গল্পঃ-দাগ | অবহেলার কষ্টের গল্প | অবহেলার স্ট্যাটাস

 অবহেলার ভালবাসার গল্প

অবহেলার ভালবাসার গল্প

বিয়ে করেছি ২ মাস পূর্ণ হলো,আমাদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ,কিন্তু এখনো রুহিকে কাছে টেনে নেইনি একবারো,রুহি হচ্ছে আমার বিয়ে করা বউ,আর আমি কে সেটা তো সকলেই জানেন,নতুন করে বলার কিছুই নেই, প্রেম করে বিয়ে করেছি তো কি হয়েছে,ওকে একটু সময় দেওয়া দরকার নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য,তাই ওকে এতদিন কাছে টানি নি,নাহ আজ ওকে কাছে টানবো নিজের সমস্তটা আজ ওকে বিলিয়ে দিবো,রাতের বেলায় রুহি আমার সাথে শুয়ে আছে..!


--- রুহি এই একটু তোমায় জড়িয়ে ধরি...? (আকাশ)


--- ধরো তোমায় মানা করেছে কে,আর আমি তো তোমার এই বউ..! (রুহি)


রুহিকে জড়িয়ে ধরলাম নিজের বাহুডোরে,তারপর রুহিকে আদর করতে শুরু করলাম,রুহিও আমার আচরণে সারা দিচ্ছে..!


রুহি,হটাৎ প্রশ্ন করলো,


--- এই আমাদের বাবু হবে কবে...?

--- হবে তো আল্লাহ যেদিন দিবে..!

--- আচ্ছা..!


আমার বুকের সাথে লেপটে লেগে আছে,মনে হচ্ছে যেন একটা ছোট বাচ্চা,ওকে আদর করে ছেড়ে দিলাম,তারপর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম,কেননা সকালে আবার অফিসে যেতে হবে না হয় আবার দেরি হয়ে হয়ে গেলে উঠতে পারবো না!


সকাল বেলা রুহির আগে উঠে গেলাম,তারপর গোসল করে নামাজ পড়ে নিলাম,নামাজ শেষ করে রুহিকে ডেকে দিলাম উঠে নাস্তা তৈরি করার জন্য,রুহি উঠে চটজলদি করে গোসল সেরে নিয়ে নাস্তা বানাতে চলে গেলো,আর আমি রেডি হচ্ছি অফিসে যাওয়ার জন্য..!


--- রুহি আর কত সময় লাগবে নাস্তা বানাতে..?আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো..?

--- এই তো আর একটু পাঁচটা মিনিট সময় দাও..!

--- বুঝেছি আজকেও আমার লেইট করে আফিসে যেতে হবে.!

--- এই না না প্লিজ রেডি হয়ে গেছে,রুহি তাড়াহুড়ো করে আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসলো..!


নাস্তা করে রুহির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে অফিসে চলে গেলাম,আজকেও পাঁচ মিনিট লেইট হয়ে গেছে,তবে আমাকে কেউ এটা নিয়ে কথা শুনাবে এমন দুঃসাহস কারো নাই,কারন এই অফিসের বর্তমান বস আমি,নিজাম সাহেব যিনি অফিসের আসল বস তিনি অন্য একটা অফিস হ্যান্ডেল করতেছে,আর এটা আমি হ্যান্ডেল করতেছি,আমাদের এই শহরে বেশ কয়েকটা অফিস আছে,অফিসে পৌঁছে নিজের কেবিনে চলে গেলাম..!


কাজ করতেছি এমন সময় অফিসের পিয়ন এসে বললো,


---  আজ নাকি বড় সাহেব আসবে..!

--- আচ্ছা সমস্যা নেই আসুক..! 


ঘন্টা দুই এক পর নিজাম সাহেব আসলেন,আর উনি এসে সরাসরি আমার কেবিনে চলে আসলেন..!


--- আকাশ কেমন আছো..? (নিজাম সাহেব) 

--- এই তো স্যার ভালো,আপনি...? (আকাশ) 

--- হা আমিও ভালো,আর আজ যেই জন্য এসেছি সেটা হচ্ছে আকাশ তোমার দেশের বাহিরে যেতে হবে কিছু দিনের জন্য অফিসের কাজে,কারন আমি যেতে পারছিনা শরীর অসুস্থ সেটা তো তুমি জানোই,আর তোমাকে ছাড়া কাকে পাঠাবো বিশ্বস্ত কাউকে দেখছি না যে ভরসা করে পাঠাবো,আর বেশ কয়েকটা ডিল হবে আমাদের কোম্পানির সাথে,যেটার দ্বারায় আমাদের কোম্পানির বেশ মোটা অংকের একটা বেনিফিট আসবে..!


--- আচ্ছা স্যার সমস্যা নেই আমি যাবো,আর আপনি একটু ভালো করে রেস্ট নিন..!

--- আচ্ছা তাহলে আজ আর অফিস করো না,গিয়ে সমস্ত কিছু প্যাক করে নাও কাল আবার যেতে হবে..!

--- আচ্ছা স্যার 

.

.

তারপর বাসায় চলে আসলাম,কারন সমস্ত কিছু গোছগাছ করতে হবে,বাসার আসার পর কেমন যেন একটা অপরিচিত স্মেইল নাকে আসলো,এমন স্মেইল এর আগে কখনো পায়নি,আর রুহি তো এমন ধরনের পারফিউম ব্যবহার করে না,আর আমি তো করিই না,ধুর যা হবার হোক তো,হয়তো বাহিরের কারো কাছ থেকে স্মেইল টা নাকে এসেছে,নজর আন্দাজ না করে এড়িয়ে গেলাম, এসেই সমস্ত কিছু গোছানো শুরু করলাম,কারন মাস খানিক এর মত বাহিরে থাকতে হবে,এসে বাসায় ছিলাম সারাদিন, রুহির সাথে সারাদিন খুনসুটি করে সময়টা কেটে গেলো,


রুহির তো অনেক মন খারাপ,


--- এই আকাশ তোমায় ছাড়া আমি একটা মাস থাকবো কি ভাবে...?আমার তো তোমাকে ছাড়া কিচ্ছু ভালো লাগে না,

--- কলিজা না প্লিজ মন খারাপ করে না,অল্প কয়টা দিন এই তো  তারপর তো চলে আসবো,আর সব সময় তো তোমার সাথে কথা বলবোই,এত মন খারাপ করে মানুষ..?


--- রুহি,😥

--- এই পাগলি দেখি কাছে আসো,রুহিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আদর করতে শুরু করলাম,রুহি তো বরাবর এর মতই আমার আচরণে সারা দিচ্ছে..!

--- এই আকাশ লাইট টা অফ করে দাও না আমার না শরম লাগছে..?

--- এই পাগল শরম কিসের তুমি আর আমিই তো,বরের সামনে মানুষ এভাবে শরম পায়..!

--- তাও দাও না প্লিজ..?


--- নাহ থাক সমস্যা নাই,রুহিকে আদর করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম,আদর করতেছি কিন্তু হটাৎ রুহির শরীরের একটা অঙ্গে নজর পড়লো,নাভীর দুই কি তিন আঙ্গুল নিচ বারবার একটা কালো দাগ,এই রুহি এটা কিসের দাগ তোমার নাভীর নিচে...?


--- থতমত খেয়ে গেলো,আরে এটা জন্মসূত্র থেকেই দাগ টা,


আকাশ,ওহ তারপরে আবার আদর করায় মগ্ন হয়ে গেলাম,কারন কাল চলে যাবো এক মাসের জন্য আজ মন ভরে আদর করে নেই..!


সকাল বেলায় তাড়াতাড়ি করে রুহি নাস্তা বানিয়ে দিলো,খেয়ে রুহির থেকে বিদায় নিয়ে লাগেজটা গাড়িতে নিয়ে বের হয়ে গেলাম,অফিসে গিয়ে ডিল করার সমস্ত কাগজপত্র গুলো নিয়ে বাহিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,প্রথম দিন এই গিয়ে একটা ডিল করলাম ক্লাইন্টদের সাথে,একটা হোটেলে উঠেছি,রাতের বেলায় ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে রুহিকে ফোন দিলাম,রুহির সাথে কথা বলছি হটাৎ একটা পুরুষের আওয়াজ কানে আসলো..!


--- রুহি বাসায় কে এসেছে..?


--- কককই কেউ নাতো..তোতলাতে তোতলাতে..!


--- তাহলে আমি কার গলার আওয়াজ শুনলাম..?


