ইসলামিক স্বামী স্ত্রী
একটু আগে আমি আমার বউকে মে'রেছি। আমার বউ আমার সামনে বসে কেঁদে কেঁদে আমার নামে শ্বশুরের কাছে বিচার দিচ্ছে,
"বাবা উনি আজ আমার গায়ে হাত তুলেছে। আমি আর এখানে এক মিনিট ও থাকবো না। তুমি আমাকে এক্ষুণি নিতে আসো, বাবা।"
যা শুনে আমি ওর দিকে র'ক্তি'ম চোখে একবার তাকালাম। যা দেখে ভয়ে জান্নাত ডুকরে কেঁদে উঠলো। মেয়ের কান্না শুনে ওপাশ থেকে শ্বশুর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। আমি জান্নাতের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কল কেটে দিলাম। এরপর শক্ত কণ্ঠে বউকে বললাম,
"চলে যেতে চাইছো তাই না? আচ্ছা, যাও। যে স্ত্রী তার স্বামীর কথা শুনে না, আল্লাহর আদেশ অমান্য করে, এমন মেয়ে'কে আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে চাই না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না, জান্নাত। তুমি মুক্ত... "
কথাটি বলে আর বাসায় দাঁড়ালাম না। বউকে কিছু বলতে না দিয়েই বাহিরে চলে আসলাম। একটু আগে শাড়ী পড়ে মার্কেটে গিয়েছিলো জান্নাত। তার ফর্সা আকর্ষণীয় ফিগার দেখে এলাকার কিছু বখাটে জান্নাত'কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে। যা শুনে রাগ লাগছে আমার। কতবার বারণ করেছি, বোরকা পড়ে যেন বাহিরে চলাফেরা করে সে। কিন্তু, মেয়েটা বড্ড বেপরোয়া। আজ বাধ্য হয়ে, প্রথমবার ওর গালে দু'টো থা'প্প'ড় মে'রে'ছি আমি।
.
.
একটু পরে শ্বশুর আসলো আমার বাড়িতে। আমায় ডেকে শাসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"তুমি জান্নাত'কে মেরেছো, মাহতাব?কোন সাহসে তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত উঠালে মাহতাব? কি করেছে আমার মেয়ে?"
"হ্যাঁ আমি আপনার মেয়ে'কে মে'রে'ছি। তার সাহস কি করে হলো, বোরখা ছাড়া বাহিরে বের হওয়ার। জিজ্ঞেস করুণ ওকে, আপনার মেয়ে আমার একটা কথা শুনে? শতভাবে বুঝি শুনিয়েও তাকে লাভ হয় না কোনো। আমার স্ত্রী হয়ে অন্য পুরুষ'র মাঝে খোলাসা করে নিজেকে উড়াবে আর আমি সেগুলো বরখাস্ত করবো ভাবছেন?"
আমার শ্বশুর এবার একটু নরম হলেন। মেয়ে তার বড় আদরের। তখন একমাত্র মেয়ের কান্না শুনে উওেজিত হয়ে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। উনি এবার মেয়েকে ধমক দিয়ে কতক্ষণ শাসিয়ে আমার হাত ধরে বললো,
"দুঃখিত বাবা! এটা বড় অন্যায় করছে আমার মেয়ে। তোমাদের পার্সোনাল.... "
আমি উনাকে থামিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললাম,
"আপনি আপনার মেয়ে'কে সাথে করে নিয়ে যান বাবা। আমি আর তার সাথে একসাথে থাকতে চাই না। যেদিন সে নিজেকে শুধরে নিয়ে ঠিক ভাবে নামাজ রোজা করবে, পর্দা করে চলাফেরা করতে পারবে সেদিন যেনো আমার সামনে আসে। আমার স্ত্রী হয়ে বেপর্দায় চলাফেরা করতে পারবে না সে। না মানে না! তাকে সবাই'কে দেখানোর জন্য বিয়ে করিনি আমি। যে আমার সে শুধু আমার, একবিন্দুও অন্য কারো নয়!"
সেদিন বাধ্য হয়ে আমার শ্বশুর জান্নাত'কে নিয়ে চলে যান। যদিও আমার কাছে হাত জোড় করে মেয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু, আমি ছিলাম আমার কথায় অটল।ডিভোর্সের হুমকি ও দিয়েছি।
এরপর থেকে আমি জান্নাতের সাথে কথা বলা সহ সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। কয়েকদিন বাদে বউ আমাকে কল দিয়েছে এবং যোগাযোগ করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে। কেননা, পাগলীটা যেমনই হোক আমাকে ভীষণ ভালোবাসে! আমাকে ছাড়া কোথাও থাকার অভ্যাস ওর নেই। আমারও তাকে ছাড়া কষ্ট হচ্ছে। তবুও তাকে সঠিক পথে আনার জন্যই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি আমি। যদিও বউয়ের অগোচরে রোজ তার খোঁজ খবর নিয়েছি আমি।
পনেরো দিন পর....
