- বাস্তব জীবনের গল্প
গেটে দারোয়ান মামাকে দেখতে না পেয়ে রিক্সা চালক মামাকে বললাম,
– '' মামা ব্যাগগুলো একটু লিফট পর্যন্ত দিয়ে আসবেন? আমি সবগুলো নিতে পারছি না ''
রিক্সা চালক মামা, – ''পারবোনা কেনো মামা'' বলে আমাকে হেল্প করলেন।
ব্যাগ নিয়ে রিক্সা চালক মামা বললেন,
– ''মামা একটা কথা বলি রাগ করিয়েন না ''।
আমি বললাম, '
– "বলেন মামা,রাগ করবো কেনো "।
তখন রিক্সা চালক মামা বললেন,
– ''মামা বাজারে যাওয়ার সময় একটা ব্যাগ নিয়ে যাবেন,এই যে পলিতে করে মাংস,মাছ,মুরগি আনলেন এটা দেখলে গরিবরা আপনার কাছে চাইবেনা ঠিকই,কিন্তু তাদের আফসোস হবে,নিজেদের পরিবারের জন্যও নিতে ইচ্ছে করবে, কিন্তু তাদের পক্ষে তা সম্ভব হবেনা ''।
কথাটা শুনে আমি খানিকটা থমকে যাই কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারি কথাটা বলতে ওনার চোখে জল চলে আসলো।
পরে রিক্সা চালক মামাকে জিজ্ঞাসা করলে উনি ছোট্ট একটা ঘটনা বলেন,
– " সেদিন তার ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছেন,মেয়েটা খুব অসুস্থ,যাওয়ার পথে মেয়েটা রাস্তায় একজনকে দেখিয়ে বললেন,বাবা আমাদের এত্ত বড় একটা মাছ আনবে,আমি এত্ত বড় মাছ খাবো। সেদিন রিক্সা চালক মামা তার মেয়েকে বললেন,ঠিক আছে মা আনবো। কথাটা বলে নিজের চোখের জল লুকিয়ে মেয়েকে নিয়ে হাসপিটালে যায়।পরে মেয়েটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন ডেঙ্গু জ্বরের জন্য,কয়েকদিন পর মারাও যায়। কিন্তু এই বাবার আর তার মেয়েকে এত্তবড় মাছ খাওয়ানো সম্ভব হয়নি,এই আফসোসটা তার সারাজীবন থাকবে।কারন একটা মাছের দাম দিয়ে সে পুরোমাস তার সংসার চালায়। "
কথাটা শুনে খারাপ লাগলো ওনেক,মামাকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু টাকা বাড়িয়ে দিতে চেয়েছি ভাড়া থেকে,কিন্তু তিনি তা নেননি।পরে মামাকে বললাম,ঠিক আছে মামা এমনটা আর হবেনা,বাজারের ব্যাগ নিয়েই বাজারে যাবো।
পরে ভেবে দেখলাম আসলেই তো,কারো গায়ে সুন্দর জামা দেখলে আমাদেরও ইচ্ছে হতো সুন্দর জামা পড়তে,যাদের সামর্থ্য আছে,তারা ইচ্ছাটাকে পূরন করতে পারে,কিন্তু সবাই না। তাদের মনের ভেতর একটা ছোট্ট কষ্ট জমা হয়ে থাকে।
এই যে বাহিরে এতো এতো খাবার খাই,কখনো বিকেলে বাহির থেকে খেয়ে এসে রাতে কারো মাইডেতে ভালো কোনো খাবার দেখলে ইচ্ছে করে ওটা খেতে,আর যারা কখনোই খেতে পারেনা তাদের ইচ্ছেটা কতোটা কঠিন হয় বলা যায়না।
এই ছোট ছোট জিনিসগুলো হয়তো সবার কাছে গুরুত্বপূর্ন না,তবুও হয়তো এই ছোট্ট একটা কাজ থেকে একটা মানুষের মনের কষ্ট কমানো সম্ভব। আর প্রতিবেশীদেরকে আমাদের সাহায্য করা উচিত যতটা সম্ভব,আর হ্যাঁ,গরিবদের যতটা সম্ভব সাহায্য করা উচিত।
~ সিদ্দিক আরমান
- জীবনের কিছু বাস্তব কথা স্ট্যাটাস
পাঁচ'শ টাকা হারিয়ে মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলো তরুণ।কিছুতেই মনের অস্থিরতা কা"টছে না।ছটফট করতে দেখে বাবা বললেন
" কি হইছে?এতো অস্থির হয়ে আছো কেনো? "
" বাবা পাঁচ"শ টাকা হারিয়ে ফেলছি।রাস্তায় বোধহয় কোথাও পড়ে গেছে,টের পাইনি।বার্গার খাবো জন্য রেখেছিলাম,ধুর ভাল্লাগেনা! "
" হারানো টাকাটা নিশ্চয় কারো না কারো কাজে লাগবে।মন খারাপ করিও না।এই দুনিয়ার কোনো কিছুই আমাদের না "।বাবার কথায় তরুণ কিছুটা স্বস্তি পেলো।
অপরদিকে ফুটপাতে কাগজ কুড়াচ্ছে টোকাই।বয়স সাত,ঘরে অসুস্থ মা,ছোট বোন।সারাদিন কেটেছে অনাহারে।একটা মুড়ির ঠোঙ্গা তুলতেই দেখলো নিচে পড়ে আছে চকচকে পাঁচশ টাকার নোট!
