রহস্যময়ী নারী
নগ্ন হয়ে গোসল করছে মিহিতা। এভাবে পুরোপুরি বিবস্ত্র হয়ে শেষ কবে গোসল করেছিল ঠিক মনে করতে পড়ছে না সে।
তবে আজ ভীষণ ইচ্ছে করছে কলার খোসার মতো শরীরের সমস্ত কাপড় ছুড়ে ফেলে খোলসহীন হতে।
কেন এমন বিকৃত ইচ্ছে জাগলো মিহিতার? আজ বাসর রাত ছিলো বলে? না, এটা কোনো কারণ হতে পারে না।
তাহলে কী বরকে পছন্দ হয় নি? বাসর রাতে নিজের শরীরে স্বামীর সব রকমের চিহ্ন, স্মৃতি, স্পর্শ সমস্ত কিছু বিবস্ত্র হয়ে গোসল করে মুছে ফেলতে চাচ্ছে কী?
মিহিতা প্রথমে বাথরুমের দরজাটা লক করে নেয়।
তারপর বাতি জ্বেলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কেবল বুক অবধি দেখা যাচ্ছে। পুরোপুরি নগ্ন দেহ দেখার জন্য খানিকটা দূরে যাওয়া দরকার। সে পা টিপে টিপে পেছনে যাচ্ছে।
হ্যাঁ, এবার দেখা যাচ্ছে। মিহিতা খানিক্ষণ সেদিকে তাকাল। হঠাৎ মনে হল এই মোমের মতো কোমল উর্বর দেহ এই মূহুর্তে সে একা দেখছে না।
আরও দু'টা চোখ তার নগ্ন মিষ্টি দেহের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে৷
হ্যাঁ, এইতো হাই কমোডের উপরে একটা কালো কুচকুচে বিড়াল দু'পা ভাঁজ করে বসে আছে।
মিহিতা মুচকি হেঁসে বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, 'মিষ্টি দেহে তোমার কী কাজ বিড়াল বাবা। মিষ্টিতে পিপড়ে আসুক। তুমি বরং দুধের খুঁজে বেরিয়ে যাও।'
না, বিড়াল বাবা যাচ্ছে না। মিহিতা আপন মনে হাসতে হাসতে সেদিকে পানি ছুঁড়ে বলল, 'ঠান্ডা হও বাবা ঠান্ডা হও।'
বিড়াল খানিকটা শরীর ঝাঁকিয়ে যেভাবে আছে সেভাবে নগ্ন দেহে তাকিয়ে রইল।
মিহিতার মাথায় হঠাৎ একটা ভাবনা এসে শরীরের সমস্ত লোম নাড়া দিয়ে উঠল। বাথরুমে হঠাৎ বিড়াল কোত্থেকে এলো? মিহিতা চোখ বন্ধ করে একটা চিৎকার দিয়ে আবার এক চোখে তাকাল। আশ্চর্য ব্যাপার। বিড়ালটা নেই, বিড়ালের জায়গায় একটা কালো কুচকুচে সাপ ফণা তুলে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিহিতার আর হিতাহিতজ্ঞান থাকে না। সে চিৎকার দিয়ে নগ্ন অবস্থায় বের হয়েই নিয়াজের সাথে ধাক্কা খেল।
মিহিতার প্রথম চিৎকার শুনে চোখ কচলাতে কচলাতে বাথরুমের দরজায় নক করতে এসেছিল সে।
ধাক্কা খেয়ে তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে মিহিতা বলল, 'বিড়াল সাপ, বিড়াল সাপ।'
বস্ত্রহীন মিহিতাকে দেখে নিয়াজ প্রথমে তাদের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো খোলা। নিশ্চিত চিৎকার চেচাঁমেচি শুনে বাড়ির সবাই এদিকে আসবেন।
উলঙ্গ মিহিতাকে সবাই এভাবে দেখে ফেলতে পারে।
তাই নিয়াজ বলল, 'তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে আগে কাপড় পরে এসো।' মিহিতা নড়ে না, তার বুকে একদম মিশে থাকে।
নিয়াজের কানে এলো বাড়ির সবাই 'কীসের চিৎকার রে? কীসের চিৎকার রে" গুঞ্জন তুলে এদিকে আসছেন৷ একটানে মিহিতাকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে সে।
তারপর মিহিতাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বলল, 'কী হয়েছে? তুমি কী ঠিক আছো মিহিতা?'
মিহিতা ঘনঘন ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে বলল, 'কমোডের উপরে সাপ।'
নিয়াজ কমোডের উপর তাকিয়ে বলল, 'কই, কিছুই তো নেই সেখানে।'
নিয়াজের মা বাথরুমের দরজায় নক করে বললেন, 'বাথরুমে কে? এদিকে তো চিৎকার শুনলাম।'
'মা আমি।'
'আর বউ মাকে তো দেখছি না, সে কোথায়?'
'যাও তো মা এখান থেকে।'
নিয়াজের বাবা কাজের লোক সহ স্ত্রীকে বললেন, 'চলে এসো সবাই এখানে কিছু হয়নি।'
মিহিতা এতক্ষণে পুরো বাথরুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো কিছুই নেই। এভাবে নগ্ন অবস্থায় নিয়াজ দেখছে ভেবে হঠাৎ লজ্জায় তার কান গরম হয়ে গেল৷ থুতনি বুকের সাথে লাগিয়ে মাথা নীচু করে বলল, 'নিয়াজ তুমি চোখ বন্ধ করে দরজার দিকে তাকাও আমি কাপড় পরবো।'
নিয়াজ বুঝে গেছে মিহিতা আজ স্বাভাবিক না৷ তাই কথা মতো চোখ বন্ধ করে দরজার দিকে তাকাল।
মিহিতা তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নেয়। কিন্তু ভীষণ লজ্জা করছে সাথে মাথায় প্রশ্নও জাগছে বিড়াল থেকে সাপ তারপর সাপটাই উধাও হয়ে গেল কীভাবে?
