বাস্তব শিক্ষনীয় গল্প | বাস্তব জীবন বড়ই কঠিন

 বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প

বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প

♦️লেখাটা একজন পুরুষের অথচ প্রতিটা লাইন,প্রতিটা শব্দ মেয়েদের উৎসর্গ করে লেখা।♦️


একটা ঘর ভর্তি কিছু মার্বেল ছড়িয়ে দিন আর একটা কোনায় রাখুন কয়েকটা ভারী কার্টন। 


এবার একজন একজন করে কয়েক জন পুরুষ এনে বলেন তুমি যে কোন একটা কাজ করবা। 


হয় একটা একটা করে মার্বেল কুড়াও না হয় পড়ে থাকা তিনটা ভারী কার্টন সরাও। 


আমি একজন পুরুষ হিসাবে বলছি। একটা একটা মার্বেল কুড়ানোর চেয়ে ভারী কার্টন সরানো আমার জন্য সহজ কাজ।  


না আমরা শুধু সহানুভুতি থেকে মেয়েদের জন্য ঘর ঠিক করে দেইনি l বরং আমরা জানি আমাদের ধৈর্য কম শক্তি বেশি।  


আমার না পারা কাজটা যে মেয়েটা করে দেয় তার কাজের গুরুত্ব আমার কাছে কতটুকু?


পুরুষ শাষিত এ সমাজে মেয়েটা নিজেও মাথা নিচু করে বলে সে নাকি কিছুই করে না। রাত ১২টার পরেও মশারি গুজতে গুজতে মেয়েটা ভাবে সে একটা গৃহিনী !


ঘুম থেকে উঠে সাজানো ডাইনিং দেখে চোখ দুটো চক চক করলেও দৃশ্যের আড়ালে থেকে যায় তার গরম চুলার ভাপ !


লবন কম অথবা ঝাল বেশি আমাদের দৃষ্টি না এড়ালেও গরম তেলে ফোস্কাটা পড়াটা ঠিকই থাকে দৃষ্টির আড়ালে ! 


যে নারী কিছুই করেনা সে নারীর সন্তানের দায়িত্বটা শুধু আপনাকে দেওয়া হোক। আপনি তখন কার্টনও সরাবেন মার্বেলও কুড়াবেন তবু বাচ্চার চিৎকার শুনতে ঘরে বসে থাকবেন না l


আমরা পুরুষ বেছে নিয়েছি আমাদের কাজ। আর দিন ভর যে নারী মার্বেল কুড়ায় সে নারীকে বলি অকর্মা ! 


যে নারীর স্বামী নাই আমি দেখেছি সে নারীকে মাটি কাটতে কিন্তু যে স্বামীর বউ নাই তাকে দেখি নাই ঘর বাড়ি সামলাতে ! 


ঘর বাচ্চা সামলানোর চেয়ে আরেকটা বিয়ে করা যে সহজ !


কারো এটো বাসন ধুতে শুধু শক্তি না, মমতাও লাগে। আপনি খাটলে বেতন পান সে খাটলে ভালবাসা পায় তো ?



অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি তখবি বোনের ফোন " মা আর বেঁ"চে নেই,শেষ দেখাটা দেখে যা দাদা! "


আমি হতভম্ব হয়ে ভাবতে লাগলাম কি করবো।আজ অফিসে না গেলেও নয়।চায়ের প্রজেক্টটা নিতে পারলে প্রমোশন লেটার পাবো।রওনা হলাম অফিসের উদ্দেশ্য..


" স্যার আমার মা মা"রা গেছেন।ছুটি লাগবে "


" আজকে চায়ের প্রজেক্ট নেয়ার কথা।অফিসে না থাকলে তো প্রজেক্ট ও পাবেন না প্রমোশন পাবেন না "


" যার প্রমোশনে এতো বড় হলাম,সেই তো ছেড়ে চলে গেলো স্যার।অফিস প্রমোশন দিয়ে কি করবো! আমার প্রমোশন লাগবে না।আপনি ছুটির ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ "


স্যার ছুটির ব্যবস্থা করে দিলেন।বিকেলের ট্রেনে বাড়ি ফিরলাম।মায়ের অন্তেষ্টিক্রিয়া শেষ করে ফিরলাম শহরে।অফিস থেকে ফোন এলো এখনি অফিসে যেতে হবে।


