না পাওয়া ভালোবাসা | না পাওয়ার গল্প

 ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টের স্ট্যাটাস

ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টের স্ট্যাটাস

এতো রাতে হঠাৎ এক্সের কল দেখে বেশ অবাক হলাম আমি, সাথে খুব চিন্তাও হচ্ছে এই ভেবে যে আজ তিন বছর পর হঠাৎ কি মনে করে সে কল দিচ্ছে। আমি তো এখন আর একা নই। আমার স্বামী আছে, সংসার আছে। ভীষণ ভয় হচ্ছে আমার, না জানি আবার নতুন করে কোনো ঝা*মেলা শুরু হয়। 


কল রিসিভ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। পিছনে তাকাতেই দেখি আমার স্বামী সাদাফ দাঁড়িয়ে আছে। খুব ভ-য় পেয়ে গেলাম তাকে দেখে। বুঝতে পারছি না যে সে জানতে পারলে ঠিক কিভাবে নেবে ব্যাপারটা। ঠিক তখনি ফোনটা হুংকার দিয়ে আবারো বেজে উঠলো। 


কি ব্যাপার কে ফোন দিয়েছে আর তুমি রিসিভ করছো না কেনো? সাদাফ হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো। এদিকে আমি ঘামছি, বুকের ভেতরেও দুরুদুরু কাঁপন শুরু হয়ে গেছে। সাদাফ আবার জিজ্ঞেস করলো- কি হয়েছে কথা বলছো না যে? আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম- রাতুল ফোন দিচ্ছে বারবার। কেনো ফোন দিচ্ছে তা আমি জানিনা আর আমি ওর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখিনি, রাখতেও চায় না। 


ফোন রিসিভ করে দেখো সে কি বলতে চায়। কথা শেষ করে বারান্দায় এসো, আমি ওখানে আছি বলেই চলে গেলো সাদাফ। 


ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাতুলের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। হৃদয়ের গভীরে কোথায় যেনো রাত জাগা নিশাচরগুলো হুহু কে ডেকে উঠলো, সমস্ত শরীর জুড়ে এক কষ্টের শিহরণ বয়ে গেলো। কতো পুরনো স্মৃতিরা আজ জীব-ন্ত হতে শুরু করেছে, থেকে থেকে চোখের সামনে ভেসে উঠতে শুরু করেছে তারা। সেই পরিচিত কন্ঠস্বর যা শোনার জন্য আমি সর্বদা ব্যাকুল হয়ে থাকতাম অথচ আজ তা কতো অপরিচিত লাগছে।আমি যেনো এক ঘোরের মাঝে হারিয়ে গেলাম। 


হঠাৎ রাতুলের কথায় আমার ঘোর ভাঙ্গলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো রাতুলের কথা- মিতু আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? সমস্ত আবেগ, সমস্ত কষ্ট চেপে রেখে বললাম- হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি বলো। আজ এতো বছর পর হঠাৎ কি মনে করে? 


রাতুল বললো- আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়ো মিতু, আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি আর আল্লা-হ তার বি-চার করেছেন। তোমার সাথে করা অন্যা-য়ের শা-স্তি আজ পাচ্ছি আমি, বলেই হাউমাউ করে কেঁ-দে উঠলো রাতুল। অনেকবার জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কিন্তু না সে কোনো কথাই বলছে না, অনবরত শুধু কেঁদেই চলেছে। এমন করে কোনো পুরুষ কাঁদতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। 


অনেকক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে রাতুল বলতে লাগলো- মিতু তোমাকে ছেড়ে গিয়ে আমি নিশিকে বিয়ে করেছিলাম, আজ নিশি আমাকে ছেড়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নুহাশের সাথে পালিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় আমার টাকা পয়সা, তার গয়নাগাটিও সাথে করে নিয়ে গেছে। নিশি আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে মিতু, আমাকে শেষ করে দিয়েছে ; বলতে বলতে আবারো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো রাতুল। 


আমার চোখ বেয়ে অঝরে অশ্রু ঝরতে শুরু করছে। এ অশ্রু ভীষণ যন্ত্রণার অশ্রু। আজ রাতুলের জন্য প্রচন্ড মায়া হচ্ছে আমার। তাকে ভালোবাসতাম বলে মায়া হচ্ছে না, কেবলমাত্র তার ক-ষ্ট অনুভব করতে পারছি বলে মায়া হচ্ছে। এমন কষ্ট একদিন আমিও তো ভোগ করেছিলাম। আজ রাতুল এসে আমার কাছে মাফ চায়তে পারছে অথচ আমি সেদিন জিজ্ঞেসও করতে পারিনি যে আমার দোষটা কোথায়?  কেনো এমন করলে আমার সাথে? 