--- আমি তো জানি না,পাশেই টিভি চলছে টিভির আওয়াজ শুনেছো হয় তো..!


--- আর কথা বাড়ালাম না,আচ্ছা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,


--- তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো..!


কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম,কিন্তু কেন জানি মনের মধ্যে খটকা লাগছে,নাহ আমি স্পষ্ট শুনেছি এটা একটা পুরুষের আওয়াজ ছিলো,আমি এতটা বোকাও না যে কোনটা টিভির আওয়াজ কোনটা মানুষের গলার আওয়াজ চিনতে পারবো না,তার মানে কি রুহি আমাকে ঠকাচ্ছে,আর এত রাতে আমার বাসায় পুরুষের গলার আওয়াজ তাও আবার সারা বাড়িতে রুহি একা,


ছি ছি কি ভাবছি আমি এই সব,আমার রুহি এমন না,সে আমাকে খুব ভালোবাসে,তারপর ঘুমিয়ে গেলাম,এভাবেই দিন কাটতে লাগলো...!


আজ সমস্ত ডিল শেষ হয়েছে,কথা ছিলো একমাস থাকবো,কিন্তু আজ একমাস দশদিন,সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে এসেছি,বিমানে বসে আছি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিমানটা ছেড়ে দিবে,পাঁচ মিনিট পর বিমানটা শো করে আকাশে উড়ে গেলো,বসে বসে মনে মনে ভাবছি,ইশ আজ কতদিন পর বউটাকে দেখবো,গিয়েই বউটাকে অনেক গুলা আদর করবো,একদম ইচ্ছে মত আদর করবো..!


বাসায় পৌঁছে কলিংবেল চাপ দিতেই রুহি এসে দরজা খুলে দিলো।রুহি,আমাকে দেখতে পেয়ে হাউমাউ করে কান্না করে দিয়ে জড়িয়ে ধরে।কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে রুহির শরীর থেকে আমি সেই দিনের অপরিচিত স্মেইল টা পাচ্ছি,তার মানে কি আমি যা ভেবেছিলাম সেটাই সত্যি,নাহ এটা হতে পারে না,আমার রুহি এমন না,তারপর লাগেজটা রেখে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,রাতের বেলায় দুজনে খাবার খেয়ে শুয়ে আছি,আজ কেমন যেন একদম অন্য রকম লাগছে রুহিকে দেখতে,কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আমার রুহি না,আমার বিয়ে করা রুহি আর এই রুহির মধ্যে অনেকটা তফাৎ লক্ষ্য করলাম..!


এই রুহি আমায় জড়িয়ে ধরবা না,কতদিন ধরে বুকটা তোমায় জড়িয়ে ধরতে কাতর হয়ে আছে..!


রুহি,আমায় জড়িয়ে ধরলো!


আকাশ,রুহি জড়িয়ে ধরায় শরীরটা যেন প্রান ফিরে পেয়েছে,ওকে আদর করতে শুরু করলাম,রুহিও রেসপন্স করছে আমার সাথে সাথে,কিন্তু হটাৎ লক্ষ করলাম রুহির নাভির নিচের সেই দাগটা আর নাই,কিন্তু ঘাড়ের একপাশে নখের আঁচড়, যার দরুন ঘাড়টা ফুলে আছে,সারাদিন চুল দিয়ে ঘাড়টা ঢাকা ছিলো তাই নজর যায় নাই,কিন্তু এখন আদর করার সময় সেটা চোখ এড়ালো না,আঁচড় গুলা মানুষের নখের সেটা স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে,আর এই জায়গায় আঁচড় তার মানি রুহি অন্য পুরুষের সাথে...!


গল্প :_দাগ

পর্ব : ০১

লেখকঃ আকাশ-মাহমুদ


গল্পঃ _দাগ (পর্ব : ০২)

লেখক_আকাশ_মাহমুদ


আকাশ,রুহিকে জড়িয়ে ধরায় শরীরটা যেন প্রান ফিরে পেয়েছে,রুহিকে আদর করতে শুরু করে আকাশ,রুহিও রেসপন্স করছে,কিন্তু হটাৎ লক্ষ্য করলাম রুহির নাভির নিচে সেই দাগটা আর নাই,কিন্তু ঘাড়ের একপাশে নখের আঁচড়,যার কারনে ঘাড়টা ফুলে আছে,সারাদিন চুল দিয়ে ঘাড়টা ঢাকা ছিলো তাই নজর পড়ে নাই,কিন্তু এখন আদর করার সময় নজর এড়ালো না,আঁচড় টা যে মানুষের তা দেখে স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে,আর এই জায়গায় আঁচড় মানে রুহি অন্য পুরুষের সাথে,ছিহ নিজের ও ভাবে ঘেন্না হচ্ছে!


কিন্তু 

আমার ভাবনাটা যে কতটা সত্য সেটা আমার জানা নাই,

তবে ঘাড়ের মধ্যে আঁচড় কি ভাবে লাগলো,আর সে নিজে তো নিজের ঘাড়ে এমন ধারা আঁচড় দিবে না,আমার ধারণাটা যদি সত্যি হয়,নাহ আর ভাবতে পারছি না,রুহিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে পড়লাম..!


রুহি,কি হলো উঠে বসে গেলে যে আদর না করে..?


আকাশ,আসলে শরীরটা খারাপ লাগছে তাই আজ আর না,এখন একটু ঘুমাবো..!


রুহি,এই কলিজা তোমার কি শরীর খারাপ..?

আকাশের গলায় কপালে হাত দিয়ে..!


আকাশ,নাহ ঠিক আছি,আচ্ছা রুহি একটা কথা জিজ্ঞেসা করলে তার সঠিক জওয়াব দিবে তো..?


রুহি,হা বলো কলিজা দিব...!


আকাশ,তোমার নাভীর নিচে না একটা দাগ ছিলো সেটা কোথায় গেছে...?


রুহি,তো রীতিমতো ঘাবড়ে যায়,কি বলবে সে ভেবে পাচ্ছে না..!


আকাশ,কি হলো কথা বলছো না যে..? 

নাভীর নিচের দাগটা কোথায়...?


রুহি,আসলে আমি একটা মলম ইউজ করেছিলাম তাই সেই দাগটা চলে গেছে,


আকাশ,তুমি না বলেছিলে দাগ টা তোমার জন্মগত তাহলে মলম ইউজ করে চলে গেলো কি করে ..!


রুহি,আমি কি ভাবে বলবো বলো,নেটে দেখেছিলাম তাই অর্ডার করেছি মলম টা,এবং সেটা ব্যবহার করার পর দাগটা চলে গেছে..!


আকাশ,আচ্ছা দাগটা না হয় মলম ইউজ করার ফলে চলে গেছে,কিন্তু ঘাড়ের নিচে যে নখের দাগ দেখা যাচ্ছে সেগুলা কোথা থেকে এলো...?


রুহি,এই কি বলছো তুমি ক ক ক ক কোথায় কোথায় দাগ ঘাড়ের নিচে,চুল দিয়ে ঢেকে ফেললো,😷


আকাশ,তুমি ঢাকলে সেটা আর লুকায়িত থাকবে না,কারন সেটা আমি একবার দেখে ফেলেছি,সত্যি করে বলো নখের আঁচড় গুলো কোথা থেকে এলো..?


রুহি,আমি জানি না কোথা থেকে এসেছে,

আকাশ,জানো না বললে তো আর হলো না,আঁচড় গুলা মানুষের আর তার চেয়ে বড় কথা সেটা তোমার শরীরে, সেটা তুমি জানো না বললে তো হবে না...!


রুহি,এই জানি না বলেছি না ব্যাস জানি না, আর তুমি কি আমায় সন্দেহ করছো...?


আকাশ,সন্দেহ কেন করবো,তবে একটা জিনিস যেহেতু আমার চোখে পড়েছে আর সেটা স্বামী হয়ে আমার জানার অধিকার আছে...!


রুহি,এবার রেগে গেলো,এই তোর সমস্যা কি হা অনেকটা সময় ধরে দেখছি একটার পর একটা উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করছিস..?একবার বলেছি কানে যায় না হা যে আমি জানি না...?


