বাঁচতে হলে- প্রচুর হাসতে হবে ২০২৪

 হাসতে নাকি জানেনা কেউ

হাসতে নাকি জানেনা কেউ

মনুষ যে ডিম পারে তা এই গল্পটা না পরলে জানতেই পারবেন না।একবার পরে দেখেন গল্পটা তার পর হাসবেন না কি করবেন সেটা আপনার বিষয়।

আবার গল্প পরতে যেয়ে নিজেই ডিম পারলে কিন্তু আমি দাই নাই।


বিয়ের সপ্তাহখানেক বাদেই আনিস বুঝতে পারলো তার বউ বিথী ঠিক নর্মাল না। অবশ্য এটা সে ধারণা করেছিলো বিয়ের পরদিনই। ভালোবাসা বাসির আগে বিথী যখন বললো কনড** ইউজ করার দরকার নাই কোনো, আনিস অবাক হয়েছিলো। 

- তোমার কি সেফ পিরিয়ড চলতেছে......???

- না।

- তাহলে,পিল খাবা পিল খাওয়া ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের জন্য।

- পিলও খাবো না।


- তাহলে প্রটেকশন না ইউজ করলে কনসিভ করে ফেলবা তো। এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেয়া ঠিক হবে না।

বিথী কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেছিলো, 'আমি বলতেছি তো, কোনো সমস্যা হবে না। এতো দ্রুত বাচ্চা আমিও নিবো না। তুমি কনড** রেখে দাও৷ আর কখনো এটা কিনে তোমার টাকা নষ্ট করা লাগবে না।'

.

তখন বিস্তারিত আলোচনা করার মত ধৈর্য বা পরিস্থিতি না থাকায় আনিস আর কথা বাড়ালো না। তবে খটকা একটা থাকলোই।

.

ছয় সাতদিন পর একদিন সন্ধ্যা থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো। বাসায় বাজার ছিলো না কোনো। আনিস বিথীকে বললো খিচুড়ি রান্না করো। সাথে ডিম ভাজি। দোতলার ভাবীর বাসা থেকে ডাল আর ডিম ধার করে আনো।

বিথী জানালো, ঘরে ডিম আছে। শুধু ডাউল আনলেই হবে। 

.

ডিম খিচুড়ি পেট ভরে খাওয়ার পর বৃষ্টিভেজা রোমান্টিক রাতে আনিসের ইচ্ছা হলো প্রেম করার। কারেন্ট ছিলো না। মোমবাতি জ্বালাতে জ্বালাতে আনিস বিথীকে জিজ্ঞেস করলো, 'আজও নো প্রটেকশন..???'

বিথী হাসলো, 'ইয়েস বেইবি।'

- আচ্ছা বলো তো। তোমার কি কোনো অপারেশন করা আছে? আমাদের কি কখনো বাচ্চা হবে না...???

- আরে বাবা এমন কিছুই না। আমি সুস্থ একদম।

- তাহলে? আজ আমাকে খুলে বলতেই হবে। আমি কিছুই শুনবো না। বলো তুমি।

.

সেদিন রাতেই আনিস জানলো তার বউ অন্য মেয়েদের মত না। বিথী আলাদা। সে আর সবার মত বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে না কখনোই। তার সমস্যা হলো, সে ডিম পাড়ে। 

এবং আনিস কিছুক্ষণ আগে যে ডিমভাজি খেয়েছে সেটা স্বয়ং তার বউএর পাড়া ডিম।

.

বমি পরীস্কার করে মাথায় পানি দেয়ার পর আনিস সুস্থ হলো কিছুটা। সে যে শকের মধ্যে চলে গেছিলো খবর শুনে, সেটা একটু কমেছে। ঘরে ডিম না থাকা সত্বেও এতো বড় ডিমভাজি কই থেকে আসলো এবং সেটার স্বাদ এরকম অদ্ভুত কেন, সে ঘটনা জানার পর বমি আটকে রাখা সম্ভব ছিলো না আনিসের পক্ষে।

.

