স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস | স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ইসলামিক গল্প

 স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস

স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস

আমার স্ত্রীর গায়ে যেদিন প্রথম হাত তুলে ছিলাম। সেদিন সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে চেয়ে ছিল। থাপ্পরের বেগ এমন ছিল যে তার ঠোঁটের কোণে রক্ত বিন্দু জমে গেছিল। নিঃশব্দে চোখ থেকে পানি ঝরছিল তার, কোন প্রতিবাদ সে করেনি। আমি কিন্তু তার চোখের পানি দেখে গলে যায়নি। বরং আরো কঠোর হয়েছিলাম।তার পর থেকে দেখলাম আমার সমস্ত কাজ কর্ম বেশ গুছিয়ে করতো। কোন কাজের আর ঝামেলা ছিল না।তখন বুঝে ছিলাম নারী জাতিকে মাথাতে নয় পায়ের তলায় রাখতে হয়। বেশি আলগা দরদ দেখালে বিগড়ে যায় এরা। তাই তাকে কন্ট্রোলে রাখার জন্য পান থেকে চুন খসলেই মারতাম। এক সময় দেখলাম, আমার স্ত্রী আগের মতো আর চঞ্চল নেই, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না, কোন আবেগ আর দেখায় না। যা বলি বিনা বাক্যে করে দেয়। মাঝে মধ্যে মনে হতো যেন এখন রোবট নিয়ে বাস করছি। ওর হাসি মাখা মুখটা ভুলে গেছিলাম। এক রাতে দেখি স্ত্রী পাশে নেই, আমি মনে করেছিলাম হয়তো ওয়াশরুমে গেছে। কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ও আসছে না দেখে নিজেই উঠে গিয়ে দেখি সে ওয়াশরুমে নেই। বাইরে বারান্দায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছে,বাজে তখন ৩:২৫মিনিট। হয়তো তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছে। খানিক ক্ষন আড়াল থেকে দেখলাম। মোনাজাতের সময় সেজদাহ হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তার কান্না কখনোই আমার অন্তর অব্দি পৌঁছায়নি। আগে অল্প কিছু হলেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে ফেলতো বড্ড বিরক্ত লাগতো। কিন্তু এই নামাজে কান্না দেখে কেমন যেন অন্তরে ভয় ঢুকে গেল। এই কান্না আমাকে হিম করে দিলো। পাঁজরে যেন কেউ আঘাত করছে তেমন কষ্ট হচ্ছিল।

 আমি আর দাঁড়াতে পারলাম না। চলে আসলাম ঘরে । শুধু মাথার ভিতর কাজ করছিল আল্লাহর কাছে সে কি এমন চাচ্ছিলো যে এমন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। পরদিন সন্ধ্যায় দেখলাম আমার স্ত্রী বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চুপচাপ তার পাশে গিয়ে বসলাম। আমাকে বসা দেখে সে উঠে চলে যেতে নিলে আমি তাকে বলি , কোথায় যাচ্ছো? সে ভীতু চোখে বলে,এই সময় তো চা খাও,আমি এখনি চা করে আনছি। আরে চা লাগবে না এখন , তুমি আমার পাশে বসো একটু। আমার কথায় সে কিছু ক্ষন বোকার মত চেয়ে রইল তার পর বাধ্য মেয়ের মত আমার পাশে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে পড়লো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললাম। তোমার কি কোন অভিযোগ আছে আমার প্রতি?? এমন প্রশ্ন করাতে সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, হয়তো বুঝতে চেষ্টা করছে কেন এমন প্রশ্ন হঠাৎ করছি। অন্য দিকে তাকিয়ে সে শান্ত স্বরে বলল অভিযোগ আমার আর কোন মানুষের কাছে বলিনা। যা অভিযোগ তা সব আল্লাহর কাছে পেশ করি। কারন কিছু ঠিক করে দেওয়ার হলে তিনিই দিবেন আর না ঠিক করার হলে বদলে দিবেন। সব কিছু তার হাতেই। তাই কারো প্রতি আমার অভিযোগ,রাগ ক্ষোভ কিছুই নেই। তাহলে কাল রাতে নামাজে এমন কি প্রার্থনা করছিলে যে কাঁদছিলে তুমি? সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটা সময় ছিল যখন আল্লাহর কাছে তোমাকে পাওয়ার জন্য ঠিক ঐ ভাবে কাঁদতাম,প্রতিটি মোনাজাতে। এখন ও ঠিক সেই ভাবেই আল্লাহর কাছে চাই তোমার কাছ থেকে মুক্তি পেতে।


আমার স্ত্রীর এই কথা টা সেদিন আমার কলিজা ছেদ করেছিল। একটা সুক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল এর থেকে বেদনাদায়ক কথা এই পৃথিবীতে আমার জন্য একটাও নেই। আমার স্ত্রীর চোখের কোণে তখন পানি ছিল। আমি বুঝে ছিলাম নারী কে কঠোর হয়ে কখনো আয়ত্তে রাখা যায় না।  


মেয়ে মানুষ আল্লাহর কাছে অন্তত প্রিয় এবং দামী। তাই পুরুষের কাছে সে দাসী নয়। ভালোবাসা, সম্মান , ধৈর্য,যত্ন দিয়ে নারীকে যে ভাবে ইচ্ছে চালনা করা যায়। অবহেলা,অসম্মান,অযত্ন দিয়ে যেমন কিছু হাসিল করা  যায় না। তেমন এক জন রক্তে মাংসে গড়া মানুষ কে আয়ত্তে রাখা যায় না।

অনুগল্প

সমাপ্ত


স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প পড়ুন।