয়া হলো।
ফলস্বরূপ অবনী আটটা পাঁচটা চাকরির ডিউটি করে।বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে রান্না করে।সারাদিনের ধকলে খাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে।
অবনীর কষ্ট কিছুটা ভুলিয়ে দিতে পেরে অবনীর শ্বাশুড়ির মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে।তবুও মনের এক কোণে ব্যাথা থেকেই যায় অবনীর,তাই তো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আঁচলে মুখ চে"পে কান্না করে।এই ব্যথা যে কখনো নিরাময় হবার নয়!
গল্প-আত্নব্যথা
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- life বাস্তব কথা নিয়ে স্ট্যাটাস
আজ আমার বিয়ে।মনে হাজারো রোমাঞ্চকর অনুভূতি,ভালোবাসার মানুষটাকে আজ নিজের করে পাবার দিন!
বাড়ি ভর্তি আত্নীয় স্বজন।সবাই আমায় নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেছে।কিছুক্ষণ পরপরই হবু বর কল দিয়ে "ভালোবাসি" বলছে।সবমিলিয়ে অন্যরকম একটা ঘোরের মতো তৈরী হচ্ছে।
এখন ফোন আসলেই সবাই মুখ টিপে হাসে।মুখ গোমড়া করে বললাম " তোমরা কি ভাবো?সবসময় উনিই ফোন দেন? আমার কি বান্ধবীর কল দেয় না নাকি? "
পাশ থেকে ছোট ভাই বললো " বান্ধবী কল দিলে মুচকি মুচকি হাসতে হয় নাকি দিদি? "
পড়ে গেলাম চরম লজ্জায়! ধমক দিয়ে বললাম " তুই বেশি বুঝিস "
ঠিক তখনই হবু বরের ফোন!মুখ ভোতা হয়ে গেলো আমার।কল করার আর সময় ও পেলো না গাঁধা ছেলেটা!ফোন রিসিভ করে বললাম " হ্যালো বান্ধবী,কখন আসবি তোরা? "
ফোনের ওপাশ থেকে হবু বর বললো " সন্ধায় আসবো "
ওর কথায় অনেক কষ্টে হাসি চেপে সবাইকে বললাম " দেখেছো বান্ধবী কল দিছে।তোমরা সবাই আমায় যে কি পেয়েছো,সবসময় শুধু লজ্জায় ফেলো "
কথাগুলো বলে ঘরে আসলাম।হবু বরকে ঝাড়ি মে"রে বললাম " বারবার কল দাও কেন?সবাই আমার সাথে মজা নিচ্ছে।এরকম হ্যাংলামি করলে তো সবাই বউ পাগল বলবে "
" পাগল বললে বলুক,আমার কি?আর যে অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না! "
" এহহ ঢং,রাতটার অপেক্ষা শুধু,তারপর তোমার ঘাড়ে চেপে বসে থাকবো।চাইলেও আর নামাতে পারবে না "
" নামাতে চায় কে?মাথায় না,বু"কে করে রাখবো।আর শুনো,আমার বউটাকে এখন দেখতে ইচ্ছে করছে "
" বিয়ে করতে এসে দেখিও।এখন পারবো না।মেহেদী দিতে হবে "
" আর কত কষ্ট দিবা? "
" কষ্ট কখন দিলাম,তোমায় নিয়ে আর পারি না।আচ্ছা কল কে'টে দিচ্ছি "
কল কে'টে সেলফি তুলছি,বিছানা অগোছালো হয়ে আছে,ছবিতে দেখতে খারাপ লাগছে।ফোন রেখে গোছানোর জন্য যেই না বিছানার চাঁদরে হাত রেখেছি বু"ক ধক করে উঠলো।কয়দিন থেকে মনের ভিতর যে উত্তেজনা ছিলো তা কেমন যেনো মিইয়ে গেলো।
এই বাড়িতে আজকেই শেষ!কাল এই বাড়িতে,এই ঘরে আমি আর মেয়ে হয়ে থাকবো না!নিজের বাড়িটা ছেড়ে সারাজীবনের মতো চলে যেতে হবে! বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছি।
অশ্রুসিক্ত চোখে হবু বরকে মেসেজে লিখলাম " তোমরা ছেলেরা অনেক ভাগ্যবান! "
গল্প-শেষ_ঠিকানা
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়