আনন্দে চোখ চকচক করে উঠলো।মায়ের জন্য ঔষধ কিনলো,১০০ টাকা দিয়ে বোনের জন্য নতুন জামা।সহপাঠী বন্ধুদেরও ডেকে আনলো।পেঁয়াজ,তেল,চানাচুর দিয়ে আয়োজন করে আজ পেট ভরে সবাই মুড়ি খাবে।
মুড়ি মাখা শেষে টোকাই ছেলেটার মা বললো " দুমুঠো মুড়ি বাইরের কুকুরদের দিয়ে আয়।যার টাকা হারিয়েছে তাকে সমার্পন করা হয়ে যাবে "
গল্প-পরিতৃপ্তি
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- টাকা নিয়ে কিছু বাস্তব কথা
মেয়েকে জামা কেনার জন্য চার হাজার টাকা দিলাম।মেয়ে কিনেছে তিন সেট জামা।অবাক হয়ে বললাম
" একই রঙ্গের তিনসেট জামা কিনছো কেন?আলাদা আলাদা নিতে পারতে তো "
মেয়ে বললো " বাবা এখানে রিতা আর ওর বোনের একটা করে সেট আছে।একটা আমার বাকি দুইটা বান্ধবী রিতা আর তিশার "
অবাক হয়ে বললাম " ওদের জন্যও কিনছো! "
" হ্যা বাবা।করোনায় ওদের বাবা গত হয়েছে।ওরা কোথাও গেলে পুরাতন জামা পড়ে যায়।খারাপ লাগে খুব "
মেয়ের কথায় মুগ্ধ হলাম।এখন থেকে মেয়ে কিছু কেনার জন্য টাকা চাইলে তিনটা সেট নেওয়ার টাকা দিই।একসেট মেয়ের,বাকি দুই সেট পিতৃহীন মেয়ে দুটির।সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমার মাধ্যমে তাদের বাবার অপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করাতে চান।
গল্প-পূর্ণতা
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- জীবন নিয়ে কিছু বাস্তব কথা
অয়ন কলতলা'য় বালতি ভর্তি বাচ্চার পা"য়খানা,প্র"স্রাবে মাখামাখি কাঁথা ধুচ্ছে।অয়নের মা গরম জল করে দিয়েছে।
অয়ন একটা একটা করে জামা কেঁচে মায়ের হাতে দিচ্ছে,মা সেটা দড়িয়ে শুকাতে দিচ্ছে।এটা শুধু আজকের চিত্র না।গত এক মাস ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।
প্রায় দিনই বাচ্চার ময়লা জামা ধুয়ে দেয় অয়নের মা।মাঝেমধ্যে অয়ন ও ধোঁয়।একমাস হলো অয়নের বউয়ের ডে"লিভা"রি হয়েছে।মা অয়নকে বলে দিয়েছে
" তুই আর আমি বাইরের সব কাজ সামলাবো।বউমার ঘরের বাইরে বের হতে হবে না।এখন ঠান্ডা লাগলে সমস্যা।ছোট বাচ্চা,অনেক সাবধানে থাকতে হবে "
অয়নের বউ বাচ্চা নিয়ে সারারাত জেগে থাকে।কোলে নিয়ে বসে থাকে,একটু পর পর যত্ন করে,সারারাত ঘুম হয় না।
সকাল হলেই অয়নের বউ শাশুড়ীর কোলে বাচ্চা দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায়।অয়নের মা বাচ্চাটাকে রোদে বসিয়ে তেল মালিস করিয়ে দেয়।অয়ন রান্না করে।দুপুরের দিক অয়নের বউ ঘুম থেকে উঠে খেয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে শাশুড়ীর সাথে গল্প করে।
ওদের দেখে পাড়ার সবার খুব হিংসে!লোকজনের এমন হিংসে দেখতে অয়নের ভালোই লাগে।ভালোবাসা ক'জন সহ্য করতে পারে? হিংসে তো করবেই।
গল্প-আপন
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- বাস্তব জীবনের কিছু গল্প
ছোট ছেলেটা খেতে বসে রেগে বললো " আজকেও মাছ! মাছ আমার গন্ধ লাগে,খাবো না "
বললাম " মাছ না খাও,তরকারি দিয়ে তো খেতে পারো "
" বাবা তুমি সবসময় জোর করো কেন?আমি খাবোনা মানে খাবোনা "
" না খেয়ে থাকবে? "
" বেইলি রোডের কাচ্চি ভাইয়ে যাবো,টাকা দাও "
" ওসব খেলে পেট খারাপ হবে।বাড়িতেও খাও "
" দাও না বাবা,কতদিন হলো কাচ্চি খাইনা! "
ছেলের কথায় মায়া হলো।খাওয়া অবস্থাতেই টাকা বেড় করে দিলাম।ও টাকা নিয়ে উল্লাসে মেতে বেড়িয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ বাদেই বু"ক হঠাৎ ধরফর করতে শুরু করলো।স্ত্রী এসে বললো,কেমন যেন অস্থির লাগছে গো।ওকে ফোন করে বলো বাড়ি আসতে।
ছেলেকে কল করলাম।ফোন বন্ধ!একটু পর এলাকায় গুঞ্জন পড়ে গেলো,সবাই বলাবলি করছে বেই"লি রো"ডে আ"গুন!
রাস্তার অপর প্রান্তে ছেলের ঝ!লসে যাওয়া মৃ!তদেহ পাবার আশায় দাঁড়িয়ে রইলাম।রোজকার মতো আজকেও কেন ছেলেটাকে জোর করে বাড়িতে খাওয়ালাম না!কাঁদছি!
গল্প-কালো_ফেব্রুয়ারি
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়