বাস্তব জীবনের কিছু গল্প | ভালোবাসার কিছু বাস্তব কথা

  • বাস্তব জীবনের গল্প

বাস্তব জীবনের গল্প

সন্ধায় বউদির ঘরে ঢুকে লজ্জিত স্বরে বললাম " বউদি একটা আবদার করবো,রাখবে? "


বউদি বললো " হ্যা বলো না কি বলবে! "


" তোমার কাছে কিছু টাকা হবে?পাঁচ হাজারের মতো।হোস্টেল খরচের যে টাকাটা দাদা দিয়েছিলো সেটা ভেনিটি ব্যাগে রেখেছিলাম, ছিনতাই হয়ে গেছে "


" সে কি!রাস্তায় চলার সময় হুস থাকে কোথায়?ব্যাগ সাবধানে রাখতে পারো না!এতো বড় হইছো এখনো উদাসীনতা গেলো না তোমার।দুইদিন পরপর টাকা হারিয়ে ফেলো "


" বুঝতে পারিনি কিভাবে নিয়ে গেছে।দাদাকে বললে অনেক কথা শোনাবে,তুমি একটু ম্যানেজ করে দাও না গো "


" আমার কাছে কেন চাও? আমি কি কম কথা শোনাই নাকি? "


" তুমি তো মায়ের মতো।ছোট থেকে আদরে বড় করেছো।তোমার কথা গায়ে লাগে না "


বউদি আলমারি থেকে তিন হাজার টাকা এনে হাতে দিয়ে বললো " তোমার দাদা টাকা রেখে যায়নি,এটা আমার কাছে ছিলো,নাও।বাকি দু হাজার কিছুদিন পর দিলে হবে না? "


" হবে না মানে, খুব হবে।আমি সামলে করে নিবো।দশ বারোদিন পর দিও "


" ঠিক আছে।আর মহারাণী আপনার পায়ে পড়ি,এইবার অন্তত চলার পথে সাবধানে যায়েন।ব্যাগটাও সাবধানে রাখিয়েন "


" যথা আজ্ঞা রাজরাণী,আপনার হুকুম চিরধার্য! "


বউদির কাছে মাঝেমধ্যেই এভাবে টাকা নিতাম।নতুন বছরে তিনটা টিউশন পেলাম।সেখান থেকে হোস্টেলের খরচ উঠে যায়।মনস্থির করলাম ভাবীর কাছ থেকে যে টাকাগুলো নিতাম সেটা অল্প অল্প করে দিবো।মেয়েদের তো আলাদা টাকার প্রয়োজন থাকেই।


মাস শেষে টাকা হাতে পেয়ে আজ গেলাম ফেরৎ দিতে।অনেক জেরাজুরি করলাম,নিলোই না।বললো 


" মায়ের কাছ থেকে টাকাটা নিলে কি মা ফেরত নিতেন?আমার আবার আলাদা টাকা কিসের?সব তো তোমার দাদার টাকাই।তোমার টাকা হারানোর অভ্যাস, তাই কিছু সরিয়ে রাখতাম।আমার শখ পূরণ করার জন্য তোমার দাদা আছে।এটা দিয়ে তুমি নিজের জন্য কেনাকাটা করো "


বউদির এমন কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম!কোটিতেও কেউ এমন একজন বউদি পায় কিনা আমার সন্দেহ! 


গল্প:-স্নেহ

লেখক:-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • কিছু বাস্তব কথা

বউ সারাদিন বকবক করে।ধমক দিয়ে বললাম " চুপ থাকতে পারো না?একটা মেয়ে এতো কথা বলে কেম্নে?"


ফলাফল!ও এখন মেসেজে রচনা লিখে পাঠায়।মেসেজ দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে উঠেছি।একেকটা মেসেজের সাইজ লম্বায় টিকটিকির সমান।না দেখলে আবার মিস কল ও দেয় !


টিকটিকির সমান মেসেজ পড়ার থেকে বউয়ের কথা শোনাই অধিকতর ভালো।রাতে বাড়ি ফিরে দেখলাম বউ গম্ভীর।রসিকতা করার জন্য বললাম 


" দুঃখ একটাই, আমার কোনো শা"লী নাই! "


বউ মেসেজ পাঠালো, " জামাইবাবু কেমন আছেন?ধরে নেন আমি আপনার শালী।মনের ইচ্ছে পূরণ করলাম "


কষে ঝাড়ি দিলাম।বউ দুঃখী মুখ করে মেসেজে লিখলো " আমারও দুঃখ একটাই, ভাসুর নাই "


বললাম " আহারে,এই দুঃখ তো পূরণ হবার নয়! "


বউ মেসেজে লিখলো " আমার ইচ্ছে আমিই পূরণ করবো "


হকচকিয়ে বললাম " কিভাবে? "