আকাশ,তো ঘাবড়ে যায় রুহির এমন ধারা কথাবার্তা শুনে,বিয়ে হয়েছে অব্দি বা রিলেশন সময়েও কখনো রুহিয়ে আকাশের সাথে তুই তুকারি করে নি,কিন্তু আজ এমন কি হলো যে এমন ধারা আচরন করছে,আসলেই কি আমার ধারনা সত্যি যে যে রুহি অন্য পুরুষের সাথে অবৈধকাজে লিপ্ত হয়েছে,আর সেটা আমার কাছে ধরা খেয়ে যাবে বলে এমন ধারা করছে..!


নাহ,

এর শিকড় আমি টেনে হিঁচড়ে বের করবো,রুহির সাথে কথা না বলে নিজের মত কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম,কিন্তু মাথা থেকে এই ঘটনাটা কোন ভাবেই বের হচ্ছে না,আর কেন জানি ঘুমটাও উধাও হয়ে গিয়েছে,রাতের শেষ অংশে প্রায় তখন চোখটা লেগে এসেছে,তখনি আজানের ধ্বনি কানে আসে,উঠে গিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম রুহিকে ডাকলাম না,নামাজ শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে আছি,


কিছুসময় পর রুহি হাতে করে চা নিয়ে আসে,এই নাও তোমার চা...?

আকাশ,অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি,এটা কি আসলেই আমার রুহি আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে,কারন রুহির সাথে যখন সম্পর্কে জড়িয়েছি তখন থেকেই রুহি যদি কখনো রাগ করতো তখন তার রাগ না ভাঙ্গানো পর্যন্ত সে আমার সাথে কথা বলতো না,কিন্তু আজ তার বিপরীত,


রুহির হাত থেকে চা টা নিয়ে খাওয়া চুপচাপ খাওয়া শুরু করলাম,


রুহি,এই কি হয়েছে চুপচাপ হয়ে আছো যে..? 

কথা বলছো না কেন...?

রাতের জন্য কি আমার উপরে রেগে আছো...?


আকাশ,নাহ রেগে নাই এমনি ভালো লাগছে না কথা বলতে..!


রুহি,হয়েছে আমি জানি তো কেন ভালো লাগছে না,এই দেখি এদিকে তাকাও, রুহির দিকে তাকাতেই সে আমার কপালে চুমু একে দিলো,

এই এখনো কি রেগে আছো আমার উপরে,


আকাশ,😶


রুহি,দাঁড়াও তোমার রাগ কমাচ্ছি বলে আমার কোলের উপরে বসে পড়লো ছোট বাচ্চার মত করে,যত সময় না পর্যন্ত আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে তত সময় পর্যন্ত আমি কোল থেকে নামবো না..!


আকাশ,এবার আর রাগ করে থাকতে পারলাম না রুহির বাচ্চামি দেখে,ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম,এই পিচ্চি যাও রাগ করি নাই,এবার নামো কপালে একটা চুমু দিয়ে...!


রুহি,তারপর কোল থেকে নেমে গেলো,এই আজ তো অফিস যাবে না,বাসায় থাকো আমি আজ তোমার সমস্ত ফেভারিট খাবার গুলো রান্না করবো...!


আকাশ,আচ্ছা, রুহি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো,আর আমি বারান্দায় বসে আছি,একটু পর রান্না ঘরের দিকে গেলাম,গিয়ে দেখি রুহি রান্না করছে,দেখতে আসলেই বউ বউ লাগছে,কারন একটা মেয়ের যে বিয়ে হয়েছে তার রান্না বারার ধাচ দেখলে বুঝা যায়,লোভ সামলাতে পারলাম না,পিছন থেকে গিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরলাম..!


রুহি,চেঁচিয়ে উঠলো,এই এই হচ্ছে টা কি হা..?


আকাশ,কি হচ্ছে তা তো দেখতেই পাচ্ছো যে বউকে আদর করছি...😋


রুহি,সারাদিন আদর করার পরেও মন ভরে না যে এখন রান্না করতে এসেছি এখন ও শান্তি দিবে না..?


আকাশ,এই এভাবে বলছো কেন..?

আগে তো রান্না করার সময় তোমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে না ধরলে চেঁচামেচি করতে যে রান্না করবে না,কিন্তু এখন কেন মানা করছো...?


রুহি,দেখ এই সব একদম ভালো লাগছে না এখন ছাড়ো আমায়,আর মানুষ সব সময় এক রকম থাকে না,সময়ের সাথে সাথে মানুষ এবং তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়..!


আকাশ,রুহিকে ছেড়ে দিয়ে মন খারাপ করে এসে রুমে বসে আছে,আর ভাবতে থাকে যেই রুহির বাচ্চামো দেখে সে রুহিকে ভালোবেসেছে কিন্তু তার মধ্যে আজ কোন বাচ্চামোর ছিটেফোঁটাও নাই,বরং কাজে কর্মে নতুন একটা রুপ প্রেজেন্ট করছে আমার সামনে,যে এটা আমার রুহিই না..!


সারাদিন এভাবেই ঘরে বসে বসে কেটে গেলো,রুহির সাথে তেমন একটা কথা বললাম না,রুহিও আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে নাই.!


পরেরদিন,

সকালবেলা উঠে নামাজ পড়ে রেডি হয়ে নিলাম,রুহিকে দুইবার ডাক দিয়েছি কিন্তু সে ঘুম থেকে উঠেনি,তাই ওকে ঘুম রেখে নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলাম,অফিসে পৌঁছে পিয়নকে নাস্তা আনার জন্য বললাম,নাস্তা করে কাজে মন দিচ্ছি কিন্তু কোন ভাবেই মন বসছে না,আর আমি অফিসে এসেছি প্রায় ৩ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে,রুহি এতক্ষণে ঘুম থেকে উঠে পড়ার কথা,আর আমি যে ওকে না ডেকে চলে এসেছি সে আমায় একবারো ফোন করেনি এখন পর্যন্ত,


এতটা পরিবর্তন কি করে ঘটলো রুহির, যেই রুহি আমি বলতেই পাগল আর আমার দেখভাল করার কথা তো কখনোই ভুলতো না,আর আজ যে রুহি আমি নাস্তা না করে যে চলে এসেছি একটা বারো খবর পর্যন্ত নিলো না,হাজারো চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘুরছে,এমন সময় নিজাম সাহেব ভাবনার অবসান ঘটিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো..!


নিজাম সাহেব,আকাশ তুমি তো একদম কামাল করে দিয়েছো,তোমার কাজে আমি মুগ্ধ,আর আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি ডিল গুলো করলে আমাদের কোম্পানি কখনো বিপদের মুখে পড়বে না,বরং ভালো একটা প্রফিট আসবে আমাদের কোম্পানির, কংগ্রেস আকাশ আমাদের কোম্পানির জন্য এত বড় একটা ভূমিকা পালন করেছো,তোমার ঋন আমি কখনো শোধ করতে পারবো না..!


আকাশ,স্যার কি বলছেন এটা তো আমার কর্তব্য,আমি আমার অফিসের জন্য করবো না তো কার জন্য করবো..?


নিজাম সাহেব,তো পুরা খুশিতে আত্মহারা কারন কোম্পানির বেশ ভালো একটা প্রফিট এসেছে,বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে উনি চলে গেলেন,আমিও কাজে মন দিলাম,বিকাল বেলা অফিস শেষ করে একটু আগেই বেরিয়ে গেলাম,বাসার সামনে এসে গিয়েছি প্রায় এমন সময় হটাৎ একটা ব্লাক কালারের কার দেখতে পেলাম বাসার সামনে পার্ক করা,আমি আমার গাড়িটা পার্ক করে কারটার দিকে এগিয়ে যাবো ঠিক সেই মূহুর্তে গাড়িটা ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো..!


আরে কে এসেছিলো আমার বাসার এই অসময়ে,

বাসায় গিয়ে রুহিকে ডাক দিলাম,এই রুহি বাসায় কে এসেছিলো...?


রুহি,আমাকে দেখে ঘাবড়ে গেছে,ভুত দেখার মত করে চমকে উঠলো আমাকে দেখে,ততততুমি কখন এলে..?


আকাশ,এই তো মাত্র,আর কে এসেছিলো বাসায়...?


রুহি,কককককই কেউ নাতো কে আসবে..?

আকাশ,হটাৎ সেই স্মেইল টা আবার নাকে আসলো,আজ আমি আমার সমস্ত কথার উত্তর পেয়ে গেছি,রুহি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে,রুহিকে কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে,


রুহি,আল্লাহ কিছু দেখে ফেললো না তো,বিশ্বাস করো আকাশ আমি তোমায় ধোঁকা দিচ্ছি না..!


