ভালোবাসার স্ট্যাটাস & স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

 সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে স্ট্যাটাস

সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে স্ট্যাটাস

আমাদের মেজো ভাবীর গর্ভাবস্থায় মেজো ভাইয়া নিজেই বাসার সব কাজ করতেন। ভাবীকে তেমন কিছুই করতে দিতেন না। কাপড় ধোয়া, রান্না- বান্না যতোটা পারা যায় তিনি করতেন।

ভাবীর মাঝেমধ্যে শরীর খারাপ হতো। ভাইয়া তাকে সঙ্গ দিতেন। অনেক সময় ভাবীর মন খারাপ থাকতো। ভাইয়াকে দেখতাম ভাবীর সঙ্গে বসে আছেন দীর্ঘ সময়।গল্প করছেন।মন ভালো করার চেষ্টা করছেন।

আমাদের বড় ভাবী একদিন মার কাছে এসে বললেন,' এসব কোন ধরনের ঢং মা? মেজো মিয়া কি সব শুরু করেছে? দোকান বন্ধ রাখে সকাল বিকাল।বউয়ের ডিউটি করা শুরু করে দিয়েছে।'

মা বললেন,' বসো তুমি মা।'

বড় ভাবী বসলেন।

মা বললেন,' মেজো বউয়ের ঘরের তো কাজ আছে।আছে না?'

বড় ভাবী বললেন,' আছে।'

' কি কি কাজ আছে?'

' কাপড় চোপড় ধোয়া, ঘর মুছা, পরিষ্কার করা, রান্নাবান্না।'

মা বললেন,' তো এইগুলো কে করবে? তুমি করে দিবা?'

মেজো ভাবী বললেন,'আমার নিজের কাজ আছে। আমার গুলোই তো আমি করে কূল পাই না মা।আমি কিভাবে অন্যের কাজ করে দিবো। তার কাজ সে নিজেই করবে ।এটাই তো নিয়ম।'

মা বললেন,' বউ কীভাবে করবে? এমন শরীর নিয়ে কীভাবে কাজ করবে তুমি বলো? '

বড় ভাবী বললেন,' দুনিয়ার সব মানুষই তো করে।সবাই পারলে সে কেন পারবে না? '

মা বললেন,' সব মানুষ করলেও সে করবে না।সবাই পারলেও সে পারবে না।কারণ তার একটা ভালো স্বামী আছে। এই স্বামী জানে স্ত্রীর গর্ভে শুধু একফোটা বীর্য দিলেই কেউ পিতা হয়ে যায় না।পিতা হবার জন্য অনেক দায় দায়িত্ব আছে।মা যে তার সন্তানকে পেটে ধারণ করে, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে। সে জানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এতো কিছু করার পরেও ঘরের সব কাজ সে করবে?  কেন করবে? সন্তান কী তার একার? এই ঘর সংসার এসব তার একার? সন্তান কি তাকেই শুধু মা ডাকবে? আমার মেজোকে কি বাবা ডাকবে না?  '

বড় ভাবী চুপ হয়ে গেলেন।

মা বললেন,' আমি আশা করি বোকার মতো কখনো এমন কথা তুমি বলবে না। নিজের তো সন্তান হয়েছে। তুমি জানো না এই সময়টা একটা মেয়ের কতো কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হয়? জানো তো সব। তবুও কেন এরকম প্রশ্ন করো? আসলে আমাদের সমাজটাই উল্টো।আমরা সারা জীবন দেখে আসি সন্তান গর্ভে রাখা,পেলে পুষে বড় করা,হাগামুতা পরিষ্কার করা সব দায়িত্ব মায়েদের।হাঁড় কাঁপানো শীতের দিন। এই প্রচন্ড রকম শীতে সন্তান প্রশ্রাব করে মায়ের কাপড় ভিজিয়ে দেয়।মা আগে সন্তানকে পরিষ্কার করে। বিছানায় গরম কাপড় বিছিয়ে দেয়। তারপর নিজেকে পরিষ্কার করে। বাচ্চাকে পরিষ্কার করতে, কাপড় বদলাতে যদি বাচ্চার মা একবার সুইচ টিপে লাইট জ্বেলে দেয় এতেই বাচ্চার বাবা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। তার ঘুম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্য ঘর থেকে শাশুড়িও গলা ছাড়ে।বলে, ছেলেটা ঘুমাতে পারছে না। তোমার কি আন্দাজ নাই মেয়ে? বাতি জ্বালালে কেন? 