সে লিখলো " নিজে যদি শালী হতে পারি তাহলে তোমার ভাসুর হতে দোষ কোথায়? দাদা ভালো আছেন? "


আমি বাকরুদ্ধ।রাগ সামলিয়ে বললাম " ওরে তেলাপোকার বাচ্চা,তুমি মেসেজেই লেখো,ঠোঁ"ট যখন ব্যবহারই করবা না তাহলে সেটা আমার দখলে থাকুক "


কতক্ষণ জানিনা,তবে বেশ সময় ধরে ওরে ঠোঁ"ট দখলে নিলাম।ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে ও মেসেজে লিখলো " চু"মু খাবে খাও,কা"মড় দেও কেন?তোমার ভাগ্যটা ভালো কথা বলা বারণ "


রেগে আগুন হয়ে বললাম " এবার আর কা"মড় দিবো না।ডিরেক্ট খেয়েই ফেলবো "


গল্প-মৌনতার_শাস্তি

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • জীবনের কিছু বাস্তব কথা

ঝগড়ার এক পর্যায়ে তূর্ণাকে বললাম " তুমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছো দিনদিন,সেটা তোমার রেজাল্ট দেখলেই বোঝা যায় "


আমার কথায় তূর্ণা যেন একদম চুপ হয়ে গেলো।মানব জাতির সুদীর্ঘ পূর্ব অভ্যাস হলো অন্যর দূর্বল যায়গায় খোঁটা দেওয়া।আমিও দিলাম 


" পড়াশোনাই করোনি ঠিক মতো।এই রেজাল্ট নিয়ে ভার্সিটিতে চান্স হলেও বাজে সাবজেক্টে পড়তে হবে।তোমার দারা কিচ্ছু সম্ভব না "


তূর্ণা কিছু বলছে না।আঁচলে শুধু বারবার চোখের জল মুচছে।বললাম


" ন্যাকা কান্না করছো কেনো? চলো বাড়িতে নামিয়ে দিচ্ছি "


তূর্ণা কান্না মিশ্রিত স্বরে বললো " লাগবে না,একাই যেতে পারবো "


এটা বলে সে একাই রিক্সায় উঠে চলে গেলো।আমাদের পরিচয় ৬ মাসের।মাঝেমধ্যেই তো এমন ঝগড়া হয় তাই বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামালাম না।


রাতে তূর্ণা কল করে বললো " যখন থেকে তুমি আমার জীবনে এসছো প্রতি ক্ষণে ক্ষণে তোমার কথা মনে পড়ে।বিষয়টা তোমায় বারবার বলি,তুমি কখনো গুরুত্বই দাওনি।আমি কি করবো বলতো?পড়তে বসলে,কলেজে এমন কি খেতে বসলেও তোমার কথা ভাবি।আমার চারদিক শুধু তোমাকেই দেখি।হ্যা আমি একটু বেশিই আবেগে গা ভাসিয়েছি।আমি চাইলেও তোমায় নিয়ে ভাবনাকে কখনো আয়ত্ত করতে পারিনি।আর আজ রেজাল্টের পর বাবা মা তো কথা শোনালোই,তুমিও ছাড় দিলে না। আমি কই যাবো বলো তো? "


কথাগুলো বলে তূর্ণা কল কে'টে দিলো।ভুল বুঝতে পারলাম।ঠিকই তো,যে মেয়েটা ফাইভে বৃত্তি পেলো,এইটে গোল্ডেন,মাধ্যমিকেও গোল্ডেন পেলো তার হঠাৎ এমন রেজাল্ট তো কখনো কাম্য নয়।ও প্রতিদিনই একবার হলেও কল করে বলতো " তোমার কথা খুব মনে পড়ছে "।আমি তখন বিষয়টা গুরুত্ব দিতাম না।


নিজের কাছে অপরাধবোধ হলো।বেড়িয়ে পড়লাম ওর বাড়ির উদ্দেশ্য।দেড় ঘন্টা যার্ণির পর ওর বাসায় সামনে যেতেই আমার হাত পা অবস হয়ে যেতে লাগলো।বাড়ির সামনের ভিড় ঠেলে ভেতরে গেলাম।তূর্ণা আর নেই! যদি জানতাম এতো তুচ্ছ কথাটা ওর মনে এতোটা দা"গ কাটবে,মেয়েটা গ" লায় দ"ড়ি দিবে তাহলে কখনোই বলতাম না।


গল্প-দেরি 

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

আমি মধ্যবিত্ত।বিয়ে করলাম মাস্টার্স পাস মেয়েকে।ভেবেছিলাম স্ত্রী চাকরি পেলে সংসারে সচ্ছলতা আসবে।


এই সময়ে এসে একা হাতের ইনকাম দিয়ে সংসার চালানো খুব মুশকিল।কোম্পানি জবে যা বেতন পাই টেনেটুনে সংসার চলে।