আকাশের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝড়ে পড়ছে,কেন এমন ছলনা করলে রুহি তুমি আমার সাথে,ভালোই তো বেসেছিলাম,তাও অন্য পুরুষের সাথে ছিহ,কান্নাকাটি করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো আকাশ,নাহ রুহিকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না,আকাশ ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে রুহি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে..!


রুহি,এই নাও তোমার চা...?


আকাশ,আমি খাবো না তুমি খেয়ে নাও..?


রুহি,সে কি তোমার জন্য চা করে আনলাম,তুমি না খেয়ে আমাকে খেতে বলছো..!


রুহি,আমার খেতে ভালো লাগছে না বললাম না,এত কথা বাড়াবাড়ি করছো কেন..??


রুহি,চা টা নিয়ে চুপচাপ চলে গেলো..!


আকাশ,মনে মনে নাহ তোমায় মুক্ত করে দিবো,ভালোবাসার প্রতিদান তুমি এভাবে দিলে তো সমস্যা নেই,আকাশ একটা প্লান করে সে রুহিকে হাতে না হাতে ধরবে,সারাদিন কোন খাওয়া দাওয়া নাই,পরেরদিন সকালবেলা উঠে অফিসে চলে যায় সে,রুহি নাস্তা খাওয়ার জন্য অনেক জোড়াজুড়ি করে কিন্তু সে না খেয়েই অফিসে চলে যায়,আকাশ অফিসে যাওয়ার পর রুহি অনেকগুলো ফোন দেয় কিন্তু আকাশ ফোন রিসিভ করে না..!


রুহি,কি হয়েছে মানুষটার,মানুষটা কাল থেকে এমন অদ্ভুত আচরন কেন করছে,রুহির যেন মাথায় কাজ করছে না..!


আকাশ,অফিসে বসে কাজ করছে হটাৎ একটা ফোন আসে,ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে স্যার গাড়িটা এসেছে,আর গাড়ি থেকে একটা লোক নেমে আপনার বাসার দিকেই গেছে..!

ওকে ঠিক আছে আমি এখনি আসছি..!


আকাশ,তাড়াতাড়ি করে অফিস থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওনা দেয়,বাসায় পৌঁছে দেখে কালকের সেই গাড়িটা আজ ও বাসার সামনে রাখা,আকাশ কলিংবেল বাজাবে এমন সময় দেখে দরজাটা খোলা,তাই কলিংবেল না বাজিয়ে সরাসরি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে,ঘরে ঢুকে যা দেখে তাতে তো আকাশের হুশ এই উড়ে যায়,দুজনেই একসাথে...! 


গল্পঃ _দাগ (পর্ব : ০৩)

লেখক_আকাশ_মাহমুদ 


আকাশ,তাড়াতাড়ি করে অফিস থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওনা দেয়,বাসায় পৌঁছে দেখে কালকের সেই গাড়িটা আজ ও বাসার সামনে রাখা,আকাশ কলিংবেল বাজাবে এমন সময় দেখে দরজাটা খোলা,তাই কলিংবেল না বাজিয়ে সরাসরি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে,ঘরে প্রবেশ করে যা দেখে তাতে তো আকাশের হুশ উড়ে যায়,দুজনেই এক সাথে সোফায় বসে আছে একে অন্যের হাতের উপরে হাত রেখে...!


রুহি,আকাশকে দেখতে পেয়ে তো ভুত দেখার মত করে চমকে উঠে,আর সাথে সাথে ছেলেটার হাত ছেড়ে দেয়..!


আকাশের তো রাগে সারা শরীর ফেটে যাচ্ছে,আকাশ কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না,রুহি চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে আছে,ছেলেটাও কি করবে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়,ছেলেটাও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আকাশ রুহির কাছে গিয়ে রুহির গালে কোষে কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়,রুহি থাপ্পড়ের টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়,আকাশ রুহিকে মাটি থেকে তুলে আরো কয়েকটা মারতে যাবে ঠিক সেই সময় ছেলেটা আকাশের হাত ধরে ফেলে,এই আপনি রুহিকে মারছেন কেন...?


আকাশের তো এবার মনে হচ্ছে শরীরে কেউ কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে,এই ছেলে হাত ছাড় বলছি..?


ছেলেটা,প্লিজ আপনি একবার আমার কথাটা শুনেন..?


আকাশ,এই কুত্তা* বাচ্চা তোকে হাত ছাড়তে বলেছিনা বলে ছেলেটার তলপেট বরাবর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি মারে,জানোয়ারের বাচ্চা কত বড় সাহস তুই আমার হাত ধরিস..?

আকাশ দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়,আর রুমের মধ্যে উইল চেয়ারের একটা রোলার ছিলো সেটা নিয়ে এসে ছেলেটাকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে,


ছেলেটা মার খাওয়ার ফলে নাক মুখ দিয়ে ব্লাড বের হতে শুরু করে,আকাশ তাও ক্ষমা দিচ্ছে না,ছেলেটাকে ইচ্ছা তরফে মারতেছে,


রুহি,তখন দৌড়ে এসে আকাশের পায়ে পড়ে যায়,প্লিজ আকাশ তুমি রোহানকে মেরো না দরকায় হয় ওর বদলে আমাকে মেরে ফেলো প্লিজ তাও ওকে মেরো না ও মরে যাবে,ওর কোন দোষ নাই ছেলেটা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে..!


আকাশ,ধাক্কা দিয়ে রুহিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়,তোকে কতটা ভালোবাসে তা আজ দেখে ছাড়বো,কেন আমিও তো তোকে ভালোবাসতাম,তাও কেন তুই আমার সাথে প্রতারণা করলি,

আকাশ আবার মারতে শুরু করে, 


রোহান,আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,আকাশ লক্ষ্য করে রোহান আর রেসপন্স করছে না,তাই ওকে নিয়ে ঘরের বাহিরে ফেলে রেখে চলে আসে,আর যে খবর দিয়েছে তাকে বলে দেয় ওকে নিয়ে কোন এক হসপিটালে ফেলে রেখে চলে আসতে..!


তারপর 

ঘরে এসে রুহিকে চুলের মুঠো ধরে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিজের বেড রুমে নিয়ে যায় আর বিছানায় ছুড়ে মারে,তোর একজন দিয়ে হয় না হা,হাজারটা পুরুষ লাগে,দ্বারা তোর পুরষ আসক্তি আজ আমি বের করছি,রুহিকে হায়েনার মত চিঁড়ে চিঁড়ে খায়,আর রুহির গলায় সজোড়ে চেপে ধরে,রুহির যেন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে,


রুহি,মিনতির সুরে ছেড়ে বলছে কিন্তু আকাশের তো কোন ভাবেই রাগ কমছে না,আকাশ তো আজকে হায়েনা হয়ে গেছে,

ওর কাজ ও করেই যাচ্ছে..!


তারপর 

রুহিকে বিছানায় ফেলে রেখে উঠে পড়ে,বিছানার পাশে রাখা শার্টটা গায়ে দিতে দিতে বলে,ভেবেছিলাম তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো কিন্তু নাহ,তুই যে আমার সাথে প্রতারণা করলি,আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করলি তোকে ডিভোর্স দিলে যে সেই প্রতারণার শোধ তুলতে পারবো না,তোকে ডিভোর্স দিবো না,কিন্তু তোর শরীর আজ থেকে রোজ এমনভাবে চিঁড়ে চিঁড়ে আত্মসাৎ করবো,তারপর রুমের দরজা আটকে রুমে থেকে বেরিয়ে পড়ে...!


আকাশ,রুম থেকে বের হয় খবরিকে ফোন করে,রোহানকে কোথায় ভর্তি করিয়েছে জিজ্ঞেসা করে,


খবরি,ঠিকানা দেয় রোহান সেখানে চলে যায় গাড়ি নিয়ে...!


অন্যদিকে,

রুহি খাটে শুয়ে শুয়ে অঝোরে কান্না করছে,তার উঠার শক্তি নাই,কারন আকাশ একটু আগে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি ওর উপরে প্রয়োগ করে গেছে,বিশ্বাস করো আকাশ তোমায় আমি ধোকা দেয়নি,সব সময় তোমাকেই স্বামী হিসেবে মেনে এসেছি,কিন্তু আজ তুমি ভুল বুঝলে,রোহানকে তুমি এতটা না মারলেও পারতে,তুমিও যেমন আমায় ভালোবাসো রোহান ও ঠিক আমায় তেমন ভালোবাসে,ভালোবাসা তো অপরাধ না,কিন্তু হা রোহান আমায় ভালোবেসেছে তাই সে দোষী,কিন্তু হা এই সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী যে আমি..! 


