- বউ শাশুড়ির স্ট্যাটাস
ছেলে'র জন্য রাখা কলিজা খাওয়ার অপবাদে, আজ আমি আমার শ্বাশুড়ির গায়ে হাত তুলেছি। এই মুহুর্তে আমার শ্বাশুড়ি যেন পাথর হয়ে গেলেন। শুধু ফ্যালফ্যাল করে আমায় দেখছিলেন। হতবাক হয়ে শুধু বললেন,
"শেষমেশ তুমি আমার গায়ে হাত তুললে বউ?"
আমি আবারো উনাকে ধা'ক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললাম,
"আপনার সাহস হয় কি করে, বাবু'র জন্য রাখা খাবার খাওয়ার? বুড়ো হয়েছেন,তবুও খাম খাম স্বভাব গেলো না। আপনার ছেলেতো কামাই করে না দুই পয়সা,তার মা হয়ে এতো লোভ আপনার? জীবনে এসব খাবার চোখে দেখেন নাই?
নেক্সট টাইম যদি এমন কাজ করতে যদি আবারো দেখি আমি, সেদিন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।"
আমার পাশে আমার স্বামী দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার শ্বাশুড়ি ছেলের মুখের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো। হয়তো তার হয়ে আমাকে কিছু বলবে বলে, আশা করছিলেন।
যা দেখে আমি আমার স্বামী'কে চোখ রাঙিয়ে বললাম,
" তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও বাথরুমে রাখা জামা কাপড় গুলো পরিষ্কার করো।"
আমার স্বামী মাথা নিচু করে চুপ করে চলে গেলো। তার চোখেও বোধহয় পানি।
ওর তো মুরোদ নেই দুই পয়সা রোজকার করার। সারাদিন আমার বাবা'র টাকা দিয়ে নেশা করে, খায় আর ঘুমায়। যদিও ওকে আমি শান্তিতে রাখি না। আমি আমার স্বামীকে নানা ভাবে মানসিক অত্যাচার করি। আমাকে কিছু বলার সাহস ওর নেই। ওকে সাত বার খু'ন করে গু'ম করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার বাবা'র আছে।
আমি আমার বাবা'র একমাত্র মেয়ে। আমার বাবা একজন নাম করা বিজনেস ম্যান। শহরে বাড়ি আছে বেশ কয়েকটা। তার যত সম্পওি সব আমারই নামে। সেখানে আমার স্বামী ছিলেন, এতিম। বিয়ে পর মা'কে নিয়ে আমাদের বাসায়ই থাকছেন। এর বিনিময়ে আমার শ্বাশুড়ি'কে করতে হয়, শরীর খাটুনি। বয়স্ক মানুষ, এসব করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যায়। তবুও নির্বাক হয়ে দু'টো ভাতে'র লোভে সয়ে যায়।
আমার শ্বাশুড়ি এখনো ফ্লোরে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে। যা দেখে, আমি মুখ বাঁকিয়ে ছেলেকে নিয়ে রুমে চলে গেলাম।
এরপর আর কখনো মানুষটাকে দেখা যায়নি, এই বাড়িতে। ওইদিনই একরাশ অভিমান, বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বৃদ্ধাশ্রমে। এতে আমার ভালোই হয়েছে, একটা খাবারের মানুষ কমলো। আমরা কেউ আর তার খোঁজ রাখিনি। শুনেছি, কিছুদিন পর ওখানে বসেই মা-রা গিয়েছে। আমি তার লা'শ'টাও দেখিনি, তার ছেলে কে যেতে দেইনি।
.
.
সময় এগোচ্ছে। কেটে গিয়েছে, বহু বছর। আমার স্বামী মা-রা গিয়েছে, সেবার। দীর্ঘদিন মানসিক নি'র্যা'ত'ন সহ্য করতে না পেরে, সু'ই'সা'ই'ড করেছে।
এখন একমাত্র ছেলে'কে নিয়েই আমার সংসার।
দেখতে দেখতে আমার ছেলেটা বড় হয়েছে। লেখাপড়া কমপ্লিট। বড় চাকরি করছে এখন। এই ছেলেটা আমার, বড় আদরের। আমারও বয়স হয়েছে, শরীর এবার আরাম চায়।
শখ করে, ছেলের জন্য উঁচু ঘর থেকে বউ এনেছি। এবার শুধু বিশ্রাম করবো আমি।
কিন্তু, হায়। বউয়ের মাঝে এ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি। আমি আর আরাম করবো কি, এখন বউয়ের সেবা আমাকেই করতে হয়। তবুও শুনতে হয় কত কটুকথা। আমার ছেলেটাও যেন ধীরেধীরে বদলে গেলো।
এক বাড়িতে থেকেও, কথা হয় না বহুদিন। তার সময় হয় না আজকাল।
আমি যেন নিজের মাঝে আমি আমার শ্বাশুড়ি'কে খুঁজে পাই। বয়স হয়েছে,শরীরে দেখা দিয়েছে কত রোগ। আজকাল লোভ বেড়েছে। যখন-তখন এটা-সেটা খেতে ইচ্ছে করে আমার। কিন্তু আমার বউমা আমাকে খেতে দেয় না। যেমনটা আমি দেয়নি আমার শ্বাশুড়ি'কে। আমার বউমা যেনো আমার থেকেও একধাপ উপরে।
আমার একটি নাতি হয়েছে, তাকেও একটু আহ্লাদ করতে গেলেও শুনতে হয়, "আমার হাত নোংরা। এই নোংরা হাতে তাকে ছুঁয়ে দিলে অসুখ হবে তার।"
আমি ছুঁতে গিয়েও চোখ মুছে ফিরে আসি বারবার। আজ সকাল সব কাজে শেষে খেতে এসে দেখি, বউমা কিছু পান্তা ভাত আর মরিচ রেখেছে আমার জন্য। অথচ আমি একটু আগে বড় বড় দু'টো ইলিশ মাছ, গরুর মাংস রান্না করে রেখে ছিলাম। সে খাবার আমি আর চোখেও দেখবো না।
লঙ্কা পোড়া দিয়ে ফ্লোরে বসে পান্তা ভাত খাচ্ছি আমি। এমন সময় আমার নাতি এসে আমার কাছে বসলো। ভাত খাবার জন্য কাঁদছে বাচ্চাটা। আমি দু'টো ভাত তার মুখে দিতেই, বউমা এসে আমার চুলের মুঠো ধরে ফেলে দিলো। তাল সামলাতে না পেরে দেয়ালে লেগে, মাথা কেটে র'ক্ত বের হয়ে আসছে। এরিমধ্যে আমার ছেলেটা রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তার চোখে সামনে বসে আমাকে তার বউ বকলো, মা'র'লো। অথচ ছেলেটা আমার নিশ্চুপ। কষ্টে দ'ম আঁটকে আসছে আমার। চোখের জল ফেলতে ফেলতে ছেলেকে বললাম,
"তোর সামনে বসে তোর বউ আমার গায়ে হাত তুললো, বকলো, আর তুই নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস, তুহিন ?"