অফিস গেলাম।বিশাল আয়োজন করে আমায় অভ্যর্থনা জানানো হলো।জানতে পারলাম সি.ই.ও পি.এ এখন আমি।স্যার হেসে বললেন


" প্রমোশনের কথা না ভেবে যে মাকে শেষ দেখা দেখতে যায় তার মতো দায়িত্বশীল,সুশিক্ষিত ছেলেকে অফিসের সামান্য স্টাফ পদে মানায় না।সামনের বছর তুমি এই অফিস সামলাবে,প্রস্তুতি নাও "


গল্প-শেষ_প্রাপ্তি

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়

বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র

অফিস কলিগ ৫ হাজার টাকা ধার নিলো।দেওয়ার নাম নেই।লজ্জায় চাইতেও পারিনা।উনি আমার সামনে দিব্যি ঘুরে বেড়ান।


হা হুতাশ করতে লাগলাম।টাকা যে বড্ড প্রয়োজন।মুখ ফুটে বলাও যাচ্ছে না লজ্জায়।চিন্তিত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছি।রোজ অফিসে যে রিক্সায় যাই তিনি কল দিলেন।বললেন 


" স্যার,রিক্সার টায়ার ফেটে গ্যাছে।রিং ও বেঁকে গেছে।কাল সকালে আমি আসতে পারবো না।আপনি কষ্ট করে অন্য রিক্সায় যাইয়েন "


" আচ্ছা "


কল কে'টে দিলাম।রিক্সাওয়ালা কিছুক্ষণ পর আবার কল করলো।


" স্যার আপনারে খুব মুশকিলে ফেলে দিলাম!ছুডো ছেলেটা রিক্সা গর্তে ফেলে দিয়ে এই অবস্থা করছে "


" সমস্যা নাই।রিক্সা ঠিক করুন,আমি অন্য রিক্সায় যাবোনি এই কয়েকদিন "


" জি স্যার "


কল কাটার কিছুক্ষণ পর আবারো কল।বিরক্ত হয়ে বললাম " কিছু বলতে চাইলে সরাসরি বলো "


" স্যার আমার এক হাজার টাকার প্রয়োজন।দিন মজুর,রিক্সা ঠিক করার টাকা নাই।ঘরে ভাত পানি বন্ধ হয়ে গেছে "


" বাড়ি এসে নিয়ে যাও "


রিক্সাওয়ালা টাকা নিতে আসলো।টাকা দিলাম।মনে মনে ভাবলাম,অফিসের ভদ্রলোক কলিগ যখন টাকা ফেরত দেয়নি এই রিক্সাওয়ালাও দিবে না।টাকা নিয়ে রিক্সাওয়ালা বললো


" স্যার এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিবো "


চারদিনের দিন রিক্সাওয়ালা টাকা ফেরত দিলো।সাথে একটা পেঁয়ারা।হেসে বললো " স্যার,আপনে যে এই গরীবের কি যে উপকার করছেন!আপ্নে টাকাটা না দিলে রাস্তায় নামতে হইতো।আমার গাছের পেঁয়ারা স্যার,খান,খুব মিষ্টি "।পেঁয়ারা খাচ্ছি আর ভাবছি মনুষ্যত্ব জিনিসটা অন্যরকম।


আরো ছয় মাস কে'টে গেলো।কলিগ এখনো টাকা ফেরত দেয়নি।বুঝলাম দামী কাপড়,দামী পরিবেশে থেকেও অনেকে মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে পারে না।


গল্প-মনুষ্যত্ব 

লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয় 

life বাস্তব কথা নিয়ে স্ট্যাটাস

তোর বৌ মায়ের খেয়াল রাখে না এই নিয়ে কিছু বলিস না কেন!