সে আপাতত এই দ্বিধাদ্বন্দ রেখে বলল, 'কাপড় পরা শেষ আমি বের হবো।'
নিয়াজ দরজা খুলে সোজা বেলকোনিতে চলে গেল। তার ধারণা মিহিতা হেলোসিনেশনের কারণে উল্টাপাল্টা জিনিস দেখে ভয় পাচ্ছে।
নববিবাহিত মেয়েরা নানান বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে মানসিক চাপে থাকে। তাই হেলোসিনেশন হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নিয়াজের চোখ পড়ল রাস্তার ওপর পাশে একটা ছেলের উপর৷ ছেলেটি এদিকেই কেমন করে জানি বারংবার তাকাচ্ছে।
নিয়াজের চোখে চোখ পড়ায় সে অন্যদিকে হাঁটা ধরেছে।
মায়ের ডাক শুনে নিয়াজ পেছন ফিরে তাকায়। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে যেতে বলছেন মা।
নিয়াজ রুমে এসে দেখলো মিহিতা শাড়ি পরেছে৷ অসম্ভব সুন্দর লাগছে শাড়িতে৷ কিন্তু শাড়ির রঙটা ঠিক ধরতে পারছে না সে। শাড়িটা কী লাল? না, এটা খয়েরী রঙের শাড়ি হবে বোধ হয়। এসব ভাবতে ভাবতে সে গোসলের জন্য বাথরুমে ঢুকে গেল।
.
নিয়াজ আর মিহিতা গাড়িতে বসে আছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। চারপাশে পাহাড় আর নাম না জানা বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি৷
ওদিকেই নিয়াজদের একটা বাংলো আছে। আজ নাস্তার টেবিলে নিয়াজের বাবা বললেন 'তোমরা চাইলে একান্তভাবে কয়েকদিন বাংলোতে গিয়ে থাকতে পারো। ইতিমধ্যে রজব আর আলেয়াকে পাঠিয়েছি সেখানে। রান্নাবান্না থেকে সবকিছু তারাই সামলাতে পারবে।'
কথাটা শুনে নিয়াজের মনটা ভরে গেল।
এই বাংলোটা তার ভীষণ রকমের পছন্দ। মাঝারি ধরনের একটা পাহাড়ের উপর বাংলো।
পাশ দিয়ে একটা আঁকাবাকা রাস্তা গেছে থানা শহরে।
নিয়াজের সৌখিন বাবা মিরাজ সাহেব শখ করে এখানে বাংলো বানিয়েছেন। গাড়িটা এসে পাহাড়ের নীচে থেমেছে।
বাংলোতে উঠার জন্য পাহাড় কেটে সিঁড়ির মতো বানানো হয়েছে৷ নিয়াজ হাত ধরে তুলছে মিহিতাকে। উপরে উঠে মুগ্ধতায় মিহিতার মেজাজ ফুরফুরে হয়ে গেল।
সুন্দর ছিমছাম একটা বাংলো। সামনের দুইপাশে অনেক ফুল গাছ দিয়ে সাজানো৷ বাগানে সামনে দোলনা রাখা হয়েছে। মিহিতা দোলনায় বসে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো এদিকে বিস্তৃত সবুজ মাঠ৷
তারপর একটা ছোট খাল। খালে বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট কালভার্ট। তারপর চা বাগান। ছোট ছোট সবুজ চা গাছ চাদরের মতো নীচ থেকে উঁচু পাহাড়ে গিয়ে উঠেছে।
.
গভীর রাত। হঠাৎ মিহিতার ঘুম ভেঙে গেল। চমৎকার সুরে কে জানি বাইরে বাঁশি বাজাচ্ছে।
ভেতর তোলপাড় করা করুন বাঁশির সুর। কে বাঁশিতে এমন বেদনার সুর তুলেছে আজ?
এমন সুর শুনে কেবল ইচ্ছে করে সমাজ সংসার চেনাজানা জগত ছেড়ে নিরুদ্দেশ হতে।
যে মানুষটির কোনো দুঃখ কষ্ট নেই তারও ভীষণ ইচ্ছে করে কাঁদতে।
মিহিতা আর শুয়ে থাকতে পারছে না। ইচ্ছে করছে নিজের সবটুকু সঁপে দেই বাইরের বেদনার সুর তোলা বাঁশিওয়ালার কাছে।
মিহিতা বাঁশির সুরে বুঁদ হয়ে এতক্ষণে বাংলোর বাইরে চলে এসেছে। দুই পাশের ফুল বাগানের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে সে।
দোলনা নড়ছে, নড়ছে আর নড়ছে।
দোলনায় বসে কেউ একজন বাঁশি বাজাচ্ছে।
মিহিতা দোলনার সামনে গিয়ে হাটু ভাঁজ করে বসে পড়লো।
.
আচমকা নিয়াজের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙ্গার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। কেউ কী ধাক্কা দিয়েছে? না, মনে হয় না।
নিয়াজ হঠাৎ লক্ষ করল পালঙ্কে সে একা শুয়ে আছে৷ মিহিতা কোথায়? সে বাথরুমের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই।
আশ্চর্য, তাহলে মিহিতা কোথায় গেল?
তাড়াতাড়ি রজব আর আলেয়া বেগমকে ডেকে তুলে ছাদে যায়, কিন্তু সেখানেও নেই।
সবাই তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসে বাইরের বাতি জ্বেলে দিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে। না কোথাও নেই।
হঠাৎ আলেয়া বলল, 'দোলনা নড়ছে মনে হয়।'
তিনজন সেদিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দোলনায় একটি ছেলের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে মিহিতা।
আরেকটু এগুনোর সাথে সাথেই ছেলেটি তাদের দিকে ঘাড় ঘুরে তাকিয়ে ঝোপঝাড়ে ঝড় তুলে দৌঁড়ে পালাল।
নিয়াজ চিনতে পারে ছেলেটিকে। সেদিন রাস্তা থেকে এই ছেলেই বারবার তাকিয়েছিল তাদের বাসার দিকে।
নিয়াজের আর কোনোকিছু বুঝতে বাকি থাকে না। কাজের লোকদের সামনে এমন অপমানে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার।
মিহিতাকে টান দিয়ে দোলনা থেকে নামিয়ে বলে, 'এই ছেলেটি কে? এখানে কী হচ্ছে এসব?'
মিহিতা অবাক হয়ে আমতা আমতা করে বলল, 'ছেলে মানে, কোন ছেলে?'
নিয়াজ ঠাস করে মিহিতার গালে চড় দিয়ে বলল, 'নষ্টা মেয়ে, নষ্টামি করে ভান ধরা হচ্ছে তাই না? আমরা তিনজন মানুষ স্পষ্ট দেখলাম তুমি দোলনায় একটি ছেলের কাঁধে মাথা রেখে বসেছিলে।'
.
ওরা ফিরেবে
( ১ম পর্ব )
- চলবে কিনা সবাই মতামত জানাবেন।
.