আকাশ,হসপিটালে যাওয়ার পর বলে,ডাক্তার ওকে যে ভাবে পারেন সুস্থ করে তুলেন,ওকে আবার আমি মারবো,ওর মৃত্যু আমার হাতেই লিখা আছে...!

 

আকাশ,হসপিটাল থেকে অফিসে চলে যায়,অফিসের কেবিনে বসে আছে,কিন্তু কাজে মন বসছে না,এতকিছুর পরেও কি কাজে মন বসানো সম্ভব, তাও কোন রকমে অফিস টাইম শেষ করে সে বাসায় যায়,রুহি এখনো রুমে বন্দী, বাসায় গিয়ে বেড রুম খুলতেই দেখে রুহি বেহুশ হয়ে পড়ে আছে,আকাশ ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে রুহির গায়ের উপরে ঢেলে দেয়!

রুহির প্রতি তার কেন জানি আর মায়া দয়া কাজ করছে না,


রুহির একটু পরে জ্ঞান ফিরে আসে সে দেখতে পায় আকাশ চেয়ারের উপরে বসে ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে..!


আকাশ,এই যা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয়...?


রুহি,চুপ করে আছে😔


আকাশ,এই কুত্তা* বাচ্চা তোকে কি বলেছি কথা কানে যায় নাই..?


রুহি,রান্না করতে পারি নাই আজকে..😔


আকাশ,পাড়বি কি করে,অন্য পুরুষের সাথে রং তামাশা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে..!


রুহি,প্লিজ একটা বার আমার কথা শুনো,বিশ্বাস করো তুমি সত্যি টা কি জানো না,আমি তোমাকে ধোঁকা দেয়নি..!


আকাশ,ঐ তোর মত দুশ্চরিত্র মেয়ের কোন কথাই শুনতে চাই না আমি,যেই মেয়ে একটার পর একটা মিথ্যা বলতে পারে তার মত ঠকবাজের কথা শুনার মত সময় আমার হাতে নাই!

এখন যা খাবার নিয়ে আয়,না হয় তো জানিস তোর কি হাল করবো আমি এখন...?


রুহি,ভয়ে তাড়াতাড়ি করে আকাশের জন্য খাবার রেডি করতে চলে যায়,


ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই রুহি আকাশের জন্য খাবার করে নিয়ে আসে,রুহির ও খুব খিদে পেয়েছে,তাই রুহি আকাশকে খাবার বেড়ে দিয়ে সে নিজেও খেতে বসে আকাশের সাথে..!


আকাশ,এই জানোয়ারের বাচ্চা এই গুলা কি খাবার না বিষ..? 

মুখে দেওয়া যাচ্ছে না লবনের জ্বালায়,আকাশ খাবার গুলো রুহির গায়ের উপরে ছুড়ি মারে, যা এখন আবার খাবার বানিয়ে নিয়ে আয়..!


রুহির,চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে,সে আগের আকাশ আর এখনের আকাশের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান দেখতে পাচ্ছে,যেদিন প্রথম রান্না করেছি ঝাল দিয়ে পুরো একাকার করে ফেলেছিলাম,সেদিন নিজের খাবার নিজে মুখে নিতে পারিনি,কিন্তু আকাশের কাছে নাকি অমৃত লেগেছিলো খাবার গুলো,তাই সে তিন প্লেট ভাত খেয়েছিলো,আর আজ একটু লবন বেশি হওয়ার কারনে খাবার গুলো মুখের উপরে ছুড়ি মারলো..!


রুহি,আবার রান্না ঘরে চলে গেলো খাবার তৈরি করতে!


অন্যদিকে

আকাশ,সবে তো মাত্র শুরু,তোর আরো কত যে শাস্তি ভোগ করতে হবে তা তুই নিজেও কল্পনা করতে পারবি না,ভালো যেমন বেসেছি এখন ঠিক সেই রুপ ঘৃণা করবো..!


রুহি,রান্না করছে আর ভাবছে,বোন তুই যদি এই পৃথিবীতে থাকতি তাহলে আজ আর আমার এত কষ্ট হতো না,তুই ছিলি আমার সব, তুই ছিলি আমার গার্জিয়ান,তুই কোনদিন আমার গায়ে একটা নখের আঁচড় পর্যন্ত লাগতে দিস নাই,


আজ দেখ আমার সাথে কত কি হচ্ছে,বোন আমি ভালো নাই রে,প্লিজ তুই আমাকে তোর কাছে নিয়ে যা,আমি না পারছি আকাশকে গ্রহন করতে,না পারছি রোহানকে গ্রহন করতে,তবে আমি আকাশকেই স্বামী হিসেবে মানি,কিন্তু রোহান যে আমার জীবনে কি করে এলো,বোন আমি এই দোটানার পৃথিবীতে থাকতে চাই না কান্না করতে করতে বলতে থাকে..!


একটু পরে আবার খাবার তৈরি করে আকাশকে দেয়,রুহি খাবার সার্ভ করার সময় আকাশ লক্ষ্য করে রুহির গলাটা ফুলে আছে,আর গলার নিচে অনেক জায়গায় নখের আঁচড়,আকাশ জানে এগুলা তার নখের আঁচড় কারন সে রুহিকে গলা চেপে ধরেছিলো,

আকাশের মায়া লেগে যায় রুহিকে দেখে,

এই মেয়ে এখানে আসো..?


রুহি,আকাশকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে মাত্র খেতে বসবে এমন সময় আবার আকাশ ডাক দেয়,রুহি গিয়ে আকাশের সামনে দাঁড়ায়..!


আকাশ,কোলে বসো..?

রুহি,চুপচাপ করে আকাশের কোলের উপরে বসে,

আকাশ,খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার মেখে রুহির মুখের সামনে নলা ধরে,এই মেয়ে হা করো...?


রুহি,এটা দেখে আকাশের গলায় জড়িয়ে ধরে হু হু করে কান্না করে দেয়....!😭😭


(৪)

আকাশ,এত আদিক্ষেতা দেখানোর কিছুই নাই,যা করেছো এখনো ভুলিনি,তোমার চেহারা দেখে মায়া লাগলো ভালো যে বাসি,না হয় তোমার মত মেয়েকে খাইয়ে দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না..!


রুহি,চুপচাপ মাথা নিচু করে আছে,আকাশ রুহিকে খাইয়ে দিচ্ছে,আর রুহি সমস্ত খাবারটা শেষ করে...!


আকাশ,রুহিকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেতে যাবে

 এমন সময় রুহি এই দাও আমি তোমায় খাইয়ে দেই...?


আকাশ,নাহ তার কোন প্রয়োজন নেই,তোমার মত কলঙ্কিনীর হাতে আমি খাবার খাবো তা ভাবলে কি করে...?


রুহি,আকাশ আমি জানি তুমি আমার উপরে রেগে আছো,আর আমি কলঙ্কিনী সেটাও আমি জানি,কিন্তু বিশ্বাস করো সত্যি আমি তোমায় ভালোবাসি,কিন্তু রোহানকে আমি বিয়ের আগে ভালোবাসতাম,কিন্তু বিয়ের পর আমার সমস্তটা জুড়ে শুধু তুমি রয়েছো...! 


আকাশ,মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেলো,এই কলঙ্কিনী তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ...!


এমন সময় আকাশের মোবাইলে একটা ফোন আসে...!

ফোনটা হসপিটাল থেকে আসে,যে রোহানের হাতে আর বেশি সময় নাই,সে মৃত্যুর আগে একবার আমার সাথে কথা বলতে চায়...!


আকাশ,নাহ এটা হতে পারে না,ওকে আমি আমার হাতে মারবো,আকাশ খাবার গুলো সেভাবে রেখে উঠে চলে যায়,

তারপর গাড়িটা নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়....!


হসপিটালে পৌঁছানোর পর রোহানের কেবিনে যায়,গিয়ে দেখে রোহান মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে,চরম পরিমানে রাগ হচ্ছে রোহানকে দেখে,ইচ্ছে করছে ও মরার আগে নিজেই গলা টিপে ওকে মেরে ফেলি,কিন্তু নাহ তা করলাম না হসপিটালে হাঙ্গামা করা যাবে না,


রোহানের মুখে মাক্স লাগানো রোহান হাতের ইশারায় আমায় ডাক দিলো,আমি ওর কাছে গেলাম...!