কি বলব! পনেরো বছর আগে যে মেয়ে এই বাড়িতে বৌ হয়ে এসেছিল তখন তোরা দুই বোন ও মা ওর উপর কম অত্যাচার করেছিস। রান্না মজা হয় নাই বলে সারাদিন খেতে দিতি না। তখন সব দেখে জেনেও চুপ ছিলাম আমি, আজ ও মায়ের প্রতি অনাচার টা মেনে নিচ্ছি।


কোন মুখে মাকে সেবা করতে বলি বল! তাও সেই পরের মেয়ে মায়ের জন্য তিন বেলে রান্না করে দেয়। মায়ের জন্য কাজের মেয়ে রাখছে। এতে তো অনেক।


তোরা তিন বোন আছিস। তোরা তো মাসে দশ দিন করে এসে মায়ের সেবা করতে পারতি।


আমাদের সংসার আছে ভাইয়া এইজন্য।


আজ আসলি মায়ের জন্য তো কিছু খাবার বানিয়ে, ফল নিয়ে আসতে পারতি। 


মা যে খাবার খাই এগুলো তো আমি রাঁধতে জানি না। আর ফল তো মা খেতে পারে না।


রান্না পারিস না ঠিক আছে। ফল মা চিবিয়ে খেতে না পারলেও জুস করে খেতে পারে।


 আসলে খেয়াল করি নাই।


জানিস এখন খুব একটা বিষয় উপলব্ধি করি রে! যে মায়েরা নিজ মেয়ের সুখ চাই, মেয়ে কে নিয়ে ছেলের বৌদের জ্বালায় সেই মেয়ে গুলো শেষ বয়সে পাশে পাই না।


আর পরের মেয়েকে এতটা অনাচার অত্যাচার করে সেই মেয়েরা শেষ বয়সে পাশে থাকে।


 সময় থাকতে ছেলের মা রা যদি এটা বুঝত তাহলে দেশে শাশুড়ি ননদের অত্যাচার থেকে হাজারও মেয়েরা মুক্তি পেতো। আপসোস তাঁরা এটা বুঝে না।


নিশা আর ফিরোজ এর বিয়ে হয়েছে পারিবারিক ভাবে। দেখে শুনে আফরোজা বেগম নিশাকে পুত্রবধূ করে আনে। তখন অবিবাহিত দুই বোন ঘরে ছিল। এক বোন মিনা টেনে পড়তো। আরেক বোন লীনা এইটে পড়তো। আর বড় বোনের বিবাহিত।


বিয়ের সব আয়োজন শেষ হবার পর সংসার এর সব দায়িত্ব নিশার উপর দেয়। নিশা খুব শান্ত স্বভাব এর মেয়ে। শাশুড়ি যেমন করে বলে,তেমন করে কাজ করতো। নিশার কাজ গুলো আফরোজা বেগম পছন্দ করত না। দুই মেয়ে দিয়ে সারাক্ষণ এটা সেটা করাতে থাকতো। রান্না মজা না হলে সেদিন খেতে ও দিত না। নিশা পেটের ক্ষুদা নিয়ে সব সহে যেতো। মুখ ফুটে মা বাবাকে বললে বলত ধৈর্য ধর। ফিরোজকেও কিছু বলত না। 


সব রান্না নিশা করলেও একসাথে বসে খেতে নিষেধ শাশুড়ির। ঘরের বৌ সবার খাওয়া শেষে খাবে। কিন্তু দেখা যেতো নিশা খেতে বসলে দুই ননদ এসে খেতে দিত না। না হলে শাশুড়ি অন্য কাজ করাতো। এইসব ফিরোজ কিছুই জানত না। সকাল নাস্তা করে অফিসে চলে যেতো। অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত হলে বাড়ি ফিরত। 


একদিন রাতে ফিরোজ নিশার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে নিশার শরীর পছন্দ কাঁপতে থাকে বিয়ের ছয় মাসে তা দেখি নাই ফিরোজ। লাইট জ্বালিয়ে নিশা থেকে জিজ্ঞাসা করে। নিশা কেঁদে দেয় বলে প্রচুর ক্ষিদা লাগছে। সকাল থেকে কিছু খাই নাই। ফিরোজ খুব অবাক হয়।


তুমি রান্না কর তুমি খাও না কেন! আর দিন দিন তোমার শরীর এত নেতিয়ে যাচ্ছে কেন?