গল্পঃওরা ফিরবে
( ২য় পর্ব )
.
স্ত্রী এবং আপন বড় ভাইকে একসাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করে ফেলেছে সুয়েব খান।
.
রাত তখন প্রায় দু'টা। আচমকা সুয়েবের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেল ঝুমুর বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বাইরে যাচ্ছে।
পাশ ফিরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ঘুম আসছে না।
এপাশ - ওপাশ করে অনেক্ষণ কেটে গেল।
হঠাৎ সুয়েবের মাথায় খটকা লাগে, ভেতরে বাথরুম রেখে ঝুমুর বাইরে গেল কেন? তাও আবার এতক্ষণ হল ফিরছে না।
সাথে সাথে সুয়েব বিছানা থেকে উঠে বারান্দা রান্নাঘর সবকিছু খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু ঝুমুর কোথাও নেই।
তাড়াতাড়ি সিঁড়ি ভেঙে ছাদের দিকে যায়।
ছাদের চিলেকোঠায় চোখ পড়তেই তার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্য অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে।
একদিকে ঝুমুরকে সে ভীষণ ভালোবাসে অন্যদিকে বাবার আসনে বসানো বড় ভাই সুমিত খান।
কী করবে বুঝতে পারে না সুয়েব।
চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায় সে।
বাঁচতে একদম ইচ্ছে করছে না। এক্ষুনি এই জগৎ - সংসার ছেড়ে চলে গেলেই হয়।
কিন্তু কাউকে জানিয়ে মরতে ইচ্ছে করছে। কাকে জানাবে? ভাতিজি মিহিতাকে কী ওর বাবার কথা জানাবে? না, নববিবাহিত ভাতিজিকে এমন জঘন্য সংবাদ দিতে ইচ্ছে করছে না।
সে ঠিক করে নেয় মিহিতার মা শায়লা বেগমকে বিস্তারিত মেসেজ পাঠিয়ে আত্মহত্যা করবে।
.
শায়লা বেগম ঘুম থেকে উঠে মেসেজটা সিন করে নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। আজ কী এপ্রিল ফুল? না না এখন তো নভেম্বর মাস চলছে।
তাছাড়া আপন বড় ভাই আর স্ত্রীকে নিয়ে সুয়েব এমন জঘন্য কথা বলতেই পারে না।
শায়লা বেগম বিছানায় তাকিয়ে দেখলেন স্বামী সুমিত খান এখনও ঘুমাচ্ছেন।
তাড়াতাড়ি তিনি সুয়েবদের রুমের দিকে গেলেন। দরজা লক করা নেই।
রুমে ঢুকে উপরের দিকে তাকিয়েই তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। সিলিং ফ্যানে সুয়েবের জিভ বের করা লাশ ঝুলে আছে।
চিৎকার শুনে ঘুম থেকে কেঁপে উঠে ঝুমুর।
চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল, 'কী হয়েছে ভাবী?'
শায়লা বেগম আচমকা 'মাগীর ঘরের মাগী' বলেই ঝুমুরের চুল ধরে মেঝেতে ফেলে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে শুরু করেন।
.
চিৎকার - চেচাঁমেচি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল সুমিত খানেরও। তিনি তাড়াতাড়ি সুয়েবের রুমের দিকে এলেন৷
বিস্মিত হয়ে শায়লার হাত থেকে স্যান্ডেল নিয়ে বললেন, 'কী হচ্ছে এসব?'
শায়লা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, 'কী হচ্ছে জানো না! এখন অবুঝ সাজা হচ্ছে তাই না?'
সুয়েবের মেসেজ বের করে সুমিত খানের চোখের সামনে ধরে শায়লা বেগম বললেন, 'এটা কী সুমিত, এসব দেখার আগে আমার মৃত্যু হল না কেন!'
মেসেজটা পড়ে সুমিত খান চোখ বড় বড় করে বললেন, 'মানে, আমি তো সারা রাত তোমার পাশেই ছিলাম।'
শায়লা বেগম সিলিং ফ্যানের দিকে আঙুল তাক করে বললেন, 'মৃত্যুর আগে কেউ মিথ্যা কথা বলে না সুমিত। আমাকে আর বোকা বানানোর চেষ্টা করো না।'
.
নিশিতা ভার্সিটির হোস্টেলে এসেছে গতকাল। খুব কাছের এক বান্ধবীর জন্মদিন থাকায় বড় বোন মিহিতার বিয়ের পরেরদিনই হোস্টেলে আসতে হল।
অবশ্য আজ বিকেলে আবার চলে যেতো বাসায়। কিন্তু সাতসকালে মা ফোন দিয়ে বললেন এখনই বাড়িতে রওয়ানা দিতে।
আজ আবার রবিনের সাথে মিট করার কথা ছিলো। তাকে জানিয়ে যাওয়া দরকার।
কিন্তু বেচারা এখনও ঘুমোচ্ছে হয়তো।
তাই কল না দিয়ে মেসেজ দিলো, 'সরি রবিন, আমার এখনই বাসায় যেতে হচ্ছে, তোমার সাথে মিট করা হলো না।'
খানিক পরেই রবিনের ফোন থেকে অপ্রত্যাশিত মেসেজ এলো, 'চাইলেই মিট করা হবে সুইটহার্ট। এক্ষুনি আমি গাড়ী নিয়ে হোস্টেলে এসে তোমাকে স্টেশন অবধি দিয়ে আসবো।'
নিশিতা মুচকি হেঁসে মেসেজ পাঠালো, 'বাব্বাহ, তুমি জেগে আছো? আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলে এসো আমার তাড়া আছে।'
.
'আমি এক্ষুনি আসছি। আর হ্যাঁ, তোমার যেহেতু বেশি তাড়া তাই যাবার পথে গাড়িতে আমরা সকালের নাস্তা সেরে নেব।'
.
'অকে, লাভ ইউ রবিন।'
.