আলমারির মধ্যে লুকানো দুইটা ডিম বের করে দেখালো বিথী। অনেক বড় সাইজ একেকটার। একসাথে তিনটা মুরগীর ডিমের সমান। ডিমের রঙও আলাদা। নেভি ব্লু কালারের ওপর হালকা লাল ছোপ ছোপ। 

.

বিথী শান্ত গলায় বললো, 'আনিস, তুমি চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারো।'

আনিস ভ্রু নাচালো, 'আমি কিছুই বুঝতে পারতেছি না। সিরিয়াসলি। তুমি আমাকে বুঝাও। একটা মানুষ কেন ডিম পাড়বে? তুমি কি মুরগীর বাচ্চা........???

বিথী রাগলো এবার, 'দেখ মুরগীর বাচ্চা বলে অপমান করবা না। মুরগী ছাড়া আরো অনেক প্রাণীই ডিম দেয়।'

- সে নাহয় দিলো। কিন্তু তুমি তো মানুষ। তুমি কেন দিবা......???


- সেটা আমি জানিনা। প্রকৃতি জানে সেটা। তবে আমার ভুল হয়েছে আমি বিয়ের আগে ব্যাপারটা তোমাকে জানাইনি। আসলে আমার সাহস ছিলো না। ডিম পাড়া একটা মেয়েকে এই সমাজ মেনে নিত না কখনোই। তবে পরে ভেবে দেখলাম ব্যাপারটা গোপন রাখলে আসলে তোমাকে ঠকানো হবে। তাই বলে দিলাম। এখন তুমি যা খুশি করো। ডিসিশন তোমার হাতে।


আনিস কি বলবে ভেবে পেলো না। একটু ভেবে বললো, 'আমাদের কি কখনোই বাচ্চা হবে না....???'

বিথী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, 'কেন হবে না? ডিমে তা দিলে অবশ্যই হবে। একসাথে চাইলে অনেকগুলা বাচ্চাও হতে পারে। কিন্তু সেগুলা কিসের বাচ্চা হবে আমি ঠিক শিওর না। তবে যদি মানুষের বাচ্চা হয়ও তবুও কোনোধরনের প্রেগনেন্সি, ক্লিনিক, অপারেশন ছাড়া তোমার বউএর একটা বাচ্চা এই সোসাইটি একসেপ্ট করবে না।'

.

'আচ্ছা আমাকে ভাবার সময় দাও। এটা ছাড়া সেসময় আর বলার মত কিছু খুজে পেলো না আনিস।'

.

বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে। আনিস বিথীকে ছেড়ে দেয়নি। তাদের সংসার খুব ভালোই চলছে। বউ হিসাবে বিথী অসাধারণ। আনিসের ভীষণ কেয়ার নেয়। এতো ভালো রবীন্দ্রসংগীত জানে। জোসনা রাতে ছাদে বসে শুনতে শুনতে মুগ্ধ হয়ে মেয়েটার প্রেমে পড়ে আনিস। বারবার। রান্নার হাত খুবই ভালো বিথীর। বিছানাতেও পারদর্শী। শুধু একটাই সমস্যা, সে ডিম পাড়ে। আনিস মেনেই নিয়েছে। পাড়লে পাড়ে, কি আর করা। রাতে প্রেম করার ইচ্ছা হলে পৃথিবীর সব পুরুষরা বিভিন্ন কথা বলে বউকে কনভিন্স করে। আনিসই একমাত্র ব্যক্তি যে রোমান্টিক গলায় বলে, 'ভীষণ ডিম খেতে ইচ্ছা করতেছে। হবে নাকি.......???'

.