স্ত্রীর চাকরি হলো।২৫ হাজার টাকা বেতন।সংসারে দেয় ৫ হাজার।বাকি টাকা তার কাছেই রাখে।প্রশ্ন করলে বলে


" তোমার টাকায় তো সংসার চলছেই,বাড়তি আমিও ৫ হাজার টাকা দিই।তাহলে বাকও টাকার হিসেব চাচ্ছো কেনো? "


স্ত্রীর এমন উত্তরে আমার আর কিছু বলার থাকে না।পরের বছর না ফিরতেই কোল জুরে ফুটফুটে ছেলে সন্তান।রোজ রাতে ছেলেকে ও দুধ খাওয়ায় আর আমরা টুকটাক গল্প করি।প্রায় সময়ই ও বলে


" ছেলেকে শহরের বড় স্কুলে পড়াবো।ভালো টিউশন রাখবো "


এদিকে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি।সরকারি স্কুলের বাইরে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নাই,ইচ্ছেও নাই।স্ত্রীর এক কথা,ছেলেকে দামী স্কুলে পড়াবে।একদিন রাগ করে বললাম 


" দামী স্কুল, দামী টিউশন পড়াবে ভালো কথা।এতো টাকা কোথায়? "


" আমার চাকরির টাকাটা জমিয়ে রেখেছি।ও বড় হতে হতে ওই টাকার পরিমান আরো বাড়বে।আর শুনো,সামনের সপ্তাহে ব্যাংকে যাবো,টাকা তুলবো "


" কত টাকা? "


" এক লাখ "


" এতো টাকা জমে গেছে? "


" এক বছর ধরে জমাচ্ছি যে।ওই টাকা দিয়ে তুমি একটা সাইড ব্যবসা ধরো।ছেলে বড় হচ্ছে,ওর ভবিষ্যত আসতে আসতে অনেক টাকার প্রয়োজন "


স্ত্রীর কথায় রীতিমতো আমি হতভম্ব।কি বলবো বুঝতে পারলাম না।তার ক'দিন পরেই মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন।মাথার ভেতরে ছোট সাইজের ঘা হয়েছে।বিদেশ,মাদ্রাজে নিয়ে যেতে হবে।


স্ত্রী বললো " ওই টাকাটা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা হবে না? "


" ওটা তো তুমি এতো কষ্ট করে জমিয়েছো,ছেলেকে দামী স্কুলে পড়াবে বলে।সেটা দিয়ে দিবে? "


" সাধারণ স্কুলে পড়েও অনেকে অনেক কিছু হচ্ছে।তুমি মাকে ওই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাও "


অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম " যারা তোমার মতো মা পায় তাদের দামী স্কুলে পড়ার কি প্রয়োজন?পারিবারিক শিক্ষা যে সন্তান পায় সেই তো প্রকৃত শিক্ষিত। "


গল্প-পাওয়া_না_পাওয়া

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

  • বাস্তব জীবন নিয়ে স্ট্যাটাস

বিয়ের আগের রাতে মাকে বললাম " এই বাড়িতে রাজরাণী হয়ে ছিলাম,শ্বশুর বাড়িতে চাকরাণী হয়ে থাকতে হবে "


মা অবাক হয়ে বললো " এসব কি ধরনের কথা? "


" ঠিকি বলছি।এখনকার শ্বাশুড়ি তো আর তোমাদের মতো সহজসরল না।জীবন নরক বানিয়ে দেয় "


" স্বামী ঠিক থাকলেই সব ঠিক " 


" এই বাড়ি ছেড়ে কিভাবে থাকবো মা? আমার তো ভাবতেই কান্না পায় "


"যেখানে যাচ্ছিস ওটা তোর সংসার,নিজের বাড়ি।সবাই তোর আপনজন।সবার মন রাখবি,একসময় দেখবি রানীর মর্যাদা পেয়ে যাবি "


অতঃপর বিয়ে হলো।শ্বাশুড়ির মন জুগিয়ে চলি,যা বলে তাই করি।ননদকে নিজের বোনের মতো স্নেহ করি।


ননদের জন্য ছেলে দেখতে এলো।সবার বেশ পছন্দ। শ্বাশুড়ি মা বললেন 


" সবার তো পছন্দ,বউমা তুমি বলো তো,তোমার ছেলে পছন্দ? " 


লজ্জায় বললাম " মা আপনারাই তো সব ভালো বোঝেন। আমার আর অপছন্দের কি আছে! "


" তা হবে না।বাড়ির লক্ষী তুমি।তোমার পছন্দের ও দাম আছে "


বুঝলাম মায়ের কথা সত্যি হয়েছে।সংসারে রাণীর মর্যাদা পেয়েছি।


গল্প-মর্যাদা

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।