গাড়িতে বসে দু'জন নাস্তা করে নিল। নাস্তা শেষ করার মিনিট পাঁচেক পড়েই নিশিতার চোখের পাতা ধীরে ধীরে বন্ধ হতে শুরু করে।
খানিক পরেই সে ঘুমে ঢলে পড়ে রবিনের কাঁধে।
মুচকি হাসে রবিন, তারপর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
গাড়িটা শহর ছেড়ে একসময় চলে গেল একটা জঙ্গলের দিকে।
চারদিকে নাম না জানা গাছগাছালি আর উঁচু পাহাড়।
গাড়িটা থামিয়ে নেয় রবিন, আর সামনে যাবে না।
মিহিতাকে কাঁধে তুলে চারদিকে সতর্কভাবে থাকায়।
অবশ্য এদিকে কেউ আসার কথা নয় তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতা।
নিশিতাকে কাঁধে নিয়ে খালে নেমে পড়ে। খাল পেড়িয়ে একটা ছোট্ট পাহাড়।
তারপর একটা বিস্তৃত সবুজ মাঠ। মাটের এক পাশ দিয়ে মেটো পথ।
সেদিকে খানিক্ষণ হেঁটে পাহাড়ের একটা গুহায় ঢুকে পড়ে সে।
নিশিতাকে মাটির সাথে হেলান দিয়ে বসায়।
তারপর ঠাস ঠাস করে নরম ফর্সা গালে কয়েকটা চড় দেয়।
কেঁপে উঠে নিশিতা। চোখ বড় বড় করে চারদিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।
ভয়ার্ত গলায় বলে, 'রবিন এসব কি হচ্ছে৷ এখানে কোথায় নিয়ে এসেছো আমায়?'
রবিন হাসতে শুরু করে। তার হাসির তালে যেন পুরো পৃথিবী কাঁপছে।
ভয়ে নিশিতার হৃদপিণ্ড বের হতে চাচ্ছে।
সে ভয়ে ভয়ে বলল, 'হাসি থামাও রবিন, এমন হাসি দেখলে ভীষণ ভয় লাগে আমার।'
রবিন বাধ্য ছেলের মতো হাসি থামায়। তারপর পেছন থেকে একটা কাটা মাথা বের করে বলল, 'সুইটহার্ট, আমি রবিন হলে এই মাথাটা কার?'
নিশিতা চিৎকার দিয়ে উঠে। রবিনের হাতে যে আরেক রবিনের কাটা মাথা।
ঢোক গিলতে গিলতে বলল, 'রবিন তুমি তো ঠিকই আছো। তাহলে তোমার মতো দেখতে এই মাথাটা কার?'
রবিন আবার হাসতে শুরু করে।
পুরো পৃথিবী কাঁপানো ভয়ংকর হাসি।
.
.
গল্পঃওরা ফিরবে
পর্ব ঃ- ৩য় এবং শেষ পর্ব
.
দু'জনের মধ্যখানে একটা উঁচু দেয়াল উঠেছে সে রাতেই।
যে রাতে একটি ছেলের সঙ্গে দোলনায় মিহিতাকে দেখেছিল নিয়াজ।
আজকাল সে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে, সেভাবে আর বাসায়ও থাকে না৷
বিষয়টা জানতে পারলে মা - বাবা অনেক কষ্ট পাবেন ভেবে এখনও বলা হয়নি।
মিহিতারও কেমন মুখের ভাষা ফুরিয়ে গেছে৷ কী হয়ে গেল সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
বিয়ের দু'দিন হবার আগেই গায়ে হাত তুললো স্বামী?
মনের এইসব দ্বন্ধ নিয়েও দু'জন দু'দিকে মুখ ফিরিয়ে পাশাপাশি ঘুমিয়ে থাকে। অথচ এতোটা কাছাকাছি থেকেও তাদের মনের দুরত্ব কত অসীম।
কিন্তু এই অসীম দুরত্ব তারা কেউকে বুঝতে দিচ্ছে না।
আজ পুরোদস্তুর স্বামী-স্ত্রীর মতোই তারা খানপুর যাচ্ছে।
খানপুর হচ্ছে নিয়াজের শশুড়বাড়ি।
আজ ভোরে নিয়াজের শাশুড়ি শায়লা বেগম কল দিয়ে বললেন মিহিতাকে নিয়ে আজ যেভাবে হোক খানপুর যেতে।
.
সুয়েব খান আত্মহত্যা করার পূর্বে শায়লা বেগমকে যে মেসেজ পাঠিয়েছিল সেটা পরিবারের মান - সম্মানের স্বার্থে চেপে যেতে হল।
কিন্তু সুমিত খান আর শায়লা বেগমের মধ্যখানে বিশাল একটা দেয়াল উঠেছে। সে দেয়াল ডিঙিয়ে আগের মতো আর তাদের সাক্ষাৎ হবে কিনা কে জানে!
শায়লা বেগম খানিকটা ব্যস্ত আছেন মিহিতা এবং নিয়াজকে নিয়ে। ইতিমধ্যে তিনি মিহিতাকে চাচার আত্মহত্যার পেছনের কারণটাও বলেছেন। সুয়েব চাচা আত্মহত্যা করেছেন ওর বাবা আর চাচীর পরকীয়ার জন্য এটা মিহিতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। মা - মেয়ে দু'জন গলা জড়িয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছেন।
সুয়েবের মৃত্যু এখনও আইনি জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আত্মীয় - স্বজন সবাই আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইছে। মহাবিপদে পড়েছে খান বাড়ির সবাই।
এতো ঝামেলার পরও সুমিত খান আরেকটা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে নিশিতা এখনও হোস্টেল থেকে ফিরছে না কেন?
বারংবার কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। সুমিত খানের মাথা একদম কাজ করছে না।
না করারই কথা, খান বাড়ির সাথে এমন কিছু হচ্ছে যা কারো সাথে আলোচনাও করা যাবে না।
বিষয়গুলো নিয়ে গোপনে একা একা মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার মতো ব্যাপার।
'মিহিতা।'
'জ্বী বাবা?'
'মা, নিশিতার সাথে কী তোমার কোনো যোগাযোগ হয়েছে?'
'না বাবা।'
'মেয়েটা সেই ভোরে চলে আসার কথা। এখন অবধি আসেনি। ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছে।'
মিহিতা তাড়াতাড়ি ফোন বের করে কল দেয় নিশিতাকে। সত্যি সত্যিই ফোন বন্ধ।
.
সন্ধ্যা পেরিয়ে যায় নিশিতা আর ফিরে না।
থানায় নিখোঁজ হবার জিডি করতে হলেও চব্বিশ ঘন্টা যেতে হবে।
জিডির অপেক্ষা না করে খান বংশের সবাই আলোচনা করে চারদিকে খুঁজতে বের হয়েছেন।
কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিশিতার হোস্টেলের সবাই জানিয়েছে সে ভোরেই নাকি খানপুরের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল এরপর তাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
.
