বাস্তব সম্মত কিছু কথা | বাস্তব জীবনের কিছু গল্প

  • শিক্ষনীয় বাস্তব গল্প

শিক্ষনীয় বাস্তব গল্প

 মেহমানরা চলে গেলেও মা এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে।জিজ্ঞেস করলাম " কি হলো মা?ওনারা তো গেছে, দরজা বন্ধ করছো না কেনো? "


মা বললো " আরো কয়েকটা সিঁড়ি নামুক,তারপর "


" কিন্তু কেন? "


" মেহমান যাওয়ার সাথে সাথে দরজা বন্ধ করাটা অভদ্রতা।ওনারা যেন দরজা বন্ধের শব্দ শুনতে না পান তাই অপেক্ষা করছি।এটা ভদ্রতা,আমাদের সংস্কৃতি "


ছোট থেকে মায়ের কাছে এমন ছোটখাটো অসংখ্য ভদ্রতা,ম্যানার শিখেছি।এসব ম্যানার কাজে লাগলো বিয়ের পর।মাকে ছোট কাল থেকে যা যা করতে দেখতাম শ্বশুর বাড়িতে আমিও সেসব করি।


ফলস্বরূপ স্বামী,শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাছে আমি সংস্কৃতি জানা আদর্শ বউ।তারা প্রায়শই আদর মাখা স্বরে বলেন


" বেয়ান আমাদের বউমাকে স্বশিক্ষিত করেছেন।আচার ব্যবহার সবকিছুই কত নিখুঁত!আমাদের কিচ্ছুটি শেখাতে হয়নি।আদর্শ মায়ের আদর্শ মেয়ে "


গল্প-মাতৃশিক্ষা

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • ভালোবাসা নিয়ে বাস্তব কিছু কথা

টিফিন পিরিয়ড।সবাই ক্যান্টিনে,একা আমি ক্লাশরুমের জানালা ধরে বসে থাকি,অপেক্ষা করি মেয়েটার জন্য।


কলেজের দেয়ালঘেঁষা বাড়ির বেলকনিতে নজর রাখছি।ওই বারান্দায় টিফিন টাইমে হুইলচেয়ারে করে আমার সমবয়সী মেয়েটাকে ওর মা রেখে যায়।


মেয়েটা কথা বলতে পারেনা,ভারী মিষ্টি চাহনি,বু"ক অব্ধি লাল চুল।অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় প্রাকৃতিক ভাবেই ওর চুলগুলো লাল দেখায়।


আমরা ইশারায় রোজ গল্প করি।মেয়েটার যেদিন মন খারাপ থাকে সেদিন নাক,মুখ ভেংচি কে"টে ওকে হাসাই।হাসির সময় ওর সারা শরীর কাঁপে,দেখে মনে হয় এক ঝাঁক কৃষ্ণচূড়া ফুল বাতাসে নড়ছে।আমি ছাড়া মেয়েটার সাথে গল্প করার কেউ নেই।


কলেজ শেষ হওয়ার দিন মেয়েটাকে ইশারায় বুঝালাম, "আমাদের আর দেখা হবে না।আজকেই কলেজে শেষ দিন "।


মেয়েটা ইশারা বুঝতে পেরে সে কি কান্না!এরপর এতো হাত ইশারা করে ওকে ডাকলাম মেয়েটা দেখছেই না,মাথা নীচু করে এক সমানে কান্না করেই যাচ্ছে।দেখে আমার ভারী মন খারাপ হয়ে গেলো।


অনেক্ক্ষণ কাঁদার পর মেয়েটা লাল লাল চোখে তাকালো আমার দিকে।ইশারায় বুঝালাম " কলেজ শেষ তো কি হয়েছে?তোমায় দেখতে রোজ আসবো "


হ্যা, আমি আমার কথা রেখেছি।ওকে রোজ দেখি,রোজ দেখি বলতে সবসময়ই দেখি।দূরের বেলকনিতে বসে থাকা মায়াবতী মেয়েটা এখন আমার স্ত্রী।অফিস থেকে ফিরে গোটা বিকেল আমরা ইশারায় গল্প করি,ও আমার বু"কে মাথা রাখে।তখন নিজেকে সুখী মানুষ মনে হয়।


গল্প-মায়াবতী

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়

  • বাস্তব জীবন নিয়ে গল্প

" মেয়েরা ঘরের কুলাঙ্গার,বোঝা।এদের জন্ম দেওয়াও পাপ।এবারেও মেয়ে হইলে তোর গ"লা টি"পে ধরবো "


কথাগুলো বলে বাবা মাকে ধা"ক্কা দিয়ে চলে গেলেন।পরপর তিনটা মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে মা'কে প্রায়ই বাবার হাতে মা'র খেতে হয়।


এবার হয়তো সৃষ্টিকর্তা মুখ তুলে চাইলেন।চতুর্থবার মা ছেলে সন্তান জন্ম দিলেন।বাবার খুশি দেখে কে!পুরো গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করলেন।


জামাকাপড়,খাওয়া,পড়াশোনা সহ যাবতীয় যত ধরনের কষ্ট দেওয়া সম্ভব,বাবা দিলেন।সবরকমের কষ্ট,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য জুটলো আমাদের তিন বোনের কপালে।তবুও বাবা যেন আমাদের তিন বোনের চোখের মণি।