আচ্ছা বড় বউ তুমি বলো, এরকম হবে কেন? এরকম কী হবার কথা আসলেই? কেন বাচ্চার বাবা চিৎকার চেঁচামেচি করবে? কেন শাশুড়ি তেরোটা কথা শোনাবে? 

 দোষ আমাদের।আমরা দেখি আমাদের ছেলেরা আমাদের পুত্রবধূদের সঙ্গে অনাচার করছে।আমরা এতে আরো হাততালি দেই।বলি এটাই ঠিক।আরো বেশি করে অনাচার করো।আমরা ছেলেদের শাসাই না।শাসাই বউদের।আমরা নিজেদের পরিবর্তন করি না।আমরা চাই আমাদের বউয়েরা পরিবর্তন হোক। এই জন্যই কোন কিছুর পরিবর্তন হয় না। আজীবন ভোগতে হয় আমাদের। মায়েদের। সন্তানের একটু ঠান্ডা লাগলে মায়ের দোষ।একটু পেট খারাপ হলে মায়ের দোষ। সন্তান কাঁদলে মায়ের দোষ।

যেন অসুখ মা নিজেই তৈরি করে!

কোন সময় শুনেছো সন্তানের ঠান্ডা লেগেছে আর কেউ বলছে তার বাপের জন্য এমন হয়েছে? বাপ অযত্ন করেছে এর জন্য এরকম হয়েছে? বলে না কেউ।কারণ বাপ তো যত্নই করে না।সারাদিনে একবার কোলে তুলে দশ মিনিট আদর করা। কপালে চুমু খাওয়া।আব্বু আব্বু বলে ডাকলেই কি সব দায়িত্ব শেষ? 

না শেষ না।কিন্তু অধিকার কে ফলায় আগে? বাবা।তো যে অধিকার  ফলাবে সে তার সন্তানের জন্য পরিশ্রম করবে না? 

 অবশ্যই করবে। করতে হবে। শুধু কাপড় চোপড় আর ওষুধ দিলেই তো সব কিছুর সমাধান হয়ে যায় না।আরো অনেক দায়িত্ব থাকে। আমার মেজো যা করছে তাই ঠিক।তা সুন্দর।তা সত্য।এর উল্টো যেটা এটাকে বাদ দিতে হবে।এর পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সমাজ সুন্দর হবে। পুরুষও তখন বলতে পারবে,আমরা স্ত্রীর অধিকার ঠিক ভাবে পালন করি। সন্তানের প্রতি যে পিতা হিসেবে আমাদের কর্তব্য তাও পালন করি।এসব না করে বড় বড় কথা বলে লাভ নাই।কথায় চিড়া ভিজে না বড় বউ।'

বড় ভাবী যা বুঝবার তা বুঝতে পেরেছেন। তিনি মার পাশে বসে ছিলেন এতোক্ষণ। এবার মার হাতটা চেপে ধরলেন। তারপর বললেন,' আমরা মায়েরাই পারি সুন্দর একটা সমাজ উপহার দিতে। শুধু আমরাই পারি। পুরুষরা তো আমাদেরই ছেলে।আমরা যদি তাদের ছোট থেকেই সুন্দরের শিক্ষা, সত্যের শিক্ষা দিয়ে বড় করি তবে সমাজ সুন্দর না হয়ে যাবে কোথায়!'

মা হাসলেন মিষ্টি করে। তারপর ভাবীকে জড়িয়ে ধরলেন।

'

-মাতৃত্ব_এবং_পিতৃত্ব

-অনন্য_শফিক

ভালোবাসার কষ্টের গল্প...