রাত হয়েছে৷ গভীর অন্ধকার রাত। সুমিত খান এখনও বাড়িতে আসেননি। দলবল নিয়ে পাগলের মতো নিশিতাকে খোঁজাখুঁজিতে আছেন।
খানিক পর পর থানায়ও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
.
নিয়াজ শুয়ে আছে। কিন্তু মিহিতা এক আকাশ দুঃখ, কষ্ট, বিস্ময় প্রশ্ন নিয়ে সেই কখন থেকে বালিশে মুখ গুঁজে কান্নাকাটি করছে।
নিয়াজের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তার ধারণা নিশিতা কারও সাথে পালিয়ে গেছে।
মিহিতা যেহেতু চরিত্রহীন, ওর বোন তো সেরকমই হবে। তার বরং মিহিতার কান্না শুনে বিরক্তি আর রাগের সীমা রইল না।
.
শায়লা বেগম জায়নামাজে বসে তাসবিহ টিপছেন। খানিক পর পর কান্নায় শরীরটা নড়ে উঠছে।
কান্নাকাটি করতে করতে একসময় তিনি জায়নামাজেই ঘুমিয়ে গেলেন।
গভীর রাত। হঠাৎ শায়লা বেগমের ঘুম ভেঙে গেল। চমৎকার সুরে কে জানি বাইরে বাঁশি বাজাচ্ছে।
ভেতর তোলপাড় করা করুন বাঁশির সুর। কে বাঁশিতে এমন বেদনার সুর তুলেছে আজ?
এমন সুর শুনে কেবল ইচ্ছে করে সমাজ সংসার চেনাজানা জগত ছেড়ে নিরুদ্দেশ হতে।
যে মানুষটির কোনো দুঃখ কষ্ট নেই তারও ভীষণ ইচ্ছে করে কাঁদতে।
শায়লা বেগম আর শুয়ে থাকতে পারছেন না। ইচ্ছে করছে নিজের সবটুকু সঁপে দেই বাইরের বেদনার সুর তোলা বাঁশিওয়ালার কাছে।
বাঁশির সুরে বুঁদ হয়ে এতক্ষণে ছাদে চলে এসেছেন।
তিনি দেখতে পেলেন চোখের সামনে একটি নদী। নদীর পানি গাঢ় সবুজ।
নদীর কিনারায় চারপাশে মোমবাতি জ্বলছে। মোমবাতির আগুন খানিক বাতাসে দুলছে।
এই অন্ধকারে মোমবাতির আলোতে সবকিছু দারুণ দেখাচ্ছে।
তিনি বাঁশির সুর লক্ষ করে হাঁটছেন। কয়েক পা এগুনোর পর দেখতে পেলেন একটা ছোট খেজুর গাছের নীচে সবুজ পানির উপর রঙিন কাগজের এক বিশাল নৌকা। সেখানে কেউ একজন বসে বসে বেদনার সুর তুলছে।
শায়লা বেগম বাঁশিওয়ালাকে দেখার তীব্র আগ্রহে নৌকায় উঁকি মারলেন। তারপর মনে হল তিনি নীচের দিকে চলে যাচ্ছেন। হঠাৎ শায়লা বেগম বুঝতে পারলেন তিনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন।
.
আশপাশের বাড়ির কৌতূহলী মানুষের উপচে পড়া ভীড় জমেছে। আত্মীয় - স্বজন সবার চোখেমুখে প্রশ্ন, ভয়, বিস্ময়, কষ্ট।
খান বাড়িতে একের পর এক কী হচ্ছে?
গতরাতে সুয়েব গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরেরদিন নিশিতা নিখোঁজ হয়ে গেল। আজ আবার শায়লা বেগম ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।
.
খান বংশের মাতব্বররা আলাদা একটা রুমে আলোচনায় বসেছেন। সুমিত খানও ভারী মুখ করে সেখানে বসে আছেন।
.
মায়ের আত্মহত্যার জন্য মনে মনে বাবাকেই দায়ী করছে মিহিতা। তবে পরিবারের মান - সম্মানের জন্য সেটা কাউকে না বলে একা একা শুধু কান্নাকাটি করে যাচ্ছে।
নিয়াজ সোফায় বসে সিগারেট টানছে।
মাথায় হাজার রকমের এলোমেলো চিন্তা।
একটি পরিবারে একের পর এক দূর্ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে?
দুই রাতে দু'জন লোক আত্মহত্যা করে ফেলল। দিনেদুপুরে একটি যুবতী মেয়েও নিখোঁজ। আর মিহিতার ব্যাপারটা?
বিয়ের দ্বিতীয় রাতেই একটা ছেলের সাথে গভীর রাতে দোলনায় দেখলাম। মিহিতা এমনভাবে তখন কথা বলেছিল যেন সবেমাত্র সে ঘুম থেকে উঠেছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিয়াজের হঠাৎ করে কেন জানি মিহিতার উপর থেকে সমস্ত সন্দেহ দূর হয়ে গেল। কোন এক অজানা কারণে দু'জনের মধ্যকার দেয়াল বরফে পরিণত হয়ে ধীরে ধীরে গলতে শুরু হয়েছে।
নিয়াজ সিগারেটটা ফেলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।
বালিশে মিহিতা মুখ গুঁজে আছে। কান্নায় শরীর নড়ছে। হঠাৎ মাথায় কারো স্পর্শ অনুভব করছে। স্পর্শটা কোমল, স্থায়ী, আত্মবিশ্বাসী এবং ভরসার মনে হল।
মিহিতা ঘাড় তুলে তাকায়। চোখ দু'টা লাল।
মাথায় হাত আর চোখে চোখ রেখে হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে পড়লো নিয়াজ। তার কেন জানি মনে হচ্ছে মিহিতার চোখ গরুর মতো সুন্দর।
আচ্ছা আমার রূপবতী বউকে যদি বলি তোমার চোখ গরুর মতো সুন্দর সে খুশী হবে নাকি আহত হবে?