আজ রাতুল এসে তার কষ্টের কথাগুলো আমাকে বলতে পারছে কিন্তু আমার কথাগুলো শোনার কেউ ছিলোনা সেদিন, নীরবে নিজের সকল ক-ষ্ট সহ্য করেছিলাম। রাতুল আজ আমার কাছে কাঁ-দতে পারছে কিন্তু সেদিন আমি পারিনি আমার কা-ন্না গুলো কাউকে দেখাতে। 


কতো ভালোবেসেছি তাকে,কখনো তার সাথে ঝগড়া হয়নি আমার, কখনো জো-র করে একটা কথাও বলিনি আমি, কখনো ওর কাছে কোনো আবদারও করিনি তবুও সে আমাকে ভালোবাসতে পারলোনা। ৪ বছরের সম্পর্কে কোনো বি-চ্ছেদ হয়নি আমাদের অথচ একদিন হুট করেই সে বিয়ে করলো তার বেস্ট ফ্রেন্ড নিশিকে। হ্যাঁ নিশিকে তো আমি রাতুলে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসিবেই চিনতাম। এরপর কতো মেসেজ দিয়েছি রাতুলকে কিন্তু সে সিন করেনি, রিপ্লাই দেয়নি। অনেকবার কল করেছিলাম কিন্তু রিসিভ করেনি বরং ব্লক করে দিয়েছিলো আমাকে। 


সেদিন মায়ের পা ধরে বাচ্চাদের মতো করে খুব কেঁদেছিলাম। চিৎকার করে বলেছিলাম- মা আমি তো রাতুলকে ভালোবাসি কিন্তু সে কেনো আমায় এমন ধোঁকা দিলো। আমি তো ওর কোনো ক্ষ-তি করিনি মা তবুও কেনো সে এমন করলো আমার সাথে?  


আমার কান্না দেখে সেদিন মাও অঝরে কেঁদেছিলো, আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো- জীবন থেকে যা হারিয়ে যায় তার জন্য কখনো আফসোস করতে হয় না কারণ তা তোমার জন্য ভালো ছিলোনা। বরং তুমি নিজেকে তৈরি করো ভবিষ্যতের জন্য কারণ তোমার ভালোটা তোমার কাছের আসার রাস্তা খুলে গেছে। এটাই তো হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর পরিকল্পনা। 


রাতুল বিয়ে করার একবছর পর কোনো এক মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম যে, আমার সাথে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় রাতুল নিশির সাথেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো। সেদিন মনে হচ্ছিলো এই পৃথিবীতে সত্যিকার ভালোবাসার কোনো দাম নেই, যে যতো স্বার্থপর হতে পারবে সে ততো ভালো থাকবে। 


নিজেকে সামলে নেয়ার জন্য মা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন। নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করতাম। কষ্ট হতো তবুও চেষ্টা করেই যেতাম। ছোটবেলা থেকেই আমি ভালো আঁকতে পারতাম আর তাই একটা স্কুলে ড্রয়িং টিচার হিসেবে জয়েন করি। স্কুল,স্কুলের বাচ্চা সবমিলিয়ে সময়টা বেশ কেটে যেত আমার। 


আমার স্কুলেই সাদাফের ভাইয়ের মেয়ে পড়তো আর তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন সাদাফের মা অর্থাৎ আমার শাশুড়ী মা, আর সেখানে আমাকে দেখেই তিনি আমাকে পছন্দ করেছিলেন সাদাফের জন্য। একদিন তিনি হুট করেই বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে চলে এলেন আমাদের বাসায়, সব শুনে মাও রাজি হয়ে গেলেন ; তারপর একদিন ঘটা করে আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। 


সাদাফ খুব ভালো ছেলে, খুব খেয়াল রাখে আমার। ওর দিকে তাকালে আমি আমার সমস্ত কষ্ট ভুলে যাই মুহূর্তের মধ্যে। রাতুলের কথা বলেছিলাম আমি তাকে কিন্তু সে কখনো ওসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। 


রাতুল এখনো কাঁদছে। আমি কি বলবো বা আমার ঠিক কি বলা উচিত বুঝতে পারছিনা তাই ভালো থেকো বলেই কলটা কেটে দিলাম। 


সাদাফ এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়াতেই একহাত দিয়ে সে জড়িয়ে ধরলো আমায়। আমি কিছু বলতে যাবো তখনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো- আমি তোমার অতীত নিয়ে কিছু জানতে চাইনা। তুমি আমার বর্তমান, তুমি আমার ভবিষ্যৎ আর আমি কেবল এটা নিয়েই ভাবতে চাই। 


আমি তো সব জেনেশুনেই তোমাকে বিয়ে করেছি মিতু তবে তোমার এতো ভয় কিসের?  আমি তো আছি তোমার পাশে। আমি তোমার জীবনে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হতে চাই। স্বামী তো সকলেই হতে পারে তবে বিশ্বস্ত বন্ধু কজনেই বা হতে পারে? 


আমি তোমার খুব ভরসার একটা কাঁধ হতে চাই, যে কাঁধে মাথা রেখে তুমি তোমার সকল কষ্ট ভুলে যাবে, নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিবে জীবনের বাকিটা পথ। 


মিতুর চোখজোড়া আবারো ছলছল করে উঠলো। চোখেরা পাতা ঝাপটাতেই তা তরতর করে নিচে গড়িয়ে নামতে লাগলো কিন্তু মিতু আজ তার চোখের জলকে থামতে দিলোনা। কারণ আজ তার সুখের দিন। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া এ জল তার পরম আনন্দের জল। 


............সমাপ্ত.........


অণুগল্প

ভরসার_কাঁধ


মন ছুঁয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প।