আকাশ,বল কি বলবি...?


রোহান,আস্তে আস্তে নিজে নিজে মাক্সটা খোলে,আর বলে আকাশ ভাই আপনাকে কিছু সত্য জানতে হবে,যেটা আপনি জানেন না...?


আকাশ,কি আর জানবো সব তো নিজের চোখের দেখলাম,যে দুজন এক সাথে বসে রঙ্গলীলা করছিলি,..?


রোহান,আকাশ ভাই হা আপনি যেটা দেখেছেন সেটা সত্য তবে তার পিছনে কিছু কাহিনী আছে,আর ভাই এই দুনিয়ায় অল্প কিছু সময়ের অতিথি আমি,এই সময় কেউ মিথ্যা বলে না,আর আমিও বলবো না,

আপনি যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন সে আপনার রুহি না,সে আমার তাহিয়া,আর তাহিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো এক বছরের কিন্তু সে হুট করে আপনাকে বিয়ে করে নেয়..!


আকাশ,এই তুই কি বলছিস উল্টা পাল্টা..?

আর আমার রুহি না মানে...?

তোর মাথা ঠিক আছে তো...?


রোহান,হা ভাই বললাম তো আমি আর কিছু সময়ের মেহমান এই দুনিয়ার,যা বলছি সব সত্যি বলছি,রুহি আপনাকে বিয়ে করে নেয়,কিন্তু কেন নেয় সেটা পড়ে জানতে পারি,আমি রুহিকে অনেকবার বলি আমার সাথে পালিয়ে যেতে কিন্তু সে রাজি হয় না,সে বলে সে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে,আর আপনার মধ্যে সীমাবদ্ধ তার অস্তিত্ব,সে আপনার সাথে এখানে চলে আসে,আমি তাহিয়ার অনেক খোজ করি কিন্তু কোথায় খোজ পায়নি,হটাৎ একদিন এই শহরে একটা কাজে আসি তখন তাহিয়াকে দেখতে পাই,


তারপর থেকে পর পিছু নেই,ওর পিছু নিতে নিতে ওর বাসা অব্ধি যাই,তাকে অনেক বুঝাই আমার সাথে চলে যেতে,কিন্তু নাহ সে আগের কথায় অটুট থাকে যে সে আপনাকে ভালোবাসে,আর আপনিও নাকি তাহিয়াকে খুব ভালোবাসেন,সে আপনাকে ধোঁকা দিতে পারবে না,তাহিয়াকে বলি যে আমিও তো তোমাকে খুব ভালোবাসতাম এবং এখনো খুব ভালোবাসি, কিন্তু তার পরেও যে তুমি আমায় ধোঁকা দিলে..?


তাহিয়া,কোন উত্তর দিতে পারেনা,শুধু একটাই কথা বলে তাকে ভুলে যেতে,কিন্তু আমিও যে ওকে ভালোবাসি,ওকে যে ভুলা আমার পক্ষে সম্ভব না,

তাহিয়া দেখ আমার পক্ষে তোমাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না,আর তুমি এখন আমার সাথে যাবে আর আমাকে বিয়ে করবে,

কিন্তু,সে রাজি হয়না,রাজি না হওয়ার আমার মাথায় রাগ উঠে যায়,আর আমি তাহিয়ার গলা চেপে ধরি...!


রোহানের কথা শুনে তো আকাশের মনে হচ্ছে যে ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে,আকাশের চোখের সামনে আস্তে আস্তে এখন সমস্ত কিছু ক্লিয়ার হচ্ছে,রুহির গলায় আঁচড় কি করে এলো,আর রুহির কাজে কর্মে মাঝে মাঝে আমার কেন মনে হতো এটা আমার রুহি না...!


_দাগ (পর্ব : ০৪ | সমাপ্ত) 

লেখক_আকাশ_মাহমুদ 


রোহান,তাতেও তাহিয়া রাজি হয়না,পরে ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাই,রাতের বেলায় অনেক সময় একা একা ভাবি,তাহিয়ার সাথে এমনটা করা ঠিক হয় নাই,তাই পরেদিন ওর কাছে আবার যাই ক্ষমা চাওয়ার জন্য,কারন যে আমাকে ভালোবাসে না,যার অস্তিত্ব অন্যের সাথে মিশে গেছে তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য জোর করে লাভ কি,থাকুক সে তার মত করে..!


কিন্তু,তাহিয়া আগের দিনের ব্যবহারের কারনে সে আমার চোহারাও দেখতে চায় না,কিন্তু আমিও যে মাফ না নিয়ে যাবো না,তাই ওর পায়ে পড়ে যেতে নিলে সে আমার হাত ধরে ফেলে,আর আপনি ঠিক সেই সময় চলে আসেন,তারপর রোহান চুপ হয়ে যায়...


আকাশ,এই রোহান তারপর কি হয়েছে কথা বলছো না কেন..?

আকাশ লক্ষ্য করে রোহানের নাকে মুখে ফেনা চলে এসেছে,

রোহান,আকাশ ভাই প্লিজ আমায় মাফ করে দিয়েন আর তাহিয়াকে কষ্ট দিয়েন না,তারপর আর বলতে পারে না,শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে..!


আকাশ,কি করবে কিছুই মাথায় কাজ করছে না,ছেলেটাকে মারতে মারতে মেরেই ফেললাম,কিন্তু বাকি আরো ঘটনা আছে সেটা আমার

জানতে হবে,আর সেটা একমাত্র রুহিই দিতে পারবে...!


আকাশ,রোহানকে হাসপিটালের মরগে রেখে বাসায় চলে যায়,

গিয়ে দেখে তানিশা গুটিশুটি মেরে খাটে শুয়ে আছে আর বুকের সাথে একটা ছবিকে আঁকড়ে ধরে কান্না করছে...!


এই রুহি...?

রুহি,আকাশের গলা শুনে সাথে সাথে ছবিটা লুকিয়ে ফেলে,

আর চোখটা মুছে নেয়..!


আকাশ,আমি যা যা প্রশ্নে করবো তার সোজা উত্তর দিবে..?


রুহি,হা বলো..??


আকাশ,তোমার নাম রুহি না তাহিয়া..?


রুহি,চুপ করে আছে,আকাশ মনে হয় সবটা জেনে গেছে,

আকাশ,তোমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেসা করেছি...?

তোমার নাম রুহি না তাহিয়া,দেখ আমি সবটা জেনে গেছি রোহান থেকে এখন আর লুকিয়ে কোন ফায়দা নাই...?


রুহি,আমার নাম তাহিয়া..!


আকাশ,তাহলে আমার রুহি কোথায়..?


তাহিয়া,রুহি আপু মারা গেছে...😔


আকাশ,রুহি মারা গেছে মানি...?

আকাশের সব কিছুই কেমন যেন এলোমেলো লাগছে, 


রুহি,তারপর লুকিয়া রাখা ছবিটা বের করে আকাশের হাতে দেয়,এই যে তোমার রুহি,আর আমি তার জমজ বোন তাহিয়া..!


আকাশের,তো মনে হচ্ছে তার কলিজাটা কেউ চাকু দিয়ে দুই টুকরো করে ফেলেছে,রুহি আর তাহিয়া দেখতে একদম ঠিক একই রকম,কেউ দেখলে বলতে পারবে না কোনটা রুহি আর কোনটা তাহিয়া,আকাশ রুহির ছবিটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে,


আমার রুহি মারা গেলো কি করে,আর আমার বিয়ে তো রুহির সাথে ঠিক হয়েছিলো,কিন্তু তোমার সাথে হলো কি করে..?


তাহিয়া,তোমার আর আপুর সম্পর্ক বেশ ভালোই চলছিলো,তোমাদের বিয়েও ঠিক হয়,কিন্তু তারপরেই আপু জানতে পারে আপুর ক্যান্সার হয়েছে,সে আর বেশিদিন বাঁচবে না,অল্প কয়েকটা দিনের অতিথি মাত্র এই দুনিয়ায়,আর আপু আমায় ছোটকাল থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে,মা মারা যাওয়ার পর তো বাবা আরেকটা বিয়ে করে নেয়,আর আমাদের দেখভাল করতো না আলাদা থাকতো,আপুই কষ্ট করে টিউশনি করে আমায় মানুষ করেছে,


আপু একদিন রাতে আমায় ডেকে বলে তাহিয়া তোর কাছে একটা আবদার করবো সেটা রাখবি বোন..?আপু আমাকে মানুষ করার জন্য নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারলে সেই বোনের কথা কি ভাবে ফেলি,বল আপু আমি তোর সমস্ত আবদার রাখবো..!