হয়তো আহতই হবে। অথচ খেয়াল করলে দেখা যাবে গরুর চোখ আসলেই সুন্দর। কেমন জল টলমল গভীর দুখী কাজল টানা চোখ।
ভাবনায় ব্যঘাত ঘটিয়ে মিহিতা হঠাৎ নিয়াজের গলা জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে।
পিঠে সান্ত্বনার হাত বুলিয়ে দেয় নিয়াজ। মা, চাচার বিয়োগ ব্যথা আর বোন নিখোঁজ হবার দুশ্চিন্তায় অনবরত কেঁদেই যায় মিহিতা।
নিয়াজ সান্ত্বনার হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, 'মিহিতা, তোমাদের পরিবারের সাথে কী হচ্ছে এসব! একের পর এক দূর্ঘটনা কীভাবে হতে পারে? আমার ধারণা এর পেছনে অতিপ্রাকৃতিক কিছু আছে। যদিও আজকাল এসব কেউ বিশ্বাস করে না।
কিন্তু তোমাদের পরিবারের সাথে যা হচ্ছে এগুলোর প্রাথমিক ব্যখ্যা আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে।'
আচমকা মিহিতা চোখ মুছতে মুছতে বলল, 'হ্যাঁ নিয়াজ হ্যাঁ। এগুলো গজব। আমাদের পরিবারের উপর গজব পড়ছে। মৃত আত্মার অভিশাপ পড়েছে।'
নিয়াজ বিস্মিত হয়ে বলল, 'মানে! গজব আর আত্মার অভিশাপ এগুলোর মানে কী?'
আদুরে বিড়ালের মতো নিয়াজের বুকের সাথে মিশতে মিশতে মিহিতা বলল, 'মানে - টানে কিছুই নেই।'
মিহিতাকে আর ঘাটতে যায় না নিয়াজ। চুপচাপ আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে নেয়।
.
খান বাড়িতে একজন কবিরাজ এসেছেন। কলকাতা হাওড়ার একজন নাম করা হিন্দু কবিরাজ। কবিরাজের বাড়ি আসাম। থাকেন হাওড়া শহরে।
অনলাইনে বিজ্ঞাপন পেয়ে কবিরাজের সন্ধান দিয়েছে নিয়াজ৷ আজ দুপুরে তিনি খানপুর এসেছেন।
কুচকুচে কালো চেহারার একজন মধ্যবয়স্ক লোক। চুল কদম ছাঁট দেওয়া। আলিশান পেট। কবিরাজের শরীরে ধুতি ছাড়া কিছুই নেই।
.
রাত বারোটার দিকে সবাইকে নিয়ে মাটিতে বসা হলো। চারদিকে গোল করে মোমবাতি জ্বালিয়ে মাঝখানে একটি কলাগাছ ঘেরে নিলেন।
কবিরাজ রহস্যময় কিছু আঁকিবুঁকি করলেন মাটিতে।
তারপর কলাগাছের নীচে একটা স্টার দিলেন। স্টারের মাঝখানে কম বয়সি একটা ছেলেকে বসিয়ে স্টারের এক কোণে কলা অন্য কোণে ফুল রাখা হলো। তারপর কবিরাজ নাম না জানা রহস্যময় কিছু ডিব্বা থেকে বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিন গুড়ো একটা গ্লাসে দিলেন। তারপর জল ঢেলে নিম গাছের ঢাল দিয়ে নাড়তে নাড়তে আপন মনে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা পড়তে লাগলেন।
তারপর চার আঙ্গুল ভিজিয়ে ছেলেটির উপর ছিটিয়ে দিয়ে বললেন খেয়ে নাও।
ছেলেটি পদ্মাসনে বসা অবস্থায় আচমকা কেমন করে জানি সমস্ত শরীর কাঁপতে শুরু হলো।
কবিরাজ ঠোঁট নেড়ে মন্ত্র পড়ে গামছা দিয়ে ছেলেটিকে বাতাস করছেন।
খানিক বাদেই কবিরাজ প্রশ্ন করলেন, 'নিশিতা নামে যে যুবতী একটা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে সে এখন কোথায় আছে?'
'বলুম না, আমাকে আগে রক্ত দে।'
'কিসের রক্ত চাস?'
'কালো খাসির হলে চলবে।'
কবিরাজ ব্যাগ থেকে একটি বোতল বের করে দিলেন। বোতলে লাল টকটকে রক্ত।
ছেলেটি বোতল হাতে নিয়ে একটানে রক্ত শেষ করে নিল।
কবিরাজ শান্ত গলায় বললেন, 'বল এবার বল মেয়েটি কোথায়।'
'পাহাড়ের একটি গুহায় আছে। মেয়েটির লাশ রেখেছে একটি মূর্তির সামনে। প্রতিদিন রাত বারোটায় এই লাশকে একটি ছেলে ধর্ষণ করে শয়তানের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে।'
'শয়তানের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে মানে! এই ছেলে কি শয়তান উপাসনা করে শক্তি অর্জন করেছে?'
'না, এই ছেলে মূলত আত্মার শক্তি দ্বারা চালিত। তবে কোনো এক অদ্ভুত কারণে শয়তান উপসনাও করে।'
'পাহাড়টি কোথায়? আর ছেলেটি ঠিক কখন ঘুমাতে যায়?'
'এই এলাকার পেছনে একটি জঙ্গল আছে৷ তারপর উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে রাস্তা গেছে। বাম পাশে একটি খাল। খাল পেরিয়ে একটি সবুজ মাঠ। তারপর একটি একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ের ওপর পাশে গুহায় আছে ছেলেটি। সে দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকে। আত্মারা যখন তার উপর ভর করে তখন যা ইচ্ছে করতে পারে।'
কবিরাজ আবার ছেলেটির মুখে জল ছিটে দেয়। আচমকা মাটিতে লুটে পড়ে ছেলেটি।
.
কবিরাজের কথা অনুযায়ী ছেলেটি যখন গুহায় ঘুমিয়ে থাকবে তখন একজন গিয়ে তার উপর জল ছিটা দিতে হবে৷ যদি এর আগেই ছেলেটি জেগে যায় তাহলে যে জল নিয়ে যাবে তাকে মেরে ফেলতে পারে।
আর ঠিকঠাক মতো জল ছিটা দিতে পারলে আত্মা আর ছেলেটির কাছে আসতে পারবে না। তখন পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়া যাবে।
.
গ্লাসে করে কে জল নিয়ে যাবে তা ঠিক করা যাচ্ছে না। নিজের জীবনের এমন ঝুঁকি নিতে কেউ রাজি নেই। শেষপর্যন্ত নিজ থেকেই যেতে আগ্রহ দেখালো নিয়াজ।
.
নিয়াজ চুপচাপ গ্লাস নিয়ে পাহাড়ের চলে গেছে। বাকি সবাই নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে আছে।
থানায় কল দিয়ে বলা হয়েছে নিশিতাকে পাহাড়ের গুহায় আটকে রেখেছে। তাকে উদ্ধার করতে খানিক পরেই পুলিশ এসে পৌঁছাবে।
.