এটা সে মজা করেই বলে। বাস্তবে সেই রাতের পর থেকেই সবধরনের ডিম খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আনিস। নিজের বাচ্চা কিভাবে খাওয়া সম্ভব! তবে আনিস না খেলেও ওর বন্ধুরা খায়। বন্ধুমহলে বিথী ভাবির ডিম রান্নার প্রশংসা কিংবদন্তি আকার ধারণ করেছে। এতো সুস্বাদু ডিম নাকি কেউ কখনো খায়নি। অবশ্য তারা এটাকে মুরগীর ডিম ভেবেই খায়। অনেকের বউ এসে জিজ্ঞেস করে, 'ভাবী আপনার ডিম রান্নার প্রশংসা শুনি। রেসিপি দেন না।'

বিথী হাসে শুধু। বলে রেসিপি তো নাই। সবার মতই রান্না করি। মেবি আমার ডিমটাই আলাদা। 

হাসে তারাও। 

.

এদিকে আনিসের বাবা মা বাচ্চার জন্য ভীষণ চাপ দিচ্ছে। তারা নাতি নাতনির মুখ দেখবেই। 

আনিস প্লেটে ডিম ভুনা উঠিয়ে দিতে দিতে বলে, 'খেয়ে দেখেন আপনার নাতি নাতনী, কেমন।'

- মানে? কি বলছো.......???


- কিছু না। বাচ্চা হবে টাইম আসুক।

- বিয়ের দুই বছর হয়ে গেলো, আর কবে টাইম আসবে আমরা মরে গেলে......???

- আচ্ছা খাওয়ার সময় আমরা কথা না বলি এবিষয়ে। 

- হ্যা, তুমি তো কথা ঘুরানোর ধান্দায় থাকবা। যাই হোক, ডিম রান্নাটা বরাবরের মতই অসাধারণ হয়েছে। আরেকটা কথা, তোমরা তিনবেলা শুধু ডিম খাও নাকি....???


 তোমার বাসায় আসলেই খালি ডিম দেখি।

বিথী মুচকি হাসে, 'কি করবো বলেন? ঘর ভর্তি খালি ডিম। আপনার ছেলের এনার্জি বেশি তো।'

- এনার্জি বেশি বলতে....???

- ইয়ে মানে কিছুনা। খালি ডিম কিনে। ডিমে এনার্জি বাড়ে তো তাই।

আনিসের মা মুখ বাকান, 'বাচ্চা হওয়ার খোজ নাই। এতো এনার্জি দিয়ে সে করবে টা কি!'

.

আনিসের এখন মাঝে মাঝে নিজেকে ভাগ্যবানই মনে হয়। কয়জন ছেলের বউ এই জামানায় ডিম পাড়তে পারে? আচ্ছা ব্যাপারটা কয়জন হবে না, তার বউই তো পুরো দুনিয়ায় একমাত্র। বিথীই একমাত্র মেয়ে যে ডিম দেয়। তবে এতে আনিসের ক্রেডিটও কি কম? সে ই তো ডিমগুলোর বাবা। নিজেকে মোরগ মনে হয় ওর। পুরুষদের ঐটাকে তো এমনিতেও কক ই বলে, নাকি? হাহাহা, ওরটা আসলেই কক। নিজের মনেই ভীষণ হাসি পায় আনিসের। হাসতে হাসতে হঠাৎ করেই চিন্তাটা আসে মাথায়৷ মাথা ঘুরে ওঠে ওর। ওহ গড। এটা কি সত্যি!


মনে পড়ে বাসর রাতেই কনডম ইউজ না করার কথা বলেছিলো বিথী৷ তার মানে বিথী জানতো সে ডিম পাড়ে? তার মানে কি দাঁড়ায়? আগেও পেড়েছিলো? বিথী ভার্জিন ছিলো না? শিট! আর কিছু ভাবতে পারে না আনিস। বিথী ওর সাথে এতো বড় প্রতারণা করতে পারলো.......???

.