"আমি কি বলবো,আম্মু? এগুলো তো তোমাদেরই দেওয়া, পারিবারিক শিক্ষা। তুমি যখন কথায় কথায় আমার দাদিকে গাল-মন্দ করতে, যখন তার গায়ে হাত তুলতে, তখন বাবাও তো নিশ্চুপ থাকতো।"
আমি আর ছেলেকে কিছু বলতে পারলাম না। অদ্ভুত এক কষ্টে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। এই যন্ত্রণা'র চেয়ে মরণ যন্ত্রণাও বোধহয় ঢের সহজ!
সেদিন এমন কষ্ট তো আমার শ্বাশুড়িও অনুভব করছিলো। ইশ, আম্মা! আপনাকে কত না কষ্ট দিয়েছি, কতটা না সহ্য করেছেন আপনি। আপনার কাছে একবার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও আমার হলো না।
আপনাকে দেওয়া শত কষ্টের ফল আমি পাচ্ছি, আম্মা। আমি পাচ্ছি....
পাপ যখন করেছি, পাপ মোচন তো করবেই নিয়তি।
(সমাপ্ত)
-পাপ_মোচন
- বউ শাশুড়ির সম্পর্ক
" বউমা,এতো বেলা হয়ে গেলো এখনো ঘুমাচ্ছো?রান্না করবে না নাকি "
শ্বাশুড়ির কথায় ধরপর করে বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করলাম।উঠে বসতেই চারদিকটা অন্ধকার হয়ে আসলো।খাটের পায়া চেপে ধরে বসে রইলাম।মায়ের আবারো কর্কষ স্বর ভেসে এলো
" বউমা,উঠোনি এখনো? "
দেয়াল ধরে ধরে বের হয়ে মাকে বললাম " মা আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে। শুয়ে ছিলাম "
" রান্নাবান্না করবে না? অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকলে তো চলবে না।সংসার সামলাতে হবে।বাবু ফিরে এসে না খেয়ে থাকবে? "
" মা আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। ঠিকি তো,আমার সংসার তো আমাকেই সামলাতে হবে "
রান্নাঘরে গিয়ে দেয়াল ধরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।মায়ের স্বর ভেসে এলো
" বউমা,চা তুলে দাও তো।মাথাটা ধরেছে "
চায়ের পাতিলটা চুলায় তুলে দিয়েই গা গুলিয়ে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।তবুও নিজেকে সামলিয়ে আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে রান্না করলাম।
বিকেলে ভিষণ অসুস্থ হয়ে পড়লাম।গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে।স্বামী ফিরে এসে বললো " এই অসময়ে শুয়ে আছো কেন? "
কাঁপা স্বরে বললাম " জ্বর এসছে বোধহয়।কপালে হাত দিয়ে দেখবে একটু্? "
স্বামী শার্ট খুলতে খুলতে বললো " কপালে হাত দিয়ে দেখার কি আছে।জ্বর হলে তো বোঝাই যায় "। মন ভার করে আর কিছু বললাম।
রাত হতে হতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লাম।সন্ধায় ট্যাবলেট খেয়েও কোনো কাজ হলো না।শ্বাশুড়ি মা ঘরে এলে স্বামী বললো
" ওর তো খুব জ্বর! "
শ্বাশুড়ি মা বললো " ওর বাড়িতে ফোন করে বল আপনাদের মেয়ে অসুস্থ।ওর মাকে আসতে বল "
ওনার কথায় স্বামী ফোন বেড় করে কল করবে তখন বললাম
" না থাক।আমায় কাউকে সেবা করতে হবে না।তোমরা ব্যস্ত হইও না "
এটা শুনে শ্বাশুড়ি মা চলে গেলেন।স্বামী বেলকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে বসে রইলো।
মনে মনে ভাবলাম,এই শ্বাশুড়ি,স্বামীর সামান্য অসুস্থ হলে আমার রাতের ঘুম উড়ে যেত।সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলতাম।আর আজ আমি অসুস্থ, সেবা করার জন্য আমার মাকে আসতে বলা হলো!
সুস্থ হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স পেপার পাঠালাম।সাথে একটা চিরকুট
" অসুস্থতায় যদি নিজের মায়ের প্রয়োজন হয়,তাহলে সুস্থ অবস্থায় পরের মা ছেলেকে কেন পালবো।অকৃতজ্ঞের দল "
গল্প অকৃতজ্ঞ
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়