গুহা থেকে সফলভাবে নিশিতার লাশ উদ্ধার করে ছেলেটিকে আটক করা হয়েছে।
ছেলেটির নাম জয়দাশ। খানপুরের একটি হিন্দু পরিবারের ছোট সন্তান। সে পড়ালেখার জন্য শহরে একটা মেসে থাকতো।
হঠাৎ একদিন খবর পায় তার পরিবারের সব সদস্য রাতে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এক রাতেই তার মা-বাবা বড় ভাই জবিদাশ জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছেন।
জয়দাশ পুরো পাগলের মতো হয়ে যায়। কে এমন নির্মম হত্যাকান্ড করতে পারে। আর এসবের কারণই বা কী?
হঠাৎ তার ভেতরে ভয় ধরতে শুরু করে। যদি তাকেও হত্যা করা হয়?
জয়দাশ তখন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে জঙ্গলে গিয়ে গুহায় আশ্রয় নেয়।
তারপর পরিবারকে হারানোর বিষাদ, ভয়, প্রতিশোধ, কারা হত্যা করলো, কেন করলো, সবকিছু মিলিয়ে অস্থিরতা কাজ করতে শুরু করে তার ভেতর।
রাতে নিজের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার জ্বালানো পুড়ানো চিহ্নগুলো সংগ্রহ করে গুহায় নিয়ে আসে।
তার কেন জানি বারংবার মনে হয় মা - বাবার আত্মা তার সাথে যোগাযোগ করবেন। কারা হত্যা করেছে কেন হত্যা করেছে সব বলবেন।
সে হাকিনী পূজা আর শয়তান উপসনার অনেক বই সংগ্রহ করে গুহায় বসে বসে পড়ে। আত্মার সাথে যোগাযোগের কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছিল না।
হঠাৎ তার মনে হলো শয়তান উপাসনা করে সে অতিপ্রাকৃতিক শক্তি অর্জন করে সবকিছু অলৌকিক ভাবে জেনে যাবে।
শয়তান উপাসনার সবকিছু সংগ্রহ করা শুরু করে জয়দাশ৷ তারপর হঠাৎ একদিন ঘুমের মধ্য স্বপ্নে দেখে একজন ভিখারী তাকে একটা বই দিচ্ছে।
সে বই মেলে দেখল, "নিকটতম আত্মার সাথে যোগাযোগের পদ্ধতি।"
জয়দাশ পড়তে শুরু করে। সেখানে মূলকথা হলো নিশি রাতে পদ্মাসনে বসে আত্মাদের ডাকা।
তারপর প্রতিদিন সে রাত বারোটা থেকে পদ্মাসনে বসে মা - বাবা আর ভাইয়ের আত্মাকে ডাকে, 'এসো হে আমার নিকটতম আত্মা।' এরকম ডাকতে ডাকতে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎ একদিন তার ঘুম ভেঙে গেল কান্না শুনে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মা গুহার একপাশে বসে কাঁদছেন। তারপর একজন একজন করে ওরা সবাই ফিরে আসে।
জয়দাশ প্রথমে মাকে গিয়ে বলল, 'কী হয়েছে মা, কাঁদছো কেন তোমরা? আর তোমাদেরকে কেন মারা হল? কে মারলো মা? তাড়াতাড়ি সব বলো আমাকে।'
জবিদাশ এগিয়ে এসে সব বলতে শুরু করে জয়দাশকে, 'মিহিতা খান আর আমি প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সহপাঠী ছিলাম। আমি সব পরীক্ষায় প্রথম হলে মিহিতা হতো দুই নাম্বার। খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছিলাম। নাটক সিনেমা দেখার সুবাদে ক্লাস সিক্স থেকে ধর্ম জ্ঞান হবার আগেই প্রেম-ভালোবাসার জ্ঞান ঠিকই হয়ে যায়। মিহিতাকে আমার ভীষণ ভালো লাগতো।
সব সময় দুষ্টামী করার সুযোগ খুঁজে বেড়াতাম আমি।
একদিন চোখ মারি মিহিতাকে। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। মিহিতার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই দেখে সাহস পেলাম।
তারপর আনাড়ি হাতে একটা চিঠি দিয়ে মিহিতাকে ভালোবাসার কথা জানাই। আমার কাছে ধর্ম কোনো সমস্যা মনে হয়নি।
কিন্তু চিঠিটা হেডস্যারের কাছে দিয়ে নালিশ দেয় মিহিতা। হেডস্যার সেদিন আমাকে দেদারসে মাইর দেন ক্লাসের সবার সামনে৷ আমি একদম মিইয়ে যাই সেদিন থেকে।
ক্লাস এইটের টেস্ট পরীক্ষায় আমি আবার প্রথম হই৷ মিহিতা হয় দ্বিতীয়।
হঠাৎ একদিন লক্ষ করলাম মিহিতার চোখমুখে অনেক প্রশ্রয়। কেমন করে তাকায়।
দৃষ্টিতে আমার প্রতি ভীষণ আগ্রহ। আমি আবার মিহিতার প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে যাই।
একদিন স্কুল ব্যাগে করে একটা লাল টকটকে ফুল নিয়ে যাই।
আমি আবার প্রপোজ করি মিহিতাকে। মিহিতার চোখে এক আকাশ প্রশ্রয় দেখতে পাই। আমি বুঁদ হয়ে তাকিয়ে থাকি ওই গভীর চোখে।
মিহিতা আমাকে গ্রহণ করে নেয়। শর্ত দেয় কেউ যেন কিছু না জানে৷ পরিবারকে নিয়ে ওর যতো ভয়। কোনোভাবে জানতে পারলে মার খাবে। আমি সব মেনে নেই।
বাড়িতে এসে সারাক্ষণ সিনেমা দেখি আর নায়ক নায়িকাদের জায়গায় আমরা দু'জনকে কল্পনা করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই। কল্পনায় আমি একটি জগত তৈরী করে নেই। সেই জগতের সব বাতি নিভে যায়। আমি আর মিহিতা মিশে যাই অন্ধকারে। আমরা ভানহীন খোলসহীন হয়ে এই জগতের জীবনকে যাপন করি।
প্রতিদিন বিকেলে খান বাড়ির আশেপাশে আমার ঘোরাঘুরি আর উঁকিজুকি মারা প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে যায়।
আমি ভোরেই ঘুম থেকে উঠে গোসল - টোসল করে রেডি হয়ে যাই। আমার সময় কাটে না। স্কুলের সময় কখন আসবে কখন মিহিতার সাথে দেখা হবে সেটার জন্য অস্থির হয়ে থাকি।
এভাবেই আমাদের দিন কাটে। এইটের ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে। আমার প্রস্তুতি তেমন ভালো নেই।
পড়ালেখায় মন বসে না আমার। টেবিলে গেলেই এটাসেটা লেখালেখি করি। আনাড়ি হাতে মিহিতার ছবি আকি।
এরিমধ্যে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ ফলাফল বের হলো।
মিহিতা রিজাল্টের দিক থেকে আমাদের স্কুলে এক নাম্বার হয়ে যায়। আমার ভীষণ আনন্দ লাগে মিহিতার আনন্দে।
আমাদের স্কুলের এলাকা ভিত্তিক নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মিহিতাকে পুরুষ্কার দেয়া হয়।
সবাই বলাবলি করেছিল সেটা আমার পাবার কথা৷ হঠাৎ করে আমি পড়ালেখায় অমনোযোগী হবার কারণে মিহিতা পাচ্ছে।
আমার এসবে কান নেই। আমি মিহিতার প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকি। ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ জানতে শুরু করে।
হিন্দু পাড়ার ছেলে-বুড়োরা বাড়িতে নালিশ দেয় আমি এসবে গুরুত্ব দেই না।
এভাবেই চলছিল দশম শ্রেণি পর্যন্ত। এসএসিতে আমি আরও খারাপ রিজাল্ট করি। মিহিতা বরাবরের মতই এখন ভালো ছাত্রী। দুর্দান্ত রিজাল্ট করে সে।
সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এসএসি পরিক্ষা শেষে।
মিহিতা কেমন অপরিচিত হয়ে যায়। কোনো যোগাযোগ রাখে না সে।
আমি পাগলের মতো খান বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করি। ধীরে ধীরে ঝামেলা শুরু হয় হিন্দু পাড়া আর খান বাড়ির সাথে।
হিন্দু মাতব্বররা নিষেধ দেন এইদিকে না যেতে। মিহিতাকে ভুলে যেতে হবে আমাকে। আমি পারি না ভুলতে। বারংবার ছুটে যাই খান বাড়ির দিকে। বহুবার মার খাই খান বংশের পোলাপানদের হাতে।
কোনো বাঁধা আমাকে থামাতে পারে না।
এলাকার কোনো মুসলমানরা অবশ্য খান বাড়িকে সমর্থন করেনি।
কেন জানি সবার ধারণা আমাকে খান বাড়ির মেয়ে নষ্ট করেছে। আমার মাথায় এসব কিছুই ঢোকেনি।
মুসলমান অনেকেই আহত হয়েছে খান বাড়ির এসব ব্যবহারে। কিন্তু এই বংশের উপর কেউ কথা বলার সাহস পায় না।
আমি এসব কিছুতেই নেই। আমি পাগলের মতো হয়ে যাই ওর সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
হঠাৎ একদিন শুনি মিহিতার বিয়ের সমন্ধ এসেছে। আমি চিঠিপত্র দিয়ে এই বিয়েটা ফিরিয়ে দেই। খান বাড়ি তখন খুব ক্ষেপে যায়।
বাড়িতে হুমকি দেয় আমাকে সামলানোর জন্য। আমি থামি না, ব্যস্ত হয়ে থাকি ওর সঙ্গে একবার কথা বলার জন্য।
একদিন সাক্ষাৎ হয়। মিহিতা আমার কাছে ক্ষমা চায় নিজের ভুলের জন্য। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় সবকিছু শুনে।
মিহিতা ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আমাকে সব খুলে বলে।
আমি প্রতিবার স্কুলে এক নাম্বার আর খান বাড়ির মেয়ে দুই নাম্বার হয় এটা তারা কখনও মেনে নিতে পারেনি।
প্রতিবার পরিক্ষার আগে শিক্ষক রেখে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েও মিহিতা প্রথম স্থানে আসতে পারেনি। খান বাড়ির সবাই খুব বিরক্ত হয় এই ব্যাপারটার জন্য। তাদের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে।
আমি যখন প্রথমবার প্রপোজ করি মিহিতা হেড স্যারের কাছে নালিশ দেবার পর মা শায়লা বেগমকেও জানায়।
শায়লা বেগম হচ্ছেন চিকন বুদ্ধির মানুষ। নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করেন। জগতের সব সস্তা প্লান উনার মাথায় নাকি আসে।
স্বামীকে লুকিয়ে রাজ্যের কাজ করে বাড়ানো উনার নেশা বলা যায়।
তিনি তখন মিহিতাকে বুদ্ধি দেন প্রেমের অভিনয় করতে। মিহিতা তখন কম বয়সের জন্য মায়ের পাগলামি বুঝতে পারেনি।
মা যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছে সেভাবে আগায় সে।
মিহিতার মাথায় শুধু এক নাম্বার স্থান দখল করা। কিন্তু আমার অবুঝ সরল ভালোবাসা ধীরে ধীরে মিহিতাকে স্পর্শ করতে থাকে। তবে ধর্মের জন্য সে নিজেকে বারংবার সামলে নেয়।
মায়ের প্লান মতো সে পাল্টে যায় এসএসি পরিক্ষার পরেই। কিন্তু আমি মেনে নিতে পারিনি।
আমি পাগল হয়ে যাই মিহিতাকে পাবার জন্য। এভাবে দন্ধ শুরু হয় খান বাড়ির সাথে। মিহিতাকে বিয়ে দেওয়া ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
খান বাড়ির লোকজন আমাকে হত্যা করার বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালায়। শেষপর্যন্ত বাড়িতে আগুন দিয়ে মেরে ফেলে আমরা সবাইকে।
আমরা এখন চাই এর প্রতিশোধ। মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে এদের পরিবারকে ধীরে ধীরে মারতে হবে। আমরা তিনটে আত্মা তোর সাথে থাকবো।'
.
পুলিশের কাছে সব স্বীকার করে নেয় জয়দাশ। আত্মা তার কাছে আসতে না পাড়ার জন্য কবিরাজি করে সফল হয় কলকাতার কবিরাজ।
.
মিহিতা আর নিয়াজের মধ্যকার মান-অভিমান সব দূর হয়েছে। স্বামীকে সব বুঝিয়ে বলেছে মিহিতা।
তবে প্রায়ই জবিদাশের জন্য মন খারাপ হয়ে যায়। মনে মনে অনুতপ্ত হয় সে। কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমাও চায়।
------- সমাপ্তি ------