বাঘ, চিতাবাঘ ও মেছোবাঘ: জানা অজানা তথ্য

 বাঘ, চিতাবাঘ ও মেছোবাঘ – পার্থক্য ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য

বাঘ, চিতাবাঘ ও মেছোবাঘ—এই তিনটি বন্য বিড়াল প্রজাতি দেখতে আলাদা হলেও অনেকের কাছে এক ধরনের মনে হতে পারে। তবে এদের আকার, স্বভাব, আবাসস্থল ও শিকার ধরার কৌশলে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এই লেখায় আমরা এই তিনটি বাঘ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

বাঘ

বাঘ মূলত এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়, তবে সবচেয়ে বেশি বাঘ রয়েছে ভারতে। ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঘের সংখ্যা রয়েছে, যা প্রায় ৩,০০০-এর বেশি। এছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে—

বাংলাদেশ: সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায়।

রাশিয়া: সাইবেরিয়ান টাইগার পাওয়া যায়, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঘের প্রজাতি।

ইন্দোনেশিয়া: সুমাত্রার জঙ্গলে বিরল সুমাত্রান টাইগার আছে।

চীন: দক্ষিণ চীনে কিছুসংখ্যক চীনা টাইগার পাওয়া যায়।

নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার: হিমালয়ের পাদদেশের বনাঞ্চলে বাঘের উপস্থিতি আছে।

তবে অবৈধ শিকার ও বন ধ্বংসের কারণে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাই এগুলো রক্ষা করতে সংরক্ষণ কার্যক্রম চলছে।

চিতাবাঘ

চিতাবাঘ (Leopard, বৈজ্ঞানিক নাম: Panthera pardus) হলো বড় বিড়ালজাতীয় শিকারী প্রাণী, যা মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি বাঘ ও সিংহের চেয়ে ছোট হলেও অত্যন্ত চতুর ও শক্তিশালী শিকারি।
চিতাবাঘের বৈশিষ্ট্য:
গায়ের রঙ সাধারণত হলুদাভ বা সোনালি, যার ওপর কালো ফোঁটা থাকে।

শারীরিক গঠন তুলনামূলক ছোট, তবে পেশিবহুল এবং লম্বা লেজযুক্ত।

গড়ে ৬০-৭০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।

খুব ভালো গাছে ওঠার দক্ষতা রয়েছে, যা শিকার ধরতে ও শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।

একাকী জীবনযাপন করে এবং রাতে শিকার করতে পছন্দ করে।

প্রধানত হরিণ, বুনো শূকর, খরগোশসহ ছোট প্রাণী শিকার করে।

চিতাবাঘ কোথায় পাওয়া যায়?

চিতাবাঘ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সুন্দরবন ও পার্বত্য এলাকায় এখনো কিছু চিতাবাঘ রয়েছে।

বিপদাপন্ন অবস্থা:

বন ধ্বংস ও চোরাশিকারের কারণে চিতাবাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে এটি "প্রায় বিপদগ্রস্ত" (Near Threatened) হিসেবে তালিকাভুক্ত।

মেছোবাঘ

মেছোবাঘ (Fishing Cat, বৈজ্ঞানিক নাম: Prionailurus viverrinus) একটি মাঝারি আকারের বন্য বিড়াল, যা মূলত জলাভূমি ও নদী-সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিপন্ন প্রাণী।

মেছোবাঘের বৈশিষ্ট্য:
গায়ের রঙ ধূসর-সবুজাভ, যার ওপর কালো ফোঁটা থাকে।
সাধারণ বিড়ালের তুলনায় আকারে বড়, ওজন ৫-১৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
বিশেষভাবে সাঁতার কাটতে দক্ষ এবং পানির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।

শিকার হিসেবে মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, পাখি, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী ইত্যাদি খায়।

সাধারণত রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং একাকী চলাফেরা করে।

কোথায় পাওয়া যায়?
মেছোবাঘ ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ বন এবং নদীর তীরে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সুন্দরবন, হাওর-বাঁওড় ও বিভিন্ন জলাভূমিতে এদের উপস্থিতি রয়েছে।
সংরক্ষণ অবস্থা:
বন উজাড়, জলাভূমি ধ্বংস ও মানুষের আক্রমণের কারণে মেছোবাঘের সংখ্যা কমছে। এটি "বিপদাপন্ন" (Vulnerable) প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত।