স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা ২০২৪

 স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

আমার স্ত্রী যখন প্রথমবার সন্তান সম্ভবা হন তখন আমি সামান্য একটা চাকরি করি। সব মিলিয়ে হাজার পঁচিশেক বেতনের সেই চাকরির উপার্জনে আমাদের কোনরকম চলে যায়। অবশ্য তখন কিন্তু আমার স্ত্রী সরকারি চাকরি করেন তবে দুজনের একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ ছিল তার আয়ের টাকাটা আমরা কোনভাবেই খরচ না করে বেশ বড় অংকের সঞ্চয় জমা করব যেটা আমাদের ভবিষ্যতে আর একটু ভাল থাকার জন্য সহায়ক হবে। এই ঘটনাটা আমাদের দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।


প্রেমিক হিসাবেও আমি কখনও রোড সাইড রোমিও টাইপের ছিলাম না। যেহেতু একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলাম তাই অভাব অনটনের দুনিয়াটা বেশ ভালই জানতাম সুতরাং জীবন গোছাতে জীবনের অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছেটে ফেলতে হয়েছিল।


আমার স্ত্রীর শারীরিক সমস্যাগুলো বাড়তে শুরু করল। হাত পায়ে অস্বাভাবিক ব্যথা, ঠিকমত ঘুম না হওয়া সহ বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিতে শুরু করল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এমতাবস্থায় যত কষ্টই হোক রেগুলার তাকে একজন গাইনি ডাক্তারের সংস্পর্শে রাখতে হবে। ডাক্তার ও বললেন ওনাকে রেগুলার চেকাপের মধ্যে রাখতে।


আমি নিয়ম করে ১৫ দিন পর পর ওনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। এরপর ওনার হাত পা কোমর ব্যথা করলে আমি গরম সেক দিয়ে দেই, এমনও রাত গেছে যে ২/৩ ঘন্টা তার সেবা শুশ্রুষা করেছি ও হয়ত একটু আরামে ঘুমিয়েছে। আমি হয়ত বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে গিয়েছি। সকালে উঠে বেচারি ভীষণ লজ্জা পেয়েছে আমাকে ওরকম অবস্থায় দেখে।


পা টিপে দিতে গেলে বা সেক দিতে গেলে বাধা দিত। বলতো, 'স্বামী হয়ে স্ত্রীর পায়ে হাত দিতে নেই।' আমি বলতাম, 'এটা কোন গ্রন্থের কথা?' সে আমতা আমতা করতো, আমি গুরুত্ব দিতাম না। আমার কাছে মনে হত প্রেমিক হিসাবে আমি যা ই ছিলাম স্বামী হিসাবে আমি তা নই। সহধর্মীনির সুখে দুঃখে তার সেবা করা স্বামী হিসাবে আমার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।


কিন্তু সমস্যা শুরু হল কিছুদিন পর থেকে। সম্ভবত আমার বড় বোন কোন এক সময় এরকম কিছু দেখে ফেলেছিল যার ফলশ্রুতিতে বিষয়টা আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বাজেভাবে ছড়িয়ে পড়ল। বড় খালা একদিন ভরা মজলিসে বলে বসলো,


- 'হ্যা বউয়ের হাত পা টিপো এরকম সোনার ছেলে তল্লাটে একটাও আছে বলে আমার জানা নেই। আমরা তো আর মা হইনি, আমরাতো আর ব্যথা বেদনা সহ্য করিনি। বউ সরকারি চাকরি করে এজন্য মাথায় তুলোনা এক সময় বুঝবে।'


সেদিনও আমি খুব সাহসী মানুষের মত স্পষ্ট করে বলেছিলাম,


- 'খালা, আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা না বললেই আমি খুশি হই। আমার স্ত্রী সরকারি চাকরি করে তার সাথে এগুলির সম্পর্ক কি? আমি অসুস্থ হলে ও যদি সারারাত না ঘুমিয়ে আমার সেবা করতে পারে তাহলে আমি করলে মহাভারত কেন অশুদ্ধ হবে?'


খালার সেই কথা খুব একটা পছন্দ হয়নি। আমার বাবা মা আমার এসব কর্মকান্ড কে খুব সাপোর্ট করতেন। মা বলতেন,


- 'বাবা একটা মেয়ে নিজের সবকিছু ছেড়ে তার স্বামীর কাছে চলে আসে। সেই সংসারে এসে তার সুখ, আদর আহ্লাদগুলি সে ভুলে যায়। সারাজীবন অন্যের সংসারের দায়িত্ব তুলে নেয় আর সেই ভারে তার নিজের আনন্দ চাপা পড়ে যায়। তুমি যখন বিয়ে করবে তুমি যেন নিজের স্ত্রীকে একটা ভাল পরিবেশ দিতে পারো সেই চেষ্টা করবে।'


আমার বাবা আর একটু এগিয়ে, আত্মীয় স্বজনের এসব কথা শুনে সে বলতো,


- 'লোকের কথায় কান দিবি না এসব আত্মীয়রা সুখের দিনের দুধের মাছির মত। এখন দাওয়াত দিয়ে ভালমন্দ খাওয়াতে পারছিস তাই এসে ফ্রিতে এসব জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে বিপদের সময় এদের কাউকেই পাবিনা সুতরাং এদের কথায় কখনও কান দিবিনা। আমিও কোনদিন কান দেইনি।'


আমার শশুরবাড়ির লোকেরা আরও এক কাঠি সরেস।  শশুর শাশুড়ি ভাল মানুষ হলেও তাদের বাকি ৩ সন্তানেরা মানুষ হিসাবে খুব একটা ভাল হতে পারেনি। তারা মুখের উপরেই বলতো, 'বউ মাস শেষে টাকা উপার্জন করে দিচ্ছে তা দিয়ে তো ফুটানি ভালই করছো।' তাদের সাথেও আমি এসব নিয়ে কথা বাড়াতাম না। যদিও সেখানে আমার যাতায়াত ছিল খুব ই সামান্য তবে কথা ছড়াতে যাওয়া আসার প্রয়োজন হয়না।


****


এখন আমাদের দুইটি কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে প্রাইমারি শেষ করেছে কিন্তু তার ম্যাচিউরিটি অনেক হাই। বাবা-মা অসুস্হ হলে সে তাদের সেবাযত্ন করে। বাবা মা ঝগড়া করলে সে নিরপেক্ষভাবে দুজন কে বোঝানোর চেষ্টা করে। ভালমন্দ খাবারের বেলায় সবার জন্য সমানভাবে তুলে রাখার সংস্কৃতিটাও রপ্ত করে ফেলেছে।


.


আমার চাকরির কয়েক দফা প্রমোশন হয়েছে। স্ত্রীর জমানো টাকার সাথে নিজের সঞ্চয় মিলিয়ে স্বপ্নের বাড়ি নির্মান করে ফেলেছি সাথে জীবনের সব আশা আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ পূরন করার তৌফিক দান করেছেন শুধু পাছে লোকে কি বলে সেটা শোনার চেষ্টা করিনি।


ছোট মেয়েটা ৪ বছরের। সকালে উঠে আম্মুর ব্যাগ টেনে পৌছে দেয়, বাবার মোবাইল, মানিব্যাগ বাবার কাছে পৌছে দেয়। এই ছোট হাতের ছোট ছোট দায়িত্ব পালন বোধ একসময় ওদেরকে দায়িত্ববান করে তুলবে।


-অণুগল্প

-দায়িত্ব

-রবিউল_ইসলাম_রুবেল

---

স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা ছোট গল্প পড়ুন...