লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে সহবাস করা যাবে কি না, (উত্তর সহ)

 লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে সহবাস করা যাবে কি না?—ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

সহবাস

লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে সহবাস করা যাবে কি?

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ইসলাম এই সম্পর্ককে পবিত্র ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম দিয়েছে, যা দাম্পত্য জীবন সুখী ও বরকতময় করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকেই জানতে চান, লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে সহবাস করা (ওরাল সেক্স) ইসলামে বৈধ কি না? আসুন, কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বোঝার চেষ্টা করি।

---

ইসলামের নির্দেশনা ও পবিত্রতা

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে পবিত্র ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দাম্পত্য জীবনের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে সুন্দর, স্বাস্থ্যসম্মত ও নৈতিকতার ভিত্তিতে গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ বলেন:

“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্রস্বরূপ, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পারো। তবে নিজেদের জন্য কল্যাণকর কিছু করো এবং আল্লাহকে ভয় করো।”

(সূরা আল-বাকারা: ২২৩)

এই আয়াতে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি দেওয়া হলেও, তা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত ও নৈতিকতার সীমার মধ্যে হতে হবে।

---

লজ্জাস্থানে মুখ দেওয়া—ইসলামের অবস্থান

১. স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও এটি অনুচিত

কুরআন বা সহিহ হাদিসে সরাসরি বলা হয়নি যে, মুখ দিয়ে সহবাস সম্পূর্ণ হারাম। তবে এটি ইসলামি শালীনতা ও পরিচ্ছন্নতার মূলনীতির পরিপন্থী। মানবদেহের যে স্থানগুলো পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেখানে মুখ দেওয়া ইসলামি আদর্শের পরিপন্থী হতে পারে।

২. পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার দিক

ইসলামে পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী (সা.) বলেছেন—

“পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।” (সহিহ মুসলিম)

মানবদেহের লজ্জাস্থান থেকে অপসারিত তরল পদার্থ যেমন—প্রস্রাব, মনি, মযি এবং অন্যান্য নিঃসরণ অপবিত্র। এই জায়গায় মুখ দেওয়া স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও ক্ষতিকর হতে পারে এবং ইসলামের পরিচ্ছন্নতার নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।

৩. ফেরেশতারা ঘৃণা করেন

ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ফেরেশতারা অপবিত্র স্থান ও অপবিত্র কাজ অপছন্দ করেন। লজ্জাস্থানে মুখ দেওয়া এমন একটি কাজ, যা ইসলামের গুণাবলি ও শালীনতার সাথে মানানসই নয়।

---

স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্র অনুসারে, লজ্জাস্থানে মুখ দেওয়া বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ হতে পারে—

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণ: মুখ ও যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে বিভিন্ন সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যা স্বামী-স্ত্রীর স্বাস্থ্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মুখ ও গলার সংক্রমণ: মুখের মাধ্যমে এই কাজ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।

সুস্পষ্ট নৈতিকতার লঙ্ঘন: এটি মানুষের স্বাভাবিক যৌন আচরণের বিপরীত হতে পারে এবং দাম্পত্য জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

---

উত্তম বিকল্প কী?

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশের অনেক সুন্দর উপায় আছে, যা ইসলামের মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর।

✅ আদর, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা: শারীরিক সম্পর্ক কেবল যৌন তৃপ্তির জন্য নয়, বরং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম।

✅ সহজ ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি: ইসলাম যে পদ্ধতিগুলো সুন্নত ও শালীনতার অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করে, সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

✅ পারস্পরিক সম্মান: স্বামী-স্ত্রীর উচিত একে অপরের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া।

---

আমাদের কিছু মতামত

লজ্জাস্থানে মুখ দেওয়া ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে স্পষ্টভাবে হারাম বলা হয়নি, তবে এটি অনুচিত ও অপছন্দনীয় কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এটি ইসলামের পরিচ্ছন্নতা, শালীনতা ও স্বাস্থ্যবিধির বিরুদ্ধে যায়। দাম্পত্য জীবনে উত্তম শালীনতা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করাই শ্রেয়। ইসলাম সুন্দর ও পবিত্র জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়, তাই আমাদের উচিত সেই আদর্শ বজায় রাখা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।