কে'টে গেলো সময়।আমাদের তিন বোনের বিয়ে হয়েছে।ছোট ভাইটিও গত বছর বিয়ে করেছে।বাবা-মা বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে।ছোট ভাই বাবা-মায়ের দিকে ফিরেও তাকায় না।


আর অন্যদিকে তিনবোনের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া


" বাবা-মা এবার আমার বাড়িতে থাকবে!"।


বোনেরা যখন এসব বলাবলি করে তখন বাবা-মায়ের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সবচেয়ে বেশি কাঁদে বাবা।ছেলে ছেলে করে যিনি জীবনের সর্বোস্বটা দিয়ে দিলেন সেই ছেলে আজ তার দিকে ফিরেও তাকায় না।আর তীব্র অবহেলায় বড় হওয়া মেয়েরা আজ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের নিজের কাছে রাখতে! 


গল্প-অনুশোচনা

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • মেয়েদের জীবনের কিছু বাস্তব কথা

বিয়ের পর প্রথম বাবা'র বাড়ি আসলাম।আমার রুমে ঢুকতে গিয়েই হতভম্ব!ঘর ভর্তি ভাইয়ার জিনিসপত্র! 


মা'কে গিয়ে বললাম " মা,আমার রুমে ভাইয়া থাকে? "


মা স্বাভাবিক স্বরে বললো " হ্যা "


" কেন? "


" কেন মানে? থাকলে কি সমস্যা? "


" না মানে ভাইয়ার রুম তো ছিলোই,আমার রুমটা কেন নিতে হবে? "


" ধুর পাগলি মেয়ে,বাবার বাড়িতে মেয়েদের নিজস্ব বলতে কিছু থাকে নাকি?স্বামীর সংসারই এখন তোর সংসার।ওটাই তোর বাড়ি "


মনের তীব্র ব্যথা চেপে রেখে বললাম " সে যাই হোক,এখানে যখন আসবো,থাকবো কোথায়? "


" তুই এখন অতিথির মতো।আসবি দুইদিন হেসেখেলে থাকবি তারপর চলে যাবি।গেস্টরুমটা তো আছেই পড়ে।আর নইলে তোর ভাইয়ার রুমে থাকবি,এক যায়গায় থাকলেই হয়।তোর ভাইয়া বাজারে গেছে।ও আসলে গেস্ট রুম খুলে দিবে "


মাকে আর কিছু বললাম না।বিয়ের ৮ দিনের মাথায় আমার রুমটা এখন পুরোপুরি ভাইয়ার রুম হয়ে গেছে।এখন আমি তাহলে এই বাড়ির কেউ না?বাড়ির রাজকন্যা থেকে অতিথি হয়ে গেলাম?এতোদিন যে বাড়িটাকে নিজের বাড়ি বলে দাবি করতাম সে বাড়িতে আসলে এখন আমায় গেস্ট রুমে থাকতে হবে!নীরবে কাঁদছি।এ কান্নার অর্থ শুধু মেয়েরাই বুঝবে,আর কেউ না,কেউ না।


গল্প-অতিথি

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প

" ছেলের মাথায় টাক।আমি কি দেখে ওই ছেলে বিয়ে করবো?কিছুতেই বিয়ে করবো না।ম"রে গেলেও না "


কথাটা বলতেই মায়ের চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো।বললো " এটা কি ধরণের কথা বললি তুই পদ্ম? "


রেগেমেগে বললাম " ঠিকই বলছি,টাক মাথার পাত্রকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না "


" আমাদের পরিবারের মেয়ে হয়ে তুই একটা ছেলের দূর্বলতাকে এভাবে তুলে ধরলি?তোর কাছে মানুষের শিক্ষা,চরিত্র,ভালোমানুষি,দায়িত্ববান ছেলের কোনো মূল্য নাই? "


মায়ের কথায় আমি নির্বাক হয়ে রইলাম।মা বললো " চুলওয়ালা সুদর্শন যেসব ছেলেদের পছন্দ করেছিস তারা এসে যে যৌতুকের কথা বলে তোকে পণ্য বানিয়ে দিলো তার বেলা?পণ্য হতে তোর কোনো আপত্তি নেই আর ভদ্র ছেলে দোষের?চুল এতো গুরুত্বপূর্ণ?তোর বাবারও তো মাথায় টাক,তাই বলে কি মানুষ হিসেবে তোর বাবা খারাপ? "


আর কিছু বলতে পারলাম না।রাজি হলাম।বিয়ে হয়ে গেলো।বাসররাতে উনি আমার হাত স্পর্শ করে বললেন 


" কথা দিলাম,আপনার চোখে কখনো জল আসতে দিবো না "


কি আশ্চর্য! এর আগে এতোটা মায়া ভরা চাহনি,এতোটা ভালোবাসা,এতোটা আত্নবিশ্বাসের সাথে একথা আমায় কেউ বলেনি।ঘরের হালকা লাল আলোয় লোকটা মুহুর্তেই আমার কাছে সুপুরুষ হয়ে উঠলো।মনে হতে লাগলো এই লোকটাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।একটা জীবন এনার সাথে নির্দিধায় কাটিয়ে ফেলা সম্ভব।


গল্প-দূর্বলতা

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 


মন ছুঁয়ে যাওয়া অসাধারন গল্প পড়ুন।