স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত
মেয়ে'কে ঘুম পাড়িয়ে বেড রুমে এসে দেখি আমার স্ত্রী "ঐশী" বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। জিজ্ঞেস করলাম,
"কি ব্যাপার কাঁদছো কেনো? শরীর খারাপ না-কি আম্মা কিছু বলেছে?"
ঐশী নাক টানতে টানতে বললো, "নাহ্! কিছু হয়নি।"
"তাহলে কাঁদছো কেন?"
আমার কথায় তার কান্নার বেগ বাড়লো। চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি কোথাও কোন ভুল করেছি? না-কি আজ কোনো স্পেশাল ডে? না কিছুতেই হিসাব মেলে না। আজ আমাদের কোনো স্পেশাল ডে ফে নাই? তাহলে, বউ কাঁদছে কেন? মিনিট পাঁচেক বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কারণ বের করলাম। আজ অফিস থেকে এসে বউকে তার পছন্দের কিটক্যাট চকলেট দেওয়া হয়নি। ইশ... ভুলেই গেছিলাম! পাগলীটায় হয়তো ভাবছে আমি বোধহয় তার চকলেট আনতে ভুলে গেছি। তাই কাঁদছে। আমি পকেট থেকে তাড়াহুড়ো করে চকলেটটা বের করলাম। বউ'কে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
"এই এই তোমার চকলেট, তখন দিতে ভুলে গেছিলাম। কাঁদে না জান!"
বউ চকলেটা আমার মুখে ছুঁড়ে মেরে চিৎকার দিয়ে বললো,
"এই আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয়, বাচ্চা? আমি বাচ্চাদের মতো চকলেট না পেয়ে কাঁদছি, এটা তোমার ধারণা?"
পাশের রুম আব্বা-আম্মা। বউ চিৎকার করছে এটা শুনলে যা-তা ভাববে। রিস্ক নিলাম না..! আমি উপায় না পেয়ে বউকে দ্রুত জড়িয়ে তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললাম,
"তুমি বাচ্চা হবে কেনো জান? তুমি তো আমার বাচ্চার আম্মু..! এবার বলো, এতো রেগে আছো কেন?"
বউ আমার আদুরে স্পর্শ পেয়ে ঠান্ডা হলো কিছুটা। ফের অভিমান নিয়ে বললো,
"তুমি বদলে গেছো, রোহান। আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না! বাচ্চা হওয়ার পর থেকে অবসরে সারাক্ষণ মেয়ে নিয়ে থাকো, আমাকে কখনো একটু সময় দেও না। কখনো এসে জিজ্ঞেস করো না, আমি খেয়েছি কিনা, আমার শরীর ভালো যাচ্ছে কি-না! একান্ত আমার দু'টো কথা শোনার মতো সময় আজকাল তোমার হয় না।"
বউ এসব মিথ্যা বলছে না। তাকে নিয়ে লাস্ট কবে ঘুরতে গিয়েছে বা সেভাবে কখন সময় দিয়েছি মনে পড়ছে না আমার। সারাক্ষণ অফিসে থাকি। রাতে বাসায় ফিরলে, বউ তখন রান্না করে। আমিও মেয়ে'র সাথে কাটাই। ছুটিরদিনে বাপ-মেয়ে বের হই ঐশী'কে নেওয়া হয় না সাথে। বউ অভিমান করে মুখ ফুটে কিছু বলে না। এক বেডে থেকেও অদৃশ্য এক দূরত্ব আমাদের মাঝে।আজ সকল দূরত্ব চুকিয়ে বউকে কাছে টেনে নিয়ে বললাম,
"আগামীকাল আমরা অনেক ঘুরবো, ভীষণ আনন্দ করবো। আমি ঠিক প্রথম দিনের প্রেমিক হবো আর তুমি হবে আমার প্রেমিকা। তুমি পড়বে নীল শাড়ী, আমি পড়বো নীল পাঞ্জাবি। স্যরি জান!"