নিশা বলে, আপনাকে বললে আপনি রাগ করবেন নাতো।


ফিরোজ বলে না


নিশা সাহস করে সব বলে।


সব শুনে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রান্না ঘরে গিয়ে ভাত নিয়ে এসে ফিরোজ নিজ হাতে খাওয়া দেয়।


পরের দিন থেকে বদলে গেল অনেকটা নিয়ম। তবে মা বোনকে একটা কথাও বলে নাই ফিরোজ।


সকালে নাস্তা করতে বসলে ফিরোজ নিশাকে বসতে বলে

 আফরোজা বেগম বলে ও পরে খাবে।


ফিরোজ বলে, মা ও আমাদের সাথে খাবে। একটা মানুষ আলাদা করে খেতে ভালো লাগে না, এই বিষয় টা আমি খেয়াল করি নাই এতদিন। আর বিয়ের পর বৌর সাথে বসে একদিন ও খাই নাই।


নিশা ফিরোজ পাশে বসে। নিশাকে তিনটা রুটি, ডিম, আলু ভাজি তুলে দিয়ে বলে খাও।

নিশা খুশি হয়ে খাই।


আফরোজা বেগম ও দুই মেয়ে রাগে ফেটে যাচ্ছে। তাও ছেলে বা ভাইয়ার কথায় কিছু বলে নাই।


দুপুরে নিশার ভাগ্যে ভাত আর জুটে নাই।


ফিরোজ অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিত এতদিন। আজ অফিস শেষে বাসায় চলে আসে। আর সবাই মিলে নাস্তা করে। রাতেও বৌকে পাশে বসিয়ে খাও। অফিস ব্যাগ করে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে আসে নিশার ক্ষিদা লাগলে খাবে।


অফিস দূরে হওয়া ফিরোজ দুপুরে আসতে পারে না। না হলে দুপুর ও না খেয়ে থাকতে হতো না নিশার।


নিশা ভাবে এতদিন স্বামী কে না বলে ভুল করছে। না বলে কত কষ্ট পাইছে নিজে। সারাদিন বোনরা মা কে কি করে সব জিজ্ঞাসা করতো ফিরোজ। নিশা থেকে সব শুনে নিশাকে বুকে নিয়ে শুয়ে থাকতো। মা বোনদের সাথে কোন আলোচনা করতো না এই বিষয়ে। বললে যদি, ফিরোজ অফিস থাকায় অবস্থায় খুব খারাপ আচরণ করে তখন এই ভেবে চুপ থাকতো।


নিশার দুই সন্তান হয়েছে। দুই ননদের ও বিয়ে হয়েছে। আগের মত খাওয়া নিয়ে আর জ্বালায় না আফরোজা বেগম। তবে কটু কথা শুনা থেকে রেহাই পাই নাই নিশা।


তিন বছর ধরে আফরোজা বেগম বিছানায় পড়া। নিশা রান্না করে দেয়। আফরোজা বেগম কিছুই খেতে পারে না তেমন। যা খাই নরম খাবার ও ফলের জুস এর উপর বেঁচে আছে। কথাও তেমন বলতে পারে না একটু একটু যা বলে তা কেউ বুঝতে পারে না 


নিশা সেবা না করলে একজন মহিলা রাখছে দিন রাত সেই মহিলা সেবা করে। খায় দায় মাস শেষে মোটা টাকা বেতন নেয়। তাও নিশা বাচচাদের নিয়ে স্কুলে গেলে মহিলা আফরোজা বেগমের দিকে ফিরেও তাকায় না। এগুলো জানার পরেও ফিরোজ নিশা কিছু বলে না। কারন এইসব কাজ করার জন্য মেয়ে পাওয়া যায় না তেমন।


আফরোজা বেগম বিছানায় শুয়ে করুন চোখে ছেলের বৌর দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন আফসোস করলে ও নিশার মনে মায়ের জায়গা নিতে পারবে না। উনি যা যা ব্যবহার করছে তা আল্লাহ অসুস্থতা দিয়ে সব ফিরিয়ে দিচ্ছে। তাও আপন সন্তানরা খোঁজ ও নে না তেমন। এই পরের মেয়েটা তাও খবর নেয়। ঠিক মত ঔষুধ খাওয়ার জন্য কাজের মেয়েকে মনে করিয়ে দেয়।


নিশার ভেতরেও শাশুড়ির জন্য দোয়া ও আসে না। নিশা এখন যা যা করে তা দায়িত্ব থেকে করে। দিন চলে যায় কিন্তু কষ্টের কথা গুলো মনে দাগ থেকে যায়।


তুমি অন্য কে কষ্ট দিবে আল্লাহ সব ফিরিয়ে দিবে একদিন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।


সমাপ্ত


সময়ের অপেক্ষা 

ফারহানা ফাতেমা রোশনী


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।