রুহি,বোন আমার ক্যান্সার ধরা পরেছে,আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না,তুই আমার আকাশটার দেখভালের দায়িত্ব নিবি,না হয় ছেলেটা একদম এলোমেলো হয়ে যাবে,আমি মারা যাওয়ার পর তুই ওকে বিয়ে করে নিবি বোন,আমাদের দুজনের চেহারাই তো এক, সে কোনদিন বুঝতে পারবে না,তবে যদি সে কখনো বুঝেও যায় তাহলে তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে তাকে সেটা ভুলিয়ে দিবি..!


তাহিয়া,আপুর কথা শুনে কি বলবো কিছুই যেন মাথায় কাজ করছে না,কারন আমি রোহানকে ভালোবাসতাম,আর ওর সাথে আমার সম্পর্ক এক বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র কয়েকটাদিন বাকি ছিলো,কিন্তু আপু এমন একটা আবদার করলো,কি করে মুখের উপরে না করে দেই,তার থেকে বড় কথা মৃত্যুর যাত্রীর শেষ ইচ্ছাটা সবাই পূরন করে, তাই আপু মারা যাওয়ার পর আমি তোমায় বিয়ে করে নেই,আর আপু আমায় শিখিয়ে দিয়ে গেছিলো তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছা সম্পর্কে,তাই তোমার সাথে মিশে যেতে আমার সমস্যা হয় নি...!


আকাশ,রুহি বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে,আর ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে....!


(শেষাংশ) 👇


তাহিয়াও কান্না করতেছে,কারন সে জানে ভালোবাসার মানুষ গুলাকে হারিয়ে ফেলার বেদনা কতটা কষ্ট দায়ক,

তাহিয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে আকাশকে এই ভাবে দেখে,কারন সে যে সবটা উজাড় করে দিয়ে আকাশকে ভালোবেসে ফেলেছে,তাহিয়া গিয়ে আকাশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে...!


আকাশ,এই তুই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস কেন ছাড় আমাকে..?

তুই একদম আমার গায়ে স্পর্শ করবি না,তুই আমার রুহি না,আর তোকে আমি ভালোবাসি না,আমি রুহিকে ভালোবাসি,আকাশ তাহিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়.! 


রুহি,প্লিজ আকাশ তুমি এমন পাগলামো করো না,আমাকে তোমার ভালোবাসতে হবে না,কিন্তু তোমার পদতলে একটু জায়গায় দাও বলে আকাশের পায়ে পড়ে আর কান্না করতে শুরু করে..!


আকাশ,এই একদম নেকামো করবি না,তোর নেকামো আমার একদম সহ্য হচ্ছে না,থাক তুই বলে ঘর ছেড়ে বেহ হয়ে যায়,


আসিফকে ফোন করে ফার্মগেইট আসতে বলে,সেখানে সারাদিন মরার মত আসিফের সাথে পড়ে থাকে,আসিফ আকাশের বন্ধ..!


আকাশ,আসিফ আজকে ড্রিংক করবো যা নিয়ে আয়..?


আসিফ কি বলছিস কি পাগল হয়ে গেছিস,যেই ছেলে কোনদিন স্মোক পর্যন্ত করেনি সেই তুই আজকে ড্রিংক করবি মানে কি..?


আকাশ,এত মানে মানে করিস না,তোকে যাই বলেছি তাই কর না হয় গেলাম...!


আসিফ,এই রাগ করিস না আনতেছি,আকাশ একা একা ফার্মগেইট বসে আছে,সেই সকাল থেকে খাওয়া নাই দাওয়া নাই,একা একা পড়ে আছে সে,তার মাথায় খালি একটা জিনিস এই কাজ করছে,তার রুহি তাকে ছেড়ে চলে গেছে সেও আর এই দুনিয়ায় থাকবে না,সেও তার রুহির কাছে চলে যাবে...!


অন্যদিকে

তাহিয়ার ও কোন খাওয়া দাওয়া নাই,মরার মত খাটের উপরে পড়ে আছে,আর কান্না করেই যাচ্ছে,হটাৎ দেওয়াল ঘড়িটার দিকে নজর পড়ে প্রায় রাত ১১ টা বাজে কিন্তু আকাশ এখনো আসে নাই,আল্লাহ আকাশ কি আমায় ছেড়ে চলে গেলো,এত সময় হয়ে গেলো এখনো ঘরে ফিরেনি,না কোন বিপদ হয়েছে মনের মধ্যে অজানা এক ভয় কাজ করতে থাকে..!


রাত বারোটা বাজে আকাশ এখনো বাড়ি ফিরেনি,তাহিয়া আকাশের অপেক্ষায় বসে আছে,একটু পর দরজায় কেউ একজন টোকা দেয়,

তাহিয়া দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়,দরজা খুলে দেখে আকাশ ঢুলে পড়ে যাচ্ছে আর আসিফ তাকে কাঁধে ভর করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে..!


তাহিয়া,এই আফিস ভাইয়া আকাশের কি হয়েছে...?

তাহিয়া তাড়াতাড়ি গিয়ে আকাশকে ধরে তখন সে বুঝতে পারে যে আকাশ ড্রিংক করে এসেছে...!


আসিফ,আসলে ভাবি😷


তাহিয়া,ভাইয়া আপনি বাঁধা দিবেন না আকাশকে...?


আসিফ,আমি বাঁধা দিছি ভাবি কিন্তু আকাশ জোর করে😶


তাহিয়া,আর কোন কথা বলে না,কারন সে জানে আকাশ এর জেদ কতটা, আকাশকে দিয়ে গিয়ে আসিফ চলে যায়...!


তাহিয়া,আকাশকে ধরে নিয়ে গিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়.!


আকাশ,শুয়ে শুয়ে বকবক করতেছে,এই তুই আমাকে স্পর্শ করবি না বলেছি না..!


তাহিয়া,এই তুমি চুপ থাকো একদম কোন কথা বলবা না,অনেক বলেছো এবার আমি বলবো তুমি শুনবা,এখন একদম একটাও কথা বলবা না,তাও আকাশ বকবক করে যাচ্ছে,আকাশের শরীর থেকে বাজে স্মেইল বের হচ্ছে,ড্রিংক করে এসেছে যে সেটার স্মেইল..! 


তাহিয়া,না ওকে এই ভাবে ঘুমোতে দেওয়া যাবে না,ওর কাপড় চোপড় চেঞ্জ কররে হবে,তাহিয়া গিয়ে আলমারি থেকে একসেট কাপড় নিয়ে আসে,তারপর আকাশের গা থেকে পরনের সব কাপড় গুলা চেঞ্জ করে দেয়..!


আকাশ,নেশার ঘোরে হটাৎ লক্ষ্য করে তার রুহি তার সামনে বসে আছে,সে তাহিয়াকে রুহি ভেবে জড়িয়ে ধরে আর নাকে মুখে চুমু খেতে শুরু করে,এই রুহি এতদিন কোথায় ছিলে তুমি..?

বলো না এই এতদিন কোথায় ছিলে তুমি..?

তোমার বদমাশ বোনটা বলে তুমি নাকে মরে গেছো,দেখেছো সে কত মিথ্যা কথা বলে, তুমি যদি মরে যেতে তাহলে এখন আমার সামনে আসলে কি করে,আকাশের মাথা ঠিক নাই ড্রিংক করার ফলে,তাই সে পাগলের মত প্রলাপ করতেছে,সে তাহিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে..!


তাহিয়াও আকাশকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে,কারন সে বহুদিন পর আকাশের বুকটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছে,তাই সে সেটা মিস করতে চায় না..!


সকালে আকাশ ঘুম থেকে উঠে দেখে সে তাহিয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,সে সাথে সাথে তাহিয়াকে রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে,তাহিয়াকে এখন কেন যেন তার দুই চোখের বিষ মনে হয়,কারন এতদিন সে একটা ভুল চেহারার মানুষের সাথে সংসার করে এসেছে,


তাহিয়ার ও ঘুম ভেঙ্গে যায়,সে উঠে দেখে আকাশ ও উঠে গেছে,সে উঠে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি করে নাস্তা তৈরি করতে চলে যায় কারন আকাশ নাস্তা করে অফিসে যাবে,


আকাশ,রেডি হচ্ছে তাহিয়া নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে,কিন্তু আকাশ না খেয়েই চলে যাচ্ছে..!