বউ এতটুকুতেই খুশী। হেসে বললো,
"চা খাবে? চা বানিয়ে আনি তোমার জন্য? "
"উঁহু! এখানে বসো। চুলের কি অবস্থা তোমার? সারাদিনেও মনে হচ্ছে আঁচড়াও নি। তেল নিয়ে এসো আমি চুলে লাগিয়ে দেই।"
বউ দ্রুত তেল আর চিরুনী নিয়ে আমার কোলের উপর বসলো। স্বামীর এতটুকু যত্নে মেয়েটার মুখের হাসি সরছে না। এতো দিনের জমানো কথা গুলো যেন দলা পাকিয়ে আসছে। সে বলছে, হাসছে। আমি মনযোগ দিয়ে শুনছি। পরমুহূর্তে বউ আগের মতো বায়না ধরলো, "আইসক্রিম এনে দেও।"
আমিও দূরন্ত বালকের ন্যায় তাকে নিয়ে রাতের আঁধারে হারিয়ে গেলাম। বউয়ের হাত ধরে জোছনা রাতে শহরের গলিতে, পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছি। বউ খিলখিল করে হাসছে। এখন মনে হলো, এতোদিনে দূরত্ব কেটে গিয়েছে আমাদের। অবশেষে বুঝলাম, সারাদিনের ক্লান্তির পর মেয়েরা তার প্রিয় মানুষের থেকে একটুখানি যত্ন আর একটুখানি একান্তই সময় পাওয়ার অপেক্ষা করে।
★ সমাপ্ত ★
-অণুগল্পঃসময়
-লেখনীতেঃসুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস
" তোর স্ত্রী তো মেডিকেলে চান্স পেলো। কিছুদিন পর দেখবি ডাক্তারের সাথে প'রকীয়ায় জড়িয়েছে "
গ্যারেজ থেকে বাড়ি ফিরতে লোকজনের মুখে এমন কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে বাড়িতে গেলাম। আমার স্ত্রী সীতুকে বললাম
" তুমি মেডিকেলে চান্স পাইছো? "
সীতু আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো " হ্যা।ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাইছি "
সেই রাতে আমাদের আনন্দের বাঁধ রইলো না।সারারাত বাড়িতে দু'জন মিলে নাচগান করে কাটালাম।
আমার বাসা রংপুরে।সীতুকে ঢাকায় রেখে আসতে আমার ভিষণ কষ্ট হতে লাগলো।কিন্তু উপায় নেই! সীতুকে পড়াশোনার জন্য সেখানেই থাকতে হবে।বাড়ি ফিরতেই লোকজন বলাবলি শুরু করলো
" বউকে একা ঢাকা শহরে রেখে এলি? ওই বউয়ের আশা আর নাই। মেয়ে মানুষের উপর বিশ্বাস নাই "
লোকজনের এমন কথায় আমি বিন্দুমাত্র কান দিলাম না। সীতুকে আমি বিশ্বাস করি,ভালোবাসি। ও কখনো আমাকে কষ্ট দিবে না এটা আমি মনপ্রাণে বিশ্বাস করি।
সমস্যাটা হলো কিছুদিন পরে।সীতু আমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিলো। আমি ফোন করলে বলে ব্যস্ত আছি।আমার মনের ভেতরটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
তার তিন-চারদিনের মাথায় সীতু ফোন করে বললো
" এই কয়েকদিন অনেক ব্যস্ত ছিলাম গো।কয়েকটা টিউশনি জোগাড় করেছি। এতে আমাদের সংসার চলে যাবে।আমাদের বিয়ের জন্য তো তুমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সংসার সামলাতে শুরু করলে। তুমি ঢাকায় চলে আসো।টিউশনি করিয়ে আমি সংসারের টাকা জোগাড় করতে পারবো।তুমি আবার পড়াশোনা শুরু করো।এতোদিন তুমি আমার পড়াশোনা চালিয়েছো এবার আমি তোমার পড়াশোনার খরচ চালাবো "
আমি চোখের জল মুছে বললাম " পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করাটা ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ এক সিদ্ধান্ত।অনেক ভালোবাসি পিচ্চি বউ "
সীতু মুচকি হেসে বললো " আমি এখন বড় হয়ে গেছি,হুহ "
সমাপ্ত-----
স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা
- কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে গো তোমায় গিন্নি!! (বলে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকেন অজিতেশ বাবু)
- উফ..এই বয়সেও এসে তুমি যা তা একেবারে!! (পিউ দেবী বলে ওঠেন)
- না গো গিন্নি সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে আজ তোমায়!
- ধূর..ওই বৌমা আর খুকি দুজনে মিলে সাজিয়ে দিলো তাই আর কি...!
- হুম..সে তো একটু সাজতেই হতো আজ তোমায়...একসাথে পঞ্চাশ-টা বছর কাটিয়ে ফেললাম দেখতে দেখতে। আর তাছাড়াও সাজলে তোমাকে কিন্তু বেশ ভালোই লাগে দেখতে!
- হ্যাঁ জানো সৌরজ ও এই একই কথা বলতো...!