কথাটা শুনে বিথী হাসে৷ আরে গাধা তোমার চিন্তার কিছুই নাই। আমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কিছু করিনি বিয়ের আগে।

- তাহলে  কিভাবে জানলে যে, তুমি ডিম পাড়ো....???

- কারণ আমার আম্মু পাড়তো। আমার নানু পাড়তো। নানুর আম্মুও পাড়তো হয়তো।

- তার মানে তো আমাদের বাচ্চা হওয়া সম্ভব। কিন্তু তুমি বলেছিলে তুমি জানোনা কিসের বাচ্চা হবে।

- কারণ আমি চাইনি আরেকটা ডিম পাড়া মেয়ের জন্ম হোক।

- ছেলেও তো হতে পারে.....???

- কারোর তো হয়নি, আম্মু বা নানুর। 

- তার মানে যে তোমার হবে না তা তো না। আমি রিস্ক নিতে চাই। মেয়ে হয় হোক, আমার বাচ্চা লাগবেই।

.

এক বছরের জন্য জার্মানি বেড়াতে চলে গেলো আনিস আর বিথী। সেখানেই ডিমে তা দেবে বিথী। দেশে ফিরবে বাচ্চা নিয়েই। বিথী জানিয়েছে, ডিমে তা দেয়ার এক মাসেই বাচ্চা হয়৷ কিন্তু সোসাইটি এক মাসের বাচ্চা মানবে না বলেই একবছরের জন্য বিদেশ যাওয়া। 

.

মিউনিখের একটা গলির ছোট্ট একটা বাড়িতে নয়মাস যাওয়ার পর ডিমে তা দেয়া শুরু করলো বিথী। দুজনই ভীষণ চিন্তিত। কি যে হবে। কেউ জানেনা কিছুই। আরেকটা ডিম পাড়া মেয়ের জন্ম দিয়ে তাকে মানসিক টর্চারের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য করা কতটা ঠিক হবে? আনিসের মত একটা বর সে কি পাবে? না পাওয়ার সম্ভাবনাই তো বেশি। 

.

তবে একমাস পরে সব চিন্তা দূর হয়ে গেলো আনিস আর বিথীর। ফুটফুটে একটা ছেলে নিয়ে দেশে ফিরলো এই দম্পতি। বাবা মা সহ সবাই খুব খুশি। ছেলের নাম রাখা হলো নাঈম। তলপেটে বেল্ট বেধে অপারেশন হইছে এরকম একটা অভিনয় করলো বিথী। দেখা গেল, ডিম পাড়া ছাড়াও তার অনেক গুণ। অভিনয়ে বেশ ভালো সে।

.

কিছুদিন পর আরেকটা বুদ্ধি বের করলো দুজন মিলে। জার্মানি এক বছর থাকাতে বেশ টাকাপয়সা খরচ হয়ে গেছে। এখন ভীষণ হাতটান চলতেছে আনিসের। তাই সে বাসায় রাজহাসের খামার করলো। এবং একদিন বলা শুরু করলো তার একটা রাজহাস অদ্ভুত ডিম দেয়। খেতে অসাধারণ। হু হু করে বাড়া শুরু করলো ডিমের কাটতি। বেশ ভালো ইনকাম আসতে লাগলো রাজহাসের ডিমের সাইজের ডাবল অদ্ভুত এই ডিম বিক্রি করে।

.

কয়েকদিন পর আসিফের আয় আরো বাড়লো। ডিমের পাশাপাশি খামার থেকে লিটার লিটার দুধ বিক্রি শুরু করলো সে। কারণ তার একমাত্র ছেলে নাঈম অন্যদের থেকে আলাদা। সে ই পৃথিবীর একমাত্র ছেলে, যে প্রসাব করে না। দুধ দেয়! 🙆‍♂


অনুগল্প 

ডিম কাহিনি 

-----------------------------সমাপ্ত---------


হাসির গল্প পড়ুন।