তাহিয়া,একি আকাশ তুমি না খেয়ে চলে যাচ্ছো যে..?


আকাশ,তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি,আর তার চেয়ে বড় কথা তুমি আমার উপরে অধিকার খাটাও কি করে লজ্জা করে না তোমার.?


তোমার চেহারাও আমার দেখতে ইচ্ছে হয় না এখন,বলে ঘর থেকে গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়..!


তাহিয়া,যেখানে ছিলো এখনো সেখানেই ঠিক ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ে পড়ছে,আল্লাহ এত কষ্ট দিচ্ছো আমায় তুমি..?

আমি তো কোন দোষ করিনি,মৃত বোনের কথা রাখতে গিয়ে তার সাথে বিয়ে নামক সম্পর্কে যুক্ত হয়েছি,এতদিন ধরে নিঃস্বার্থ ভাবে ওর দেখভাল করেছি,এতে তো আমার কোন ভুল নেই,তাহলে কেন সে আমাকে এতটা কষ্ট দিচ্ছে,কে সে আমায় গ্রহণ করতে পারছে না সত্যটা জানার পর থেকে...!


তাহিয়া,সারাদিন মন মরা হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকে !


আকাশ,অফিসে বসে বসে কাজ করছে কিন্তু কেন যেন আজ সমস্ত কাজ গুলিয়ে যাচ্ছে,কিছুই যেন ঠিক ঠাক মত হচ্ছে না,বারবার খালি রুহির কথা মনে পড়ছে,তার মন যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না রুহি আর বেঁচে নেই,অফিস শেষ করে বাসায় যায়, কিন্তু তাহিয়ার সাথে একটাও কথা বলে না,তাহিয়া কথা বলার চেষ্টা করলে আকাশ তাকে এড়িয়ে যায়,


তাহিয়া,অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু বিফল হয়েছে,তাই সেও দমে যায়,সেও আর জোর করেনা আকাশকে কথা বলার জন্য....!


এভাবে দুইদিন কেটে যায়,কেউ কারো সাথে কথা বলে না,আকাশ লক্ষ্য করে তাহিয়া কেমন যেন হয়ে গেছে,ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করেনা আগের মত আকাশকে কথা বলার জন্য জোর করেনা,সারাদিন একা একা থাকে,আকাশ মনে মনে ভাবে নাহ মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না,মেয়েটাতো আমাকে ভালোবেসেছে, ওর বোনের কথা রাখতে আমার সাথে বিয়ে নামক সম্পর্কে যুক্ত হয়েছে,এতে তো তার কোন স্বার্থ নেই,কিন্তু কেন জানি মনকে মানাতে পারছি না,যে রুহির জায়গায় তাহিয়াকে স্থান দিয়েছি...!


অফিস থেকে বাসায় ফিরে ভেবেছি তাহিয়ার সাথে কথা বলবো,কিন্তু কেন জানি মতটা দ্বিমত পোষণ করছে,ইচ্ছে করছে কথা বলে সবটা ঠিক করে নেই,আবার ইচ্ছে করছে যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক...!


দোটানায় পড়ে গেলাম আর কথা বলা হলো না,রাতের বেলায় শুয়ে আছি তাহিয়াও আমার পাশে শুয়ে আছে,পাশে ফিরে দেখলাম মেয়েটা চুপচাপ শুয়ে আছ হয়তো ঘুমিয়ে গেছে,তাই আমিও আমার মত ঘুমিয়ে গেলাম,


ঘুমের মধ্যে হটাৎ স্বপ্ন দেখলাম রুহি আমার কাছে এসে আমার কান মলে দিচ্ছে..!


কলিজা কি হইছে তুমি আমার কান মলে দিলে কেন..?


রুহি,এই তুমি নাকি আমার বোনকে কষ্ট দিচ্ছো,

চুপ করে আছে আকাশ,


রুহি,আকাশ মনে রেখো সে যদি আজ না থাকতো তাহলে তুমি ছন্নছাড়া হয়ে যেতে,কারন আমি জানি তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো,তাই আমি মারা যাওয়ার আগে ওকে রিকোয়েস্ট করেছি সে যাতে তোমার জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়,কিন্তু সেই তুমিই তাকে কষ্ট দিচ্ছো..?


আকাশ,আমার ভুল হয়ে গেছে রুহি,আমি আর মেয়েটাকে কষ্ট দিবো না...!


রুহি,যাও ওকে গিয়ে এখনি জড়িয়ে ধরে সবটা ঠিক করে নাও,আর আমি তোমার সাথে সবসময় আছি এটা মনে রেখো,আর আমার বোনের মাঝেই তুমি আমার অস্তিত্ব খুজে পাবে,যাও মেয়েটা ছাঁদের কোনায় বসে বসে কান্না করছে তাকে গিয়ে সবটা ভুলিয়ে দাও ভালোবাসা দিয়ে..!


আকাশ,হটাৎ রুহি হাওয়া হয়ে গেলো,আর সাথে সাথে আমার ঘুমটাও ভেঙ্গে গেলো,রাত তিনটা বাজে পাশে ফিরে দেখি তাহিয়া নাই,স্বপ্নে রুহির বলা কথাটা মনে পড়লো,বিছানা ছেড়ে উঠে দৌড়ে ছাঁদে গেলাম,গিয়ে দেখি মেয়েটা ছাঁদের এক কোনায় বসে বসে কান্না করছে,আর উপরে তাকিয়ে কি যেন বকবক করছে,


তাহিয়া,এই চাঁদ তুমি কি আমায় তোমায় সঙ্গী করে নেবে?

জানো এই পৃথিবীতে আমাকে ভালোবাসার মত কেউ নেই,

অথচ দেখো যার সন্তান আমার পেটে সে নিজেই আমাকে ঘৃনা করে,এই চাঁদ মামা বলো না,তুমি কি নেবো আমায় তোমার সঙ্গী করে..?


তাহিয়ার কথা শুনে চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ছে,আল্লাহ মেয়েটা মা হতে চলেছে আর সেই মেয়ের সাথে আমি এরূপ আচরণ করলাম,দৌড়ে গিয়ে তাহিয়াকে কোলে তুলে নিলাম আর পাগলের মত চুমু খেতে লাগলাম..!


তাহিয়া ভয় পেয়ে যায়,পরে লক্ষ্য করে আকাশ,তাহিয়া চুপ করে আছে আর কান্না করছে...!


আকাশ,এই পাগলী আমায় ক্ষমা করে দাও,আজকের পর আর কখনো তোমায় কষ্ট দিবো না...!


তাহিয়া,এই পাগল কি বলছো তুমি হা,স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত আর সেই স্বামী কিনা স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছে..!


আকাশ,তাও তাহিয়া তোমায় যে কষ্ট দিয়েছি তার জন্য ক্ষমাটা প্রযোজ্য..!


তাহিয়া,প্লিজ আকাশ এভাবে বলো না,আর আমি তোমার উপরে রাগ করে নেই,আমি নিজের উপরে রাগ করে ছিলাম,কারন তোমার কাছ থেকে এতদিন বিষয়টা লুকিয়ে রেখেছি..!


আকাশ,এই যা হয়েছে হয়েছে,চলো না আমরা দুজন সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করি...?


তাহিয়া,এবার আকাশের কোলে বসেই হাত দিয়ে আকাশের গলা জড়িয়ে ধরে,আর বলে এই নতুন করে কি শুরু করবা আমায় তো পুরান বানিয়ে দিছো,পেটে একটা বাবু চলে আসছে🙈


আকাশ,খুশিতে তাহিয়াকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে...

ইশ কি লজ্জা পায় রে আমার বউটা,রুমে চলো তোমার লজ্জা ভাঙ্গাচ্ছি,বহুদিন ধরে আদর করিনা,আজ সব পুষিয়ে নিব,তারপর তাহিয়াকে কোলে করে নিয়ে রুমে চলে যায়..!


এই পাঠক ভাইরা আর কি🙄

বুঝতেই তো পারতেছেন এখন কি হবে😐

শরম লজ্জা বিক্রি করে কি কটকটি ওয়ালার কাছ থেকে কটকটি খাইছেন নাকি...?


জান ভাগেন😡

মানুষের ইতিহাস না শুনে নিজে বিয়ে করে ইতিহাস তৈরি করেন..!


সমাপ্ত.....!


পর্বের আরও গল্প পড়ুন।