- হুম..এখনো ওকে ভুলতে পারো নি তাই না?
- না মানে...(বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে যান পিউ দেবী)
- মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো আজ বলে ফেলো..আর কত কষ্ট দেবে নিজেকে! তাই মনের মাঝে থাকা অব্যক্ত কথাগুলো আজ ব্যক্ত করো আমার সামনে...!!
- কিন্তু তুমি তো সবই জানো...তাহলে আবার কেন?
- সত্যি বলবো...?
- হুম...!
- আরও ভালোভাবে তোমায় জানার জন্য!
- হুম...(বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো চুপ করে যান)
- কী হলো বলো...(অজিতেশ বাবু সেই নীরবতা ভেঙে বলে ওঠেন)
- জানো, কলেজে কোনো এক সরস্বতী পূজোর সময় তার সাথে প্রথম দেখা!
ও গান গায়ছিলো-
"ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-- তোমার
চরণমঞ্জীরে।।
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি-- তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥
মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী-- তোমার
কনককঙ্কণে॥..."
আর আমি মুগ্ধ হয়ে পা মিলিয়েছিলাম ওর গানের তালে। তারপর ক্রমে ক্রমে আলাপ। আলাপ থেকে ঘনিষ্ঠতা। আর ঘনিষ্ঠতা থেকে প্রেম! জানো, আমি ছিলাম ডিপার্টমেন্ট অফ সোসিওলোজির স্টুডেন্ট আর ও ছিলো ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োলোজির। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা চলতে চলতে এমন হয়ে গিয়েছিলো যে ওর বেশিরভাগ সময়টা-ই কেটে যেতো সোসিওলোজি ডিপার্টমেন্টে। তারপর দেখতে দেখতে কলেজ লাইফ শেষ হয়ে যায়! তখন আমাদের সম্পর্কের বয়স প্রায় ছয় বছর। বাড়িতে কিছু সমস্যার জন্য আমার বিয়ের প্রসঙ্গ ওঠে। সেই সময় দিদিদের বিয়ের কথা তুলে আমার বিয়ের প্রসঙ্গটা থামায় কোনোভাবে। এভাবেই চলে কিছুটা সময়। কিন্তু তারপর বাড়িতে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে আমি আর কোনোভাবে বিয়ের প্রসঙ্গ উড়িয়ে ফেলতে পারি না! তখন তোমার সাথে বিয়ে প্রায় নিশ্চিত। দিনক্ষণ সমস্ত কিছু ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। সামনেই আশীর্বাদ। তাই ঠিক করি একটা শেষ প্রয়াসের। সৌরজকে জানায় সমস্তটা। কিন্তু ও নিরুপায়। তখনো ঠিকমতো একটা চাকরি জোগাড় করতে পারেনি। বাবা-মা মানবে না এই সমস্ত কথা বলে আমাদের ছ-বছরের সম্পর্কটা এক সেকেন্ড ভেঙে দেয়। তারপর ঠিক করি আর যাই হোক বিয়ে করবো না! আগে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হবো। কিন্তু সেখানেও সমস্যা! আমি যে মেয়ে- বিয়ে না করে চাকরি করবো...বাড়ির দায়িত্ব নেবো? এটা সমাজ মেনে নেবে না! তাই একপ্রকার রাগ-অভিমান-অভিযোগ সব নিয়ে এসে পড়ি তোমার জীবনে। ভেবেছিলাম মানিয়ে চলবো। মানিয়ে চলছিলামও। কিন্তু মানিয়ে নিতে নিতে যে কবে থেকে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি তা ঠিক জানা নেই! তারপর বাবু আসে পেটে। তার কয়েকবছর পর খুকি। আর আজ ছেলে-মেয়ে-বৌমা নিয়ে সবাই একসাথে! আর তোমার-আমার পথচলার পঞ্চাশটা বছর পূরণ হয়েছে আজ! খুব খুশি আজ আমি। যে রাগ-অভিমান-অভিযোগ নিয়ে তোমার জীবনে এসেছিলাম তার একটিও এখন আর অবশিষ্ট নেই। যা ছিলো তা আজ আমার ওই পুরানো ডায়েরিটার সাথে ভাসিয়ে দিয়েছি প্রবাহমান গঙ্গার স্রোতে! বাকিটা জীবন শুধু একান্তই আমাদের নিজেদের!
- হুম...!!
[বলে দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করে। আর মিশে যায় একে অপরের সাথে ভালোবাসার মহাসাগরে।]
লেখায় : শান্তনু ঘোষ
সমাপ্ত