কালো বোরখা, হাত মোজা, পা মোজা পরিহিত অবস্থায় বউকে নিজের অফিসে দেখে চমকে গেলাম আমি। মনে মনে খুশী হলেও তা প্রকাশ না করে জান্নাত'কে এড়িয়ে চলছি। মানে এমন একটা ভাব করছি, যেন তাকে দেখিনি আমি।
পরমুহূর্তে জান্নাত আবেগি হয়ে পাবলি প্লেসেই আমায় জড়িয়ে ধরলো। কেঁদে কেঁদে বললো,
"প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও, জান! আমার ভুল হয়েছে, তার জন্য আমি অনুতপ্ত। এরপর থেকে আর এমনটা হবে না। আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে নেও, প্লিজ! তোমাকে ছাড়া এই ক'টাদিন আমার দ'ম বন্ধ হয়ে আসছে।"
আমি মুচকি হেসে তাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বললাম,
"তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো, আমি ভীষণ খুশী হয়েছি জান্নাত। আল্লাহর ইবাদত পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
ইসলাম ধর্মে নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত পর্দা করা মুসলিম নর-নারীদের জন্য ফরজ ইবাদত। স্বয়ং আল্লাহ'র হুকুম। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ তার আদেশ-নির্দেশ, নিষেধ মেনে চলা।
তুমি আমার ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছো, জান? আমাকে ক্ষমা করে দিও, প্লিজ! আমি তোমার ভালোর জন্যই এমনটা করেছি। কেননা, স্ত্রীকে সঠিক পথে পরিচালনা করা স্বামীর দায়িত্ব। আমি তোমাকে ভালোবাসি! তোমার সাথে শুধু এই দুনিয়াতে নয়, জান্নাতেও আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। তাই, জান্নাত পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের আল্লাহর হুকুম মেনে চলা উচিৎ। তবেই না, মৃ'ত্যু'র পরে রব জান্নাত নসিব করবে আমাদের। বুঝতে পেরেছো, বউ?"
"আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন থেকে আর এমনটা হবে না, ইনশাআল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করছো, বলো?"
"আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি বউ। এবার দু'জন মিলে রবের নিক ক্ষমা চাইবো। মাশাআল্লাহ! বোরখায় তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আল্লাহ তোমায় কবুল করুক।"
.
.
পরদিন ফজরে বউয়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় আমার। দু'জন উঠে এক সঙ্গে ওজু করে নিয়েছি। আমি মসজিদে, এবং জান্নাত বাসায় নামাজ আদায় করলাম। এরপর কিছুক্ষণ বউয়ের সাথে খোলা আকাশের নিচে হাতে-হাত রেখে ঘুরেছি। বাসায় এসে বউ কোরআন তিলাওয়াত করছে আর আমি তার কোলে মাথা রেখে তিলাওয়াত শুনছি। প্রশান্তি'তে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।
মাশাআল্লাহ! এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আর কি হতে পারে? নিজেকে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। লাইফে একজন উওম জীবনসঙ্গী থাকলে, সুখী হতে আসলেই বেশি কিছু লাগে না। ততক্ষণাৎ আমি বউয়ের হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বললে উঠলাম,
"ভালোবাসি বউ! তুমি একান্তই আমার। আমার ঝিনুকের মাঝে লুকায়িত মুক্তা।"
কেউ চায় তার প্রিয়তমাকে সারা দুনিয়া দেখুক, প্রশংসা করুক!
আর কেউ চায় তার প্রিয়তমা তার কাছে ঝিনুকে লুকায়িত মুক্তার মতো সুরক্ষিত থাকুক।
এই দু'জনের মধ্যে আকাশসম তফাৎ, উত্তম তো সেই যে গায়-রত-বান!
এরকম সঠিক একজন মানুষ সবার জীবনে থাকুক! আমিন!
★সমাপ্ত★
-অণুগল্পঃঝিনুকে_লুকায়িত_মুক্তা
-লেখনীতেঃসুমাইয়া_আফরিন_ঐশী